Announcement

Collapse
No announcement yet.

‎কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা || পর্ব-৪ || “আমি নাকি অভিনয় করছি!”

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‎কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা || পর্ব-৪ || “আমি নাকি অভিনয় করছি!”

    ‎কেমন আছেন ভারতের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা || পর্ব-৪ || “আমি নাকি অভিনয় করছি!”



    ১৯ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী ফারজানা রেহমান। এত অল্প বয়সেই চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে তার। শরীরের অবস্থা খুবই দুর্বল। এমনকি অন্য কারো সাহায্য ছাড়া হাঁটতেও পারেন না। ১৫ মাস ডিটেনশন সেন্টারে ছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তার এই অবস্থা। এই বয়সেই বেশ কয়েকবার চিকিৎসা জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি সাময়িকভাবে প্যারালাইসিসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি।

    ডিটেনশন সেন্টারে কাটানো সময়গুলোর কথা মনে পড়তেই উদ্বেগে কেঁপে ওঠে ফারজানা রেহমানের কণ্ঠ। তিনি বলেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা বন্দী চিকিৎসা জটিলতায় ভোগেন। ডাক্তাররা অবশ্য ডিটেনশন সেন্টার পরিদর্শনে আসেন। তবে, সুচিকিৎসা প্রদানের জন্য নয়। কেউ যেন মরে না যায় সেটা নিশ্চিত করতে আসেন তারা। মারাত্মকভাবে অসুস্থ বন্দীদের কেবল হাসপাতালে নেওয়া হয়।

    বন্দীদের অনেকে শুধু রোহিঙ্গা ভাষায় কথা বলতে পারেন। হিন্দিতে কথা বলতে পারে এমন রোহিঙ্গাদের সাথে থাকার জন্য তারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করলেও, তাদের এই আবেদন গ্রহণ কখনই করে না হিন্দুত্ববাদী কর্তৃপক্ষ।

    নিজের বন্দী জীবনের কথা স্মরণ করে ফারজানা রেহমান আরও বলেন, “আমি যখন তীব্র যন্ত্রণায় কাঁদতাম, কর্মকর্তারা বলতো আমি নাকি অভিনয় করছি! আমি নাকি জন্তু-জানোয়ারের চেয়েও খারাপ। কোনো যত্ন পাবার অধিকারও নাকি রোহিঙ্গাদের নেই।”

    মুহাম্মাদ ইমরান আখতারের বয়স ৩০ বছর। টগবগে যৌবনের দুটি বছরই তিনি কাটিয়েছেন হিন্দুত্ববাদীদের ডিটেনশন সেন্টারে। তিনি জানান, চিকিৎসার জন্য তাকে হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারদের সাথে স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কথা বলারও অনুমতি তাকে দেয়নি হিন্দুত্ববাদী কর্মকর্তারা। তারা ডাক্তারদের বলেছে যে, এই ব্যক্তি একজন ‘কয়েদি’ এবং ‘অনুপ্রবেশকারী’। ফলে ডাক্তাররাও কথা বাড়ায়নি। অতি সামান্য চিকিৎসা দিয়ে বিদায় দিয়েছে।

    মুহাম্মাদ আখতার লম্বা ও সুঠাম দেহের অধিকারী। তাতে কী? তাকে এখন আরও ছয়জন রোহিঙ্গা পুরুষের সাথে ভিকাশপুরির একটি মাত্র কক্ষে থাকতে হয়। পুলিশ তাকে বলে দিয়েছে, যদি তিনি ভিকাশপুরির বাইরে এক কদমও ফেলেন, তাকে পুনরায় ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হবে।

    মুহাম্মাদ আখতার বলেছেন, ডিটেনশন সেন্টারে কোনো প্রবাহমান পানির ব্যবস্থা নেই। বন্দীরা বাহিরের একটি ট্যাপ থেকে কলস পূর্ণ করে পানি আনেন। পুরুষরা কোনো ভাবে এটা করতে পারেন, কিন্তু অনেক নারীই এই কলস বহনে সক্ষম নন।

    আখতারের বর্ণনানুযায়ী, ডিটেনশন সেন্টারের কক্ষগুলোতে আলো-বাতাস প্রবেশেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। গরম কালে কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে সেখানে, পাখাগুলোও খুব কমই কাজ করে। আর শীতকালে প্রত্যেককে দুটি করে কম্বল দেওয়া হলেও, কোনো উষ্ণ কাপড় দেওয়া হয় না বন্দীদের। তাদেরকে গোসল করতে হয় বরফ-শীতল পানি দিয়ে। এই অবস্থায় বিশেষভাবে বাচ্চাদের অসুস্থতা বেড়ে যায়।

    “সেন্টারে স্বস্তি নিয়ে একটু নড়াচড়ার মতোও কোনো জায়গা নেই। আমরা সর্বদাই আবদ্ধ হয়ে ছিলাম”, বলেছেন মুহাম্মাদ আখতার।

    [চলবে ইনশাআল্লাহ…]

    অনুবাদ: সাইফুল ইসলাম

    কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ ভারতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের হালাত নিয়ে তৈরি “Rohingya Refugees Recall Desperate Conditions With No Legal Recourse In Delhi Detention Centre” এই শিরোনামে article14 এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমরা ধারাবাহিক ভাবে বাংলায় অনুবাদ করে প্রকাশ করছি।
    তথ্যসূত্রঃ
    ১। Rohingya Refugees Recall Desperate Conditions With No Legal Recourse In Delhi Detention Centre – https://tinyurl.com/yvxps73w

