ওরা চায় না ফারদিন হত্যার রহস্য উন্মোচিত হোক!
একের পর এক বুয়েটের মেধাবী ও রাজনীতি সচেতন ছাত্ররা খুন হচ্ছে। এর সবশেষ শিকার ফারদিন নূর পরশ। গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর ৭ নভেম্বর তার লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার মাথা ও বুকের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
বুয়েটের আরেক মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ইসকন সদস্য অমিত সাহাদের চক্রান্তে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করে। এরপর ছাত্র আন্দোলনের মুখে বুয়েট থেকে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবুও ছাত্রলীগ একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েছে নতুন করে বুয়েটে তাদের রাজনীতি চালু করতে। কিন্তু সাধারণ ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা পারেনি। এই ছাত্র আন্দোলনে ফারদিনের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা ছিল। নিহত আবরার স্মরণে নির্মিত ওয়েব আর্কাইভটিও পরিচালনা করতেন ফারদিন। এছাড়াও বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন মেধাবী ফারদিন।
ফারদিনের খুনের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে একেক সময় একেক নাটক মঞ্চস্থ করছে সরকারের গোলাম পুলিশ ও সংলিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলো। গত ১৪ ডিসেম্বর তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ফারদিনের খুনের ঘটনাকে ‘ব্যক্তিগত হতাশা থেকে আত্মহত্যা’ বলে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। অথচ, শুরুতে এই গোয়েন্দা বিভাগই দাবি করেছিল দরদামে বনিবনা না হওয়ায় মাদক বিক্রেতারা ফারদিনকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়েছে।
গোয়েন্দা বিভাগ যে নাটক মঞ্চস্থ করে ফারদিনের খুনকে আত্মহত্যা বলছে তা হলো:
** ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিল। সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারত না।
** তার রেজাল্ট ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে ৩.১৫; তারপর কমতে কমতে ২.৬৭। এটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়স্বজন কেউ জানত না।
** বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল, যেটা জোগাড় করতে ফারদিন হিমশিম খাচ্ছিল। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে।
** নিজে টিউশন করে চারটা। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালায়। নিজের জন্য কিছু করে না। তারপরও বাড়ি থেকে শাসন করে – তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে, হলে থাকা যাবে না, ইত্যাদি। ফারদিন এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল, যা সে মানতে পারেনি।
** ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে এবং টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথন রয়েছে; যেখানে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছে বহুবার। মুমুর ভাষ্যমতে, ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
গোয়েন্দা বিভাগের এ সকল যুক্তির একটিও ফারদিনের সাথে যায়না বলে মত দিয়েছেন ফারদিনের পরিবার, সহশিক্ষার্থী ও বিশ্লেষকগণ।
ফারদিনের পিতা জানিয়েছেন, “আমার ছেলেকে পরিকল্পিত হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক করা হচ্ছে। আমার ছেলের সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষমতা ছিল। আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। ফারদিনের শরীর ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ডাক্তারি ময়নাতদন্তেও আঘাতের কথা উঠে আসে।”
গত ১৫ ডিসেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি দল ফারদিন হত্যা নিয়ে কথা বলতে ডিবির কার্যালয়ে যান। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জানায় যে গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্টে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের অবস্থান জানাবেন।
গোয়েন্দা বিভাগ একবার বলছে মাদক বিক্রেতারা ফারদিনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। আবার এখন বলছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। তাদের দ্বিমুখি আচরণ থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, ফারদিনের হত্যাকাণ্ড সাধারণ কোন ঘটনা নয়। এর পিছনে অন্য কোন উদ্দ্যেশ্য বা রহস্য রয়েছে। এছাড়াও ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর পরই চন পাড়ার এক মাদক কারবারিকে ক্রস ফায়ার করে চিরতরে সরিয়ে দেয়া হয়। সার্বিকভাবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ফারদিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়াকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে চায় একটি মহল।
তথ্যসূত্র:
১। ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এই বক্তব্যের পক্ষে যে যুক্তি দিল ডিবি – https://tinyurl.com/3e8d24tu
২। ফারদিন আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে : দাবি বাবার – https://tinyurl.com/25mxceu4
৩। ফারদিন হত্যা: র্যাবের হেডকোয়ার্টারে গিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা – https://tinyurl.com/399p39uv
৪। ফারদিনও কি আবরারের পথে বলি? – https://tinyurl.com/2p8bn68j
