নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার মুসলিমকে খালাস দিয়েছে রাজস্থান হাইকোর্ট
খালাসপ্রাপ্ত চার মুসলিম, সারওয়ার আজমি, মোহাম্মদ সাইফ, সাইফুর রহমান ও সালমান।
সম্প্রতি রাজস্থান হাইকোর্ট জয়পুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় পূর্বে দোষী সাব্যস্ত এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত চার মুসলিমকে খালাস দিয়েছে। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন সারওয়ার আজমি, মোহাম্মদ সাইফ, সাইফুর রহমান ও সালমান।
জয়পুরের একটি বিশেষ আদালত ২০১৯ সালে এই চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি পাঙ্কাই ভান্ডারি এবং বিচারপতি সমীর জৈনের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, আগের তদন্তটি সুষ্ঠু ছিল না। এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তদন্ত সংস্থাগুলো জঘন্য উপায়ে অভিযুক্তদেরকে ফাঁসিয়েছিল।
২০০৮ সালের ১৩ মে, জয়পুরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৭১ জন নিহত এবং ১৮৫ জন আহত হয়। এই ঘটনায় মোট আটটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। ঘটনার একদিন পরে, মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, একটি ইমেলের মাধ্যমে ভারতীয় মুজাহিদিন বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে। এর ভিত্তিতেই মুসলিমদের উপর ধরপাকড় শুরু হয়।
পূর্বের রায়ে চারজন মুসলিমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে অ্যামিকাস কিউরি বলেছে, “এটি প্রথম মামলা যেখানে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৩০০ জন সাক্ষী ছিল। আমি তাদের সবাইকে জেরা করেছি। কিন্তু সাইকেলে বোমা স্থাপনকারী এই চারজনের একজনকেও কেউ সনাক্ত করতে পারেনি। এছাড়াও আদালতে যে সাইকেল ক্রয় বিল পেশ করা হয়েছিল, তা বোমা বিস্ফোরণে ব্যবহৃত সাইকেলের ফ্রেম নম্বরের চেয়ে আলাদা।”
রাজস্থান হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “আমরা সমাজ, ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতার স্বার্থে, রাজস্থানের পুলিশ মহাপরিচালককে তদন্তকারী দলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত/শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া যথাযথ বলে মনে করি।”
হাইকোর্ট আরও বলেছে, মামলার সাক্ষীদের আটকে রাখা হয়েছিল এবং “তদন্তের সময় স্পষ্ট হেরফের করা হয়েছিল এবং বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছিল।”
বিচারপতি জৈন বলেছে, “ট্রায়াল কোর্ট ভুলভাবে অগ্রহণযোগ্য সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করেছে, উপাদানগত দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করেছে এবং আইনী বিধানগুলিও যথাযথভাবে বিবেচনা করেনি।”
আদালত আরও উল্লেখ করেছে, তদন্ত সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত কেবল ত্রুটিপূর্ণ ছিল না, বরং এটি ছিল অপ্রীতিকর এবং আইনের বিধানের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব নিয়মগুলিকেও তারা উপেক্ষা করেছে।
রাজস্থান হাইকোর্ট এটিও পর্যবেক্ষণ করেছে যে, তদন্তকারী সংস্থার প্রয়োজনীয় আইনি দক্ষতার অভাব ছিল। কারণ তারা বিধিবদ্ধ পূর্বশর্ত এবং বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো সম্পর্কেও সচেতন ছিল না।
সবশেষে, বিচারপতি জৈন বলেছে, ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির ছলছাতুরি প্রসিকিউশনের মামলাটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করেছে।
শুধুমাত্র ধর্ম পরিচয়ের কারণে ভারতের বিচার বিভাগ মুসলিমদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক রায় দিয়েছে এমন ঘটনা অসংখ্য। আর রাজস্থানের এই ঘটনার মত পরবর্তিতে সত্য প্রকাশিত হয়েছে খুব ঘটনারই। অথচ বিচার বিভাগের একটি ভুলের কারণে ভুগতে হয় পুরো একটি পরিবারকে আজীবন।
তথ্যসূত্র:
——
1. Four Muslim men sentenced to death in Jaipur bomb blast case acquitted by Rajasthan HC
