ভারতের ঐতিহাসিক মসজিদগুলো ভেঙ্গে মন্দির গড়ার হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্র
প্রায় ১০০০ বছর ধরে মুসলিম শাসনের অধীনে থাকা ভারত থেকে মুসলিমদের নাম নিশানা মুছে দেয়ার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা একটি সস্তা কূটকৌশল অবলম্বন করে আসছে। ‘প্রাচীন মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল’- এই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো ভাঙ্গার পটভূমি তৈরি করছে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা।
নাপাক হিন্দুত্ববাদীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোকে বিতর্কিত করতে হিন্দুত্ববাদী আদালতে একের পর এক মামলা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল মসজিদের স্থানগুলোকে প্রথমে বিতর্কিত করা, যেন পরে হিন্দুত্ববাদী আইন আদালতের মাধ্যমে সে জায়গাগুলো দখল নিতে পারে। আর ঘটছেও এমনটাই। তারা জানে, আজ না হোক কাল হিন্দুত্ববাদী আদালত তাদের দাবির পক্ষেই রায় দিবে; যেমনটা হয়েছে বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে।
হিন্দুদের কল্পিত দেব-দেবীর কোন শেষ নেই। এগুলোর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তিও নেই। তাই যেকোনো স্থানকেই দেবদেবীর জন্মস্থান হিসেবে অবান্তর দাবি করা অসম্ভব কিছু নয়। আজ এ মসজিদ কাল ঐ মসজিদ – এ কৌশলে হিন্দুত্ববাদীরা যেকোনো মসজিদকেই ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর সূচনা হয়েছিল বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমে।
ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর থেকে একে একে প্রায় সকল ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর ব্যাপারেই আদালতে তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে যাচ্ছে।
মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানোর জন্য হিন্দুত্ববাদীরা এসব মিথ্যে মামলাকেই প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এই কূটকৌশলের কিছু নমুনা নিচে তুলে ধরা হল:
বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গ:
বাবরি মসজিদ নির্মিত হবার প্রায় ৩০০ বছর পর, ১৮২২ সালে প্রথমবারের মত হিন্দুরা দাবি করতে শুরু করে যে, যেখানে রামের জন্ম হয়েছিল ঠিক সেখানেই মন্দির ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
পরে ১৯৫০ সালে হিন্দু সংস্থাগুলো মসজিদের জমি দখলে নেওয়ার জন্য আদালতে মিথ্যে মামলা করে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ১৯৮৬ সালে কংগ্রেস নেতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধির সিদ্ধান্তে বাবরি মসজিদকে হিন্দুদের জন্য খুলে দেওয়া হয়!
ফলে হিন্দু পুরোহিতরা মসজিদে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়! শুরু হয় মসজিদের পবিত্র প্রাঙ্গনে শিরকের ঘৃণ্য উৎসব। ১৯৮৯ সালে বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের পাশেই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করে। অতঃপর ১৯৯২ সালে ঘটে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘটনাটি! উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদকে শহীদ করে দেয়। এর সূচনা করেছিল আদালতে মিথ্যে মামলা করার মাধ্যমে।
এরপর ২০১৯ সালে হিন্দুত্ববাদী সুপ্রিম কোর্ট সেই জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ করার অনুমতি দেয়। এরপর থেকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলগুলি ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদের জায়গাগুলোকে নিজেদের দাবি করে আসছে; মসজিদের জায়গাগুলোকে হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসাবে দাবি করছে।
মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী বাবরী মসজিদ ভাঙার পরে একই কৌশলে, বিশেষ করে বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদ, মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদ, জামিয়া মসজিদসহ আরও অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে।
বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদ:
ভারতে ঐতিহাসিক বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদে প্রায় ৩৫০ বছর ধরে নামাজ আদায় করছেন হিন্দের ভূমির প্রকৃত মালিক মুসলিমরা।