    আগের পর্বগুলো পড়ুনঃ







    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

  • #2
    নির্বাচনে জয়ী হতে ‘গুজরাট মুসলিম গণহত্যা’কে কাজে লাগানোর চেষ্টা



    ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০২-এ একটি মুসলিম বিরোধী সহিংসতা সংঘটিত হয়েছিল। নরোদা পটিয়ার আহমেদাবাদ পাড়ায় হামলায় হিন্দুত্ববাদী একটি আধা-সামরিক বাহিনীও জড়িত ছিল তাতে। সেখানে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিমদের বিল্ডিং ধ্বংস করার জন্য এলপিজি সিলিন্ডারগুলিকে বিস্ফোরক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। হত্যার আগে মুসলিম নারী ও নাবালেগ মেয়েদের গণধর্ষণ করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল যে, আক্রমণকারীরা একটি শিশুর মুখে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়, যাতে সে পুড়ে যায়।

    নরোদা পটিয়াতে সহিংসতা থামানোর জন্য হিন্দুত্ববাদী পুলিশ কোন ধরণের চেষ্টাই করেনি তখন। নীরবতার আড়ালে তারা অন্যতম বৃহৎ এই মুসলিম গণহত্যা চালানোর সম্পূর্ণ সুযোগ তৈরী করে দিয়েছিল। সে সময় গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী বিজেপির নরেন্দ্র মোদী, তার নির্দেশেই গণহত্যা হয়েছিল।

    দুঃখজনক বিষয় হল,দুই দশক পরে, ভারতীয় জনতা পার্টি, গণহত্যার সময় ক্ষমতাসীন দল, আসন্ন ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ভোট সংগ্রহের জন্য সেই ভয়ঙ্কর মুসলিম গণহত্যার স্মৃতিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। যেন হিন্দুদের মাঝে লুকায়িত মুসলিম বিদ্বেষ আবারো প্রকাশ্য হয়ে উঠছে; হয়ে উঠছে নির্বাচনে বিজয়ের হাতিয়ার।

    এমন ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড কীভাবে তার অধীনে ঘটতে পারে তা নিয়ে অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে, গণহত্যার পক্ষেই সাফাই গাইছে।
    উগ্র দলটি একটি বিধায়ক প্রার্থী হিসাবে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্তদের এক গুণ্ডা মনোক কুকরানির মেয়েকে মনোনীত করেছে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে কুকরানি সেই উগ্র হিন্দুদের একজন- যারা মুসলিম মহিলাদেরকে প্রথমে গণধর্ষণ করে, পরে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল।



    এছাড়া বিজেপি তার বিধায়ক প্রার্থী সিকে রাউলজিকেও মনোনীত করেছে, যে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানুর গণধর্ষণ ও তার পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে খুনকারীদের “ব্রাহ্মণ এবং ভালো মূল্যবোধসম্পন্ন” বলে আখ্যা দিয়ে সাজা ক্ষমা করে দিয়েছে। রাউলজি এমন একটি কমিটির লোক ছিল, যারা সাজাপ্রাপ্ত গণহত্যা এবং ধর্ষকদের সাজা শেষ করার আগেই কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে দেয়।

    রাউলজির দ্বারা প্রশংসিত খুনিরা এক নিরপরাধ শিশুসহ ১৪ জন মুসলমানকে হত্যার জন্য দায়ী ছিল। যারা শিশুর মাথা থেঁতলে হত্যা করে। সেইসাথে ৬ মাসের গর্ভবতী বিলকিস বানুকে গণধর্ষণ করে। এই নৃশংস হামলায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজনের মধ্যে বিলকিস বানু ছিলেন। যিনি গণধর্ষণের লাঞ্চনা ও স্বজনদের হারানোর যন্ত্রণা এখনো বয়ে চলেছেন।

    এটা স্পষ্ট যে বিজেপি আসন্ন রাজ্য নির্বাচনে হিন্দু মুসলিম মেরুকরণের জন্য ২০০২ সালের ভয়াবহ সহিংসতার কথা সামনে আনছে। এটাকে তারা অপরাধ নয় বরং তাদের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছে। এটি তাদের নতুন কৌশল নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০০২ সালের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনগুলিও মূলত দাঙ্গার ইস্যু প্রধান হাতিয়ার ছিল। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে শাসক দলটির অধীনে গণহত্যা হয়েছিল তাদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে, প্রায় ৫০% ভোট দিয়ে বিজেপির ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী করেছিল। যা কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে।


    প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ



    তথ্যসূত্র:
    1. BJP signalling support for 2002 riots to win Gujarat polls is a dire sign for India ( Scroll )
    https://tinyurl.com/3hswjp44
    2. Bilkis Bano Case: ‘ওরা ব্রাহ্মণ, মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ’, বিলকিসের ধর্ষকদের দরাজ সার্টিফিকেট বিজেপি বিধায়কের
    https://bit.ly/3KhG6MA
    3. NewsClick : Bilkis Bano Case: 11 Convicts set Free by Gujarat Government Under its Remission Policy
    https://tinyurl.com/2p84kp5u
    4. ‘There is fear’: Muslim families flee village, take shelter in relief colony
    https://tinyurl.com/4hu5ndm6

    আপনাদের নেক দোয়ায় আমাদের ভুলবেন না। ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট: alfirdaws.org

    Comment

    Working...
    X