ইমারতে ইসলামি আফগানিস্তানের আবির্ভাবের পর থেকে মুসলিমদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব চলছে। বাহিনী পুনর্গঠন এবং সদস্যদের উন্নতমানের সামরিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ, পেশাদার ও ইসলামি চেতনায় বলিয়ান একটি অনবদ্য সামরিক বাহিনী বিনির্মাণের কাজ দৃঢ়তা ও দ্রুততার সাথে চালিয়ে নিচ্ছেন ইসলামি ইমারতের দায়িত্বশীলগণ। সেই সাথে শত্রুবাহিনীর কাছ থেকে গনীমত হিসেবে প্রাপ্ত অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও অন্যান্য অস্ত্র সহ বিমান ও হেলিকপ্টার মেরামত ও ব্যবহারোপযোগী করে নিজেদের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁরা।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি ৫৩০এমডি (530 MD) মডেলের একটি হেলিকপ্টার মেরামত ও ব্যবহারোপযোগী করে সেটির সফল ফ্লাইট সম্পন্ন করেছেন কান্দাহার এয়ারফোর্স ব্রিগেডের মুজাহিদগণ। হেলিকপ্টারটি বিগত মার্কিন সমর্থিত সরকারের আমলের শেষের দিকে অকেজো করে ফেলে রাখা হয়েছিল, যাতে করে তালিবান মুজাহিদিন ক্ষমতা নেওয়ার পর ইসলামি সামরিক বাহিনী সেটি ব্যবহার করতে না পারে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে এয়ার ফোর্সের এয়ার ইঞ্জিনিয়ারগণ হেলিকপ্টারটি মেরামত করে আকাশে উড়াতে সক্ষম হন, আলহামদুলিল্লাহ্।
কান্দাহার এয়ারফোর্স ব্রিগেডের কমান্ডার মৌলভি ফাতহুল্লাহ মানসুর (হাফি.) এয়ার ইঞ্জিনিয়ার দলের এই প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, “আমরা নিষ্ঠা, দৃঢ়তা ও আনুগত্যের সাথে বিমানবাহিনীর উন্নয়নে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহেণ বদ্ধপরিকর। আর আমরা অকেজো করে ফেলে রাখা আকাশযানগুলোকে মেরামত করে আবারো ব্যবহারের উপযোগী করে তুলছি।”
গত ডিসেম্বরের ১৮ তারিখেও এয়ারফোর্সর জেনারেল কমান্ড ১টি এম.আই-৩৫ (MI-35) এটাক হেলিকপ্টার এবং ১ টি সি-২০৮ (C-208) সামরিক বিমান মেরামতের পর ব্যবহারোপযোগী করতে সক্ষম হন আলহামদুলিল্লাহ্। শত্রুর থেকে বাজেয়াপ্তকৃত অত্যাধুনিক আকাশযান মেরামত ও ব্যবহার উপযোগী করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও তখন এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল ইমারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, এর আগেও ইঞ্জিনিয়ারিং কোর বেশ কিছু অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধবিমান ও সামরিক হেলিকপ্টার মেরামত করে ব্যবহারোপযোগী করে তুলেছে। সেই সাথে তারা ব্যবহারোপযোগী করেছেন অসংখ্য মার্কিন হামভি যুদ্ধযান ও ট্যাংকও।
সর্বশেষ, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখেও ৩১৩ সেন্ট্রাল কর্পসের ট্যাংক ব্যাটালিয়নে বাহিনীর সামরিক ইঞ্জিনিয়ারদের সংস্কার করা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ট্যাংকের ট্রায়াল ফায়ারিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে মার্কিনীদের নষ্ট করে রেখে যাওয়া ট্যাংকসমূহের সংস্কার পরবর্তী ট্রায়াল সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ্৷
৩১৩ সেন্ট্রাল কর্পসের কমান্ডার মোল্লা আমির খান হাক্কানি (হাফি.), কোরের ডেপুটি আলহাজি কারি আমিনুল্লাহ তৈয়্যিব (হাফি.) এবং কমান্ডার শেখ নকিবুল্লাহ আজিজি (হাফি.) সহ অনেক কর্মকর্তা এবং মুজাহিদিন এই ট্যাংক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কর্মকর্তাগণ পেশাদার প্রকৌশলী এবং সংস্কারকৃত ট্যাঙ্কের কর্মীদের উৎসাহিত করেন এবং তাদের প্রশংসা করেন; কেননা এর মাধ্যমে তাঁরা ইসলামী ব্যবস্থা ও জনগণের সেবা করছেন, আর ইসলামি ইমারতের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে রেখে যাচ্ছেন অনবদ্য ভূমিকা।
নিয়মিত বিরতিতে আকাশ ও স্থলযান মেরামত ও ব্যবহারোপযোগী করার পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও প্রতিনিয়তই বাড়িয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলগণ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পাক্তিয়া প্রদেশে মোট ৪০০ জন মুজাহিদ সামরিক ও আদর্শিক প্রশিক্ষণের পর ২০৩ মনসুরি আর্মি কোরের ১ম ব্রিগেড থেকে স্নাতক হয়েছেন। জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় এক বিবৃতিতে এখবর নিশ্চিত করেছে।
