কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-১০।। মুসলিমদের অঙ্গ অপসারণ
‘অঙ্গ অপসারণ’, সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি অপরাধমূলক কাজ। শুধুমাত্র একবার অবৈধভাবে কারও অঙ্গ অপসারণ করলেই লাখ লাখ ডলার আয় করা সক্ষম। আর এজন্য শুধু অর্থের লোভেই দিনকে দিন এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে মানুষ।
এই অপরাধমূলক কাজে সাধারণত সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় নারী ও শিশুরা। এছাড়া কম বয়সের পুরুষরাও এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অঙ্গ অপসারণের জন্য প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় অপহরণের ঘটনা ঘটে। আর এই অপহরণকৃত মানুষগুলোকে পরে পাচার করে দেওয়া হয় অঙ্গ অপসারণের কাজে।
পৃথিবীতে যত জায়গায় অঙ্গ অপসারণের ঘটনা ঘটে কাশ্মীরও সে জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও পশ্চিমা হলুদ মিডিয়া নীরব থাকার মাধ্যমে কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। তবুও সত্য এমন এক বিষয় যা একদিন না একদিন প্রকাশিত হয়ই। চাই সেই সত্যের ওপর যত বড় পর্বতই চাপিয়ে দেওয়া হোক না কেন। সত্য তার আপন বলে ঠিকই সেই কঠিন পর্বতকে ভেদ করতে সক্ষম।
দখলদার সেনারা কাশ্মীরের মুসলিমদের প্রতি কেমন আচরণ করে সেটা আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই। কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি তাদের জুলুম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আজ কাশ্মীরি মুসলিমরা তাদের প্রায় সকল অধিকার থেকেই বঞ্চিত। এমনকি কাশ্মীরি মুসলিমরা আজ নিজেদের শরীরের ওপর অধিকারটুকুও হারিয়ে ফেলেছে।
মুহাম্মাদ রফিক মীর, আব্দুল গনি মীরের ২১ বছর বয়সী ছেলে। ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারী রফিক দখলকৃত কাশ্মীর থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে রওয়ানা হন আজাদ কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে। তাঁর সাথে ছিলেন আরও ১১ জন কাশ্মীরি মুসলিম যুবক। কিন্তু ‘অবৈধভাবে’ আজাদ কাশ্মীরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে দখলদার ভারতীয় বাহিনী।
পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করে রফিক বলেন, “ওরা আমাদের সবাইকে হাসপাতালের মতো দেখতে একটি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে অনেকেই সবুজ ইউনিফর্মে ছিলো। তাদের মুখেও ছিলো মাস্ক। বাকীরা সবাই ছিল মিলিটারি ইউনিফর্মে। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে একটি টেবিলে রাখে। এরপর আমার হাত থেকে রক্ত নেয়। আমার কুঁচকিতে একটি তার স্থাপন করে তারা স্ক্রিনে কিছু একটা দেখতে থাকে। একটু পর আমার সারা শরীর বেশ গরম হয়ে যায়। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে যে আমার প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হচ্ছিলো। এরপর এক ডাক্তার আমার বাম কিডনি সরিয়ে নেওয়ার কথা আমাকে জানায়।”
ঠিক এই একই নিয়তি বরণ করতে হয় রফিকের বাকী সঙ্গীদেরও। তাদের উপরেও করা হয় সেই একই সার্জারি। এরপর তাদের সবাইকে ট্রাকে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তার একপাশে।
রফিককে পরে নিয়ে যাওয়া হয় একটি হাসপাতালে। সেখানে রফিক তাঁর তীব্র ব্যাথার কথা ডাক্তারদের জানান। ডাক্তাররা রফিকের টেস্টামেন্টের নিচের অংশে পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষা ও এক্স-রে করার পর ডাক্তাররা রিপোর্ট দেন যে-
“আপাতদৃষ্টিতে ২০ বছর বয়সী মুহাম্মাদ রফিক মীর তাঁর শরীরের বাম দিকে কিডনির নিচের দাগ নিয়ে সুস্থ আছেন। প্রায় আট ইঞ্চি লম্বা এই দাগটি ভালোভাবেই নিরাময়যোগ্য। গোলাপি রঙের এই দাগটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তা অল্পকিছু দিন আগেরই।”