আইনজীবী বিজয়শঙ্কর রাস্তোগি বলেছে, ১৯৯১ সালে পণ্ডিত সোমনাথ ব্যাস এবং অন্যরা আদালতে প্রথমবারের মতো একটি পিটিশন দাখিল করে। আর এটি দাখিল করা হয় স্বয়ম্ভূ জ্যোর্তিলিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশরের পক্ষ থেকে। এতে দাবি করা হয় যে, জ্ঞানবাপি মসজিদে তাদের পুজো করার অনুমতি দিতে হবে। তাদের দাবি ছিল, মুসলিমরা মন্দির চত্বরেরই একটি অংশ দখল করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছে।
রাস্তোগি জানায়, ১৯৯৮ সালে অতিরিক্ত জেলাজজ নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল, জ্ঞানবাপি চত্বর থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে, যেন ওই মসজিদ চত্বরের ধর্মীয় অবস্থান এবং চরিত্র নির্ণয় করা যায়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট উপরোক্ত নির্দেশের উপর স্থাগিতাদেশ জারি করে। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আইনজীবী রাস্তোগি আদালতে আরেকটি আবেদন দাখিল করে অনুরোধ জানায়, পুরাতত্ত্ব বিভাগ যেন সমগ্র জ্ঞানবাপি মসজিদ চত্বরের একটি সার্ভে করে।
আইনজীবী রাস্তোগি দাবি করে, দেবতা স্বয়ম্ভূ জ্যোর্তিলিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বরের পরম মিত্র। পরম মিত্র হিসেবে সে এই পিটিশন দাখিল করে। রাস্তোগির মতে, আদালত তার আবেদন গ্রহণ করেছে।
এমনিভাবে, জ্ঞানবাপি মসজিদ প্রাঙ্গণে পূজা করার অধিকার চেয়ে হিন্দু মহিলাদের করা আবেদন বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় আদালত। হিন্দু মহিলাদের আবেদন চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আঞ্জুমান ইসলামিয়া মসজিদ কমিটির আবেদন গত ১২ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দিয়েছে উত্তর প্রদেশের বারাণসী আদালত। বারাণসীর জেলা আদালত মুসলিমদের নামাজ পড়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটিতে।
ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়ার মাওলানা খালিদ রশিদ ফিরাঙ্গি মাহালি বলেছেন, “গত ৩৫০ বছর ধরে, মুসলমানরা জ্ঞানবাপি মসজিদে নামাজ পড়ছেন এখন হঠাৎ করে নামাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিচ্ছে। যাতে পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত এবং সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক গৃহীত উপাসনালয় আইনকেও উপেক্ষা করা হয়েছে।
মথুরার শাহী ও মীনা মসজিদ:
উগ্র দীনেশ শর্মা তাদের কথিত শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি সংলগ্ন শাহী ইদগাহ মসজিদ এবং মীনা মসজিদ অপসারণের জন্য একটি মামলা করে। এছাড়াও মথুরার বিভিন্ন আদালতে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। যেখানে শাহী মসজিদের ব্যাপারে পিটিশনকারীরা দাবি করেছে, যে মসজিদগুলো ‘ভগবান কৃষ্ণের জন্মস্থান’-এ নির্মিত হয়েছে। আর মীনা মসজিদটি নাকি শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে ঠাকুর কেশব দেব মন্দিরের একটি অংশে নির্মাণ করা হয়েছিল।
গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে উত্তরপ্রদেশের বাগপতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী এবং নিশাদ দলের প্রধান উগ্র হিন্দু সঞ্জয় নিষাদ বলেছে, “মন্দিরগুলির আশেপাশে অবস্থিত মসজিদগুলিকে ‘স্বেচ্ছায়’ অপসারণ করা উচিত।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষাদ বলেছে- সে মসজিদগুলোকে এমনভাবে অপসারণ করতে চায়, যেভাবে অযোদ্ধায় বাবরী মসজিদকে ভেঙ্গে সরিয়ে দিয়েছে।
এমনিভাবে, মথুরায় মুসলিমদের মসজিদ নিয়ে মন্তব্য করেছে, উত্তর প্রদেশের সাংসদীয় প্রতিমন্ত্রী আনন্দ স্বরূপ শুকলা। তার ভাষ্যমতে মথুরা হচ্ছে তাদের কথিত কৃষ্ণ ভগবানের জন্মভূমি। আর এখানে ‘সাদা গম্বুজ’ মথুরার প্রতিটি হিন্দুদের চোখে আঘাত করে। তাই মুসলিমদের উচিত হিন্দুদের কাছে মসজিদের জায়গা হস্তান্তর করে দেওয়া। এমন সময় অবশ্যই আসবে যখন মুসলিমদেরকে এই কাজ করতেই হবে।
কথাটি আরও স্পষ্ট হয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরীর একটি কথায়। কিছুদিন আগে সে বলেছে, “কৃষ্ণ মন্দির যদি মথুরায় নির্মিত না হয়, তাহলে কোথায় নির্মিত হবে? লাহোরে?”
