বাংলাদেশেও লাভ জিহাদের অশনি সংকেত
অর্পা সাহা একজন নবমুসলিম তরুণী। ইসলামের সত্যতা বুঝে গোমরাহীর পথ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন কালিমার ছায়াতলে। আগের নাম বদলে নতুন নাম রেখেছেন ফাতেমা রহমান।
হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম হওয়ার পর অর্পা সাহা তার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের প্রতি একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন।
ভিডিও বার্তায় সে বলেছে, “আসসালামু আলাইকুম। আমি ফাতেমা রহমান একজন নওমুসলিম। আমার পূর্বের নাম অর্পা সাহা। আমার পিতার নাম গৌতম চন্দ্র সাহা। আমি গত পাঁচই ডিসেম্বর ময়মনসিংহ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমার বয়স এখন ২০ বছর যা আমার জন্ম নিবন্ধন ও আইডেন্টিটি কার্ড দ্বারা প্রমাণিত। আমি কারো চাপে পড়ে কিংবা আমাকে কেউ জোর জবরদস্তি করার কারণে ইসলাম গ্রহণ করায়নি। বরং আমি ইসলাম সম্পর্কে দীর্ঘদিন লেখাপড়া করে যাচাই-বাছাই করে এবং ইসলামকে ভালোবেসে এ ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি আবারো বলছি আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক। আমি ইসলাম সম্পর্কে সত্যতা যাচাই করে, স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি কারো চাপে পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমার হিন্দু বাবা, ভাই, আত্মীয়স্বজন কাকা সকলের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো, আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে কোন ব্যক্তি বা কাউকে কোনরূপ হয়রানি করবেন না।”
সকল প্রকার আইনী নিয়মকানুন মেনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নওমুসলিম ফাতেমা রহমান ও তার স্বামীকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে পুলিশ জোরপূর্বক তাকে হিন্দুদের কাছে দিয়ে দেয়। হিন্দু আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে যায়।
তাকে হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়ার পর নওমুসলিম ফাতেমা রহমানের বান্ধবী একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, তার বাবা সেখানে লিখিত দেয় যে- তাকে সম্পূর্ণভাবে ধর্ম পালন করতে দেওয়া হবে, নামাজ পড়তে দেওয়া হবে, পর্দা করতে দেওয়া হবে, তাকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। সে মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবে, তাকে কোন বাধা দেওয়া হবে না। সে একজন মুসলিম হিসেবেই বাঁচবে। কিন্তু তাকে নেওয়ার পর মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইসলাম ধর্মীয় বিধিবিধানও পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। নামাজে বাধা দেওয়া হয়। পর্দা করতে দেওয়া হয় না এবং পূর্বের ধর্ম তাকে মানতে বাধ্য করা হয়। মানসিকভাবে আঘাত করা হয়।
নওমুসলিম ফাতেমা রহমানের বান্ধবী আরো জানিয়েছে, ১১ তারিখ থেকে আমার কাছে বারবার কাকুতি মিনতি করে বলছে তাকে বাঁচানোর জন্য। সেই বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করার জন্য। এই মর্মে আমি একটি মামলা করেছি। কিন্তু ওয়ারেন্ট আসার পরেও পুলিশ কোন সাহায্য করছে না বা তাকে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা করছে না।
বাংলাদেশ একটি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশ। বাংলাদেশের কথিত সাংবিধানে আর্টিকেল ৪১ ধারা ক-এর ১-এ বলা আছে যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যে কোন মতবাদ ধর্ম মানতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে কেন তাকে জোরপূর্বক হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হল? তাকে কেন স্বাধীনভাবে তার মতাদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া হল না।
এটা কোন প্রেমঘটিত কারণ ছিল না অথবা টাকা পয়সার কোন ঝামেলাও ছিল না। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তার অধিকার ছিল সে তার পছন্দ মতো ধর্ম নিয়ে বেঁচে থাকবে।
লাভ জিহাদের তকমা
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কোন মেয়ে যদি মুসলিম যুবককে বিয়ে করে, ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা সেটিকে লাভ জিহাদ বলে চালিয়ে দেয়। ভারতজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। সেই ষড়যন্ত্রের আঁচ কি তাহলে বাংলাদেশে লাগতে শুরু করেছে? যদিও এদেশে কথিত ‘লাভ জিহাদের’ বিষয়টি উগ্রবাদী হিন্দু সমাজের জন্য আইনসিদ্ধ নয়, তবে একটা চাপ বা প্রভাব তো আতদের আছেই; যখন এদেশের প্রায় ৪ শতাধিক থানার ও.সি. হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
