বামপন্থী কমিউনিস্টরা বরাবরই ধর্মবিদ্বেষী; তবে তাদের বিদ্বেষ বিশেষভাবে ইসলাম ও মুসলিমের প্রতি। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ইসলামের তাহজিব-তামাদ্দুন ও সুন্নতি পোশাক-আশাক নিয়ে তাদের গাত্রদাহ একটু বেশিই।
বাংলাদেশের নাস্তিক কমিউনিস্টরা মূলত বস্তুবাদী ও ভোগবাদী সভ্যতার ধারক-বাহক; তাদের কেউ চীনপন্থী আবার কেউ রাশিয়াপন্থী। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এরা সবাই ভারতের সুরে কথা বলে, ভারতের ইস্যুগুলো নিয়ে তারা বাংলাদেশেও মাঠ গরম করার প্রয়াস চালায়।
বাংলাদেশের নাস্তিক কমিউনিস্টদেরকে তাই মূলত ভারতপ্রেমী ও ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে অভিহিত করাই শ্রেয়; কেননা এই দুই ধারারই এরা ধারক ও বাহক। তবে মাঝে মাঝে লোকদেখানো শ্লোগানে তারা সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংস কামনা করে থাকে।
বাংলাদেশের ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক কমিউনিস্টদের মধ্যে আলোচিত মেনন-ইনু-সেলিম গং কখনো সরাসরি আবার কখনো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ উগরে দেয়। কখনো তাদের টার্গেট হয় দাড়ি-টুপি-হিজাব, আবার কখনোবা তাদের আক্রমনের নিশানা হন সম্মানিত আলেম-উলামা ও ইসলামপ্রিয় মুসলিমগণ।
বর্তমানে ভারতে হিজাব নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে, অখণ্ড ভারত নির্মাণের নেশায় মত্ত উগ্র হিন্দুরা বাংলাদেশে কথিত হিন্দু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে বাংলাদেশ দখলের ষড়যন্ত্রও পাকাপোক্ত করছে।
আর এই দুইটি বিষয়ই স্থান পেয়েছে রাশেদ খান মেননের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাষা আন্দোলনে প্রাক্তন এক কমিউনিস্ট নেতার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা সভা হয়। সেখানে মেননের দেওয়া বক্তব্যের একটি অংশ দেখলেই মেনন গংকে নিয়ে করা আমাদের দাবি অনেকটা পরিস্কার হয়ে যবে ইনশাআল্লাহ্।
হিজাব-বোরকাতে বাংলাদেশ ছেয়ে গেছে মন্তব্য করে এমপি মেনন বলেছে, “বলা হচ্ছে হিজাব সুন্নতি পোশাক। ইসলাম ধর্মের কোথায় বলা আছে হিজাব সুন্নতি পোশাক? আমার জানা নেই। এটা সুন্নতি পেশাক নয়। কী হচ্ছে আজকে বাংলাদেশে। পার্বতীপুরে ১২টি মন্দির-প্রতিমা ভেঙে ফেলা হলো।”
হিজাবকে ‘সুন্নতি পোশাক নয়’ প্রমাণ করতে মেনন সাহেবরা ‘ইসলামি বিশেষজ্ঞ’ বনে যায়, তবে পোশাকের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মেনন সাহেবরা কিন্তু মেয়েদের টপ-জিন্স পরাকে কখনোই ‘পশ্চিমা পোশাক’ প্রমাণের স্পর্ধা দেখায় না; হিজাব পরিধানের কারণে ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলা তো দূর কি বাত।
আর বলবেনই বা কেন, হিজাব-নিক্বাব ও ইসলামকে দেশ থেকে বের করে দেওয়াই তো তাদের এজেন্ডা। ইসলামবিদ্বেষ চরিতার্থ করতে মেনন সাহেবরা প্রয়োজনে নিজেদের নির্ধারণ করে দেওয়া কথিত ‘পোশাকের স্বাধীনতার’ মানদণ্ডকে নিজেরাই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান।
আর বলবেনই বা কেন, হিজাব-নিক্বাব ও ইসলামকে দেশ থেকে বের করে দেওয়াই তো তাদের এজেন্ডা। ইসলামবিদ্বেষ চরিতার্থ করতে মেনন সাহেবরা প্রয়োজনে নিজেদের নির্ধারণ করে দেওয়া কথিত ‘পোশাকের স্বাধীনতার’ মানদণ্ডকে নিজেরাই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান।
মেনন সাহেব, ৯২ ভাগ মুসলিমের বাংলাদেশ হিজাব-বোরকাতে ছেয়ে গেলে সমস্যা কোথায়, দয়া করে বলবেন কি? আপনারা কি চান আপনাদের আদর্শের সৈনিক সাহবাগিদের ব্যবহৃত জন্মনিরোধক দ্রব্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছেয়ে যাওয়ার ঘটনা সারা দেশেই ঘটুক?
