টিপু সুলতানকে ‘মৌলবাদী ও নির্দয়’ শাসক উল্লেখ করে হিন্দুত্ববাদীদের বই প্রকাশ
ভারতকে ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুসলিম শাসকরা। কিন্তু নিজেদেরই অবহেলা আর গাফিলতিতে শাসন ক্ষমতা হারিয়ে মুসলিমরা এখন অসহায়। বর্তমানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আগ্রাসন চালিয়ে মুসলিম শাসকদের সকল ইতিহাস-ঐতিহ্য বিকৃত করে দিচ্ছে। মুসলিম শাসকদের দখলদার, মৌলবাদী এবং নির্দয় হিসাবে তুলে ধরছে।
মুসলিম শাসকদের মাঝে অন্যতম একজন হলেন মহীশূরের বাঘ নামে খ্যাত টিপু সুলতান। এবার আরএসএস প্রধান হঞ্চোরা টিপু সুলতানকে মৌলবাদী এবং নির্দয় মুসলিম শাসক হিসাবে তুলে ধরতে একটি বই প্রকাশ করেছে। একজন মুসলিম বিদ্বেষী মি. আদ্দান্ডা সি কারিয়াপ্পা বইটি প্রকাশের সময় তা প্রকাশ্যে আসে।
‘টিপু নিজা কানাসুগালু’ নামে বইটি অযোধ্যা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশনাটি একটি মুসলিম-বিদ্বেষী প্রকাশনা হিসেবে কুখ্যাত।
টিপু সুলতানকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মান করা হয়। এমনকি ভারতের মধ্যেও টিপু জয়ন্তী (জন্মদিন) উদযাপন করা হয়েছে দীর্ঘদিন।
গত বছর বেঙ্গালুরুতে টিপু জয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে শ্রীরাম সেনের প্রধান প্রমোদ মুথালিক এবং চরম হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা।
দক্ষিণ ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় জেলা ওয়াকফ বোর্ড কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বি এস রফিউল্লার নেতৃত্বে নভেম্বর মাসে উল্লিখিত বইটির প্রকাশনার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করায়, প্রকাশনা এক মাসের জন্য স্থগিত ছিল; বেঙ্গালুরু আদালতে একটি অযৌক্তিক মামলার শুনানির পর, বইটি ‘টিপু নিজা কানাসুগালু’- রিয়েল ড্রিমস অফ টিপু, গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ ও প্রকাশের জন্য বলা হয়। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তার বই সিদ্দু নিজা কানাসুগালুগ্ধ লঞ্চ করছে।
গেরুয়া সন্ত্রাসীরা টিপু সুলতানকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট কংগ্রেসম্যান সিদ্দারামাইয়ার সাথে তুলনা করেছে। দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে কর্ণাটকে বিজেপির উত্থান, হিন্দুত্ব ও ঘৃণার রাজনীতির অবিরাম প্রচারণা আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হয়।
জনসংখ্যার দিক থেকে, কেরালার পরে, কর্ণাটকে ভারতের উপদ্বীপীয় রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ শতাংশ মুসলিম রয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা বিশ্বাস করে যে, এই দক্ষিণ রাজ্যে মুসলমানদের উপস্থিত এবং সংখ্যা বাড়ছে, যা উত্তর-পূর্বে গঙ্গা সমতল রাজ্যগুলির উদ্দীপক।
টিপু সুলতানের উপর আক্রমণ এবং তাকে মৌলবাদী এবং নির্দয় মুসলিম শাসক হিসাবে প্রোপাগান্ডা চালানো আরএসএসের এজেন্ডার অংশ। বইটি দিয়ে বিতর্ক তৈরি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে মুসলিমবিরোধী অনুভূতিকে উস্কে দেওয়ার লক্ষেই হিন্দুত্ববাদীরা এ চক্রান্ত্র হাতে নিয়েছে।
ইতিপূর্বেও বিজেপির সন্ত্রাসীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, টিপু সুলতান হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করেছিলেন তাই তাঁর নামে কোনো সৌধ, কোনো পার্ক কিংবা কোনো কিছুরই নামকরণ করা যাবে না।
