হিন্দুত্ববাদী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন | ‘ক্রাইম পেট্রোল’-এর প্রভাবে দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে খুন-খারাবি
অভিনব কৌশলে বাসাবাড়িতে ঢুকে ডাকাতি করেছে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বেশ কয়েকটি ঘটনার পর সিসি টিভি ফুটেজ দেখে সনাক্ত করা হয় তাদের। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে তাদের। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করে তারা জানিয়েছে, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখেই ডাকাতির কৌশল শিখেছে তারা।
গ্রেফতারকৃতদের একজন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আরেকজন পাবনার সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অপরজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করছে।
জানা যায়, মেডিক্যাল প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে গত ১০ জানুয়ারি পাবনা শহরের একটি বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু তাদের সন্দেহজনক মনে হলে ভিডিও ধারণ করতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরদিন দুপুরে পাবনার বড় বাজার এলাকায় কোচিং সেন্টারের শিক্ষক পরিচয়ে এক বাসায় ঢুকে গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে ৭২ হাজার টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
পাবনায় গ্রেফতারকৃত তিন ডাকাত শিক্ষার্থী। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
শুধু এখানেই শেষ নয়; পুরো দেশ জুড়েই বেড়েছে বীভৎস, বিকৃত, রোমহর্ষক খুনের ঘটনা। আপনজনরাও ঘটাচ্ছে অবিশ্বাস্য সব খুন-খারাবি। পরকিয়ার জেরে মা খুন করছে সন্তানকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে। খুনের পর লাশ রাখা হচ্ছে শয়নকক্ষে, ফ্রিজে, রাস্তায়, বালুর ভেতর, বস্তার ভেতর, কাদায়, পানির ট্যাংকে, ড্রেনে কিংবা ডাস্টবিনে। প্রায়ই এমন বর্বরোচিত খুনের ঘটনা ঘটছে সমাজে।
এসব ঘটনার পর ধৃত আসামীদের কাছ থেকে মিলছে অকল্পনীয় সব তথ্য। বেশিরভাগ খুন-খারাবি সংঘটিত হচ্ছে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে। এটি কারও মন গড়া কথা নয়, খোদ আসামীরাই স্বীকার করছে যে, তারা ক্রাইম পেট্রোল দেখেই অভিনব পদ্ধতিতে খুনের এসব কৌশল রপ্ত করছে।
সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড হচ্ছে শিশু আয়াতের খুনের ঘটনা। গত ১৪ নভেম্বর, চট্টগ্রামের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ ও খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয় আবীর নামের এক যুবক। জানা যায়, স্থানীয় মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করে হত্যা করে আবীর। পুলিশের কাছে আবীর স্বীকার করছে যে, ‘ক্রাইম পেট্রোল’ ও ‘সিআইডি’ আবীরের পছন্দের সিরিয়াল। শিশু আয়াতকে হত্যায় সে পুরো পরিকল্পনাটি সাজিয়েছে এসব অনুষ্ঠান দেখেই।
শিশু আয়াত। ফাইল ছবি
“মূলত, মুক্তিপণ আদায়, লাশ গুম, আলামত নষ্ট সবকিছুই টিভি সিরিয়াল থেকে শিখেছে বলে দাবি করেছে আবীর। শিশুটির দেহ ছয় টুকরো করে পলিথিনের প্যাকেটে মুড়িয়ে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। আর লাশ কাটার পর বাড়িতে ট্যালকম পাউডার ও সুগন্ধি ছিটিয়েছে।
ক্রাইম পেট্রোল কী?