ভাস্কর্য তথা মূর্তিপ্রেমে আপ্লুত মেনন সাহেব আরও বলেছে, “রবীন্দ্রনাথের কাটা মুণ্ডু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাওয়া গেলো। যদি বিএনপির আমলে এটি হতো, তাহলে বুদ্ধিজীবীরা এতক্ষণে রাস্তায় ১০টি মিছিল করতেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বিবৃতি দিতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়তো। কিন্তু কিছুই হয়নি। আমি সাবাস দেই আমাদের ছাত্র ইউনিয়নের সেই ছেলেদেরকে, যারা এমন একটি প্রতিবাদী ভাষ্কর্য তৈরি করতে পেরেছে এবং সেটি ভেঙে ফেলার পর, আবার সাহস করে ভাঙা টুকরোগুলো কুড়িয়ে এনে পুনঃস্থাপন করতে পেরেছে।”
ইসলামবিদ্বেষী রবীন্দ্রনাথের কাটা মুণ্ডুর প্রতি মেননের আবেগ দেখে হয়তো কেউ ভেবে বসতে পারে যে, জীবিত রবীন্দ্রনাথেরই হয়তো মুণ্ডুপাত করা হয়েছে!
সে যাই হোক, মূর্তি ভেঙে ফেলাকে মেনন গংরা ‘গুরুতর অপরাধ’ সাব্যস্ত করে ঠিকই, তবে স্বামীবাগ মন্দিরের অদূরে রমজান মাসে উগ্র হিন্দুরা মসজিদে ঢিল ছুঁড়লে মেনন সাহেবদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘ধর্ম পালনের স্বাধীনতা’ ক্ষুণ্ণ হয় না কেন? হয়তো সিলেটে ইস্কন মন্দির থেকে মুসল্লিদের উপর গুলি চালানোটাও মেননদের দৃষ্টিতে তেমন কোন সমস্যা নয়! গোবিন্দ বাবুদের বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতভুক্ত করার প্রকাশ্য প্রার্থনাতেও তাই তারা কোন সমস্যা দেখেন না।
সে যাই হোক, মূর্তি ভেঙে ফেলাকে মেনন গংরা ‘গুরুতর অপরাধ’ সাব্যস্ত করে ঠিকই, তবে স্বামীবাগ মন্দিরের অদূরে রমজান মাসে উগ্র হিন্দুরা মসজিদে ঢিল ছুঁড়লে মেনন সাহেবদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘ধর্ম পালনের স্বাধীনতা’ ক্ষুণ্ণ হয় না কেন? হয়তো সিলেটে ইস্কন মন্দির থেকে মুসল্লিদের উপর গুলি চালানোটাও মেননদের দৃষ্টিতে তেমন কোন সমস্যা নয়! গোবিন্দ বাবুদের বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতভুক্ত করার প্রকাশ্য প্রার্থনাতেও তাই তারা কোন সমস্যা দেখেন না।
মেনন সাহেবরা ইসলামের উন্নতি-অগ্রগতি কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। ইসলাম কোথাও তার স্বরূপে আবির্ভূত হলে এরা নাক সিটকায়, ক্রমাগত মিথ্যা প্রোপ্যাগান্ডা ছড়িয়ে তারা ইসলামের আলোকিত উদ্ভাসকে ঢেকে রাখার তীব্র প্রয়াশ চালায়।
মেনন গং ও তাদের বিদেশি প্রভুরা সকলে মিলে তাই এখন লেগেছে আফগানিস্তানের পেছনে।
১৯ ফেব্রুয়ারির বক্তৃতায় মেনন আরো বলেছে, “আমি জানি না একুশ ও ৬০ এর দশকের সাহস নিয়ে বর্তমান তরুণরা এগিয়ে আসবে কিনা? যদি না আসে, তাহলে আফগানিস্তানের থেকেও খারাপ অবস্থা দেখবে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানে তো অন্তত অ্যামেরিকানরা সৈন্য দিয়ে চুক্তি করে, রক্তের হলি খেলা ঠেকিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে রক্তের হলি খেলা কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। দেখা যাবে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।”
মেনন সাহেবরা চেতনাবাজ বটে!
দিন-রাত তারা ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাক যাক’ শ্লোগান দিয়ে মুখে ফেনা তুলে। অথচ, যেখানে গোটা আফগান জাতি ২০ বছর ধরে তালিবানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী অ্যামেরিকা ও ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরদর্পে যুদ্ধ করলো, ৫০ টিরও বেশি দেশের সেনাকে অপমানিত ও অপদস্থ অবস্থায় চুক্তি করে আফগানিস্তান ছাড়তে বাধ্য করলো, তাদের বিরুদ্ধেও সে বিষোদ্গার করতে ছাড়লো না। অ্যামেরিকা নাকি চুক্তি না করলে তালিবানরা আফগানে রক্তের হোলিখেলা শুরু করে দিত! অথচ মেননদের প্রভু অ্যামেরিকানরাই সেখানে সাধারণ আফগানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলেছে দুই দশক দশক ধরে! প্রতিদিন গড়ে ৫ জন শিশুকে তারা বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে, এই প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো মেননদের বক্তৃতায় স্থান পায় না কখনোই।
এই হলো এদের কথিত ‘স্বাধীনতার চেতনা’ আর ‘সাম্যবাদের’ স্বরূপ! আর এই নৈতিকতা-বিবর্জিত মানুষগুলোই হচ্ছে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশের কথিত ‘আইনপ্রনেতা’।
ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষ মেনন গংদের কতটাই না অন্ধ করে দিয়েছে!
