পাঠ্যপুস্তকে ‘বিষ’; আমাদের করণীয়
বেশ কিছুদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন শিক্ষাবর্ষের স্কুলের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি। ভাবলাম, কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখি আমাদের বাচ্চাদের অভিভাবক ও সচেতন মুসলিম সমাজের কেমন প্রতিক্রিয়া হয়।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু সচেতন ভাইদের আইডি থেকে বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কিছু লিখা আসলেও অভিভাবক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দই পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। উলামায়ে কেরাম যেহেতু স্কুলের শিক্ষাক্রম থেকে দূরে থাকেন, তাই উনাদের থেকেও দেরি প্রতিক্রিয়া আসাটা স্বাভাবিক।
আসলে, পাঠ্যপুস্তকগুলোতে এত এত অসঙ্গতি যে, সবগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে কমপক্ষে শত পর্বের সিরিজ রচনা করা লাগবে হয়তো। মোটা দাগে অসঙ্গতি বলতে দুইটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে – লিবারেলিজমের নামে ট্রান্সজেন্ডারের বিষ ও ইসলাম বিদ্বেষের বিষ। তবে পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিদ্বেষ নিয়ে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে, তাই এই প্রবন্ধে শুধু লিবারেলিজমের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
যদি এখনও বিষয়গুলো না দেখে থাকেন, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে, কতোটা নীচে নেমেছে বাংলাদেশের তথাকথিত গণতান্ত্রিক কুফুরি রাষ্ট্রব্যবস্থা। পশ্চিমা প্রভু ও দাদা-বাবুদের খুশি রাখতে আমাদের কোমলমতি সোনামনিদের মাথায় ‘বিষ’ ঢেলে দিতেও দ্বিধা বোধ করছে না ওরা।
এই গল্প থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে তারা শিক্ষা দিতে চায় – ‘অন্যরা আমাকে কী মনে করলো তা কোন ধর্তব্য বিষয় নয়। আমি নিজে আমাকে কী মনে করি, সেটাই আমার পরিচয়।’ তাই নয় কি?
একদিন দেখা যাবে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাসায় এসে বলতেছে, “বাবা, জানো? আমি একটা বিড়াল। কিন্তু তোমরা আমাকে দো-পেয়ে মানুষ মনে করে ভুল করছো। তোমরাই আমাকে মানুষের কোট পরিয়ে দিয়েছো। আমি এই কোট আর পরতে চাই না।”
বা এর চেয়েও খারাপ কিছু ঘটলে অবাক হবার কিছু নেই। শিশুরা এমনিতেই কল্পনা বিলাসী হয়। আর তাদের শিশুসুলভ কল্পনার জগতকে এভাবেই বিষাক্ত ও কলুষিত করে দিচ্ছে তারা।
আরও এক ধাপ নীচে নেমে, ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে আমাদের বাচ্চাদের শেখানো হবে ‘কীভাবে নিজের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে হয়?’