একের পর এক বুয়েটের মেধাবী ও রাজনীতি সচেতন ছাত্ররা খুন হচ্ছে। এর সবশেষ শিকার ফারদিন নূর পরশ। গত ৪ নভেম্বর রাতে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর ৭ নভেম্বর তার লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার মাথা ও বুকের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
বুয়েটের আরেক মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে ইসকন সদস্য অমিত সাহাদের চক্রান্তে সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ নৃশংসভাবে পিটিয়ে খুন করে। এরপর ছাত্র আন্দোলনের মুখে বুয়েট থেকে ছাত্র রাজনীতি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তবুও ছাত্রলীগ একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েছে নতুন করে বুয়েটে তাদের রাজনীতি চালু করতে। কিন্তু সাধারণ ছাত্রদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তা পারেনি। এই ছাত্র আন্দোলনে ফারদিনের সক্রিয় ও সাহসী ভূমিকা ছিল। নিহত আবরার স্মরণে নির্মিত ওয়েব আর্কাইভটিও পরিচালনা করতেন ফারদিন। এছাড়াও বিভিন্ন এক্সট্রা-কারিকুলার কার্যক্রমের সাথে যুক্ত ছিলেন মেধাবী ফারদিন।
ফারদিনের খুনের ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে একেক সময় একেক নাটক মঞ্চস্থ করছে সরকারের গোলাম পুলিশ ও সংলিষ্ট তদন্ত সংস্থাগুলো। গত ১৪ ডিসেম্বর তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ফারদিনের খুনের ঘটনাকে ‘ব্যক্তিগত হতাশা থেকে আত্মহত্যা’ বলে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে। অথচ, শুরুতে এই গোয়েন্দা বিভাগই দাবি করেছিল দরদামে বনিবনা না হওয়ায় মাদক বিক্রেতারা ফারদিনকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়েছে।
গোয়েন্দা বিভাগ যে নাটক মঞ্চস্থ করে ফারদিনের খুনকে আত্মহত্যা বলছে তা হলো:
** ফারদিন নূর পরশ অন্তর্মুখী ছিল। সবার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতে পারত না।
** তার রেজাল্ট ক্রমাগত খারাপ হচ্ছিল। ১ম সেমিস্টারে ৩.১৫; তারপর কমতে কমতে ২.৬৭। এটা বাসার লোকজন বা আত্মীয়স্বজন কেউ জানত না।
** বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে স্পেন যাওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল, যেটা জোগাড় করতে ফারদিন হিমশিম খাচ্ছিল। বন্ধুরা ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে।
** নিজে টিউশন করে চারটা। সব টাকা দিয়ে নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালায়। নিজের জন্য কিছু করে না। তারপরও বাড়ি থেকে শাসন করে – তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে, হলে থাকা যাবে না, ইত্যাদি। ফারদিন এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিল, যা সে মানতে পারেনি।
** ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সঙ্গে মেসেঞ্জারে এবং টেলিগ্রামে অনেক কথোপকথন রয়েছে; যেখানে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছে বহুবার। মুমুর ভাষ্যমতে, ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিল। সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
গোয়েন্দা বিভাগের এ সকল যুক্তির একটিও ফারদিনের সাথে যায়না বলে মত দিয়েছেন ফারদিনের পরিবার, সহশিক্ষার্থী ও বিশ্লেষকগণ।
ফারদিনের পিতা জানিয়েছেন, “আমার ছেলেকে পরিকল্পিত হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক করা হচ্ছে। আমার ছেলের সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষমতা ছিল। আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। ফারদিনের শরীর ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। ডাক্তারি ময়নাতদন্তেও আঘাতের কথা উঠে আসে।”
গত ১৫ ডিসেম্বর বুয়েট শিক্ষার্থীদের একটি দল ফারদিন হত্যা নিয়ে কথা বলতে ডিবির কার্যালয়ে যান। সেখানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে দুই ঘণ্টা আলোচনা করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা জানায় যে গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্টে তারা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তাদের অবস্থান জানাবেন।
গোয়েন্দা বিভাগ একবার বলছে মাদক বিক্রেতারা ফারদিনকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। আবার এখন বলছে ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। তাদের দ্বিমুখি আচরণ থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, ফারদিনের হত্যাকাণ্ড সাধারণ কোন ঘটনা নয়। এর পিছনে অন্য কোন উদ্দ্যেশ্য বা রহস্য রয়েছে। এছাড়াও ফারদিনের লাশ উদ্ধারের পর পরই চন পাড়ার এক মাদক কারবারিকে ক্রস ফায়ার করে চিরতরে সরিয়ে দেয়া হয়। সার্বিকভাবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ফারদিন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হওয়াকে চিরতরে বন্ধ করে দিতে চায় একটি মহল।
লিখেছেন: মুহাম্মাদ ইব্রাহীম
তথ্যসূত্র:
১। ফারদিন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এই বক্তব্যের পক্ষে যে যুক্তি দিল ডিবি – https://tinyurl.com/3e8d24tu
২। ফারদিন আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে : দাবি বাবার – https://tinyurl.com/25mxceu4
৩। ফারদিন হত্যা: র্যাবের হেডকোয়ার্টারে গিয়েছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা – https://tinyurl.com/399p39uv
৪। ফারদিনও কি আবরারের পথে বলি? – https://tinyurl.com/2p8bn68j