প্রকট হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা
যুবসমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। নিরীহ অসহায় মানুষের ওপর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আক্রোশ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা গড়ে ওঠার পরিবর্তে যুবসমাজের মাঝে এক প্রকার ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে একের পর এক ধর্ষণ, হত্যা-খুন, সংঘর্ষ, মারামারি-হানাহানিতো লেগেই আছে। পারিবারিক কলহ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা-মা খুন হচ্ছেন। রাস্তাঘাটে নারী উত্ত্যক্ত করা বখাটে যুবকদের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ঠুনকো বিষয় নিয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাও এখন চোখে পড়ে। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে উঠতি বয়সীদের হাতে অবৈধ অর্থের প্রভাব এত বেশি যে এলাকার মুরব্বিদেরও তারা তোয়াক্কা করে না।
সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা নিজেদের কবজায় নেয়ার জন্য গড়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’ নামের একটি মাস্তান বাহিনী। যাদের ভয়ে সমাজের সভ্য ও ভদ্র মানুষের পক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অনেকটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার সাভারের রাজাশন আমতলা এলাকায় পারিবারিক কলহে সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে গত মাসে সাভারে শত্রুতার জেরে পিকআপ চালক আনোয়ার হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে। গত ৬ অক্টোবর নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মা নুরজাহান বেগমকে হত্যার পর পাঁচ টুকরা করে পাশের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে ছেলে হুমায়ুন ও তার সহযোগীরা।
গত মাসে পারিবারিক বিরোধের জেরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামে বড় ভাই-ভাবী এবং ভাতিজা ও ভাতিজিকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ছোট ভাই রায়হানুল। এ ঘটনার আগে ১১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার আদমপুর এলাকায় সাংবাদিক ইলিয়াছ শেখকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে স্থানীয় সন্ত্রাসী তুর্য, তুষার ও তাদের সহযোগীরা।
গত ১৩ অক্টোবর বগুড়ায় ভাগ্নেকে মারধর করার প্রতিবাদে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী মামা, গত ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক গার্মেন্ট শ্রমিক, গত ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে কিশোর নুরুল ইসলাম, গত ১৩ মে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের দক্ষিণ মহাদেব ভূঁইয়ারপাড়া এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই তরুণ মো: শাহীন ও জাহিদ হোসেন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হন।
গত ২৯ অক্টোবর রংপুরের মিঠাপুকুরে এক মাদরাসাছাত্রীকে ঘরের মধ্যে ঢুকে ধর্ষণ করে এলাকার বখাটে রেজোয়ান মিয়া। একই গ্রামের ওই বখাটে রেজোয়ান মিয়া বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করত এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এর আগে নোয়াখালীর একলাশপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই কিছুদিন পর জেলার চাটখিলে বসতঘরে ঢুকে চাচীকে ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারণ করে প্রতিবেশী ভাসুরের ছেলে শরীফ বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান শরীফ ও তার লোকজন।
দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেগঞ্জে, হাটাবাজারে, পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়ত খুন, হত্যা-ধর্ষণের মতো নির্মম ও পৈশাচিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকলেও সামাজিক নিরাপত্তা পাচ্ছেন না পরিবারের কোনো সদস্য। ঘরে ঢুকে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যাসহ নানা অজানা আতঙ্ক প্রতিনিয়ত তাড়া করছে। নারী ও শিশুরা স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেরা তাদের কখনো কখনো উত্ত্যক্ত করছে আবার কখনো কখনো অপহরণ করে পরিবারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব খবরের কোনোটা গণমাধ্যমে উঠে আসছে আবার কোনোটা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ অপরাধের খবরতো গণমাধ্যমে আসে না। যার হিসাবও রেকর্ডেও থাকছে না। অপরাধী প্রভাবশালী হলেতো কথাই নেই। ক্ষমতার দাপটে অথবা টাকার প্রভাবে ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সমাজের কিছু নিয়মনীতি আছে। এগুলো যখন অনুসরণ করা না হয় তখন সমাজের সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে যায়। যেমন- সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও পৃথিবী প্রত্যেকেই আলাদা কক্ষপথে চলছে। তারা নিয়মের মধ্যে আছে বলেই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তেমনি সমাজেরও কিছু নিয়ম আছে, এগুলো সমাজের মানুষ অনুসরণ করছে না বলেই সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।
তিনি বলেন, যখন সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, অন্যভাবে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে, জোরজবরদস্তি করে অন্যের অধিকার ভোগদখল করা হয়, স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করা হয় না তখন তখন সমাজব্যবস্থা ঠিক থাকে না।
