ভারতীয় বাহিনীর পেলেট গুলিতে অন্ধ হয়ে যাওয়া কাশ্মীরি যুবতীর সফলতা
সম্প্রতি কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলায় দু’চোখ অন্ধ এক মুসলিম যুবতী দ্বাদশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ বছর দেশটিতে দ্বাদশ পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ শীক্ষার্থী ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন। এর মধ্যে তিনিও একজন। এর আগে ২০১৮ সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষাও অন্ধ অবস্থায় দেন এবং পাশ করেন তিনি।
কাশ্মীরি এই যুবতির নাম ইনশা মুসতাক। আর সবার মতো তিনি ছিলেন দেহ-মনে সুস্থ, প্রাণোচ্ছল ও হাশিখুশি এক মেয়ে। সবার মতো নিজেই চলতে পারতেন পথঘাট। দেখতে পেতেন পৃথিবীর জান্নাত খ্যাত কাশ্মীর উপত্যকার রুপ-বৈচিত্র্য। তারও ছিল অন্য সবার মতোই ভবিষৎ স্বপ্ন-পরিকল্পনা। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্ন ও জীবনকে কঠিন করে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী পেলেট গান। সেনাদের পেলেট গুলির আঘাতে তাঁর জীবনের স্বপ্নগুলো এখন বড়ই কঠিন হয়ে গেছে।
সময়টি তখন ২০১৬। কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় ভারতীয় সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের সময় এক যুদ্ধে বুরহান ওয়ানি শহীদ হন। তিনি ছিলেন কাশ্মীরে প্রতিরোধ জিহাদি আন্দোলনের অগ্রপথিক ও অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। তার হত্যার ঘটনায় ওই সময় পুরো কাশ্মিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় তাঁর খুনের প্রতিবাদে কাশ্মীরের অন্যান্য এলাকার মতো ইনশা মুসতাকের নিজ জেলা শোপিয়ানেও বিক্ষোভ করছিল মুসলিমরা। আর তিনি সেই সময় নিজ বাড়িতে ছিলেন এবং কোন কারণে তিনি ঘরের জানালা খুলছিলেন।
এদিকে দখলদার বাহিনী কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ থামাতে শুরু করে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও পেলেট গানের নৃশংসতা। ওই সময় দূর্ভাগ্যক্রমে দখলদার সেনাদের ছোঁড়া পেলেট গুলি সরাসরি আঘাত হানে তাঁর চোখ-মুখ ও মাথায়। সাথে সাথেই রক্তাক্ত হয়ে উঠে তাঁর মুখ, ফেটে যায় তাঁর মাথা, চিরদিনের জন্য নিভে যায় তাঁর দু’চোখের আলো। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি, কারণ তার চোখ দুটো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় বাহিনী ইনশা মুসতাকের চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে প্রাণোচ্ছল আর হাসিখুশি সুন্দর জীবন। পাল্টে দিয়েছে তাঁর ভবিষৎ জীবনের গতিপথ। তবে অন্ধ হয়েও দমে যাননি তিনি, পড়াশোনায় নিয়ে এসেছেন সফলতা। কিন্তু মেয়ের এমন সফলতা পিতা-মাতাকে আনন্দের বদলে বাড়িয়ে দিয়েছে দুঃসহ যন্ত্রণা। তাঁর পিতামাতা এখনও ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন, আমাদের মেয়ে কী দোষ করেছিল যে আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করতে হবে।”
শুধু যে ইনশা মুসতাকের জীবনেই সর্বনাশ নেমে এসেছে এমন নয়, ভারতীয় বাহিনীর পেলেট গুলি কেড়ে নিয়েছে হাজারো কাশ্মীরি মুসলিমের চোখের আলো। ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের সুন্দর জীবন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১০ সালের পর থেকে এই পেলেট গুলি কেড়ে নিয়েছে ১৪ জন মানুষের প্রাণ। এছাড়াও ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে কাশ্মীর জুড়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তার সূত্র ধরে পেলেট বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে ৭৮২ জন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কিংবা হারানোর পথে। তবে কাশ্মীরি মানবাধিকার কমিশনের মতে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি। তারা জানায়, ২০১৬ সালের পর থেকে ৩,৮০০ জন মুসলিম পেলেট বুলেট দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছেন।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি যুবক।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি যুবক।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি শিশু।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি শিশু।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি শিশু।
বি.দ্র. বুরহান ওয়ানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন: “শহীদ বুরহান ওয়ানি : কাশ্মীর প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম বীর প্রতীক”
– https://alfirdaws.org/2022/07/18/58063/
তথ্যসূত্র:
——-
1. Blinded by pellets in 2016, Insha Mushtaq qualifies class 12th board exams
