দিল্লির মুসলিম কলোনিতে চলছে হিন্দুত্ববীদের বুলডোজার
ভারতের মেহরাউলিতে মুসলিমদের বাড়িঘরে বুলডোজার চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ)। মুসলিম কলোনিতে ডিডিএ-র ধ্বংসলিলার এ অভিযান গত ১২ জানুয়ারী, রবিবার শুরু হয়। অভিযান ৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মুসলিমরা জানিয়েছেন, তাদের রেজিস্ট্রি, হাউস ট্যাক্সসহ সব ধরণের সার্টিফিকেট আছে। তবুও তাদের তারা গৃহহীন করা হচ্ছে। এটা তাদের সারাজীবনের আয় ছিল। “আমাদের বিকল্প কোন ব্যবস্থাও নেই আমরা নারী শিশুদের নিয়ে কোথায় যাব?”
এখানে বাড়িঘর করতে কেউ কেউ তাদের গ্রামের বাড়িঘর, জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এবং কেউ কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি তৈরি করেছে, কিন্তু আজ সবাইকেই গৃহহীন করা হয়েছে।
এলাকার একজন সচ্ছল মুসলিম সমাজকর্মী আফতাব আলম জানিয়েছেন, তার বাড়ি হারানো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বিধ্বংসী মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি। গত মঙ্গলবার দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) একটি বুলডোজার আলমের বাড়িটি ভেঙে দিয়েছে।
আফতাব আলম মাকতুব মিডিয়াকে জানিয়েছেন, “আমি গত ৩০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। আমি একজন সমাজকর্মী, আমি অন্যদেরকেও সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম। কিন্তু দেখুন, এখন আমার নিজেেই কিছুই নেই। মাথা গোজার আশ্রয়টুকু ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি এখন এই ধ্বংসস্তূপেই থাকব, এবং আমি এখানেই মারা যাব কারণ আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”
আফতাব আলম তার দুই বোন এবং এক ভাইয়ের সাথে যৌথভাবে বসবাস করতেন। শুধু আফতাব আলমই নয়, বুলডোজারের ফলে বহু পরিবারের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা বংশ পরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছে।
ডিডিএ লেফটেন্যান্ট গভর্নর উগ্র হিন্দু বিনাই কুমার সাক্সেনার নির্দেশে, দিল্লির রাজস্ব মন্ত্রীর সাথে পরামর্শ ছাড়াই মেহরাউলিতে মুসলিম কলোনিতে বনভূমি সাফ করার জন্য ধ্বংস অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্বানীয় মুসলিমরা আরও জানিয়েছেন, যে তাদের অজান্তেই বাড়ির বাইরে নোটিশগুলি লাগানো হয়েছিল। সে এলাকায় বসবাসকারীরা মিশ্র জনসংখ্যা হলেও, ভেঙে ফেলা বাড়িঘর ও দোকানগুলো শুধুই ওই এলাকার মুসলমানদের।
৫০ বছর বয়সী জনাব রইস আহমেদ। তার বাড়িতেও নোটিশ পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, “আমার পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছে। আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি, এবং এখন তারা আমার বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে। কোনো জরিপ বা আদেশ ছাড়াই, তারা আমাদের জীবনের কঠোর পরিশ্রমকে নষ্ট করে দিচ্ছে।”
ইতিমধ্যে, যারা এই অভিযানে তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে তারা দাবি করেছে যে, তারা দিল্লিতে আম আদমি পার্টি সরকার এবং কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।