এ দিকে শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার তথ্য মতে, বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তের কারণে দেশে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন। দেশে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতি বছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় সেবন করছে।
অন্য দিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে দেশে ধর্ষণ হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৭১ জনকে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ১৩ জন নারী। পারিবারিক কলহে স্বামীর হাতে ২০৫ জন স্ত্রী নিহত হয়েছেন, স্বামীর পরিবারের মাধ্যমে ৬৩ জন নারী নিহত হয়েছেন, নিজ পরিবারের মাধ্যমে নিহত হয়েছেন ৫২ জন নারী এবং আত্মহত্যা করেছেন ৮০জন নারী। গত ১০ মাসে ৩৫টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ২১ জন গৃহকর্মী মারা গেছেন।
যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় মারা গেছেন ৭৪ জন নারী, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৮১টি এবং এ ঘটনায় কেস ফাইল হয়েছে ১২৫টি ঘটনার। সারা দেশে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২৪ জন নারী ও শিশু। গত ১০ মাসে ৪৮৫ জন শিশু নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২২৫টি কেস ফাইল হয়েছে। সারা দেশে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮০ জন নারী এবং পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০২ জন। এর মধ্যে ১৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। দেশে ১১৮টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
এসব ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৪৪ জন আহত হয়েছেন। এসব চিত্র শুধু মূল ধারার কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা আজকের প্রতিবেদন। ধারণা করা হচ্ছে, উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে এ সংখ্যাটা কয়েক গুণ বেশি; প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।
চলমান সামাজিক অস্থিরতার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামছুল আলম সেলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদেশী চ্যানেলে যে সিরিয়ালগুলো হচ্ছে সমাজে এর কুপ্রভাব পড়ছে। আগে যৌথ পরিবারের যে অনুশাসন মেনে চলত, পরিবারের কর্তাকে মেনে চলা, সমাজের মুরব্বি বয়োজ্যেষ্ঠদের মান্য করা, পারিবারিক, সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ- এগুলো এখন আর দেখা যায় না। সমাজে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো শিথিল হয়ে পড়েছে।
যুবসমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। নিরীহ অসহায় মানুষের ওপর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আক্রোশ চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা গড়ে ওঠার পরিবর্তে যুবসমাজের মাঝে এক প্রকার ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। সমাজে একের পর এক ধর্ষণ, হত্যা-খুন, সংঘর্ষ, মারামারি-হানাহানিতো লেগেই আছে। পারিবারিক কলহ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা-মা খুন হচ্ছেন। রাস্তাঘাটে নারী উত্ত্যক্ত করা বখাটে যুবকদের ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ঠুনকো বিষয় নিয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনাও এখন চোখে পড়ে। সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে উঠতি বয়সীদের হাতে অবৈধ অর্থের প্রভাব এত বেশি যে এলাকার মুরব্বিদেরও তারা তোয়াক্কা করে না।
সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা নিজেদের কবজায় নেয়ার জন্য গড়ে উঠেছে ‘কিশোর গ্যাং’ নামের একটি মাস্তান বাহিনী। যাদের ভয়ে সমাজের সভ্য ও ভদ্র মানুষের পক্ষে পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা অনেকটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার সাভারের রাজাশন আমতলা এলাকায় পারিবারিক কলহে সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে তার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে গত মাসে সাভারে শত্রুতার জেরে পিকআপ চালক আনোয়ার হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে। গত ৬ অক্টোবর নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চরজব্বর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে মা নুরজাহান বেগমকে হত্যার পর পাঁচ টুকরা করে পাশের ধানক্ষেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখে ছেলে হুমায়ুন ও তার সহযোগীরা।
গত মাসে পারিবারিক বিরোধের জেরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামে বড় ভাই-ভাবী এবং ভাতিজা ও ভাতিজিকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে ছোট ভাই রায়হানুল। এ ঘটনার আগে ১১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার আদমপুর এলাকায় সাংবাদিক ইলিয়াছ শেখকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে স্থানীয় সন্ত্রাসী তুর্য, তুষার ও তাদের সহযোগীরা।
গত ১৩ অক্টোবর বগুড়ায় ভাগ্নেকে মারধর করার প্রতিবাদে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী মামা, গত ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক গার্মেন্ট শ্রমিক, গত ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে কিশোর নুরুল ইসলাম, গত ১৩ মে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের দক্ষিণ মহাদেব ভূঁইয়ারপাড়া এলাকায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই তরুণ মো: শাহীন ও জাহিদ হোসেন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হন।