– https://tinyurl.com/56aajrmm
2. Amnesty Postcard Campaign Against Pellet Guns In Kashmir
– https://tinyurl.com/3v3z24tk
সম্প্রতি কাশ্মীরের শোপিয়ান জেলায় দু’চোখ অন্ধ এক মুসলিম যুবতী দ্বাদশ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ বছর দেশটিতে দ্বাদশ পরীক্ষায় ৬৫ শতাংশ শীক্ষার্থী ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন। এর মধ্যে তিনিও একজন। এর আগে ২০১৮ সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষাও অন্ধ অবস্থায় দেন এবং পাশ করেন তিনি।
কাশ্মীরি এই যুবতির নাম ইনশা মুসতাক। আর সবার মতো তিনি ছিলেন দেহ-মনে সুস্থ, প্রাণোচ্ছল ও হাশিখুশি এক মেয়ে। সবার মতো নিজেই চলতে পারতেন পথঘাট। দেখতে পেতেন পৃথিবীর জান্নাত খ্যাত কাশ্মীর উপত্যকার রুপ-বৈচিত্র্য। তারও ছিল অন্য সবার মতোই ভবিষৎ স্বপ্ন-পরিকল্পনা। কিন্তু তাঁর সব স্বপ্ন ও জীবনকে কঠিন করে দিয়েছে ভারতীয় বাহিনী পেলেট গান। সেনাদের পেলেট গুলির আঘাতে তাঁর জীবনের স্বপ্নগুলো এখন বড়ই কঠিন হয়ে গেছে।
সময়টি তখন ২০১৬। কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় ভারতীয় সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানের সময় এক যুদ্ধে বুরহান ওয়ানি শহীদ হন। তিনি ছিলেন কাশ্মীরে প্রতিরোধ জিহাদি আন্দোলনের অগ্রপথিক ও অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। তার হত্যার ঘটনায় ওই সময় পুরো কাশ্মিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় তাঁর খুনের প্রতিবাদে কাশ্মীরের অন্যান্য এলাকার মতো ইনশা মুসতাকের নিজ জেলা শোপিয়ানেও বিক্ষোভ করছিল মুসলিমরা। আর তিনি সেই সময় নিজ বাড়িতে ছিলেন এবং কোন কারণে তিনি ঘরের জানালা খুলছিলেন।
এদিকে দখলদার বাহিনী কাশ্মীরিদের বিক্ষোভ থামাতে শুরু করে টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও পেলেট গানের নৃশংসতা। ওই সময় দূর্ভাগ্যক্রমে দখলদার সেনাদের ছোঁড়া পেলেট গুলি সরাসরি আঘাত হানে তাঁর চোখ-মুখ ও মাথায়। সাথে সাথেই রক্তাক্ত হয়ে উঠে তাঁর মুখ, ফেটে যায় তাঁর মাথা, চিরদিনের জন্য নিভে যায় তাঁর দু’চোখের আলো। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেও কোন লাভ হয়নি, কারণ তার চোখ দুটো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় বাহিনী ইনশা মুসতাকের চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে। কেড়ে নিয়েছে প্রাণোচ্ছল আর হাসিখুশি সুন্দর জীবন। পাল্টে দিয়েছে তাঁর ভবিষৎ জীবনের গতিপথ। তবে অন্ধ হয়েও দমে যাননি তিনি, পড়াশোনায় নিয়ে এসেছেন সফলতা। কিন্তু মেয়ের এমন সফলতা পিতা-মাতাকে আনন্দের বদলে বাড়িয়ে দিয়েছে দুঃসহ যন্ত্রণা। তাঁর পিতামাতা এখনও ডুকরে কেঁদে উঠে বলেন, আমাদের মেয়ে কী দোষ করেছিল যে আমার মেয়ের এমন সর্বনাশ করতে হবে।”
শুধু যে ইনশা মুসতাকের জীবনেই সর্বনাশ নেমে এসেছে এমন নয়, ভারতীয় বাহিনীর পেলেট গুলি কেড়ে নিয়েছে হাজারো কাশ্মীরি মুসলিমের চোখের আলো। ধ্বংস করে দিয়েছে তাদের সুন্দর জীবন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০১০ সালের পর থেকে এই পেলেট গুলি কেড়ে নিয়েছে ১৪ জন মানুষের প্রাণ। এছাড়াও ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকে কাশ্মীর জুড়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তার সূত্র ধরে পেলেট বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছে ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের মধ্যে ৭৮২ জন দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কিংবা হারানোর পথে। তবে কাশ্মীরি মানবাধিকার কমিশনের মতে হতাহতের সংখ্যা আরও বেশি। তারা জানায়, ২০১৬ সালের পর থেকে ৩,৮০০ জন মুসলিম পেলেট বুলেট দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অন্ধত্ব বরণ করেছেন।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি যুবক।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি যুবক।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি শিশু।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি শিশু।
পেলেট গুলির আঘাতে আহত কাশ্মীরি শিশু।
বি.দ্র. বুরহান ওয়ানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন: “শহীদ বুরহান ওয়ানি : কাশ্মীর প্রতিরোধ যুদ্ধের অন্যতম বীর প্রতীক”
– https://alfirdaws.org/2022/07/18/58063/
তথ্যসূত্র:
——-
1. Blinded by pellets in 2016, Insha Mushtaq qualifies class 12th board exams
– https://tinyurl.com/56aajrmm
2. Amnesty Postcard Campaign Against Pellet Guns In Kashmir
– https://tinyurl.com/3v3z24tk
Comment