ভারতের কট্টরপন্থি বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন প্রোপাগান্ডা চালায় যে- মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করছে। বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করার এ প্রক্রিয়াকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছে তারা। তাদের চাপেই ভারতের উত্তর প্রদেশে নতুন এ ধর্মান্তররোধী আইন হয়েছে।
ভারতে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, বিয়ের নামে ধর্ম পরিবর্তন করলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। নাবালিকা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি নারীকে ধর্মান্তর করলে ৩/১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকার জরিমানা করা হবে। গণ ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে একই মেয়াদের কারাবাস এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা হবে।
এ মনগড়া আইনের অধীনে অনেক মুসলিমকে আটক করেছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ। কথিত “লাভ জিহাদ” এর অভিযোগ তুলে মুসলিমদের হতাহত করা, বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
প্রকৃতপক্ষে, লাভ জিহাদ বলতে কিছুই নেই। মূলত এটি মুসলিম যুবকদের হত্যা কিংবা নিপীড়ন চালানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করছে হিন্দুত্ববাদীরা। আইনেও ‘লাভ জিহাদ’ -এর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও থেমে নেই হিন্দুত্ববাদী দলবল।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বলেছে, ‘এখন ‘ক্রিমিনাল অ্যাক্ট অব লাভ জিহাদ’ বলা হচ্ছে। তলিয়ে দেখলে বোঝা যায় এর মধ্যে কোন ‘জিহাদ’ নেই। একে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। জীবন যাপনের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেব স্বীকৃত। কিন্তু এই আইনের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’
আর বাংলাদেশের নওমুসলিম ফাতেমা রহমানের ব্যাপারে তার কট্টর হিন্দু পরিবার এমন কোন অভিযোগও আনতে পারছে না। তবুও বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদী দালাল সরকার-প্রশাসন ভারতের ভয়ে এতটাই ভীত যে, তারা হিন্দু পরিবার থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্ক হিন্দু মহিলাকে উদ্ধার করার সাহস করতে পারছে না।
ঐ নওমুসলিমা তরুণীকে অন্তত নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে “চেতনাবাজ” সরকারের উচিত ছিল তার পক্ষে কাজ করা এবং তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করা। আর মুসলমানদের জন্যও উচিত নয় কোন মুসলিমাকে অ-বিশ্বাসী মুশরিকদের কাছে ছেড়ে দেওয়া। কারণ এক্ষেত্রে তার জীবন ও ধর্মীয় বিশ্বাস উভয়টাই প্রবল বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর এই সব গাদ্দার শাসকরা নিজেরাই প্রকাশ্যে ইসলামবিরোধী কাজে লিপ্ত। তাদের মতাদর্শ জাতীয়তাবাদ, মার্কসবাদ, উদারতাবাদ সবগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে যায়; সবগুলোকে এদেশে তারা হিন্দুত্ববাদের সাথে মিলিয়ে-মিশিয়ে একাকার করে ফেলেছে। তাই তারা কখনোই মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। মুসলিমদেরকেই তাই এসকল দায়িত্ব ধীরে ধীরে নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিতে হবে।
বলাই বাহুল্য, এখানে আমরা শুধুমাত্র বা কেবলমাত্র একটি বিশেষ ‘চেতনাবাজ’ দলের দালালির কথা বলছি না, আমরা বলছি গোটা সিস্টেমের দালালি করা প্রসঙ্গে। কারণ অন্য কোন দলের পক্ষে এসে দালালির এই পুরো সিস্টেম কখনো পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়, যা অতীতের আমলেও প্রমাণিত। আর এদেশে সব দলই কথিত ‘প্রগতিশীলতা’ আর ‘এলিট গণতান্ত্রিক সিস্টেমের’ পূজারী; এই ঘোষণা তারা ইসলামি সিস্টেমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে প্রকাশ্যেই দিয়েছে।
আর বাংলাদেশে বসে যারা ‘জয় শ্রী রামের’ মতো উগ্রবদী শ্লোগান দিয়ে সম্মানিত আলেমদের ব্যাপারে কটূক্তি করতে পারে, সেই উগ্রবাদী হিন্দুরা অঘোষিতভাবে এদেশে দিল্লীর কট্টর ইসলামবিদ্বেষী ‘লাভ জিহাদ’ আইনও কায়েম করতেই পারে। কেননা দালাল সরকার-প্রশাসন আর গোটা সিস্টেম তো তাদের পক্ষেই রয়েছে।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
1. Orpa Saha now known as Fatema Rahman has been detained by Bangladeshi authorities and sent back to her Hindu family after she converted to Islam.