২০ বছর বয়সী জয়নব তার হাতে একটি নীল ফোল্ডার নিয়ে তার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সে মাকতুব মিডিয়াকে জানিয়েছে, জমি ও বাড়ি নিজেদের বলে প্রমাণ করার জন্য অনেকের রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। “আপনি সব কাগজপত্র দেখতে পারেন; আমাদের এখানে সব আছে। তবুও তারা কাগজপত্রের দিকে তাকাচ্ছে না এবং সরাসরি আমাদের বাড়ি ভেঙে ফেলছে।
মুসলিমদের বাড়িঘরের সাথে দোকানপাটগুলোকেও ভেঙ্গে দিয়েছে। একজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আরিফের দোকান মাটিতে গুড়িয়ে দিয়েছে।
মোহাম্মদ আরিফ এয়ার কন্ডিশনার ও পাইপ বিক্রি করতেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে তিনি এলাকায় কাজ করে আসছেন।” তার দোকান এখন ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই নয়।
“আমরা সরকারের জন্য দাবার গুটির মত। ওরা আমাদের নিয়ে রাজনীতি করে এছাড়া কিছুই না। আমি কিভাবে আমার পরিবারকে খাওয়াবো? এই লোকেরা আমাকে আমার জিনিসপত্রও বের করতে দেয়নি,” বলেন মোহাম্মদ আরিফ, “আমি বিচার বিভাগ থেকেও আশা হারিয়ে ফেলেছি।”
তবে এটা রাজনৈতিক কারণ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানান মোহাম্মদ আলম। “কেন আমার বাড়ি ভাঙা হল? তারা সময়মতো এসে ভাঙা বন্ধ করার নোটিশ দিতে পারত, কিন্তু আমি গরীব বলে আমার বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।”
এভাবেই সারা ভারতজুড়ে নানান অজুহাতে মুসলিমদের উপর সরকারি প্রতক্ষ-পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো হচ্ছে ক্র্যাকডাউন। আর অসহায় মুসলিমরা চেয়ে দেখা ছাড়া কোন প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে পারছেন না। আসন্ন গণহত্যার সামনে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।
তথ্যসূত্র:
——–
1. “We are going to stay in this rubble only,” say Mehrauli residents
– https://tinyurl.com/3ynakj24
ভারতের মেহরাউলিতে মুসলিমদের বাড়িঘরে বুলডোজার চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ)। মুসলিম কলোনিতে ডিডিএ-র ধ্বংসলিলার এ অভিযান গত ১২ জানুয়ারী, রবিবার শুরু হয়। অভিযান ৯ মার্চ পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী মুসলিমরা জানিয়েছেন, তাদের রেজিস্ট্রি, হাউস ট্যাক্সসহ সব ধরণের সার্টিফিকেট আছে। তবুও তাদের তারা গৃহহীন করা হচ্ছে। এটা তাদের সারাজীবনের আয় ছিল। “আমাদের বিকল্প কোন ব্যবস্থাও নেই আমরা নারী শিশুদের নিয়ে কোথায় যাব?”
এখানে বাড়িঘর করতে কেউ কেউ তাদের গ্রামের বাড়িঘর, জমি বিক্রি করে দিয়েছে। এবং কেউ কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে বাড়ি তৈরি করেছে, কিন্তু আজ সবাইকেই গৃহহীন করা হয়েছে।
এলাকার একজন সচ্ছল মুসলিম সমাজকর্মী আফতাব আলম জানিয়েছেন, তার বাড়ি হারানো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বিধ্বংসী মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি। গত মঙ্গলবার দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) একটি বুলডোজার আলমের বাড়িটি ভেঙে দিয়েছে।
আফতাব আলম মাকতুব মিডিয়াকে জানিয়েছেন, “আমি গত ৩০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। আমি একজন সমাজকর্মী, আমি অন্যদেরকেও সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম। কিন্তু দেখুন, এখন আমার নিজেেই কিছুই নেই। মাথা গোজার আশ্রয়টুকু ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি এখন এই ধ্বংসস্তূপেই থাকব, এবং আমি এখানেই মারা যাব কারণ আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।”