টিপু সুলতান মসজিদ:
টিপু মসজিদটি ২৩৬ বছর আগে নির্মিত। মসজিদটি মসজিদ-ই-আলা নামে পরিচিত।
হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী নরেন্দ্র মোদি ভিচার মঞ্চের সদস্যরা মান্ডিয়ার জেলা কালেক্টরের কাছে একটি মেমো জমা দিয়ে দাবি করেছে যে মসজিদটি একটি হনুমান মন্দিরের উপর নির্মিত এবং এটি হিন্দুদের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।
কালী মঠের ঋষি কুমার স্বামী নামে আরেক ব্যক্তি দাবি করেছে যে, ১৭৮৪ সালে হনুমান মন্দির ভেঙে ফেলার পরে মসজিদটি টিপু সুলতান তৈরি করেছিলেন। সে আরো বলেছে, টিপু সুলতানের শাসনামলে হনুমান মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। এই হিন্দুত্ববাদী ঋষি কুমার স্বামী গত জানুয়ারিতে মসজিদ ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।
কর্ণাটকের উগ্র হিন্দুপন্থী গোষ্ঠীগুলি কর্ণাটক হাইকোর্টে ১০৮টি পিটিশন দাখিল করে, যেন মান্ডিয়া জেলার শ্রীরঙ্গপাটনায় জামিয়া মসজিদের ভিতরে তাদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল সহ বেশ কয়েকটি উগ্র হিন্দুপন্থী দল দাবি করছে যে, মসজিদটি একটি হনুমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত হয়েছে। এ কারণে হিন্দুদের অধিকার রয়েছে সেখানে পূজা প্রার্থনা করার। অথচ, ১৭৮২ সালের দিকে নির্মিত মসজিদটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (ASI) দ্বারা রক্ষিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান।
উগ্র হিন্দু মঞ্জুনাথের দাবি, “এটি একটি হিন্দু মন্দির। এটা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যে কেউ ফটো এবং প্রমাণগুলি দেখে একমত হবেন যে এটি একটি হিন্দু কাঠামো। আমরা এই সব আদালতে উপস্থাপন করব। তারা পুরো মন্দির ভেঙে দেয়নি। তারা শুধুমাত্র উপরের কাঠামো ভেঙ্গে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে। বাকি বিল্ডিং অক্ষত আছে।”
সে অভিযোগ করেছে, মুসলিমরা নাকি সেখানকার মন্দিরের সকল প্রমাণ নষ্ট করছে। তাই ঐ মসজিদ থেকে মুসলিমদের বের করে দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এই মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু নেতা।
গত কয়েক মাসে, বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন এই মসজিদের জরিপ চেয়ে জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তাদের দাবি সত্য প্রমাণিত হলে মন্দিরটি পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে উগ্র হিন্দুরা।
মঞ্জুনাথ আরো বলেছে, “আমরা নিশ্চিত যে, এখন না হলেও ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময় মন্দিরটি হিন্দুদের পূজার জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে।” মঞ্জুনাথের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, প্রমাণিত হোক বা হোক এই মসজিদ তারা এক সময় দখল করবেই।”
আগ্রা জামে মসজিদ:
উত্তরপ্রদেশের মথুরার একটি আদালতে আগ্রা জামে মসজিদের ব্যাপারে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। রাজ্যটির আগ্রায় অবস্থিত জাহানারা মসজিদের (আগ্রা জামে মসজিদ নামে বেশি পরিচিত) নিচে হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের মূর্তি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই এই পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব মথুরা জামানস্থান মন্দিরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সেখান থেকে কৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে আসেন। পরে আগ্রায় জাহানারা মসজিদের নিচে সেটিকে পুঁতে রাখেন।
হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের বংশধর দাবি করা মনীশ যাদব নামের এক ব্যক্তি এবং দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের পক্ষে মথুরায় কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির লাগোয়া শাহী ঈদগাহ সরানোর দাবি জানানো আইনজীবী শৈলেন্দর সিং এই পিটিশন দায়ের করেছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, জাহানারা মসজিদের নিচে দেব-দেবী মূর্তি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এ সময় জ্ঞানবাপী মসজিদে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ চালানোর বিষয়ে বারানসির আদালতের রেফারেন্স দিয়ে জাহানারা মসজিদের ক্ষেত্রেও এমনটা করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত বিজেপির সিনিয়র উগ্র নেতাদের এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী গুণ্ডাদের খালাস করে দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী ভারতের আদালত। গত ৩১ অক্টোবর, এল কে আদভানি, উমা ভারতী, মুরলি মনোহর যোশী, কল্যাণ সিং ও অন্যান্য অভিযুক্তদেরকে উক্ত মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমরা আপিল করলে এই মুসলিম বিদ্বেষী আদালত সেই আপিল খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের খালাসের রায় বহাল রাখে।
হিন্দুত্ববাদী আদালত কখনই মুসলিম ও মসজিদের পক্ষে রায় দিবে না। ন্যায় বিচার মুসলিম উম্মাহকেই অর্জন করে নিতে হবে। আর সে জন্য ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
এমন জঘন্য কাজ করেও তাদের কোন বিচার না হওয়ায় দূঃসাহস আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো ক্রমাগত স্লোগান দিচ্ছে – “অযোধ্যা তো সিরফ ঝাকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়।” এর অর্থ হচ্ছে – অযোধ্যা তো নিছক সূচনামাত্র, কাশী এবং মথুরা এখনও বাকি আছে। আযোদ্ধার রাজপথে আমরাই, যারা বাবরী ভেঙ্গে দিয়েছি।
তাই ঐ একই কৌশলে হিন্দুত্ববাদীরা একের পর এক অন্যান্য ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করার লক্ষ্যে ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে, আমরা মুসলিমরা আমাদের পবিত্র স্থান মসজিদগুলোকে হেফাজতের যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছিতো???
তথ্যসূত্র:
1. Babri Masjid demolition: Allahabad HC dismisses appeal against acquittal of Advani, other Hindutva leaders
– https://tinyurl.com/bdfr3jr8
2. UP court orders survey of Shahi Eidgah Mosque in suit filed by Hindu Sena
– https://bit.ly/3Wm9I0P
3. Muslim Leaders Say Varanasi Court Infringing on SC, Lok Sabha
– https://tinyurl.com/5n7s8hha
4. Gyanvapi: Court says Hindu women’s plea for worship maintainable, rejects Masjid committee’s plea
– https://tinyurl.com/3v5fyz97
5. Jamia masjid row: Bajrang Dal submits PIL to Karnataka HC, demands to vacate mosque
– https://tinyurl.com/yp67zkx9
6. Karnataka: Now, Hanuman temple claim over Tipu Sultan’s mosque
– https://tinyurl.com/2p9cvxm4
7. Right-wing group chants Hanuman Chalisa, demands renaming Qutab Minar, detained
– https://tinyurl.com/5n7ryv9v
8. বাবরির মতো এবার তাজমহলও গ্রাসের চেষ্টায় হিন্দুত্ববাদীরা
– https://tinyurl.com/3dk3y4tz
9. The Hindutva Project To Rewrite History And Destroy Historic Architecture
– https://tinyurl.com/zukd4856
10. Hindutva Watch- UP minister says Muslims should ‘hand over’ Mathura mosque to Hindus;
– https://tinyurl.com/yckkukb7
প্রায় ১০০০ বছর ধরে মুসলিম শাসনের অধীনে থাকা ভারত থেকে মুসলিমদের নাম নিশানা মুছে দেয়ার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা একটি সস্তা কূটকৌশল অবলম্বন করে আসছে। ‘প্রাচীন মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল’- এই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একের পর এক ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলো ভাঙ্গার পটভূমি তৈরি করছে গেরুয়া সন্ত্রাসীরা।