এক হিজড়ার গল্প এনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে –
“শরীফা বললেন, যখন আমি তোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং অবাক হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই আছি। নামটা কেবল বদলেছি। … ছোট বেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে।”
ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, কী বলছে ওরা? সহজ ভাষায় সারমর্ম অনেকটা এমন দাঁড়ায় –
‘একটি শিশু জন্মগ্রহণ করলে সমাজ ঠিক করে দেয় সে পুরুষ হবে নাকি নারী হবে! কিন্তু সমাজ যাই বলুক, তোমার শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাই বলুক, তুমি যদি মনে করো তুমি একজন পুরুষ, তাহলে তুমি পুরুষ। আর তুমি যদি মনে করো তুমি একজন নারী, তাহলে তুমি একজন নারী। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি কারও ক্ষতি করছো না, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার এই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছেই।’
এটা হচ্ছে ‘হার্ম প্রিন্সিপাল’ যার ভিত্তিতেই সমকামিতা, ইনসেস্ট, ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিষ পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে কলুষিত করে ফেলেছে।
এই হার্ম প্রিন্সিপালের কারণে পশ্চিমা সমাজে যেসকল সমস্যা দেখা দিয়েছে তার কিছু নমুনা এমন –
* আপন ভাই-বোন বলছে আমরা একে অপরকে পছন্দ করি এবং শারীরিক সম্পর্ক করি। আমরা তো কারও ক্ষতি করছি না। শুধু ভাই-বোন নয়, বাবা-মেয়ে, মা-ছেলের মধ্যেও এমন ঘৃণ্য ঘটনা অনেক আছে। নেটে সার্চ দিলে অহরহ এমন ঘটনা পাবেন।
* আমেরিকান নেভি সিলের এক চৌকশ পুরুষ অফিসার – হঠাৎ তার মনে হলো সে আসলে নারী। পুরুষের শরীরে আটকা পড়েছে। তাই অপারেশন করে সে নারী হয়ে গেলো। পরে অবশ্য সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বাংলাদেশের প্রাইভেট ক্লিনিকের মতো পশ্চিমা বিশ্বে জেন্ডার চেঞ্জের ক্লিনিক গড়ে উঠছে। মূলত উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরিরা আবেগের বশে অনেক কিছু ভাবে। তাদের আবেগকে কাজে লাগিয়েই তাদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে কথিত প্রগতিশীল আর ব্যক্তি-স্বাধীনতার পূজারীরা।
* অনেক পশ্চিমা দেশে মাদক হালাল করা হয়েছে এই হার্ম প্রিন্সিপালের ভিত্তিতেই। বিনোদনের জন্য মাদক সেবন করা যাবে, যেহেতু অন্য কারও ক্ষতি করা হচ্ছে না! অথচ মাদকসেবীর জীবনই যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সেটাকে তারা সুকৌশলে আড়াল করে যায়।
* সারা বিশ্বে যেভাবে সমকামিতার বিষ ছড়িয়ে পড়েছে, এক্ষেত্রেও এই আত্মপরিচয় ও হার্ম প্রিন্সিপাল হচ্ছে মূল। আমি পুরুষ, অন্য পুরুষের সাথেই শারীরিক সম্পর্ক করতে আমার ভালো লাগে। অন্য কারও তো ক্ষতি করছি না। বা, আমি নারী, অন্য নারীর প্রতিই আমি শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করি। অন্য কারও তো ক্ষতি করছি না।
এই হচ্ছে কথিত প্রগতিশীলদের প্রগতি আর নারীবাদী ও মানবতাবাদীদের ব্যক্তিস্বাধীনতার নমুনা; “আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত” শ্লোগানের অন্ধকার পরিণতি। প্রগতি, মানবাধিকার আর ব্যক্তিস্বাধীনতার মতো মুখরোচক পরিভাষাগুলোর বাস্তবতা হচ্ছে এই! জাফর ইকবাল আর সুলতানা কামাল গংরা আমার-আপনার সন্তানদের জন্য “মুক্ত পৃথিবী”র নামে এমন অন্ধকার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন আসতে পারে হঠাত করেই বাংলাদেশে এই পশ্চিমা বিষ কীভাবে ঢুকলো?
যাই হোক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন আমাদের করণীয় কী?
আর কিছু করেন আর নাই করেন, এই অসঙ্গতিগুলোকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। অভিভাবক হিসেবে নিজে স্কুলে যাবেন, শিক্ষককে মুখের উপর প্রশ্ন করবেন। নিজে এটা না পারলে অন্তত বাচ্চাদেরকে ধরে ধরে অসঙ্গতিগুলো দেখিয়ে দিতে হবে, যেন তারা এগুলোকে প্রশ্ন করতে শিখে।
কীভাবে প্রশ্ন করবেন বা বাচ্চাকে শিখাবেন?