– https://tinyurl.com/33cus3me
2. video link:
– https://tinyurl.com/5ybx78c6
3. Hindutva Group Sets Fire to Houses of Muslim Man in Relationship With Adult Hindu Woman
– https://tinyurl.com/yjpe33dw
– https://tinyurl.com/r859mca6
4. MP: Bajrang Dal men nab Muslim man, hand him over to police citing ‘love jihad’
– https://tinyurl.com/yu8x8hw7
অর্পা সাহা একজন নবমুসলিম তরুণী। ইসলামের সত্যতা বুঝে গোমরাহীর পথ ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন কালিমার ছায়াতলে। আগের নাম বদলে নতুন নাম রেখেছেন ফাতেমা রহমান।
হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলিম হওয়ার পর অর্পা সাহা তার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের প্রতি একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন।
ভিডিও বার্তায় সে বলেছে, “আসসালামু আলাইকুম। আমি ফাতেমা রহমান একজন নওমুসলিম। আমার পূর্বের নাম অর্পা সাহা। আমার পিতার নাম গৌতম চন্দ্র সাহা। আমি গত পাঁচই ডিসেম্বর ময়মনসিংহ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমার বয়স এখন ২০ বছর যা আমার জন্ম নিবন্ধন ও আইডেন্টিটি কার্ড দ্বারা প্রমাণিত। আমি কারো চাপে পড়ে কিংবা আমাকে কেউ জোর জবরদস্তি করার কারণে ইসলাম গ্রহণ করায়নি। বরং আমি ইসলাম সম্পর্কে দীর্ঘদিন লেখাপড়া করে যাচাই-বাছাই করে এবং ইসলামকে ভালোবেসে এ ধর্ম গ্রহণ করেছি। আমি আবারো বলছি আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক। আমি ইসলাম সম্পর্কে সত্যতা যাচাই করে, স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি কারো চাপে পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি। আমার হিন্দু বাবা, ভাই, আত্মীয়স্বজন কাকা সকলের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো, আমার ইসলাম গ্রহণের কারণে কোন ব্যক্তি বা কাউকে কোনরূপ হয়রানি করবেন না।”
সকল প্রকার আইনী নিয়মকানুন মেনে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের নামে নওমুসলিম ফাতেমা রহমান ও তার স্বামীকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের পর সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে পুলিশ জোরপূর্বক তাকে হিন্দুদের কাছে দিয়ে দেয়। হিন্দু আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীরা তাকে নিয়ে যায়।
তাকে হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়ার পর নওমুসলিম ফাতেমা রহমানের বান্ধবী একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, তার বাবা সেখানে লিখিত দেয় যে- তাকে সম্পূর্ণভাবে ধর্ম পালন করতে দেওয়া হবে, নামাজ পড়তে দেওয়া হবে, পর্দা করতে দেওয়া হবে, তাকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। সে মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবে, তাকে কোন বাধা দেওয়া হবে না। সে একজন মুসলিম হিসেবেই বাঁচবে। কিন্তু তাকে নেওয়ার পর মুসলিমদের সাথে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইসলাম ধর্মীয় বিধিবিধানও পালন করতে দেওয়া হচ্ছে না। নামাজে বাধা দেওয়া হয়। পর্দা করতে দেওয়া হয় না এবং পূর্বের ধর্ম তাকে মানতে বাধ্য করা হয়। মানসিকভাবে আঘাত করা হয়।
