যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির ন্যাশভিলের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে ৩ শিশুসহ ৭ জনকে হত্যা করেছে এক সন্ত্রাসী। গত ২৭ মার্চের এই ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে ঐ সন্ত্রাসী নিজেও।
পরবর্তীতে ঐ সন্ত্রাসীকে ২৮ বছর বয়সী অড্রে হেলে হিসেবে সনাক্ত করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে তাকে মহিলা হিসেবে সনাক্ত করা হলেও পরে জানা যায়, সে আসলে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ হিসেবে পরিচয় দিতো। অর্থাৎ সে বাস্তবে নারী ছিল, কিন্তু পরে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ হয়েছে।
সর্বমোট ৭টি অস্ত্র ‘বৈধভাবে’ কিনে নিজের কাছে রেখেছিল অড্রে হেলে। এই সন্ত্রাসী হামলার সময় ঐ ৭টি অস্ত্রের মধ্যে একটি আধা-স্বয়ংক্রিয় রাইফেলসহ ৩টি অস্ত্র ব্যবহার করতে পেরেছিল সে।
একটি স্কুলে হামলা করে ৩ শিশুসহ ৬ জন মানুষকে খুন করার পরও হলুদ মিডিয়ায় তাকে কেবল ‘হামলাকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তাকে ‘সন্ত্রাসী’ বলার চেষ্টাও করছে না।
বাচ্চাদের স্কুলে এমন নৃশংস হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করতেও দেখা যায়নি কোন মিডিয়াকে। কিন্তু এর চেয়ে অতি সাধারণ কোনো ঘটনায় যদি একজন দাঁড়ি-টুপিওয়ালার হাতে একটি ফল কাটার ছুরিও থাকে, তাকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিত্রিত করতে এবং সে ঘটনাকে ‘ভয়ানক নৃশংস সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে উপস্থাপন করতে কালবিলম্ব করে না হলুদ মিডিয়াগুলো।
শুধু তাই নয়, ঘটনার সাথে ইসলামকে জড়িয়ে ‘ইসলাম হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের ধর্ম’, ‘মুসলিম দেশগুলো সন্ত্রাসী তৈরির কারখানা’, ‘ইসলাম একটি অসহনশীল ধর্ম’ ইত্যাদি বুলি আওড়াতে শুরু করে কথিত সুশীলরা। পত্র-পত্রিকা, টক-শো সব গরম করে ফেলে তাদের অন্তরে লুকিয়ে থাকা মুসলিম বিদ্বেষ উদগীরণের মাধ্যমে।
অথচ কেবল চলতি ২০২৩ সালের বিগত তিন মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সাধারণ মানুষের উপর এমন অন্তত ১২৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাতেই হামলাকারী অমুসলিম। এসব হামলায় প্রায় ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে। কিন্তু একটি ঘটনায়ও হামলাকারীকে সন্ত্রাসী বলা হয়নি, যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সন্ত্রাসবাদের দেশ’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়নি।
উপরন্তু, এ ধরনের নৃশংস হামলাকারী যদি সাদা চামড়ার হয়, তাহলে পশ্চিমা প্রশাসন ও হলুদ মিডিয়া একটি অতি পরিচিত কৌশল অবলম্বন করে- হামলাকারী মানসিক সমস্যা ভুগছিলেন, তার চিকিৎসা চলছিল। ব্যস, সন্ত্রাসীর সাত খুন মাফ!
এদিকে, বঙ্গীয় হলুদ মিডিয়া ও তথাকথিত সুশীলরা বরং – যুক্তরাষ্ট্রে কেন যাওয়া দরকার, সেখানে কত সুযোগ-সুবিধা – ইত্যাদি বিষয়াদী তুলে ধরার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যায়। তাদের অনেকের কাছে আমেরিকা হলো স্বপ্নের রাষ্ট্র, দুনিয়ার স্বর্গ।
আসলে পশ্চিমাদেরকে এই কথিত সুশীলরা নিজেদের প্রভুর আসনে বসিয়ে নিয়েছে। পশ্চিমারা যত নৃশংস কাজই করুক, তার একটা মনগড়া ব্যাখ্যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজেদের সর্বস্ব ব্যয় করে এই হলুদ মিডিয়া ও তথাকথিত সুশীলরা। তাদের লেখা পড়লে, তাদের কথা শুনলে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের সামনেই তাদের ডাবল স্ট্যান্ডার্ড দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র:
——–
১. সর্বমোট ৭টি অস্ত্র ‘বৈধভাবে’ নিজের কাছে রেখেছিল সে
– https://tinyurl.com/yc4tfmd7
২. MASS SHOOTINGS IN 2023, GUN VIOLENCE ARCHIVE
– https://tinyurl.com/5ap6sxs5