এমনিভাবে, ভারতীয় কর্ণাটকের সরকার সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে টিপু সুলতান ও তার বাবা হায়দার আলি সংক্রান্ত অধ্যায়টি বাদ দিয়েছে।
টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তাতে বিব্রত হয়ে ব্রিটিশরা টিপু সুলতানকে অত্যাচারী শাসক বলে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল। সেই ধারাই এখন হিন্দুত্ববাদীদের বলতে শোনা যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ইতিহাসবিদরা।
হিন্দুত্ববাদীরা টিপু সুলতান মসজিদ নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হিন্দুত্ববাদীরা মন্দিরের উপর মসজিদ বানানো হয়েছে বলে দাবী করছে।
টিপু সুলতান মসজিদটি ২৩৬ বছর আগে নির্মিত। ১৭৮২ সালে টিপু সুলতান এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। মসজিদটি জামা মসজিদ বা মসজিদ-ই-আলা নামেও পরিচিত।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময় নির্মিত শ্রীরঙ্গপাটনাটি পরে টিপু সুলতানের দখলে ছিল, যিনি দুর্গটিকে তার প্রাথমিক প্রতিরক্ষা ঘাঁটি বানিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ব্রিটিশ সন্ত্রাসীদের আক্রমণে টিপু সুলতান ঐ দুর্গেই শাহাদাত বরণ করেন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আসা মহান বীর হিসেবে ইতিহাসের বইয়ে সম্মানিত টিপু সুলতানকে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো গোঁড়া, মৌলবাদী এবং নির্দয় বলে অভিহিত করছে।
তথ্যসূত্র:
——–
১. মহীশূরের টিপু সুলতানকে ‘মৌলবাদী ও নির্দয়’ শাসক হিসেবে তুুলে ধরতে ভারতে বই প্রকাশ
– https://tinyurl.com/5zk9s3ft
ভারতকে ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মুসলিম শাসকরা। কিন্তু নিজেদেরই অবহেলা আর গাফিলতিতে শাসন ক্ষমতা হারিয়ে মুসলিমরা এখন অসহায়। বর্তমানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা আগ্রাসন চালিয়ে মুসলিম শাসকদের সকল ইতিহাস-ঐতিহ্য বিকৃত করে দিচ্ছে। মুসলিম শাসকদের দখলদার, মৌলবাদী এবং নির্দয় হিসাবে তুলে ধরছে।
মুসলিম শাসকদের মাঝে অন্যতম একজন হলেন মহীশূরের বাঘ নামে খ্যাত টিপু সুলতান। এবার আরএসএস প্রধান হঞ্চোরা টিপু সুলতানকে মৌলবাদী এবং নির্দয় মুসলিম শাসক হিসাবে তুলে ধরতে একটি বই প্রকাশ করেছে। একজন মুসলিম বিদ্বেষী মি. আদ্দান্ডা সি কারিয়াপ্পা বইটি প্রকাশের সময় তা প্রকাশ্যে আসে।
‘টিপু নিজা কানাসুগালু’ নামে বইটি অযোধ্যা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশনাটি একটি মুসলিম-বিদ্বেষী প্রকাশনা হিসেবে কুখ্যাত।
টিপু সুলতানকে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত ও সম্মান করা হয়। এমনকি ভারতের মধ্যেও টিপু জয়ন্তী (জন্মদিন) উদযাপন করা হয়েছে দীর্ঘদিন।
গত বছর বেঙ্গালুরুতে টিপু জয়ন্তীর অনুষ্ঠানকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে শ্রীরাম সেনের প্রধান প্রমোদ মুথালিক এবং চরম হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সদস্যরা।