এটি একটি ভারতীয় টিভি সিরিজ। এর মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী ভারতের সামাজিক অবক্ষয় ও সকল অপরাধকে নাটক বা সিরিয়ালে রুপ দিয়েছে তারা। ২০০৩ সালের ৯ মে ভারতের সনি এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলে অপরাধের তদন্তমূলক এই সিরিয়াল সম্প্রচার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত হাজারো পর্ব হয়েছে এই সিরিয়ালের।
মূলত হিন্দি ভাষায় সিরিজটি তৈরি হলেও পরে বাংলা ভাষায় সম্প্রচার শুরু হয়। আর ভারতের দালাল গাদ্দার সরকার এই সিরিজ বাংলাদেশেও সম্প্রচারের সুযোগ করে দেয়। শুধু ক্রাইম পেট্রোলই নয়, ভারতের পরকীয়ানির্ভর একাধিক টিভি চ্যানেল অবাধে বাংলাদেশে সম্প্রচারের সুযোগ দিয়ে রেখেছে গাদ্দার সরকার। এগুলোর মধ্যে স্টার জলসা নামক চ্যানেলটি অন্যতম, যা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দালাল সরকার বিষটি কখনোই গুরুত্ব দেয়নি।
ফলে মিডিয়ার মাধ্যমে অনায়াসেই হিন্দুত্ববাদী মুশরিক সমাজের সকল কৃষ্টি-কালচার আমাদের মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। ফলস্বরুপ, আমাদের সমাজেও আজ এমন ঘটনা ঘটছে যা আগে কখনো এ দেশের মানুষ কল্পনাও করেনি। কিন্তু এখন তা অহরহ ঘটছে।
‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে আমাদের দেশে সংঘটিত কতিপয় অপরাধ:
গাজীপুরের কাশিমপুরে শৈলডুবি এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝে থেকে জাহিদুল ইসলাম নামে একজনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে শেষে পুলিশ জানায়, ‘ক্রাইম পেট্রোল দেখে’ জাহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারই স্ত্রী ও তার স্ত্রীর পরকীয়া বন্ধু। খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করে ঘুমন্ত জাহিদুলকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
গত বছরের (২০২২) ২১ জুন ঢাকার কদমতলীর একটি বাসা থেকে মাসুদ রানা, তার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম ও মেয়ে জান্নাতুলের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, ওই দম্পতির আরেক মেয়ে মেহজাবিন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ থেকে প্রথমে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে সে, পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। আর একাই একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার ওই পরিকল্পনা সে সাজিয়েছিল ‘ক্রাইম পেট্রোল দেখে’।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর গাজীপুরেরর আলোচিত শিশু সাদমান ইকবাল রাকিন হত্যার ঘটনাতেও ‘ক্রাইম পেট্রোলের’ প্রভাবের কথা জানা গিয়েছিল।
২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ এলাকায় গৃহবধূ হাসিনা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ জানায়, গয়না ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতে হাসিনাকে হত্যা করেছে তারই আপন দেবর। সে এই পরিকল্পনা সাজিয়েছিল ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখেই।
২০১৬ সালে সালের ২৩ এপ্রিল, রাজশাহীর হোটেল নাইস-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া নাসরীন নামে দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় পুলিশ প্রথমে একে আত্মহত্যা বলে মনে করেছিল। কিন্তু তিন বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তে জানা যায়, ওই জুটি হত্যার শিকার হয়েছিলেন। ‘প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে’ নাইস হোটেলের দুই কর্মীকে হাত করে ভবনের এসির ফোঁকড় দিয়ে তাদের কক্ষে ঢুকে খুনের পর একইভাবে পালিয়ে যায় অপরাধীরা। সেখানেও ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে খুনিরা ওই পরিকল্পনা সাজিয়েছিল।
এগুলো ছাড়াও, ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল দিনাজপুরের হাকিমপুরের মুহাড়াপাড়া গ্রামে চার বছরের শিশু আবতাহী আল রশীদ অপহরণ ও হত্যা এবং ২০২২ সালের ৮ জুন পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে ১৩ বছরের শিশু সালাউদ্দিন হত্যা, ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরে স্কুলছাত্রী হত্যা, ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলসি গ্রামে দুই সন্তানসহ এক দম্পতিকে হত্যার ঘটনায়ও ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের প্রসঙ্গে উঠে আসে।