নাপাক হিন্দুত্ববাদীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ঐতিহ্যবাহী মসজিদগুলোকে বিতর্কিত করতে হিন্দুত্ববাদী আদালতে একের পর এক মামলা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হল মসজিদের স্থানগুলোকে প্রথমে বিতর্কিত করা, যেন পরে হিন্দুত্ববাদী আইন আদালতের মাধ্যমে সে জায়গাগুলো দখল নিতে পারে। আর ঘটছেও এমনটাই। তারা জানে, আজ না হোক কাল হিন্দুত্ববাদী আদালত তাদের দাবির পক্ষেই রায় দিবে; যেমনটা হয়েছে বাবরী মসজিদের ক্ষেত্রে।
হিন্দুদের কল্পিত দেব-দেবীর কোন শেষ নেই। এগুলোর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তিও নেই। তাই যেকোনো স্থানকেই দেবদেবীর জন্মস্থান হিসেবে অবান্তর দাবি করা অসম্ভব কিছু নয়। আজ এ মসজিদ কাল ঐ মসজিদ – এ কৌশলে হিন্দুত্ববাদীরা যেকোনো মসজিদকেই ভেঙ্গে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর সূচনা হয়েছিল বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়ার মাধ্যমে।
ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে দেওয়ার পর থেকে একে একে প্রায় সকল ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর ব্যাপারেই আদালতে তারা একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে যাচ্ছে।
মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির বানানোর জন্য হিন্দুত্ববাদীরা এসব মিথ্যে মামলাকেই প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এই কূটকৌশলের কিছু নমুনা নিচে তুলে ধরা হল:
বাবরি মসজিদ প্রসঙ্গ:
বাবরি মসজিদ নির্মিত হবার প্রায় ৩০০ বছর পর, ১৮২২ সালে প্রথমবারের মত হিন্দুরা দাবি করতে শুরু করে যে, যেখানে রামের জন্ম হয়েছিল ঠিক সেখানেই মন্দির ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।
পরে ১৯৫০ সালে হিন্দু সংস্থাগুলো মসজিদের জমি দখলে নেওয়ার জন্য আদালতে মিথ্যে মামলা করে। দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ১৯৮৬ সালে কংগ্রেস নেতা ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধির সিদ্ধান্তে বাবরি মসজিদকে হিন্দুদের জন্য খুলে দেওয়া হয়!
ফলে হিন্দু পুরোহিতরা মসজিদে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে যায়! শুরু হয় মসজিদের পবিত্র প্রাঙ্গনে শিরকের ঘৃণ্য উৎসব। ১৯৮৯ সালে বিজেপির পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের পাশেই মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করে। অতঃপর ১৯৯২ সালে ঘটে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ঘটনাটি! উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদকে শহীদ করে দেয়। এর সূচনা করেছিল আদালতে মিথ্যে মামলা করার মাধ্যমে।
এরপর ২০১৯ সালে হিন্দুত্ববাদী সুপ্রিম কোর্ট সেই জমিতে রাম মন্দির নির্মাণ করার অনুমতি দেয়। এরপর থেকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলগুলি ভারতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক মসজিদের জায়গাগুলোকে নিজেদের দাবি করে আসছে; মসজিদের জায়গাগুলোকে হিন্দুদের তীর্থস্থান হিসাবে দাবি করছে।
মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী বাবরী মসজিদ ভাঙার পরে একই কৌশলে, বিশেষ করে বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদ, মথুরার শাহী ঈদগাহ মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদ, জামিয়া মসজিদসহ আরও অনেক ঐতিহাসিক মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছে।
বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদ:
ভারতে ঐতিহাসিক বারাণসীর জ্ঞানবাপি মসজিদে প্রায় ৩৫০ বছর ধরে নামাজ আদায় করছেন হিন্দের ভূমির প্রকৃত মালিক মুসলিমরা।
