আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে বন্ধ হচ্ছে না নদীর বালু উত্তোলন
সৌন্দর্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অমূল্য সম্পদ ঠাকুরগাঁওয়ের নদীগুলো আজ অস্তিত্ব সংকটে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে বন্ধ হচ্ছে না নদীর বালু উত্তোলন। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর দু’পাড় সঙ্কুচিত হয়ে পরিণত হচ্ছে মরা খালে, হারাচ্ছে গতীপথ। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করা হয়েছে।
এক সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের শহর সংলগ্ন টাংগন, শুক, সেনুয়া নদীগুলো ছিলো জেলার প্রাণ। কিন্তু প্রতিনিয়ত এসব নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলো আজ তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ক্ষমতাসীন স্থানীয় আওয়ামী প্রভাবশালী চক্র নির্বিচারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাড়ছে নদীভাঙন, নদী গতীপথ হারাচ্ছে দিন দিন। প্রতিবছর বর্ষা মৗসুমে নিজ বসতভিটা ও সহায়-সম্পদ হারানোর আতঙ্কে থাকে হাজারো নদী পাড়ের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা এই অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করতে পারছেন না। স্থানীয় জেলা প্রশাসন মাঝে-মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কিছুতেই থামছে না বালু উত্তোলন।
সদর উপজেলা শ্রীকৃষ্টপুর এলাকার শিবলাল হাজদা জানান, শহরের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের গ্রামের বালু উত্তোলন করে জমা করে রাখেন। সেই বালু সারাবছর বিক্রি করে কোটি টাকা আয় করেন।
আকচা ইকোপার্ক এলাকার নগেন রায় জানান, প্রতিদিন এ নদী থেকে বালু ওঠাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী চক্র। এর ফলে নদী তার নিজস্ব গতীপথ হারিয়েছে। বছরের পর বছর এই এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বর্ষাকালে ভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অনেকে। অনেকেই তাদের বসতবাড়ি স্থানান্তর করেছেন। একইভাবে ভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে আশে পাশের কৃষিজমি। একই কথা জানান ওই গ্রামের আরো অনেকে।
সালান্দর এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, চক্রটি এভাবে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। অবৈধ বালু উত্তোলন করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অনেকেই লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদী, ফসলি জমি ও নদীর তীরবর্তী মানুষ। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে ইচ্ছেমতো মাটিকাটা ও বালু উত্তোলন করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কেউ-ই মুখ খুলতে সাহস পান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাক্টরচালক ও বালু শ্রমিকরা জানান, টাঙ্গন নদীতে বালু উত্তোলনের প্রায় ১৫টি, শুক নদীর ১২টি, সেনুয়া নদীর ১০টি ঘাট রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন ট্রাক্টরে করে বালু ওঠানো হয়। এই বালু সদর উপজেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও ঠিকাদারদের সরবরাহ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘাটে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ট্রাক্টরে করে নদী থকে বালু উত্তোলন করে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করা হয়। একেকটি গাড়ি প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ট্রিপে বালু উত্তোলন করে থাকে। প্রতি গাড়ি বালু ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এর মধ্য থেকে চালক ও তিন শ্রমিক পান ৪০০ টাকা। আর বাকি ৬০০ টাকা পায় গাড়ির মালিক। প্রতিদিন ৭ গাড়ি বালু বিক্রয়ের ৭ হাজার টাকার মধ্যে শুধু মালিক একাই পান ৪ হাজার টাকা। বাকি ৩ হাজার টাকা শ্রমিক ও চালকরা ভাগাভাগি করে নেন।
ট্রাক্টর মালিক ও বালু ব্যাবসায়ি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা এরশাদ জনান, তিনি সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও এলাকার মন্দির ও মসজিদ কমিটির কাছ থেকে প্রতিবছর সেনুয়া নদীরবালু উত্তোলনের ইজারায় নিয়েছেন। এ বিষয়ে সালান্দনর ইউনিয়নের পরিষদের অনুমতিও রয়েছে। এছাড়া তিনি শুধু একাই নন, আকচা, বরুণাগাঁও, বটতলি, বখশের হাট, শ্রীকৃষ্টপুর এলাকায় অনেকেই বালুর ব্যাবসা করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন।
সালান্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান মুকুল জানান, নদী থেকে বালু তোলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বা পরিষদ থেকে কোনো অনুমতি দেয়া হয় নাই। কেউ পরিষদের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, সরকারিভাবে কোনো বালুমহল ইজারা দেয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে জিরো টলারেন্স জারি করা হয়েছে। জেলার সকল উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদে এবিষয়ে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ আইন অমান্য করে বালু উত্তোলন করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জেলার নদীগুলোতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে নদীখনন কাজ চলমান রয়েছে।
জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ১৫টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলোই মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্ধ করতে হবে নদী থেকে বালু উত্তোলন আর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা হলে এই নদীগুলোর অস্তিত্ব বাঁচাতে বলে মনে করেন সচেতন জেলাবাসী।
কালের কন্ঠ