আফতাব আলম তার দুই বোন এবং এক ভাইয়ের সাথে যৌথভাবে বসবাস করতেন। শুধু আফতাব আলমই নয়, বুলডোজারের ফলে বহু পরিবারের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা বংশ পরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছে।
ডিডিএ লেফটেন্যান্ট গভর্নর উগ্র হিন্দু বিনাই কুমার সাক্সেনার নির্দেশে, দিল্লির রাজস্ব মন্ত্রীর সাথে পরামর্শ ছাড়াই মেহরাউলিতে মুসলিম কলোনিতে বনভূমি সাফ করার জন্য ধ্বংস অভিযান চালানো হচ্ছে।
স্বানীয় মুসলিমরা আরও জানিয়েছেন, যে তাদের অজান্তেই বাড়ির বাইরে নোটিশগুলি লাগানো হয়েছিল। সে এলাকায় বসবাসকারীরা মিশ্র জনসংখ্যা হলেও, ভেঙে ফেলা বাড়িঘর ও দোকানগুলো শুধুই ওই এলাকার মুসলমানদের।
৫০ বছর বয়সী জনাব রইস আহমেদ। তার বাড়িতেও নোটিশ পাওয়া গেছে। তিনি বলেছেন, “আমার পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করছে। আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি, এবং এখন তারা আমার বাড়ি ভেঙে দিচ্ছে। কোনো জরিপ বা আদেশ ছাড়াই, তারা আমাদের জীবনের কঠোর পরিশ্রমকে নষ্ট করে দিচ্ছে।”
ইতিমধ্যে, যারা এই অভিযানে তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে তারা দাবি করেছে যে, তারা দিল্লিতে আম আদমি পার্টি সরকার এবং কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।
২০ বছর বয়সী জয়নব তার হাতে একটি নীল ফোল্ডার নিয়ে তার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সে মাকতুব মিডিয়াকে জানিয়েছে, জমি ও বাড়ি নিজেদের বলে প্রমাণ করার জন্য অনেকের রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। “আপনি সব কাগজপত্র দেখতে পারেন; আমাদের এখানে সব আছে। তবুও তারা কাগজপত্রের দিকে তাকাচ্ছে না এবং সরাসরি আমাদের বাড়ি ভেঙে ফেলছে।
মুসলিমদের বাড়িঘরের সাথে দোকানপাটগুলোকেও ভেঙ্গে দিয়েছে। একজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আরিফের দোকান মাটিতে গুড়িয়ে দিয়েছে।
মোহাম্মদ আরিফ এয়ার কন্ডিশনার ও পাইপ বিক্রি করতেন। কয়েক প্রজন্ম ধরে তিনি এলাকায় কাজ করে আসছেন।” তার দোকান এখন ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই নয়।
“আমরা সরকারের জন্য দাবার গুটির মত। ওরা আমাদের নিয়ে রাজনীতি করে এছাড়া কিছুই না। আমি কিভাবে আমার পরিবারকে খাওয়াবো? এই লোকেরা আমাকে আমার জিনিসপত্রও বের করতে দেয়নি,” বলেন মোহাম্মদ আরিফ, “আমি বিচার বিভাগ থেকেও আশা হারিয়ে ফেলেছি।”
তবে এটা রাজনৈতিক কারণ ছাড়া আর কিছুই নয় বলে জানান মোহাম্মদ আলম। “কেন আমার বাড়ি ভাঙা হল? তারা সময়মতো এসে ভাঙা বন্ধ করার নোটিশ দিতে পারত, কিন্তু আমি গরীব বলে আমার বাড়ি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।”
এভাবেই সারা ভারতজুড়ে নানান অজুহাতে মুসলিমদের উপর সরকারি প্রতক্ষ-পরোক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো হচ্ছে ক্র্যাকডাউন। আর অসহায় মুসলিমরা চেয়ে দেখা ছাড়া কোন প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে পারছেন না। আসন্ন গণহত্যার সামনে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তারা।
তথ্যসূত্র:
——–
1. “We are going to stay in this rubble only,” say Mehrauli residents
– https://tinyurl.com/3ynakj24
Comment