একটা উদাহরণ দেই। আশা করি বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ভাল্লুকের গল্পটাই ধরেন। এখন বাচ্চাকে প্রশ্ন করতে শেখান যে, ‘বাবা, একটা কুকুর এসে যদি বলে, আমি আসলে মানুষ, কিন্তু কুকুরের কোট পরে আছি। তুমি কি তা বিশ্বাস করবে?’ বা এভাবেও বলতে পারেন – ‘বাবা, আমি যদি বলি আমি একটা ভাল্লুক, কিন্তু মানুষের কোট পরে আছি। তুমি কি তা বিশ্বাস করবে?’ অর্থাৎ, ওদের লজিকাল ফ্যালাসিগুলো বাচ্চাদের ধরিয়ে দিন।
অথচ, আমাদের জ্ঞান ও সঠিক-বেঠিক নির্ধারণের মানদণ্ড হচ্ছে মহাজ্ঞানী মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ্ তাআলার ওহী, যেই ওহীতে কোন ধরণের অসঙ্গতি নেই; যার মূলনীতি সৃষ্টির আদি থেকেই হাজার হাজার বছর ধরে নির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট। তাদের সকল নফসপূজারী জ্ঞানপাপিরা মিলেও যে ওহীর সমতুল্য একটি বাক্যও আজ পর্যন্ত রচনা করতে পারেনি। আর সেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ওহীর জ্ঞান বাদ দিয়ে আমাদেরকে শেখানো হচ্ছে কতিপয় নফস-পূজারীর কল্পনাপ্রসূত কিছু নিকৃষ্ট ধারণা! এটাই কি তাদের উন্নয়ন আর প্রগতি!?
সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে তাই এব্যাপারে আলোচনা করুন, সচেতনতা তৈরি করুন; এসব কাল্পনিক ফ্যালাসিগুলোর পরিণতি এবং অন্তঃসারশূন্যতা মানুষকে ধরিয়ে দিন। আলেম সমাজকে এ ব্যাপারে অবহিত করুন, যেন মসজিদের মিম্বারে মিম্বারে এ বিষের বিরুদ্ধে বয়ান শুরু হয়। এর আগে হেফাযতে ইসলামের আন্দোলনের কারণেই কিন্তু পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম বিদ্বেষী অনেক বিষয় বাদ দিতে বাধ্য হয়েছিল এই তাগুত সরকার।
এর বাইরে নিজেদের পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও প্রশ্ন করুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ এগুলো বুঝার পরও এগুলোকে সমর্থন করতে পারে না।
সর্বোপরি, নিজেকে, নিজের পরিবারকে, আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসুন। এই কুফুরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সে ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন এবং আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করুন। আমাদের দ্বীন ও হাজার বছরের উন্নত ইসলামি সমাজব্যবস্থায় যারা এভাবে সংশয় সৃষ্টি করে আর ফাটল ধরাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই জনমনে সংশয় তৈরি করে দিন।
এগুলো আসলে আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে পরীক্ষা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের সাথে সবসময় ছিলেন, আছেন এবং সবসময়ই থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
বেশ কিছুদিন যাবত সোশ্যাল মিডিয়াতে নতুন শিক্ষাবর্ষের স্কুলের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা দেখতে পাচ্ছি। ভাবলাম, কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখি আমাদের বাচ্চাদের অভিভাবক ও সচেতন মুসলিম সমাজের কেমন প্রতিক্রিয়া হয়।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু সচেতন ভাইদের আইডি থেকে বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কিছু লিখা আসলেও অভিভাবক ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে কোন সাড়াশব্দই পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। উলামায়ে কেরাম যেহেতু স্কুলের শিক্ষাক্রম থেকে দূরে থাকেন, তাই উনাদের থেকেও দেরি প্রতিক্রিয়া আসাটা স্বাভাবিক।
আসলে, পাঠ্যপুস্তকগুলোতে এত এত অসঙ্গতি যে, সবগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে কমপক্ষে শত পর্বের সিরিজ রচনা করা লাগবে হয়তো। মোটা দাগে অসঙ্গতি বলতে দুইটি বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে – লিবারেলিজমের নামে ট্রান্সজেন্ডারের বিষ ও ইসলাম বিদ্বেষের বিষ। তবে পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিদ্বেষ নিয়ে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে, তাই এই প্রবন্ধে শুধু লিবারেলিজমের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
যদি এখনও বিষয়গুলো না দেখে থাকেন, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না যে, কতোটা নীচে নেমেছে বাংলাদেশের তথাকথিত গণতান্ত্রিক কুফুরি রাষ্ট্রব্যবস্থা। পশ্চিমা প্রভু ও দাদা-বাবুদের খুশি রাখতে আমাদের কোমলমতি সোনামনিদের মাথায় ‘বিষ’ ঢেলে দিতেও দ্বিধা বোধ করছে না ওরা।
NCTB এর ৬ষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে আপনার বাচ্চাদের শেখানো হবে ‘আত্মপরিচয়’। ‘আমি নিজেকে যেটা মনে করি, সেটা আমার পরিচয়? নাকি সবাই আমাকে যেটা মনে করে সেটা আমার পরিচয়?’