কোন জাতিকে রক্তপাত ব্যতীত পরাজিত করার একটি কৌশল হচ্ছে টার্গেটকৃত জাতির যুব সমাজকে তাদের নীতি-আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা। আর ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে শত্রুতা পোষণকারী হিন্দুত্ববাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই মুসলিমদের হটিয়ে কথিত হিন্দু রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে মিডিয়ার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ফলে এ দেশের মুসলিম যুব-সমাজ আজ নিজেদের নীতি-আদর্শ ভুলে অজান্তেই হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে হৃদয়ে লালন করছে।
এক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদীরা অনেকটাই সফলতা লাভ করেছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। সাম্প্রতিক খুন-খারাবির ঘটনা এর বড় প্রমাণ। অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি ক্ষতি হবার আগেই আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। নিজ সন্তানদেরকে ভারতীয় টিভি-সিরিয়াল থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন রুখে দেয়ার জন্য নববী সুন্নাহ অনুযায়ী নিজ সন্তানদের গড়ে তোলাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অভিনব কৌশলে বাসাবাড়িতে ঢুকে ডাকাতি করেছে একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী। বেশ কয়েকটি ঘটনার পর সিসি টিভি ফুটেজ দেখে সনাক্ত করা হয় তাদের। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে তাদের। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির বিষয়টি স্বীকার করে তারা জানিয়েছে, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখেই ডাকাতির কৌশল শিখেছে তারা।
গ্রেফতারকৃতদের একজন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আরেকজন পাবনার সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অপরজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করছে।
জানা যায়, মেডিক্যাল প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে গত ১০ জানুয়ারি পাবনা শহরের একটি বাসায় ঢোকার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু তাদের সন্দেহজনক মনে হলে ভিডিও ধারণ করতে গেলে তারা পালিয়ে যায়। পরদিন দুপুরে পাবনার বড় বাজার এলাকায় কোচিং সেন্টারের শিক্ষক পরিচয়ে এক বাসায় ঢুকে গৃহবধূর হাত-পা বেঁধে ৭২ হাজার টাকা ও চার ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
পাবনায় গ্রেফতারকৃত তিন ডাকাত শিক্ষার্থী। ছবি: বাংলা ট্রিবিউন
শুধু এখানেই শেষ নয়; পুরো দেশ জুড়েই বেড়েছে বীভৎস, বিকৃত, রোমহর্ষক খুনের ঘটনা। আপনজনরাও ঘটাচ্ছে অবিশ্বাস্য সব খুন-খারাবি। পরকিয়ার জেরে মা খুন করছে সন্তানকে, স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, স্বামী পুড়িয়ে মারছে স্ত্রীকে। খুনের পর লাশ রাখা হচ্ছে শয়নকক্ষে, ফ্রিজে, রাস্তায়, বালুর ভেতর, বস্তার ভেতর, কাদায়, পানির ট্যাংকে, ড্রেনে কিংবা ডাস্টবিনে। প্রায়ই এমন বর্বরোচিত খুনের ঘটনা ঘটছে সমাজে।
এসব ঘটনার পর ধৃত আসামীদের কাছ থেকে মিলছে অকল্পনীয় সব তথ্য। বেশিরভাগ খুন-খারাবি সংঘটিত হচ্ছে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে। এটি কারও মন গড়া কথা নয়, খোদ আসামীরাই স্বীকার করছে যে, তারা ক্রাইম পেট্রোল দেখেই অভিনব পদ্ধতিতে খুনের এসব কৌশল রপ্ত করছে।
সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত একটি হত্যাকাণ্ড হচ্ছে শিশু আয়াতের খুনের ঘটনা। গত ১৪ নভেম্বর, চট্টগ্রামের শিশু আলিনা ইসলাম আয়াত নিখোঁজ ও খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয় আবীর নামের এক যুবক। জানা যায়, স্থানীয় মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করে হত্যা করে আবীর। পুলিশের কাছে আবীর স্বীকার করছে যে, ‘ক্রাইম পেট্রোল’ ও ‘সিআইডি’ আবীরের পছন্দের সিরিয়াল। শিশু আয়াতকে হত্যায় সে পুরো পরিকল্পনাটি সাজিয়েছে এসব অনুষ্ঠান দেখেই।
শিশু আয়াত। ফাইল ছবি
“মূলত, মুক্তিপণ আদায়, লাশ গুম, আলামত নষ্ট সবকিছুই টিভি সিরিয়াল থেকে শিখেছে বলে দাবি করেছে আবীর। শিশুটির দেহ ছয় টুকরো করে পলিথিনের প্যাকেটে মুড়িয়ে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। আর লাশ কাটার পর বাড়িতে ট্যালকম পাউডার ও সুগন্ধি ছিটিয়েছে।
ক্রাইম পেট্রোল কী?