নওমুসলিম ফাতেমা রহমানের বান্ধবী আরো জানিয়েছে, ১১ তারিখ থেকে আমার কাছে বারবার কাকুতি মিনতি করে বলছে তাকে বাঁচানোর জন্য। সেই বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করার জন্য। এই মর্মে আমি একটি মামলা করেছি। কিন্তু ওয়ারেন্ট আসার পরেও পুলিশ কোন সাহায্য করছে না বা তাকে উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা করছে না।
বাংলাদেশ একটি সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশ। বাংলাদেশের কথিত সাংবিধানে আর্টিকেল ৪১ ধারা ক-এর ১-এ বলা আছে যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যে কোন মতবাদ ধর্ম মানতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণে কেন তাকে জোরপূর্বক হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হল? তাকে কেন স্বাধীনভাবে তার মতাদর্শ নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দেওয়া হল না।
এটা কোন প্রেমঘটিত কারণ ছিল না অথবা টাকা পয়সার কোন ঝামেলাও ছিল না। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে তার অধিকার ছিল সে তার পছন্দ মতো ধর্ম নিয়ে বেঁচে থাকবে।
লাভ জিহাদের তকমা
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কোন মেয়ে যদি মুসলিম যুবককে বিয়ে করে, ভারতে হিন্দুত্ববাদীরা সেটিকে লাভ জিহাদ বলে চালিয়ে দেয়। ভারতজুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্রের শেষ নেই। সেই ষড়যন্ত্রের আঁচ কি তাহলে বাংলাদেশে লাগতে শুরু করেছে? যদিও এদেশে কথিত ‘লাভ জিহাদের’ বিষয়টি উগ্রবাদী হিন্দু সমাজের জন্য আইনসিদ্ধ নয়, তবে একটা চাপ বা প্রভাব তো আতদের আছেই; যখন এদেশের প্রায় ৪ শতাধিক থানার ও.সি. হিন্দু ধর্মাবলম্বী।
ভারতের কট্টরপন্থি বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন প্রোপাগান্ডা চালায় যে- মুসলমানরা পরিকল্পিতভাবে হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করছে। বিয়ের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করার এ প্রক্রিয়াকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছে তারা। তাদের চাপেই ভারতের উত্তর প্রদেশে নতুন এ ধর্মান্তররোধী আইন হয়েছে।
ভারতে বিজেপিশাসিত উত্তর প্রদেশের হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন একটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছে, বিয়ের নামে ধর্ম পরিবর্তন করলে ১ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। নাবালিকা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতি নারীকে ধর্মান্তর করলে ৩/১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকার জরিমানা করা হবে। গণ ধর্মান্তরের ক্ষেত্রে একই মেয়াদের কারাবাস এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা হবে।
এ মনগড়া আইনের অধীনে অনেক মুসলিমকে আটক করেছে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ। কথিত “লাভ জিহাদ” এর অভিযোগ তুলে মুসলিমদের হতাহত করা, বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