সেখানে একটা গল্প দেয়া হয়েছে: এক ভাল্লুক জঙ্গল থেকে বের হয়েছে। মানুষজন তাকে দেখে মন করছে যে, সে ভাল্লুক নয়। বরং, পশমের কোট পড়া, দাড়িমোছ না চাঁছা একজন শ্রমিক। কাজ ফাঁকি দেয়ার জন্য ভাল্লুকের বেশ ধরেছে। ভাল্লুক যতই বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, সে আসলেই ভাল্লুক, কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না।
সেখানে একটা গল্প দেয়া হয়েছে: এক ভাল্লুক জঙ্গল থেকে বের হয়েছে। মানুষজন তাকে দেখে মন করছে যে, সে ভাল্লুক নয়। বরং, পশমের কোট পড়া, দাড়িমোছ না চাঁছা একজন শ্রমিক। কাজ ফাঁকি দেয়ার জন্য ভাল্লুকের বেশ ধরেছে। ভাল্লুক যতই বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, সে আসলেই ভাল্লুক, কিন্তু কেউ তাকে বিশ্বাস করছে না।
এই গল্প থেকে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে তারা শিক্ষা দিতে চায় – ‘অন্যরা আমাকে কী মনে করলো তা কোন ধর্তব্য বিষয় নয়। আমি নিজে আমাকে কী মনে করি, সেটাই আমার পরিচয়।’ তাই নয় কি?
একদিন দেখা যাবে, আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাসায় এসে বলতেছে, “বাবা, জানো? আমি একটা বিড়াল। কিন্তু তোমরা আমাকে দো-পেয়ে মানুষ মনে করে ভুল করছো। তোমরাই আমাকে মানুষের কোট পরিয়ে দিয়েছো। আমি এই কোট আর পরতে চাই না।”
বা এর চেয়েও খারাপ কিছু ঘটলে অবাক হবার কিছু নেই। শিশুরা এমনিতেই কল্পনা বিলাসী হয়। আর তাদের শিশুসুলভ কল্পনার জগতকে এভাবেই বিষাক্ত ও কলুষিত করে দিচ্ছে তারা।
আরও এক ধাপ নীচে নেমে, ৭ম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ে আমাদের বাচ্চাদের শেখানো হবে ‘কীভাবে নিজের লিঙ্গ নির্ধারণ করতে হয়?’
এক হিজড়ার গল্প এনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে এভাবে –
“শরীফা বললেন, যখন আমি তোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং অবাক হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই আছি। নামটা কেবল বদলেছি। … ছোট বেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে।”
“ফাতেমা: কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ছেলে-মেয়েদের চেহারা, আচরণ কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কোনো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই।
খুশি আপা: ঠিক বলেছ!
সুমন: আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমরা যেমন করে ভাবছি, অনেকেই তার চেয়ে ভিন্ন রকম করে ভাবে।
সাবা: কিন্তু সবার তো নিজের মত, নিজের অনুভূতি, নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশের স্বাধীনতা আছে!