বাংলাদেশে আফগানের মতো পরিস্থিতি হলে নাকি রক্তের হোলিখেলা থামানো যাবে না। অর্থাৎ, মেনন সাহেব বলতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় নিবেদিতপ্রাণ মুসলিমরা যদি এদেশকে ভারতের তাবেদারি থেকে মুক্ত করতে কিংবা পরাশক্তিগুলোর ব্যাটেলগ্রাউন্ডে পরিণত হওয়া ঠেকাতে, অথবা পার্বত্যাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গে খ্রিস্টবাদের উগ্র অভ্যুত্থান রুখতে তালিবানদের আদলে কোন আন্দোলন সংগ্রাম দাঁড় করাতে পারে, তাহলে সেটা নাকি খুবই ভয়াবহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তাদের দিল্লি-ওয়াশিংটন বা মস্কো-বেইজিংকে ‘তুষ্ট’ করে চলার নীতি চলমান থাকতে পারে, তাতে কোন সমস্যা নেই!
মেনন সাহেবদের জেনে রাখা উচিৎ, তারা ভারত-অ্যামেরিকা বা চীন-রাশিয়ার উচ্ছিষ্টভোগী হলেও হতে পারে, তবে বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ-যুবকরা তাদের মতো নয়।
যুবসমাজ আজ জেগে উঠেছে, মেনন গংদের ধোঁকাবাজি আর চক্রান্ত মানুষের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। জাতির যুবকেরা আজ এই সত্যও উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছেন যে, কথিত পরাশক্তিগুলোর নখর থাবা থেকে মুক্ত হয়ে সম্মানের জীবন যাপন করতে হলে তাদের সামনে ইসলামকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা ব্যতীত দ্বিতীয় কোন পথ নেই।
ইসলামের এই নবজাগরণ মেননদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। তারা দেখতে পাচ্ছে যে, পরাশক্তিগুলোর পদলেহন করে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ বিকিয়ে দিয়ে তারা যে উচ্ছিষ্টভোগের নীতিতে পরম তৃপ্তি ভোগ করতো, সেই পথ বন্ধ হতে চলেছে। তাই তারা এখন আবোল-তাবোল বকছে; শেষ একটা মরণকামর দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের হয়ে। ইসলাম ও মুসলিমবিদ্বেষকে এখন তারা আরও কঠোরভাবে প্রকাশ ও প্রয়োগ করতে ব্রতী হয়েছে।
কিন্তু মেনন সাহেবরা একবার এটা ভেবে দেখে না যে, তারা তাদের চেতনার বোঝায় নত হয়ে পড়া বাংলাদেশকে কয়েক দশকে ধ্বংসগহ্বরের একেবারে কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে; আর তার বিপরীতে ইসলামি চেতনায় উজ্জীবিত আফগান তালিবানরা ক্ষমতায় আরোহণের দেড় বছরের মাথায় আফগানিস্তানকে একটি মজবুত ও দৃঢ় অর্থনৈতিক ও সামরিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র ইসলামের সুমহান আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে তা বাস্তবায়নের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই।
মেনন সাহেব, বাস্তবতা আর কতকাল ঢেকে রাখবেন? আপনাদের কিবলা এবার দিল্লি-ওয়াশিংটন-বেইজিং থেকে একটু ঘুরিয়ে সঠিক দিকে রোখ করার সময় কি আসেনি? কিংবা অন্তত চুপ তো থাকুন! নাহয় আপনাদের ‘প্রভু’দের সাথে সাথে আপনারাও তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন।
আফগানিস্তানে মার্কিনীদের ছায়াতলে ঘাপটি মেরে থাকা কথিত আফগান বুদ্ধিজীবী আর প্রগতিবাদীদের মতো করে আপনারাও হারিয়ে যাবেন। আপনাদের ঐ জ্ঞাতিভাইয়েরাও আফগানের মাটিতে ব্যক্তিস্বাধীনতার সবক দিত, ইসলামকে সেকেলে আর হিজাব-দাড়ি-টুপিকে বন্দিত্ব বলে প্রচার করতো। এমনকি ওরা তো ছিল আপনাদের চেয়েও ঘোরতর কমিউনিস্ট, আরও কঠোর ‘প্রগতিবাদী’।
ওদের আর ওদের প্রভুদের কোন চিহ্ন আজ আফগানের মাটিতে অবশিষ্ট আছে কি?
ওদের আর ওদের প্রভুদের কোন চিহ্ন আজ আফগানের মাটিতে অবশিষ্ট আছে কি?
লিখেছেন : আব্দুল্লাহ বিন নজর
তথ্যসূত্র:
১। ইসলাম ধর্মে কোথাও লেখা নেই হিজাব সুন্নতি পোশাক
– https://tinyurl.com/mpubthf7
Comment