– https://tinyurl.com/vedv6cuw
খালাসপ্রাপ্ত চার মুসলিম, সারওয়ার আজমি, মোহাম্মদ সাইফ, সাইফুর রহমান ও সালমান।
সম্প্রতি রাজস্থান হাইকোর্ট জয়পুর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় পূর্বে দোষী সাব্যস্ত এবং মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত চার মুসলিমকে খালাস দিয়েছে। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে কোন অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন সারওয়ার আজমি, মোহাম্মদ সাইফ, সাইফুর রহমান ও সালমান।
জয়পুরের একটি বিশেষ আদালত ২০১৯ সালে এই চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। কিন্তু রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি পাঙ্কাই ভান্ডারি এবং বিচারপতি সমীর জৈনের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, আগের তদন্তটি সুষ্ঠু ছিল না। এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তদন্ত সংস্থাগুলো জঘন্য উপায়ে অভিযুক্তদেরকে ফাঁসিয়েছিল।
২০০৮ সালের ১৩ মে, জয়পুরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ৭১ জন নিহত এবং ১৮৫ জন আহত হয়। এই ঘটনায় মোট আটটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়। ঘটনার একদিন পরে, মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, একটি ইমেলের মাধ্যমে ভারতীয় মুজাহিদিন বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে। এর ভিত্তিতেই মুসলিমদের উপর ধরপাকড় শুরু হয়।
পূর্বের রায়ে চারজন মুসলিমকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে অ্যামিকাস কিউরি বলেছে, “এটি প্রথম মামলা যেখানে কোনো প্রত্যক্ষ প্রমাণ ছাড়াই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৩০০ জন সাক্ষী ছিল। আমি তাদের সবাইকে জেরা করেছি। কিন্তু সাইকেলে বোমা স্থাপনকারী এই চারজনের একজনকেও কেউ সনাক্ত করতে পারেনি। এছাড়াও আদালতে যে সাইকেল ক্রয় বিল পেশ করা হয়েছিল, তা বোমা বিস্ফোরণে ব্যবহৃত সাইকেলের ফ্রেম নম্বরের চেয়ে আলাদা।”
রাজস্থান হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, “আমরা সমাজ, ন্যায়বিচার এবং নৈতিকতার স্বার্থে, রাজস্থানের পুলিশ মহাপরিচালককে তদন্তকারী দলের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত/শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশ দেওয়া যথাযথ বলে মনে করি।”
হাইকোর্ট আরও বলেছে, মামলার সাক্ষীদের আটকে রাখা হয়েছিল এবং “তদন্তের সময় স্পষ্ট হেরফের করা হয়েছিল এবং বানোয়াট অভিযোগ আনা হয়েছিল।”
বিচারপতি জৈন বলেছে, “ট্রায়াল কোর্ট ভুলভাবে অগ্রহণযোগ্য সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করেছে, উপাদানগত দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করেছে এবং আইনী বিধানগুলিও যথাযথভাবে বিবেচনা করেনি।”
আদালত আরও উল্লেখ করেছে, তদন্ত সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত কেবল ত্রুটিপূর্ণ ছিল না, বরং এটি ছিল অপ্রীতিকর এবং আইনের বিধানের পাশাপাশি তাদের নিজস্ব নিয়মগুলিকেও তারা উপেক্ষা করেছে।
রাজস্থান হাইকোর্ট এটিও পর্যবেক্ষণ করেছে যে, তদন্তকারী সংস্থার প্রয়োজনীয় আইনি দক্ষতার অভাব ছিল। কারণ তারা বিধিবদ্ধ পূর্বশর্ত এবং বাধ্যতামূলক বিষয়গুলো সম্পর্কেও সচেতন ছিল না।
সবশেষে, বিচারপতি জৈন বলেছে, ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির ছলছাতুরি প্রসিকিউশনের মামলাটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করেছে।
শুধুমাত্র ধর্ম পরিচয়ের কারণে ভারতের বিচার বিভাগ মুসলিমদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতমূলক রায় দিয়েছে এমন ঘটনা অসংখ্য। আর রাজস্থানের এই ঘটনার মত পরবর্তিতে সত্য প্রকাশিত হয়েছে খুব ঘটনারই। অথচ বিচার বিভাগের একটি ভুলের কারণে ভুগতে হয় পুরো একটি পরিবারকে আজীবন।
তথ্যসূত্র:
——
1. Four Muslim men sentenced to death in Jaipur bomb blast case acquitted by Rajasthan HC
– https://tinyurl.com/vedv6cuw
Comment