খুশি আপা: যতক্ষণ না তাতে অন্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে, ততক্ষণ নিশ্চয়ই আছে।
শিহান: তাহলে শরীফা আপারা কার কী ক্ষতি করেছেন?
খুশি আপা: একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার শরীর দেখে আমরা ঠিক করি সে নারী নাকি পুরুষ। এটি হলো তার জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে একজন মানুষের কাছে সমাজ যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে আমরা ‘জেন্ডার’ বা ‘সামাজিক লিঙ্গ’ বলি। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে তার জেন্ডার ভূমিকা না মিললে সমাজের প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী মানুষেরা তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।”
খুশি আপা: ঠিক বলেছ!
সুমন: আমার কাছে মনে হচ্ছে, আমরা যেমন করে ভাবছি, অনেকেই তার চেয়ে ভিন্ন রকম করে ভাবে।
সাবা: কিন্তু সবার তো নিজের মত, নিজের অনুভূতি, নিজের পছন্দ-অপছন্দ প্রকাশের স্বাধীনতা আছে!
খুশি আপা: যতক্ষণ না তাতে অন্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে, ততক্ষণ নিশ্চয়ই আছে।
শিহান: তাহলে শরীফা আপারা কার কী ক্ষতি করেছেন?
খুশি আপা: একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার শরীর দেখে আমরা ঠিক করি সে নারী নাকি পুরুষ। এটি হলো তার জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে একজন মানুষের কাছে সমাজ যে আচরণ প্রত্যাশা করে তাকে আমরা ‘জেন্ডার’ বা ‘সামাজিক লিঙ্গ’ বলি। জৈবিক লিঙ্গ পরিচয়ের সঙ্গে তার জেন্ডার ভূমিকা না মিললে সমাজের প্রথাগত ধারণায় বিশ্বাসী মানুষেরা তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।”
ভালো করে খেয়াল করে দেখুন, কী বলছে ওরা? সহজ ভাষায় সারমর্ম অনেকটা এমন দাঁড়ায় –
‘একটি শিশু জন্মগ্রহণ করলে সমাজ ঠিক করে দেয় সে পুরুষ হবে নাকি নারী হবে! কিন্তু সমাজ যাই বলুক, তোমার শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাই বলুক, তুমি যদি মনে করো তুমি একজন পুরুষ, তাহলে তুমি পুরুষ। আর তুমি যদি মনে করো তুমি একজন নারী, তাহলে তুমি একজন নারী। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি কারও ক্ষতি করছো না, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমার এই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার আছেই।’
এটা হচ্ছে ‘হার্ম প্রিন্সিপাল’ যার ভিত্তিতেই সমকামিতা, ইনসেস্ট, ট্রান্সজেন্ডারের মতো বিষ পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে কলুষিত করে ফেলেছে।
এই হার্ম প্রিন্সিপালের কারণে পশ্চিমা সমাজে যেসকল সমস্যা দেখা দিয়েছে তার কিছু নমুনা এমন –
* আপন ভাই-বোন বলছে আমরা একে অপরকে পছন্দ করি এবং শারীরিক সম্পর্ক করি। আমরা তো কারও ক্ষতি করছি না। শুধু ভাই-বোন নয়, বাবা-মেয়ে, মা-ছেলের মধ্যেও এমন ঘৃণ্য ঘটনা অনেক আছে। নেটে সার্চ দিলে অহরহ এমন ঘটনা পাবেন।
* আমেরিকান নেভি সিলের এক চৌকশ পুরুষ অফিসার – হঠাৎ তার মনে হলো সে আসলে নারী। পুরুষের শরীরে আটকা পড়েছে। তাই অপারেশন করে সে নারী হয়ে গেলো। পরে অবশ্য সে স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বাংলাদেশের প্রাইভেট ক্লিনিকের মতো পশ্চিমা বিশ্বে জেন্ডার চেঞ্জের ক্লিনিক গড়ে উঠছে। মূলত উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরিরা আবেগের বশে অনেক কিছু ভাবে। তাদের আবেগকে কাজে লাগিয়েই তাদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে কথিত প্রগতিশীল আর ব্যক্তি-স্বাধীনতার পূজারীরা।