প্রশ্নোত্তরে তিনি তাঁর ইউরিনারী সিস্টেমের কোন উল্লেখযোগ্য সমস্যার কথা জানাননি। তাঁর হেমাটুরিয়া, ডাইসুরিয়া, বিস্মৃতি বা মূত্রনালী কোলিকের কোনও সমস্যা ছিলো না। দাগের জায়গায় তাঁর কোনও ব্যথা ছিল না। কিডনির সমস্যার ব্যপারে কোন ডাক্তার কখনও তাঁকে কিছু বলেননি। পরীক্ষার পরে, তিনি তাঁর বাম কিডনির নিচের দাগ ব্যতীত কোনও ক্লিনিকাল সমস্যার কথা উল্লেখ করেননি। অন্যান্য পরীক্ষা দ্বারা এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর শরীরে বাম কিডনিটি অনুপস্থিত। সেই সাথে এও প্রতীয়মান হয় যে, একটি সুস্থ-সক্রিয় কিডনি ও মূত্রনালী তাঁর শরীর থেকে ‘সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে’। অপারেশনের অবস্থাদৃষ্টে এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে, কিডনিটি তাঁর ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে’ প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।
কাশ্মীরে রফিকের মতো এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশনের সময়ই ভুক্তভোগী মুসলিমরা মৃত্যুবরণ করেন। এই ভুক্তভোগী মুসলিমদের মৃতদেহগুলি খুঁজে পাওয়া গেলেও তাদের শরীরের কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি অনুপস্থিত থাকে।
কাশ্মীরের গেন্দারবাল জেলার বাসিন্দা ইউনিস খান বলেন, একবার বিএসএফের সদস্যরা তাঁর ভাই বশির খান সহ আরও ১২ জন কাশ্মীরিকে একটি বাসে তুলে নিয়ে যায়। সেসময় তাঁর ভাইয়ের বয়স ছিলো ২৯ বছর। একমাস পর তিনি তাঁর ভাইয়ের দেহ খুঁজে পান। এরপর সেখানের ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সাইন্স নামের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর ডাক্তাররা তাঁর ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ডাক্তারি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, তাঁর ভাই বশির প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা যান। এছাড়া তাঁর শরীরে একটি কিডনিও অনুপস্থিত।
দখলদার হিন্দুত্ববাদীরা আজও কাশ্মীরে তাদের এই অপরাধ চলমান রেখেছে। তারা আজও মুসলিমদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে। কথিত মানবতার রক্ষকরা কিন্তু সবই জানে। তবুও তারা হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলে উল্টো স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরি মুসলিমদেরই ‘সন্ত্রাসী’ ট্যাগ দিচ্ছে। আর তাদের এই আচরণ থেকে এটাই স্পষ্ট যে, তারা চায় না কাশ্মীরি মুসলিমরা কখনও স্বাধীন হোক। সেই ব্যবস্থা এখন তাই কাশ্মীরি মুসলিমরা নিজেরাই করছেন।
অনুবাদক ও সংকলক
আবু-উবায়দা
মূলসূত্র :
বইঃ কাশ্মীর হ্যাপি ভ্যালী, ভ্যালী ওফ ডেথ (Kashmir Happy Valley, Valley of Death) [Page: 50-53];
প্রকাশনীঃ ডিফেন্ডার্স পাবলিকেশন্স আইএনসি (Defenders Publications, INC.) [প্রথম প্রকাশিতঃ ১৯৯৪]
লেখক– উইলিয়াম ডব্লিও বেকার (William W. Baker)
আগের পর্বগুলো পড়ুন :
১। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা ।। পর্ব-১।। চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/24/59437/
২। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-২।। ধর্ষণ যাদের সংস্কৃতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/25/59476/
৩। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা || পর্ব-৩ || নাসরুল্লাহপুরার হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/09/28/59560/
৪। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৪।। সাফাকাদাল হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/04/59692/
৫। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৫।। সোপোর হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/12/59884/
৬। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৬।। শ্রাবালা হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/21/60088/
৭। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৭।। আশিক হুসাইন মাসুদি হত্যা
– https://alfirdaws.org/2022/10/31/60308/
৮। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৮।। বিজবেহারা হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/11/11/60647/