দক্ষিণ ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় জেলা ওয়াকফ বোর্ড কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান বি এস রফিউল্লার নেতৃত্বে নভেম্বর মাসে উল্লিখিত বইটির প্রকাশনার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করায়, প্রকাশনা এক মাসের জন্য স্থগিত ছিল; বেঙ্গালুরু আদালতে একটি অযৌক্তিক মামলার শুনানির পর, বইটি ‘টিপু নিজা কানাসুগালু’- রিয়েল ড্রিমস অফ টিপু, গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ ও প্রকাশের জন্য বলা হয়। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি তার বই সিদ্দু নিজা কানাসুগালুগ্ধ লঞ্চ করছে।
গেরুয়া সন্ত্রাসীরা টিপু সুলতানকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিশিষ্ট কংগ্রেসম্যান সিদ্দারামাইয়ার সাথে তুলনা করেছে। দক্ষিণ ভারতে, বিশেষ করে কর্ণাটকে বিজেপির উত্থান, হিন্দুত্ব ও ঘৃণার রাজনীতির অবিরাম প্রচারণা আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হয়।
জনসংখ্যার দিক থেকে, কেরালার পরে, কর্ণাটকে ভারতের উপদ্বীপীয় রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয়-সর্বোচ্চ শতাংশ মুসলিম রয়েছে। হিন্দুত্ববাদীরা বিশ্বাস করে যে, এই দক্ষিণ রাজ্যে মুসলমানদের উপস্থিত এবং সংখ্যা বাড়ছে, যা উত্তর-পূর্বে গঙ্গা সমতল রাজ্যগুলির উদ্দীপক।
টিপু সুলতানের উপর আক্রমণ এবং তাকে মৌলবাদী এবং নির্দয় মুসলিম শাসক হিসাবে প্রোপাগান্ডা চালানো আরএসএসের এজেন্ডার অংশ। বইটি দিয়ে বিতর্ক তৈরি করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে মুসলিমবিরোধী অনুভূতিকে উস্কে দেওয়ার লক্ষেই হিন্দুত্ববাদীরা এ চক্রান্ত্র হাতে নিয়েছে।
ইতিপূর্বেও বিজেপির সন্ত্রাসীরা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, টিপু সুলতান হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করেছিলেন তাই তাঁর নামে কোনো সৌধ, কোনো পার্ক কিংবা কোনো কিছুরই নামকরণ করা যাবে না।
এমনিভাবে, ভারতীয় কর্ণাটকের সরকার সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যসূচি থেকে টিপু সুলতান ও তার বাবা হায়দার আলি সংক্রান্ত অধ্যায়টি বাদ দিয়েছে।
টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, তাতে বিব্রত হয়ে ব্রিটিশরা টিপু সুলতানকে অত্যাচারী শাসক বলে প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিল। সেই ধারাই এখন হিন্দুত্ববাদীদের বলতে শোনা যাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষক ইতিহাসবিদরা।
হিন্দুত্ববাদীরা টিপু সুলতান মসজিদ নিয়েও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হিন্দুত্ববাদীরা মন্দিরের উপর মসজিদ বানানো হয়েছে বলে দাবী করছে।
টিপু সুলতান মসজিদটি ২৩৬ বছর আগে নির্মিত। ১৭৮২ সালে টিপু সুলতান এটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। মসজিদটি জামা মসজিদ বা মসজিদ-ই-আলা নামেও পরিচিত।
বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সময় নির্মিত শ্রীরঙ্গপাটনাটি পরে টিপু সুলতানের দখলে ছিল, যিনি দুর্গটিকে তার প্রাথমিক প্রতিরক্ষা ঘাঁটি বানিয়েছিলেন বলে জানা যায়। ব্রিটিশ সন্ত্রাসীদের আক্রমণে টিপু সুলতান ঐ দুর্গেই শাহাদাত বরণ করেন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে আসা মহান বীর হিসেবে ইতিহাসের বইয়ে সম্মানিত টিপু সুলতানকে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো গোঁড়া, মৌলবাদী এবং নির্দয় বলে অভিহিত করছে।
তথ্যসূত্র:
——–
১. মহীশূরের টিপু সুলতানকে ‘মৌলবাদী ও নির্দয়’ শাসক হিসেবে তুুলে ধরতে ভারতে বই প্রকাশ
– https://tinyurl.com/5zk9s3ft
Comment