* অনেক পশ্চিমা দেশে মাদক হালাল করা হয়েছে এই হার্ম প্রিন্সিপালের ভিত্তিতেই। বিনোদনের জন্য মাদক সেবন করা যাবে, যেহেতু অন্য কারও ক্ষতি করা হচ্ছে না! অথচ মাদকসেবীর জীবনই যে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সেটাকে তারা সুকৌশলে আড়াল করে যায়।
* সারা বিশ্বে যেভাবে সমকামিতার বিষ ছড়িয়ে পড়েছে, এক্ষেত্রেও এই আত্মপরিচয় ও হার্ম প্রিন্সিপাল হচ্ছে মূল। আমি পুরুষ, অন্য পুরুষের সাথেই শারীরিক সম্পর্ক করতে আমার ভালো লাগে। অন্য কারও তো ক্ষতি করছি না। বা, আমি নারী, অন্য নারীর প্রতিই আমি শারীরিক আকর্ষণ অনুভব করি। অন্য কারও তো ক্ষতি করছি না।
এই হচ্ছে কথিত প্রগতিশীলদের প্রগতি আর নারীবাদী ও মানবতাবাদীদের ব্যক্তিস্বাধীনতার নমুনা; “আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত” শ্লোগানের অন্ধকার পরিণতি। প্রগতি, মানবাধিকার আর ব্যক্তিস্বাধীনতার মতো মুখরোচক পরিভাষাগুলোর বাস্তবতা হচ্ছে এই! জাফর ইকবাল আর সুলতানা কামাল গংরা আমার-আপনার সন্তানদের জন্য “মুক্ত পৃথিবী”র নামে এমন অন্ধকার ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন আসতে পারে হঠাত করেই বাংলাদেশে এই পশ্চিমা বিষ কীভাবে ঢুকলো?
পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান একদিনে এতো নিচে নামেনি। এর আগেও অনেক বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ হয়েছে আন্দোলন হয়েছে। তবে, এ বছর লিবারেলিজমের বিষ পাঠ্যপুস্তকে প্রবেশ করার একটা কারণ হতে পারে – ২০২১ সালে দেশের শিক্ষাখাতে ৪২৩ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। পশ্চিমা প্রভুরা তো এমনি এমনি টাকা ঢালেনি।
যাই হোক, যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন আমাদের করণীয় কী?
আর কিছু করেন আর নাই করেন, এই অসঙ্গতিগুলোকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে। অভিভাবক হিসেবে নিজে স্কুলে যাবেন, শিক্ষককে মুখের উপর প্রশ্ন করবেন। নিজে এটা না পারলে অন্তত বাচ্চাদেরকে ধরে ধরে অসঙ্গতিগুলো দেখিয়ে দিতে হবে, যেন তারা এগুলোকে প্রশ্ন করতে শিখে।
কীভাবে প্রশ্ন করবেন বা বাচ্চাকে শিখাবেন?
একটা উদাহরণ দেই। আশা করি বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
ভাল্লুকের গল্পটাই ধরেন। এখন বাচ্চাকে প্রশ্ন করতে শেখান যে, ‘বাবা, একটা কুকুর এসে যদি বলে, আমি আসলে মানুষ, কিন্তু কুকুরের কোট পরে আছি। তুমি কি তা বিশ্বাস করবে?’ বা এভাবেও বলতে পারেন – ‘বাবা, আমি যদি বলি আমি একটা ভাল্লুক, কিন্তু মানুষের কোট পরে আছি। তুমি কি তা বিশ্বাস করবে?’ অর্থাৎ, ওদের লজিকাল ফ্যালাসিগুলো বাচ্চাদের ধরিয়ে দিন।
আবার, ঐ ফাতেমা আপা যে ভাষণ দিলেন- “ছেলে-মেয়েদের চেহারা, আচরণ কাজ বা অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কোনো স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম নেই”- এই জ্ঞান উনি কোন উৎস থেকে অর্জন করেছেন।
আর উনার এই ধারণা যে আসলেই ‘সঠিক’, এটা নিশ্চিত হওয়া গেল কিভাবে?