৯। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৯।। ডাল-গেট হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/11/20/60813/
‘অঙ্গ অপসারণ’, সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি অপরাধমূলক কাজ। শুধুমাত্র একবার অবৈধভাবে কারও অঙ্গ অপসারণ করলেই লাখ লাখ ডলার আয় করা সক্ষম। আর এজন্য শুধু অর্থের লোভেই দিনকে দিন এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে মানুষ।
এই অপরাধমূলক কাজে সাধারণত সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয় নারী ও শিশুরা। এছাড়া কম বয়সের পুরুষরাও এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। অঙ্গ অপসারণের জন্য প্রায় প্রতিদিনই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জায়গায় অপহরণের ঘটনা ঘটে। আর এই অপহরণকৃত মানুষগুলোকে পরে পাচার করে দেওয়া হয় অঙ্গ অপসারণের কাজে।
পৃথিবীতে যত জায়গায় অঙ্গ অপসারণের ঘটনা ঘটে কাশ্মীরও সে জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম। যদিও পশ্চিমা হলুদ মিডিয়া নীরব থাকার মাধ্যমে কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে। তবুও সত্য এমন এক বিষয় যা একদিন না একদিন প্রকাশিত হয়ই। চাই সেই সত্যের ওপর যত বড় পর্বতই চাপিয়ে দেওয়া হোক না কেন। সত্য তার আপন বলে ঠিকই সেই কঠিন পর্বতকে ভেদ করতে সক্ষম।
দখলদার সেনারা কাশ্মীরের মুসলিমদের প্রতি কেমন আচরণ করে সেটা আসলে নতুন করে বলার কিছু নেই। কাশ্মীরি মুসলিমদের প্রতি তাদের জুলুম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আজ কাশ্মীরি মুসলিমরা তাদের প্রায় সকল অধিকার থেকেই বঞ্চিত। এমনকি কাশ্মীরি মুসলিমরা আজ নিজেদের শরীরের ওপর অধিকারটুকুও হারিয়ে ফেলেছে।
মুহাম্মাদ রফিক মীর, আব্দুল গনি মীরের ২১ বছর বয়সী ছেলে। ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারী রফিক দখলকৃত কাশ্মীর থেকে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে রওয়ানা হন আজাদ কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে। তাঁর সাথে ছিলেন আরও ১১ জন কাশ্মীরি মুসলিম যুবক। কিন্তু ‘অবৈধভাবে’ আজাদ কাশ্মীরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে দখলদার ভারতীয় বাহিনী।
পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনা করে রফিক বলেন, “ওরা আমাদের সবাইকে হাসপাতালের মতো দেখতে একটি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে অনেকেই সবুজ ইউনিফর্মে ছিলো। তাদের মুখেও ছিলো মাস্ক। বাকীরা সবাই ছিল মিলিটারি ইউনিফর্মে। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে একটি টেবিলে রাখে। এরপর আমার হাত থেকে রক্ত নেয়। আমার কুঁচকিতে একটি তার স্থাপন করে তারা স্ক্রিনে কিছু একটা দেখতে থাকে। একটু পর আমার সারা শরীর বেশ গরম হয়ে যায়। এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। শুধু মনে আছে যে আমার প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হচ্ছিলো। এরপর এক ডাক্তার আমার বাম কিডনি সরিয়ে নেওয়ার কথা আমাকে জানায়।”
ঠিক এই একই নিয়তি বরণ করতে হয় রফিকের বাকী সঙ্গীদেরও। তাদের উপরেও করা হয় সেই একই সার্জারি। এরপর তাদের সবাইকে ট্রাকে নিয়ে ফেলে দেওয়া হয় রাস্তার একপাশে।
রফিককে পরে নিয়ে যাওয়া হয় একটি হাসপাতালে। সেখানে রফিক তাঁর তীব্র ব্যাথার কথা ডাক্তারদের জানান। ডাক্তাররা রফিকের টেস্টামেন্টের নিচের অংশে পরীক্ষা করেন। বিভিন্ন পরীক্ষা ও এক্স-রে করার পর ডাক্তাররা রিপোর্ট দেন যে-
“আপাতদৃষ্টিতে ২০ বছর বয়সী মুহাম্মাদ রফিক মীর তাঁর শরীরের বাম দিকে কিডনির নিচের দাগ নিয়ে সুস্থ আছেন। প্রায় আট ইঞ্চি লম্বা এই দাগটি ভালোভাবেই নিরাময়যোগ্য। গোলাপি রঙের এই দাগটি দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে তা অল্পকিছু দিন আগেরই।”