আইনজীবী বিজয়শঙ্কর রাস্তোগি বলেছে, ১৯৯১ সালে পণ্ডিত সোমনাথ ব্যাস এবং অন্যরা আদালতে প্রথমবারের মতো একটি পিটিশন দাখিল করে। আর এটি দাখিল করা হয় স্বয়ম্ভূ জ্যোর্তিলিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশরের পক্ষ থেকে। এতে দাবি করা হয় যে, জ্ঞানবাপি মসজিদে তাদের পুজো করার অনুমতি দিতে হবে। তাদের দাবি ছিল, মুসলিমরা মন্দির চত্বরেরই একটি অংশ দখল করে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করেছে।
রাস্তোগি জানায়, ১৯৯৮ সালে অতিরিক্ত জেলাজজ নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিয়েছিল, জ্ঞানবাপি চত্বর থেকে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে, যেন ওই মসজিদ চত্বরের ধর্মীয় অবস্থান এবং চরিত্র নির্ণয় করা যায়। এলাহাবাদ হাইকোর্ট উপরোক্ত নির্দেশের উপর স্থাগিতাদেশ জারি করে। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর আইনজীবী রাস্তোগি আদালতে আরেকটি আবেদন দাখিল করে অনুরোধ জানায়, পুরাতত্ত্ব বিভাগ যেন সমগ্র জ্ঞানবাপি মসজিদ চত্বরের একটি সার্ভে করে।
আইনজীবী রাস্তোগি দাবি করে, দেবতা স্বয়ম্ভূ জ্যোর্তিলিঙ্গ ভগবান বিশ্বেশ্বরের পরম মিত্র। পরম মিত্র হিসেবে সে এই পিটিশন দাখিল করে। রাস্তোগির মতে, আদালত তার আবেদন গ্রহণ করেছে।
এমনিভাবে, জ্ঞানবাপি মসজিদ প্রাঙ্গণে পূজা করার অধিকার চেয়ে হিন্দু মহিলাদের করা আবেদন বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় আদালত। হিন্দু মহিলাদের আবেদন চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আঞ্জুমান ইসলামিয়া মসজিদ কমিটির আবেদন গত ১২ সেপ্টেম্বর খারিজ করে দিয়েছে উত্তর প্রদেশের বারাণসী আদালত। বারাণসীর জেলা আদালত মুসলিমদের নামাজ পড়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটিতে।
ইসলামিক সেন্টার অফ ইন্ডিয়ার মাওলানা খালিদ রশিদ ফিরাঙ্গি মাহালি বলেছেন, “গত ৩৫০ বছর ধরে, মুসলমানরা জ্ঞানবাপি মসজিদে নামাজ পড়ছেন এখন হঠাৎ করে নামাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিচ্ছে। যাতে পার্লামেন্ট কর্তৃক পাসকৃত এবং সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক গৃহীত উপাসনালয় আইনকেও উপেক্ষা করা হয়েছে।
মথুরার শাহী ও মীনা মসজিদ:
উগ্র দীনেশ শর্মা তাদের কথিত শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি সংলগ্ন শাহী ইদগাহ মসজিদ এবং মীনা মসজিদ অপসারণের জন্য একটি মামলা করে। এছাড়াও মথুরার বিভিন্ন আদালতে বেশ কয়েকটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছে। যেখানে শাহী মসজিদের ব্যাপারে পিটিশনকারীরা দাবি করেছে, যে মসজিদগুলো ‘ভগবান কৃষ্ণের জন্মস্থান’-এ নির্মিত হয়েছে। আর মীনা মসজিদটি নাকি শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে ঠাকুর কেশব দেব মন্দিরের একটি অংশে নির্মাণ করা হয়েছিল।
গত ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে উত্তরপ্রদেশের বাগপতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় রাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী এবং নিশাদ দলের প্রধান উগ্র হিন্দু সঞ্জয় নিষাদ বলেছে, “মন্দিরগুলির আশেপাশে অবস্থিত মসজিদগুলিকে ‘স্বেচ্ছায়’ অপসারণ করা উচিত।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষাদ বলেছে- সে মসজিদগুলোকে এমনভাবে অপসারণ করতে চায়, যেভাবে অযোদ্ধায় বাবরী মসজিদকে ভেঙ্গে সরিয়ে দিয়েছে।
এমনিভাবে, মথুরায় মুসলিমদের মসজিদ নিয়ে মন্তব্য করেছে, উত্তর প্রদেশের সাংসদীয় প্রতিমন্ত্রী আনন্দ স্বরূপ শুকলা। তার ভাষ্যমতে মথুরা হচ্ছে তাদের কথিত কৃষ্ণ ভগবানের জন্মভূমি। আর এখানে ‘সাদা গম্বুজ’ মথুরার প্রতিটি হিন্দুদের চোখে আঘাত করে। তাই মুসলিমদের উচিত হিন্দুদের কাছে মসজিদের জায়গা হস্তান্তর করে দেওয়া। এমন সময় অবশ্যই আসবে যখন মুসলিমদেরকে এই কাজ করতেই হবে।
কথাটি আরও স্পষ্ট হয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতা লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরীর একটি কথায়। কিছুদিন আগে সে বলেছে, “কৃষ্ণ মন্দির যদি মথুরায় নির্মিত না হয়, তাহলে কোথায় নির্মিত হবে? লাহোরে?”