এটি একটি ভারতীয় টিভি সিরিজ। এর মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী ভারতের সামাজিক অবক্ষয় ও সকল অপরাধকে নাটক বা সিরিয়ালে রুপ দিয়েছে তারা। ২০০৩ সালের ৯ মে ভারতের সনি এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলে অপরাধের তদন্তমূলক এই সিরিয়াল সম্প্রচার শুরু হয়। এখন পর্যন্ত হাজারো পর্ব হয়েছে এই সিরিয়ালের।
মূলত হিন্দি ভাষায় সিরিজটি তৈরি হলেও পরে বাংলা ভাষায় সম্প্রচার শুরু হয়। আর ভারতের দালাল গাদ্দার সরকার এই সিরিজ বাংলাদেশেও সম্প্রচারের সুযোগ করে দেয়। শুধু ক্রাইম পেট্রোলই নয়, ভারতের পরকীয়ানির্ভর একাধিক টিভি চ্যানেল অবাধে বাংলাদেশে সম্প্রচারের সুযোগ দিয়ে রেখেছে গাদ্দার সরকার। এগুলোর মধ্যে স্টার জলসা নামক চ্যানেলটি অন্যতম, যা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দালাল সরকার বিষটি কখনোই গুরুত্ব দেয়নি।
ফলে মিডিয়ার মাধ্যমে অনায়াসেই হিন্দুত্ববাদী মুশরিক সমাজের সকল কৃষ্টি-কালচার আমাদের মুসলিম সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। ফলস্বরুপ, আমাদের সমাজেও আজ এমন ঘটনা ঘটছে যা আগে কখনো এ দেশের মানুষ কল্পনাও করেনি। কিন্তু এখন তা অহরহ ঘটছে।
‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে আমাদের দেশে সংঘটিত কতিপয় অপরাধ:
গাজীপুরের কাশিমপুরে শৈলডুবি এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির মেঝে থেকে জাহিদুল ইসলাম নামে একজনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তদন্তে শেষে পুলিশ জানায়, ‘ক্রাইম পেট্রোল দেখে’ জাহিদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারই স্ত্রী ও তার স্ত্রীর পরকীয়া বন্ধু। খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করে ঘুমন্ত জাহিদুলকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
গত বছরের (২০২২) ২১ জুন ঢাকার কদমতলীর একটি বাসা থেকে মাসুদ রানা, তার স্ত্রী মৌসুমি ইসলাম ও মেয়ে জান্নাতুলের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে, ওই দম্পতির আরেক মেয়ে মেহজাবিন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষোভ থেকে প্রথমে সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে সে, পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে। আর একাই একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার ওই পরিকল্পনা সে সাজিয়েছিল ‘ক্রাইম পেট্রোল দেখে’।
গত বছরের ১১ ডিসেম্বর গাজীপুরেরর আলোচিত শিশু সাদমান ইকবাল রাকিন হত্যার ঘটনাতেও ‘ক্রাইম পেট্রোলের’ প্রভাবের কথা জানা গিয়েছিল।
২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ এলাকায় গৃহবধূ হাসিনা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ জানায়, গয়না ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতে হাসিনাকে হত্যা করেছে তারই আপন দেবর। সে এই পরিকল্পনা সাজিয়েছিল ভারতীয় টিভি সিরিয়াল দেখেই।
২০১৬ সালে সালের ২৩ এপ্রিল, রাজশাহীর হোটেল নাইস-এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমাইয়া নাসরীন নামে দুজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় পুলিশ প্রথমে একে আত্মহত্যা বলে মনে করেছিল। কিন্তু তিন বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তে জানা যায়, ওই জুটি হত্যার শিকার হয়েছিলেন। ‘প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে’ নাইস হোটেলের দুই কর্মীকে হাত করে ভবনের এসির ফোঁকড় দিয়ে তাদের কক্ষে ঢুকে খুনের পর একইভাবে পালিয়ে যায় অপরাধীরা। সেখানেও ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে খুনিরা ওই পরিকল্পনা সাজিয়েছিল।