প্রশ্নোত্তরে তিনি তাঁর ইউরিনারী সিস্টেমের কোন উল্লেখযোগ্য সমস্যার কথা জানাননি। তাঁর হেমাটুরিয়া, ডাইসুরিয়া, বিস্মৃতি বা মূত্রনালী কোলিকের কোনও সমস্যা ছিলো না। দাগের জায়গায় তাঁর কোনও ব্যথা ছিল না। কিডনির সমস্যার ব্যপারে কোন ডাক্তার কখনও তাঁকে কিছু বলেননি। পরীক্ষার পরে, তিনি তাঁর বাম কিডনির নিচের দাগ ব্যতীত কোনও ক্লিনিকাল সমস্যার কথা উল্লেখ করেননি। অন্যান্য পরীক্ষা দ্বারা এই বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে, তাঁর শরীরে বাম কিডনিটি অনুপস্থিত। সেই সাথে এও প্রতীয়মান হয় যে, একটি সুস্থ-সক্রিয় কিডনি ও মূত্রনালী তাঁর শরীর থেকে ‘সার্জারির মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে’। অপারেশনের অবস্থাদৃষ্টে এ বিষয়টিও স্পষ্ট যে, কিডনিটি তাঁর ‘ইচ্ছার বিরুদ্ধে’ প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে।
কাশ্মীরে রফিকের মতো এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপারেশনের সময়ই ভুক্তভোগী মুসলিমরা মৃত্যুবরণ করেন। এই ভুক্তভোগী মুসলিমদের মৃতদেহগুলি খুঁজে পাওয়া গেলেও তাদের শরীরের কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি অনুপস্থিত থাকে।
কাশ্মীরের গেন্দারবাল জেলার বাসিন্দা ইউনিস খান বলেন, একবার বিএসএফের সদস্যরা তাঁর ভাই বশির খান সহ আরও ১২ জন কাশ্মীরিকে একটি বাসে তুলে নিয়ে যায়। সেসময় তাঁর ভাইয়ের বয়স ছিলো ২৯ বছর। একমাস পর তিনি তাঁর ভাইয়ের দেহ খুঁজে পান। এরপর সেখানের ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সাইন্স নামের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাবার পর ডাক্তাররা তাঁর ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে ডাক্তারি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, তাঁর ভাই বশির প্রচন্ড শারীরিক নির্যাতনের কারণে মারা যান। এছাড়া তাঁর শরীরে একটি কিডনিও অনুপস্থিত।
দখলদার হিন্দুত্ববাদীরা আজও কাশ্মীরে তাদের এই অপরাধ চলমান রেখেছে। তারা আজও মুসলিমদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে। কথিত মানবতার রক্ষকরা কিন্তু সবই জানে। তবুও তারা হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলে উল্টো স্বাধীনতাকামী কাশ্মীরি মুসলিমদেরই ‘সন্ত্রাসী’ ট্যাগ দিচ্ছে। আর তাদের এই আচরণ থেকে এটাই স্পষ্ট যে, তারা চায় না কাশ্মীরি মুসলিমরা কখনও স্বাধীন হোক। সেই ব্যবস্থা এখন তাই কাশ্মীরি মুসলিমরা নিজেরাই করছেন।
অনুবাদক ও সংকলক
আবু-উবায়দা
মূলসূত্র :
বইঃ কাশ্মীর হ্যাপি ভ্যালী, ভ্যালী ওফ ডেথ (Kashmir Happy Valley, Valley of Death) [Page: 50-53];
প্রকাশনীঃ ডিফেন্ডার্স পাবলিকেশন্স আইএনসি (Defenders Publications, INC.) [প্রথম প্রকাশিতঃ ১৯৯৪]
লেখক– উইলিয়াম ডব্লিও বেকার (William W. Baker)
আগের পর্বগুলো পড়ুন :
১। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা ।। পর্ব-১।। চিকিৎসা সেবায় ঘাটতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/24/59437/
২। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-২।। ধর্ষণ যাদের সংস্কৃতি
– https://alfirdaws.org/2022/09/25/59476/
৩। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা || পর্ব-৩ || নাসরুল্লাহপুরার হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/09/28/59560/
৪। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৪।। সাফাকাদাল হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/04/59692/
৫। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৫।। সোপোর হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/12/59884/
৬। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৬।। শ্রাবালা হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/10/21/60088/
৭। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৭।। আশিক হুসাইন মাসুদি হত্যা
– https://alfirdaws.org/2022/10/31/60308/
৮। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৮।। বিজবেহারা হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/11/11/60647/
৯। কাশ্মীরে দখলদার হিন্দুত্ববাদীদের অপরাধনামা।। পর্ব-৯।। ডাল-গেট হত্যাকাণ্ড
– https://alfirdaws.org/2022/11/20/60813/
Comment