টিপু সুলতান মসজিদ:
টিপু মসজিদটি ২৩৬ বছর আগে নির্মিত। মসজিদটি মসজিদ-ই-আলা নামে পরিচিত।
হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী নরেন্দ্র মোদি ভিচার মঞ্চের সদস্যরা মান্ডিয়ার জেলা কালেক্টরের কাছে একটি মেমো জমা দিয়ে দাবি করেছে যে মসজিদটি একটি হনুমান মন্দিরের উপর নির্মিত এবং এটি হিন্দুদের কাছে হস্তান্তর করা উচিত।
কালী মঠের ঋষি কুমার স্বামী নামে আরেক ব্যক্তি দাবি করেছে যে, ১৭৮৪ সালে হনুমান মন্দির ভেঙে ফেলার পরে মসজিদটি টিপু সুলতান তৈরি করেছিলেন। সে আরো বলেছে, টিপু সুলতানের শাসনামলে হনুমান মন্দিরকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। এই হিন্দুত্ববাদী ঋষি কুমার স্বামী গত জানুয়ারিতে মসজিদ ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।
কর্ণাটকের উগ্র হিন্দুপন্থী গোষ্ঠীগুলি কর্ণাটক হাইকোর্টে ১০৮টি পিটিশন দাখিল করে, যেন মান্ডিয়া জেলার শ্রীরঙ্গপাটনায় জামিয়া মসজিদের ভিতরে তাদের পূজা করার অনুমতি দেওয়া হয়।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল সহ বেশ কয়েকটি উগ্র হিন্দুপন্থী দল দাবি করছে যে, মসজিদটি একটি হনুমান মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপর নির্মিত হয়েছে। এ কারণে হিন্দুদের অধিকার রয়েছে সেখানে পূজা প্রার্থনা করার। অথচ, ১৭৮২ সালের দিকে নির্মিত মসজিদটি ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (ASI) দ্বারা রক্ষিত একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান।
উগ্র হিন্দু মঞ্জুনাথের দাবি, “এটি একটি হিন্দু মন্দির। এটা প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যে কেউ ফটো এবং প্রমাণগুলি দেখে একমত হবেন যে এটি একটি হিন্দু কাঠামো। আমরা এই সব আদালতে উপস্থাপন করব। তারা পুরো মন্দির ভেঙে দেয়নি। তারা শুধুমাত্র উপরের কাঠামো ভেঙ্গে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে। বাকি বিল্ডিং অক্ষত আছে।”
সে অভিযোগ করেছে, মুসলিমরা নাকি সেখানকার মন্দিরের সকল প্রমাণ নষ্ট করছে। তাই ঐ মসজিদ থেকে মুসলিমদের বের করে দেয়ার জোর দাবি জানিয়েছে এই মুসলিম বিদ্বেষী হিন্দু নেতা।
গত কয়েক মাসে, বেশ কয়েকটি হিন্দু সংগঠন এই মসজিদের জরিপ চেয়ে জেলা কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তাদের দাবি সত্য প্রমাণিত হলে মন্দিরটি পুনরুদ্ধারের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে উগ্র হিন্দুরা।
মঞ্জুনাথ আরো বলেছে, “আমরা নিশ্চিত যে, এখন না হলেও ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময় মন্দিরটি হিন্দুদের পূজার জন্য ফিরিয়ে দেওয়া হবে।” মঞ্জুনাথের বক্তব্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, প্রমাণিত হোক বা হোক এই মসজিদ তারা এক সময় দখল করবেই।”
আগ্রা জামে মসজিদ:
উত্তরপ্রদেশের মথুরার একটি আদালতে আগ্রা জামে মসজিদের ব্যাপারে পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। রাজ্যটির আগ্রায় অবস্থিত জাহানারা মসজিদের (আগ্রা জামে মসজিদ নামে বেশি পরিচিত) নিচে হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের মূর্তি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতেই এই পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব মথুরা জামানস্থান মন্দিরে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সেখান থেকে কৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে আসেন। পরে আগ্রায় জাহানারা মসজিদের নিচে সেটিকে পুঁতে রাখেন।