এগুলো ছাড়াও, ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল দিনাজপুরের হাকিমপুরের মুহাড়াপাড়া গ্রামে চার বছরের শিশু আবতাহী আল রশীদ অপহরণ ও হত্যা এবং ২০২২ সালের ৮ জুন পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে ১৩ বছরের শিশু সালাউদ্দিন হত্যা, ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর লক্ষ্মীনারায়ণপুরে স্কুলছাত্রী হত্যা, ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলসি গ্রামে দুই সন্তানসহ এক দম্পতিকে হত্যার ঘটনায়ও ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের প্রসঙ্গে উঠে আসে।
কোন জাতিকে রক্তপাত ব্যতীত পরাজিত করার একটি কৌশল হচ্ছে টার্গেটকৃত জাতির যুব সমাজকে তাদের নীতি-আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলা। আর ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে শত্রুতা পোষণকারী হিন্দুত্ববাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই মুসলিমদের হটিয়ে কথিত হিন্দু রাষ্ট্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে মিডিয়ার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ফলে এ দেশের মুসলিম যুব-সমাজ আজ নিজেদের নীতি-আদর্শ ভুলে অজান্তেই হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে হৃদয়ে লালন করছে।
এক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদীরা অনেকটাই সফলতা লাভ করেছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। সাম্প্রতিক খুন-খারাবির ঘটনা এর বড় প্রমাণ। অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি ক্ষতি হবার আগেই আমাদের এখনই সচেতন হতে হবে। নিজ সন্তানদেরকে ভারতীয় টিভি-সিরিয়াল থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন রুখে দেয়ার জন্য নববী সুন্নাহ অনুযায়ী নিজ সন্তানদের গড়ে তোলাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক : মুহাম্মাদ ইব্রাহীম
তথ্যসূত্র :
১। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে কৌশল শিখে বাসায় ডাকাতি ৩ শিক্ষার্থীর
– https://tinyurl.com/569dv6rd
২। ‘ক্রাইম পেট্রোল দেখে’ শিশুকে অপহরণ, মুক্তিপণ না দেওয়ায় হত্যা
– https://tinyurl.com/bdet5z8t
৩। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা
– https://tinyurl.com/55w89vu2
৪। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে অদিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রনি
– https://tinyurl.com/s78k9x
৫। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে পরিবারের চারজনকে হত্যা!
– https://tinyurl.com/ymbe9y45
১। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে কৌশল শিখে বাসায় ডাকাতি ৩ শিক্ষার্থীর
– https://tinyurl.com/569dv6rd
২। ‘ক্রাইম পেট্রোল দেখে’ শিশুকে অপহরণ, মুক্তিপণ না দেওয়ায় হত্যা
– https://tinyurl.com/bdet5z8t
৩। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে শিশুকে অপহরণের পর হত্যা
– https://tinyurl.com/55w89vu2
৪। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে অদিতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রনি
– https://tinyurl.com/s78k9x
৫। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে পরিবারের চারজনকে হত্যা!
– https://tinyurl.com/ymbe9y45