প্রকৃতপক্ষে, লাভ জিহাদ বলতে কিছুই নেই। মূলত এটি মুসলিম যুবকদের হত্যা কিংবা নিপীড়ন চালানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করছে হিন্দুত্ববাদীরা। আইনেও ‘লাভ জিহাদ’ -এর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও থেমে নেই হিন্দুত্ববাদী দলবল।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও বলেছে, ‘এখন ‘ক্রিমিনাল অ্যাক্ট অব লাভ জিহাদ’ বলা হচ্ছে। তলিয়ে দেখলে বোঝা যায় এর মধ্যে কোন ‘জিহাদ’ নেই। একে মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। জীবন যাপনের অধিকার তো মৌলিক অধিকার হিসেব স্বীকৃত। কিন্তু এই আইনের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।’
আর বাংলাদেশের নওমুসলিম ফাতেমা রহমানের ব্যাপারে তার কট্টর হিন্দু পরিবার এমন কোন অভিযোগও আনতে পারছে না। তবুও বাংলাদেশের হিন্দুত্ববাদী দালাল সরকার-প্রশাসন ভারতের ভয়ে এতটাই ভীত যে, তারা হিন্দু পরিবার থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী প্রাপ্তবয়স্ক হিন্দু মহিলাকে উদ্ধার করার সাহস করতে পারছে না।
ঐ নওমুসলিমা তরুণীকে অন্তত নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে “চেতনাবাজ” সরকারের উচিত ছিল তার পক্ষে কাজ করা এবং তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করা। আর মুসলমানদের জন্যও উচিত নয় কোন মুসলিমাকে অ-বিশ্বাসী মুশরিকদের কাছে ছেড়ে দেওয়া। কারণ এক্ষেত্রে তার জীবন ও ধর্মীয় বিশ্বাস উভয়টাই প্রবল বিপদে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর এই সব গাদ্দার শাসকরা নিজেরাই প্রকাশ্যে ইসলামবিরোধী কাজে লিপ্ত। তাদের মতাদর্শ জাতীয়তাবাদ, মার্কসবাদ, উদারতাবাদ সবগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে যায়; সবগুলোকে এদেশে তারা হিন্দুত্ববাদের সাথে মিলিয়ে-মিশিয়ে একাকার করে ফেলেছে। তাই তারা কখনোই মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। মুসলিমদেরকেই তাই এসকল দায়িত্ব ধীরে ধীরে নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিতে হবে।
বলাই বাহুল্য, এখানে আমরা শুধুমাত্র বা কেবলমাত্র একটি বিশেষ ‘চেতনাবাজ’ দলের দালালির কথা বলছি না, আমরা বলছি গোটা সিস্টেমের দালালি করা প্রসঙ্গে। কারণ অন্য কোন দলের পক্ষে এসে দালালির এই পুরো সিস্টেম কখনো পাল্টে দেওয়া সম্ভব নয়, যা অতীতের আমলেও প্রমাণিত। আর এদেশে সব দলই কথিত ‘প্রগতিশীলতা’ আর ‘এলিট গণতান্ত্রিক সিস্টেমের’ পূজারী; এই ঘোষণা তারা ইসলামি সিস্টেমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে প্রকাশ্যেই দিয়েছে।
আর বাংলাদেশে বসে যারা ‘জয় শ্রী রামের’ মতো উগ্রবদী শ্লোগান দিয়ে সম্মানিত আলেমদের ব্যাপারে কটূক্তি করতে পারে, সেই উগ্রবাদী হিন্দুরা অঘোষিতভাবে এদেশে দিল্লীর কট্টর ইসলামবিদ্বেষী ‘লাভ জিহাদ’ আইনও কায়েম করতেই পারে। কেননা দালাল সরকার-প্রশাসন আর গোটা সিস্টেম তো তাদের পক্ষেই রয়েছে।
লিখেছেন : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
1. Orpa Saha now known as Fatema Rahman has been detained by Bangladeshi authorities and sent back to her Hindu family after she converted to Islam.
– https://tinyurl.com/33cus3me
2. video link:
– https://tinyurl.com/5ybx78c6
3. Hindutva Group Sets Fire to Houses of Muslim Man in Relationship With Adult Hindu Woman
– https://tinyurl.com/yjpe33dw
– https://tinyurl.com/r859mca6
4. MP: Bajrang Dal men nab Muslim man, hand him over to police citing ‘love jihad’
– https://tinyurl.com/yu8x8hw7
Comment