ইউপিতে গোহত্যার অভিযোগে মুসলিম খুন: ন্যায়বিচার পেতে পরিবারগুলোর অপেক্ষা
উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ গোহত্যার অভিযোগে ‘ভুয়া এনকাউন্টার’ চালিয়ে ৪৫ বছর বয়সী একজন মুসলিম কৃষককে খুন করে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, থিটকি গ্রামের কৃষক জিশান হায়দার পুলিশের গুলি বিদ্ধ হওয়ার পর জেলা হাসপাতালে মারা যান। তার পরিবার ও গ্রামবাসী জানিয়েছেন তিনি কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না। বরং হিন্দুত্ববাদী পুলিশ’ভুয়া এনকাউন্টার’ চালিয়ে তাকে খুন করেছিল।
খুনের প্রায় দেড় বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও খুনিদের কোন বিচার হয়নি। এই বছরের ১৯ জানুয়ারী, সাহারানপুরের সিজেএম আদালত প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে খুনি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়।
সাহারানপুর জেলা আধিকারিক কর্তৃক দাখিল করা হলফনামায় মিসেস আফরোজ (জিশানের স্ত্রী) দ্বারা উত্থাপিত অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জিশানের চাচাতো ভাই সৈয়দ ঈসা রাজা জানিয়েছে, সমালোচনার মুখে পুলিশ ২২ জানুয়ারী ১২ জন পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। খুনের সাথে জড়িতরা হল সাব-ইন্সপেক্টর যশপাল সিং, আসগর আলি এবং ওমবীর সিং, হেড কনস্টেবল সুখপাল সিং এবং কনস্টেবল ভারত সিং, বিপিন কুমার, প্রমোদ কুমার, রাজবীর সিং (এখন অবসরপ্রাপ্ত), নীতু যাদব, দেবেন্দ্র কুমার (অবসরপ্রাপ্ত), ব্রিজেশ (অবসরপ্রাপ্ত) ) এবং অঙ্কিত কুমার।
তবে রাজা জানিয়েছেন, খুনের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যরা নিজেদের পদে বহাল থাকলে মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হতে পারে না। “যতক্ষণ এই পুলিশ সদস্যরা তাদের ইউনিফর্মে থাকবে ততক্ষণ তদন্ত সুষ্ঠু হবে না। তাদের সাসপেন্ড করা উচিত। তবেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
তার মৃত্যুকালীন পরিস্থিতি বর্ণনা করে আফরোজ আদালতকে বলেছেন, তার স্বামী কোন অপরাধী ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। তবে পুলিশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে তার বিরূপ সম্পর্ক ছিল। ৪-৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ এর মধ্যবর্তী রাতে, জিশান তাকে বলেছিলেন যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে কিছু তদন্তের জন্য ডেকেছিলেন। পরে তার ফোন বন্ধ থাকায় তাকে আর পাওয়া যায়নি। সকালে তিনি জানতে পারেন তার স্বামীকে গুলি করেছে এবং তাকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজা, কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে জেলা হাসপাতালে যান, সেখানে তারা জিশানের লাশ দেখতে পান।
অন্যদিকে, নিজেদের দোষ আড়াল করতে পুলিশ দাবি করেছিল যে তারা গ্রামের কাছে একটি জঙ্গলে গরু জবাই করার খবর পেয়েছিল। সেখানে দেশীয় পিস্তল নিয়ে জিশান উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেই নিজের পায়ে গুলি করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি। নাটককে আরো শক্তিশালী করতে জবাইয়ের সরঞ্জামসহ গরুর মৃতদেহ উদ্ধারেরও দাবি করেছিল পুলিশ।
পুলিশ জিশানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলিও দেখিয়েছিল; তবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, এই সমস্ত এফআইআর যেদিন তার মৃত্যু হয়েছিল ঠিক সেদিন দায়ের করা হয়েছিল।
রাজা জানিয়েছেন, “জিশান গরিবদের সাহায্য করতেন। তিনি পুলিশকে গরিবদের হয়রানি করতে দেননি। পুলিশ তার উপর বিরক্ত ছিল। তাই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
একইভাবে উত্তরপ্রদেশে জিশান হায়দারের পরিবারের মত আরেকটি মুসলিম পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
২০১৮ সালে, কাসিম নামে একজন ছাগল ব্যবসায়ীকে হাপুর জেলার পিলখুয়াতে তার বাড়িতে গোহত্যার অভিযোগে উগ্র হিন্দু জনতা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। তার বন্ধু সামিউদ্দীন একজন কৃষক, যিনি ২০১৮ সালে হাপুরে কাসিমকে বাচাঁতে গিয়ে উগ্র জনতার নির্মম পিটুনির শিকার হয়েছিলেন। তবুও তাকে হিন্দুদের বর্বর পিটুনি থেকে উদ্ধার করতে পারেননি তিনি।
জিশান হায়দার আর কাসিমের পরিবাবের মত হাজারো মুসলিম পরিবার হিন্দুত্ববাদীদের হাতে খুন হওয়া আত্মীয়দের ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল হিন্দুত্ববাদী ভারতের আইন আদালত সবই হিন্দুদের দখলে। সেখানে মুসলিমদের কোন অধিকার নেই। সুতরাং ন্যায় বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, বিচার চাইতে গেলে বরং মুসলিমদের পেরেশানিই বেড়ে যায় আরও।
তথ্যসূত্র:
——-
1. UP: 12 policemen booked in ‘fake encounter’ of Muslim farmer ( Two Circles )
– https://tinyurl.com/yv8h668b