উক্ত গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হাফিজ ফসিহুদ্দিন ফিতরাত এবং ২০৩তম মনসুরি আর্মি কোরের কমান্ডার মৌলবি রহমতুল্লাহ মোহাম্মদ ইকা সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও মুজাহিদগণ।
মুজাহিদিন সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ স্টাফ সহ নেতৃত্বের আদেশ মেনে চলার এবং দায়িত্ব পালনে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার উপর জোর দেন। তাঁরা ইসলামী ইমারতের নেতৃত্ব আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত, শিক্ষিত, পেশাদার এবং শক্তিশালী ইসলামী সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। এছাড়াও, গ্র্যাজুয়েটরা অঙ্গীকার করেন যে, তারা যে কোন পরিস্থিতিতে ইসলামী ব্যবস্থা এবং তাদের জনগণের সেবা করতে প্রস্তুত থাকবেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবারেও অপর ৫০০ জন মুজাহিদকে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এই মুজাহিদরা ২০৫ আল বদর কোরের শিক্ষাকেন্দ্রে তিন মাসের সামরিক, ইলমি ও পেশাদার প্রশিক্ষণের পর স্নাতক হয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ্৷
২০২৩ সালের প্রথম দেড় মাসে এই পর্যন্ত মোট ২ হাজার ১৩১ জন মুজিহিদ তাদের সামরিক, নৈতিক ও ইলমি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ইসলামি ইমারতের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে যোগদান করেছেন। এরমধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি ন্যাশনাল পাবলিক প্রটেকশন ফোর্স থেকে ১৭৫ জন মুজাহিদ, ৭ ফেব্রুয়ারি আল আযম কর্পস মিলিটারি ট্রেনিং সেন্টার থেকে ৬৫০ জন মুজাহিদ, ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ৩২২ জন মুজাহিদ, এবং উপরোক্ত ২০৫ আল বদর কোরের ৫০০ জন ও ২০৩ মনসুরি আর্মি কোর থেকে ৪০০ জন মুজাহিদ স্নাতক হন।
পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিটের ১৫৯ জন মুজাহিদ জয়েন্ট মিলিটারি ট্রেনিং কমান্ড থেকে বিভিন্ন পেশাগত কোর্স সম্পন্ন করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ্।
এর পাশাপাশি, মুজাহিদদের নৈতিক মনোবল চাঙ্গা করতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোল্লা মুহাম্মাদ ইয়াকুব (হাফি.), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি (হাফি.) এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উমারাগণ নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন কোর ও ব্যাটেলিয়ন পরিদর্শন করে থাকেন।
স্বয়ং ইসলামি ইমারতের সুপ্রিম লিডার আমিরুল মু’মিনিন শাইখুল হাদিস মৌলভি হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা (হাফি.) গত মাসে অন্তত ২টি সামরিক কর্পস পরিদর্শনে যান। গত ৭ জানুয়ারি ২১৫ আযাম কর্পস এবং ১০ জানুয়ারি আল-বদর কর্পস পরিদর্শন করে মুজাহিদিন ও সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেন তিনি। আমিরুল মু’মিনিনের (হাফি.) উপস্থিতি মুজাহিদদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে, এবং সকলেই মুসলিম জনগণ ও উম্মাহর স্বার্থে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের ইঙ্গিত দেয় যে, ইমারার সামরিক বাহিনীকে উম্মাহর প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখেই হয়তো প্রস্তুত করা হচ্ছে। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে উম্মাহর ক্রান্তিলগ্নে তাঁরা অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারবেন এবং নিজেদের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্।
প্রতিবেদক : আবু আব্দুল্লাহ
তথ্যসূত্র:
1. 530 MD helicopter repaired by ministry of national defense
– https://www.alemarahenglish.af/55443-2/
2. Test held for refurbished tanks at 313 central corps
– https://www.alemarahenglish.af/test-...central-corps/
3. 400 Mujahideen graduate from 203rd Mansoori Army Corps
– https://www.alemarahenglish.af/400-m...ri-army-corps/
4. 500 Mujahideen graduate from 205 Al-Badr Corps
– https://www.alemarahenglish.af/500-m...al-badr-corps/
5. 2 More Aircrafts Repaired by Ministry of Defense
– https://www.alemarahenglish.af/2-mor...ry-of-defense/
Comment