সৌন্দর্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার অমূল্য সম্পদ ঠাকুরগাঁওয়ের নদীগুলো আজ অস্তিত্ব সংকটে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে বন্ধ হচ্ছে না নদীর বালু উত্তোলন। ফলে এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলোর দু’পাড় সঙ্কুচিত হয়ে পরিণত হচ্ছে মরা খালে, হারাচ্ছে গতীপথ। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করা হয়েছে।
এক সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের শহর সংলগ্ন টাংগন, শুক, সেনুয়া নদীগুলো ছিলো জেলার প্রাণ। কিন্তু প্রতিনিয়ত এসব নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলো আজ তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ক্ষমতাসীন স্থানীয় আওয়ামী প্রভাবশালী চক্র নির্বিচারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাড়ছে নদীভাঙন, নদী গতীপথ হারাচ্ছে দিন দিন। প্রতিবছর বর্ষা মৗসুমে নিজ বসতভিটা ও সহায়-সম্পদ হারানোর আতঙ্কে থাকে হাজারো নদী পাড়ের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবাধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা এই অবৈধ বালু উত্তোলন প্রতিরোধ করতে পারছেন না। স্থানীয় জেলা প্রশাসন মাঝে-মধ্যে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিলেও কিছুতেই থামছে না বালু উত্তোলন।
সদর উপজেলা শ্রীকৃষ্টপুর এলাকার শিবলাল হাজদা জানান, শহরের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের গ্রামের বালু উত্তোলন করে জমা করে রাখেন। সেই বালু সারাবছর বিক্রি করে কোটি টাকা আয় করেন।
আকচা ইকোপার্ক এলাকার নগেন রায় জানান, প্রতিদিন এ নদী থেকে বালু ওঠাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী চক্র। এর ফলে নদী তার নিজস্ব গতীপথ হারিয়েছে। বছরের পর বছর এই এলাকায় বালু উত্তোলনের ফলে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বর্ষাকালে ভাঙনের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অনেকে। অনেকেই তাদের বসতবাড়ি স্থানান্তর করেছেন। একইভাবে ভাঙনের কারণে হুমকিতে রয়েছে আশে পাশের কৃষিজমি। একই কথা জানান ওই গ্রামের আরো অনেকে।
সালান্দর এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, চক্রটি এভাবে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। অবৈধ বালু উত্তোলন করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা অনেকেই লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে নদী, ফসলি জমি ও নদীর তীরবর্তী মানুষ। এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে ইচ্ছেমতো মাটিকাটা ও বালু উত্তোলন করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কেউ-ই মুখ খুলতে সাহস পান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাক্টরচালক ও বালু শ্রমিকরা জানান, টাঙ্গন নদীতে বালু উত্তোলনের প্রায় ১৫টি, শুক নদীর ১২টি, সেনুয়া নদীর ১০টি ঘাট রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন ট্রাক্টরে করে বালু ওঠানো হয়। এই বালু সদর উপজেলার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও ঠিকাদারদের সরবরাহ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘাটে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি ট্রাক্টরে করে নদী থকে বালু উত্তোলন করে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় করা হয়। একেকটি গাড়ি প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ট্রিপে বালু উত্তোলন করে থাকে। প্রতি গাড়ি বালু ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়। এর মধ্য থেকে চালক ও তিন শ্রমিক পান ৪০০ টাকা। আর বাকি ৬০০ টাকা পায় গাড়ির মালিক। প্রতিদিন ৭ গাড়ি বালু বিক্রয়ের ৭ হাজার টাকার মধ্যে শুধু মালিক একাই পান ৪ হাজার টাকা। বাকি ৩ হাজার টাকা শ্রমিক ও চালকরা ভাগাভাগি করে নেন।
ট্রাক্টর মালিক ও বালু ব্যাবসায়ি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা এরশাদ জনান, তিনি সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও এলাকার মন্দির ও মসজিদ কমিটির কাছ থেকে প্রতিবছর সেনুয়া নদীরবালু উত্তোলনের ইজারায় নিয়েছেন। এ বিষয়ে সালান্দনর ইউনিয়নের পরিষদের অনুমতিও রয়েছে। এছাড়া তিনি শুধু একাই নন, আকচা, বরুণাগাঁও, বটতলি, বখশের হাট, শ্রীকৃষ্টপুর এলাকায় অনেকেই বালুর ব্যাবসা করে লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন।
সালান্দর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান মুকুল জানান, নদী থেকে বালু তোলার বিষয়ে তিনি অবগত নন। বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বা পরিষদ থেকে কোনো অনুমতি দেয়া হয় নাই। কেউ পরিষদের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. কেএম কামরুজ্জামান সেলিম জানান, সরকারিভাবে কোনো বালুমহল ইজারা দেয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে জিরো টলারেন্স জারি করা হয়েছে। জেলার সকল উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদে এবিষয়ে অবগত করা হয়েছে। এছাড়া মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ আইন অমান্য করে বালু উত্তোলন করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জেলার নদীগুলোতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে নদীখনন কাজ চলমান রয়েছে।
জেলায় ছোটবড় মিলিয়ে ১৫টি নদী রয়েছে। এর মধ্যে সবগুলোই মৃতপ্রায়। এ অবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন্ধ করতে হবে নদী থেকে বালু উত্তোলন আর অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা হলে এই নদীগুলোর অস্তিত্ব বাঁচাতে বলে মনে করেন সচেতন জেলাবাসী।
কালের কন্ঠ
Comment