2. In UP, Victims Of Cow Lynchings Await Justice
– https://tinyurl.com/4c33r9je
উত্তরপ্রদেশে হিন্দুত্ববাদী পুলিশ গোহত্যার অভিযোগে ‘ভুয়া এনকাউন্টার’ চালিয়ে ৪৫ বছর বয়সী একজন মুসলিম কৃষককে খুন করে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে, থিটকি গ্রামের কৃষক জিশান হায়দার পুলিশের গুলি বিদ্ধ হওয়ার পর জেলা হাসপাতালে মারা যান। তার পরিবার ও গ্রামবাসী জানিয়েছেন তিনি কোন অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না। বরং হিন্দুত্ববাদী পুলিশ’ভুয়া এনকাউন্টার’ চালিয়ে তাকে খুন করেছিল।
খুনের প্রায় দেড় বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও খুনিদের কোন বিচার হয়নি। এই বছরের ১৯ জানুয়ারী, সাহারানপুরের সিজেএম আদালত প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে খুনি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেয়।
সাহারানপুর জেলা আধিকারিক কর্তৃক দাখিল করা হলফনামায় মিসেস আফরোজ (জিশানের স্ত্রী) দ্বারা উত্থাপিত অন্যান্য অভিযোগ সম্পর্কেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জিশানের চাচাতো ভাই সৈয়দ ঈসা রাজা জানিয়েছে, সমালোচনার মুখে পুলিশ ২২ জানুয়ারী ১২ জন পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। খুনের সাথে জড়িতরা হল সাব-ইন্সপেক্টর যশপাল সিং, আসগর আলি এবং ওমবীর সিং, হেড কনস্টেবল সুখপাল সিং এবং কনস্টেবল ভারত সিং, বিপিন কুমার, প্রমোদ কুমার, রাজবীর সিং (এখন অবসরপ্রাপ্ত), নীতু যাদব, দেবেন্দ্র কুমার (অবসরপ্রাপ্ত), ব্রিজেশ (অবসরপ্রাপ্ত) ) এবং অঙ্কিত কুমার।
তবে রাজা জানিয়েছেন, খুনের সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যরা নিজেদের পদে বহাল থাকলে মামলার তদন্ত সুষ্ঠু হতে পারে না। “যতক্ষণ এই পুলিশ সদস্যরা তাদের ইউনিফর্মে থাকবে ততক্ষণ তদন্ত সুষ্ঠু হবে না। তাদের সাসপেন্ড করা উচিত। তবেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।”
তার মৃত্যুকালীন পরিস্থিতি বর্ণনা করে আফরোজ আদালতকে বলেছেন, তার স্বামী কোন অপরাধী ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। তবে পুলিশের গোয়েন্দাদের সঙ্গে তার বিরূপ সম্পর্ক ছিল। ৪-৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ এর মধ্যবর্তী রাতে, জিশান তাকে বলেছিলেন যে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে কিছু তদন্তের জন্য ডেকেছিলেন। পরে তার ফোন বন্ধ থাকায় তাকে আর পাওয়া যায়নি। সকালে তিনি জানতে পারেন তার স্বামীকে গুলি করেছে এবং তাকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজা, কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে জেলা হাসপাতালে যান, সেখানে তারা জিশানের লাশ দেখতে পান।
অন্যদিকে, নিজেদের দোষ আড়াল করতে পুলিশ দাবি করেছিল যে তারা গ্রামের কাছে একটি জঙ্গলে গরু জবাই করার খবর পেয়েছিল। সেখানে দেশীয় পিস্তল নিয়ে জিশান উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেই নিজের পায়ে গুলি করেছিলেন বলে পুলিশের দাবি। নাটককে আরো শক্তিশালী করতে জবাইয়ের সরঞ্জামসহ গরুর মৃতদেহ উদ্ধারেরও দাবি করেছিল পুলিশ।
পুলিশ জিশানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলিও দেখিয়েছিল; তবে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, এই সমস্ত এফআইআর যেদিন তার মৃত্যু হয়েছিল ঠিক সেদিন দায়ের করা হয়েছিল।
রাজা জানিয়েছেন, “জিশান গরিবদের সাহায্য করতেন। তিনি পুলিশকে গরিবদের হয়রানি করতে দেননি। পুলিশ তার উপর বিরক্ত ছিল। তাই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
একইভাবে উত্তরপ্রদেশে জিশান হায়দারের পরিবারের মত আরেকটি মুসলিম পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন।
২০১৮ সালে, কাসিম নামে একজন ছাগল ব্যবসায়ীকে হাপুর জেলার পিলখুয়াতে তার বাড়িতে গোহত্যার অভিযোগে উগ্র হিন্দু জনতা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। তার বন্ধু সামিউদ্দীন একজন কৃষক, যিনি ২০১৮ সালে হাপুরে কাসিমকে বাচাঁতে গিয়ে উগ্র জনতার নির্মম পিটুনির শিকার হয়েছিলেন। তবুও তাকে হিন্দুদের বর্বর পিটুনি থেকে উদ্ধার করতে পারেননি তিনি।
জিশান হায়দার আর কাসিমের পরিবাবের মত হাজারো মুসলিম পরিবার হিন্দুত্ববাদীদের হাতে খুন হওয়া আত্মীয়দের ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল হিন্দুত্ববাদী ভারতের আইন আদালত সবই হিন্দুদের দখলে। সেখানে মুসলিমদের কোন অধিকার নেই। সুতরাং ন্যায় বিচার পাওয়া তো দূরের কথা, বিচার চাইতে গেলে বরং মুসলিমদের পেরেশানিই বেড়ে যায় আরও।
তথ্যসূত্র:
——-
1. UP: 12 policemen booked in ‘fake encounter’ of Muslim farmer ( Two Circles )
– https://tinyurl.com/yv8h668b
2. In UP, Victims Of Cow Lynchings Await Justice
– https://tinyurl.com/4c33r9je