আমরা মুসলিমরা তো আমাদের সঠিক-বেঠিক নির্ধারণ করি স্রষ্টা প্রদত্ত ওহীর ভিত্তিতে। তো উনারা যে উনাদের এই কল্পনাপ্রসূত ধারণাগুলোকে “সঠিক” মনে করছেন, সেটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করলেন? উনাদেরই মতো নফস-পূজারী এমন কিছু মানুষের কল্পনা বা ধারণার ভিত্তিতে, যাদের ধারণা ও কল্পনার মানদণ্ড ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়?
আর উনার এই ধারণা যে আসলেই ‘সঠিক’, এটা নিশ্চিত হওয়া গেল কিভাবে?
আমরা মুসলিমরা তো আমাদের সঠিক-বেঠিক নির্ধারণ করি স্রষ্টা প্রদত্ত ওহীর ভিত্তিতে। তো উনারা যে উনাদের এই কল্পনাপ্রসূত ধারণাগুলোকে “সঠিক” মনে করছেন, সেটা কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করলেন? উনাদেরই মতো নফস-পূজারী এমন কিছু মানুষের কল্পনা বা ধারণার ভিত্তিতে, যাদের ধারণা ও কল্পনার মানদণ্ড ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়?
অথচ, আমাদের জ্ঞান ও সঠিক-বেঠিক নির্ধারণের মানদণ্ড হচ্ছে মহাজ্ঞানী মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ্ তাআলার ওহী, যেই ওহীতে কোন ধরণের অসঙ্গতি নেই; যার মূলনীতি সৃষ্টির আদি থেকেই হাজার হাজার বছর ধরে নির্ধারিত ও সুনির্দিষ্ট। তাদের সকল নফসপূজারী জ্ঞানপাপিরা মিলেও যে ওহীর সমতুল্য একটি বাক্যও আজ পর্যন্ত রচনা করতে পারেনি। আর সেই স্বয়ংসম্পূর্ণ ওহীর জ্ঞান বাদ দিয়ে আমাদেরকে শেখানো হচ্ছে কতিপয় নফস-পূজারীর কল্পনাপ্রসূত কিছু নিকৃষ্ট ধারণা! এটাই কি তাদের উন্নয়ন আর প্রগতি!?
সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে তাই এব্যাপারে আলোচনা করুন, সচেতনতা তৈরি করুন; এসব কাল্পনিক ফ্যালাসিগুলোর পরিণতি এবং অন্তঃসারশূন্যতা মানুষকে ধরিয়ে দিন। আলেম সমাজকে এ ব্যাপারে অবহিত করুন, যেন মসজিদের মিম্বারে মিম্বারে এ বিষের বিরুদ্ধে বয়ান শুরু হয়। এর আগে হেফাযতে ইসলামের আন্দোলনের কারণেই কিন্তু পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম বিদ্বেষী অনেক বিষয় বাদ দিতে বাধ্য হয়েছিল এই তাগুত সরকার।
এর বাইরে নিজেদের পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও প্রশ্ন করুন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কোন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ এগুলো বুঝার পরও এগুলোকে সমর্থন করতে পারে না।
সর্বোপরি, নিজেকে, নিজের পরিবারকে, আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসুন। এই কুফুরি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে সে ব্যাপারে নিজে সচেতন হোন এবং আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করুন। আমাদের দ্বীন ও হাজার বছরের উন্নত ইসলামি সমাজব্যবস্থায় যারা এভাবে সংশয় সৃষ্টি করে আর ফাটল ধরাতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই জনমনে সংশয় তৈরি করে দিন।
এগুলো আসলে আল্লাহ তা’আলার তরফ থেকে পরীক্ষা। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের সাথে সবসময় ছিলেন, আছেন এবং সবসময়ই থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
লিখেছেন : আহমাদ ইউসুফ
Comment