গত ২৯ অক্টোবর রংপুরের মিঠাপুকুরে এক মাদরাসাছাত্রীকে ঘরের মধ্যে ঢুকে ধর্ষণ করে এলাকার বখাটে রেজোয়ান মিয়া। একই গ্রামের ওই বখাটে রেজোয়ান মিয়া বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করত এবং কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এর আগে নোয়াখালীর একলাশপুরে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এর রেশ কাটতে না কাটতেই কিছুদিন পর জেলার চাটখিলে বসতঘরে ঢুকে চাচীকে ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারণ করে প্রতিবেশী ভাসুরের ছেলে শরীফ বাহিনীর প্রধান মজিবুর রহমান শরীফ ও তার লোকজন।
দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেগঞ্জে, হাটাবাজারে, পাড়া-মহল্লায় প্রতিনিয়ত খুন, হত্যা-ধর্ষণের মতো নির্মম ও পৈশাচিক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বাসা-বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকলেও সামাজিক নিরাপত্তা পাচ্ছেন না পরিবারের কোনো সদস্য। ঘরে ঢুকে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যাসহ নানা অজানা আতঙ্ক প্রতিনিয়ত তাড়া করছে। নারী ও শিশুরা স্কুলে যাওয়ার পথে বখাটে ছেলেরা তাদের কখনো কখনো উত্ত্যক্ত করছে আবার কখনো কখনো অপহরণ করে পরিবারের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব খবরের কোনোটা গণমাধ্যমে উঠে আসছে আবার কোনোটা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশির ভাগ অপরাধের খবরতো গণমাধ্যমে আসে না। যার হিসাবও রেকর্ডেও থাকছে না। অপরাধী প্রভাবশালী হলেতো কথাই নেই। ক্ষমতার দাপটে অথবা টাকার প্রভাবে ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সমাজের কিছু নিয়মনীতি আছে। এগুলো যখন অনুসরণ করা না হয় তখন সমাজের সব কিছু ওলোট-পালট হয়ে যায়। যেমন- সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও পৃথিবী প্রত্যেকেই আলাদা কক্ষপথে চলছে। তারা নিয়মের মধ্যে আছে বলেই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তেমনি সমাজেরও কিছু নিয়ম আছে, এগুলো সমাজের মানুষ অনুসরণ করছে না বলেই সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে।
তিনি বলেন, যখন সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, অন্যভাবে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে, জোরজবরদস্তি করে অন্যের অধিকার ভোগদখল করা হয়, স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ করা হয় না তখন তখন সমাজব্যবস্থা ঠিক থাকে না।
এ দিকে শিশু অধিকারবিষয়ক সংসদীয় ককাস এবং সমাজকল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থার তথ্য মতে, বিগত ১০ বছরে মাদকাসক্তের কারণে দেশে ২০০ মা-বাবা খুন হয়েছেন। দেশে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। প্রতি বছর মাদকের পেছনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে শিশু ও নারীদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে ইয়াবা ছেলেদের মতো মেয়েরাও অবলীলায় সেবন করছে।
অন্য দিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ১০ মাসে দেশে ধর্ষণ হয়েছে ১ হাজার ৩৪৯ জন নারী, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ২৭১ জনকে, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জনকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ১৩ জন নারী। পারিবারিক কলহে স্বামীর হাতে ২০৫ জন স্ত্রী নিহত হয়েছেন, স্বামীর পরিবারের মাধ্যমে ৬৩ জন নারী নিহত হয়েছেন, নিজ পরিবারের মাধ্যমে নিহত হয়েছেন ৫২ জন নারী এবং আত্মহত্যা করেছেন ৮০জন নারী। গত ১০ মাসে ৩৫টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ২১ জন গৃহকর্মী মারা গেছেন।
যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের ঘটনায় মারা গেছেন ৭৪ জন নারী, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৮১টি এবং এ ঘটনায় কেস ফাইল হয়েছে ১২৫টি ঘটনার। সারা দেশে এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২৪ জন নারী ও শিশু। গত ১০ মাসে ৪৮৫ জন শিশু নির্মম হত্যার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২২৫টি কেস ফাইল হয়েছে। সারা দেশে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৮০ জন নারী এবং পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১০২ জন। এর মধ্যে ১৪ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। দেশে ১১৮টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
এসব ঘটনায় ২৬ জন নিহত ও ১ হাজার ৩৪৪ জন আহত হয়েছেন। এসব চিত্র শুধু মূল ধারার কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা আজকের প্রতিবেদন। ধারণা করা হচ্ছে, উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে এ সংখ্যাটা কয়েক গুণ বেশি; প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ।
চলমান সামাজিক অস্থিরতার বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শামছুল আলম সেলিম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিদেশী চ্যানেলে যে সিরিয়ালগুলো হচ্ছে সমাজে এর কুপ্রভাব পড়ছে। আগে যৌথ পরিবারের যে অনুশাসন মেনে চলত, পরিবারের কর্তাকে মেনে চলা, সমাজের মুরব্বি বয়োজ্যেষ্ঠদের মান্য করা, পারিবারিক, সামাজিক শ্রদ্ধাবোধ- এগুলো এখন আর দেখা যায় না। সমাজে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো শিথিল হয়ে পড়েছে।
Comment