হিন্দু দেবতা কৃষ্ণের বংশধর দাবি করা মনীশ যাদব নামের এক ব্যক্তি এবং দেবতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমানের পক্ষে মথুরায় কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির লাগোয়া শাহী ঈদগাহ সরানোর দাবি জানানো আইনজীবী শৈলেন্দর সিং এই পিটিশন দায়ের করেছে।
পিটিশনে বলা হয়েছে, জাহানারা মসজিদের নিচে দেব-দেবী মূর্তি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এ সময় জ্ঞানবাপী মসজিদে প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ চালানোর বিষয়ে বারানসির আদালতের রেফারেন্স দিয়ে জাহানারা মসজিদের ক্ষেত্রেও এমনটা করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত বিজেপির সিনিয়র উগ্র নেতাদের এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী গুণ্ডাদের খালাস করে দিয়েছিল হিন্দুত্ববাদী ভারতের আদালত। গত ৩১ অক্টোবর, এল কে আদভানি, উমা ভারতী, মুরলি মনোহর যোশী, কল্যাণ সিং ও অন্যান্য অভিযুক্তদেরকে উক্ত মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমরা আপিল করলে এই মুসলিম বিদ্বেষী আদালত সেই আপিল খারিজ করে দিয়ে অভিযুক্তদের খালাসের রায় বহাল রাখে।
হিন্দুত্ববাদী আদালত কখনই মুসলিম ও মসজিদের পক্ষে রায় দিবে না। ন্যায় বিচার মুসলিম উম্মাহকেই অর্জন করে নিতে হবে। আর সে জন্য ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
এমন জঘন্য কাজ করেও তাদের কোন বিচার না হওয়ায় দূঃসাহস আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। হিন্দুত্ববাদী দলগুলো ক্রমাগত স্লোগান দিচ্ছে – “অযোধ্যা তো সিরফ ঝাকি হ্যায়, কাশী মথুরা বাকি হ্যায়।” এর অর্থ হচ্ছে – অযোধ্যা তো নিছক সূচনামাত্র, কাশী এবং মথুরা এখনও বাকি আছে। আযোদ্ধার রাজপথে আমরাই, যারা বাবরী ভেঙ্গে দিয়েছি।
তাই ঐ একই কৌশলে হিন্দুত্ববাদীরা একের পর এক অন্যান্য ঐতিহাসিক মুসলিম স্থাপনা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীরা মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির করার লক্ষ্যে ঠিকই কাজ করে যাচ্ছে, আমরা মুসলিমরা আমাদের পবিত্র স্থান মসজিদগুলোকে হেফাজতের যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছিতো???
প্রতিবেদক : উসামা মাহমুদ
তথ্যসূত্র:
1. Babri Masjid demolition: Allahabad HC dismisses appeal against acquittal of Advani, other Hindutva leaders
– https://tinyurl.com/bdfr3jr8
2. UP court orders survey of Shahi Eidgah Mosque in suit filed by Hindu Sena
– https://bit.ly/3Wm9I0P
3. Muslim Leaders Say Varanasi Court Infringing on SC, Lok Sabha
– https://tinyurl.com/5n7s8hha
4. Gyanvapi: Court says Hindu women’s plea for worship maintainable, rejects Masjid committee’s plea
– https://tinyurl.com/3v5fyz97
5. Jamia masjid row: Bajrang Dal submits PIL to Karnataka HC, demands to vacate mosque
– https://tinyurl.com/yp67zkx9
6. Karnataka: Now, Hanuman temple claim over Tipu Sultan’s mosque
– https://tinyurl.com/2p9cvxm4
7. Right-wing group chants Hanuman Chalisa, demands renaming Qutab Minar, detained
– https://tinyurl.com/5n7ryv9v
8. বাবরির মতো এবার তাজমহলও গ্রাসের চেষ্টায় হিন্দুত্ববাদীরা
– https://tinyurl.com/3dk3y4tz
9. The Hindutva Project To Rewrite History And Destroy Historic Architecture
– https://tinyurl.com/zukd4856
10. Hindutva Watch- UP minister says Muslims should ‘hand over’ Mathura mosque to Hindus;
– https://tinyurl.com/yckkukb7
Comment