মুম্বাইয়ের জলগাঁওয়ে ৮০০ বছরের পুরনো মসজিদে নামাজ নিষিদ্ধ আবু আব্দুল্লাহ
মহারাষ্ট্রে জলগাঁওয়ের এরন্দোলের তালুকদার জামে মসজিদে নামাজ পরার উপর অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৮০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি উত্তর মহারাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় এবং ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত একটি সম্পত্তি। পান্ডবওয়াদা সংগ্রাম সমিতি নামে একটি অনিবন্ধিত ডানপন্থী সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় কালেক্টর তার আইনি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে শতাব্দী প্রাচীন এই মসজিদটিতে নামাজ পড়ার উপর এই নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন।
অথচ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াও মসজিদ ট্রাস্টের পক্ষ সমর্থন করেছে।
অভিযোগকারী প্রসাদ মধুসূদন ডান্ডাওয়াতে মে মাসের মাঝামাঝি জলগাঁও জেলা কালেক্টর আমান মিত্তালের কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। ডান্ডাওয়াতের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, সে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলের সদস্য।
অভিযোগে ডান্ডাওয়াতে দাবি করেছেন যে, মসজিদটি একটি হিন্দু উপাসনালয়ের উপরে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বেআইনি; রাজ্য কর্তৃপক্ষের উচিৎ মসজিদটির দখল নেওয়া। অভিযোগকারী আরও দাবি করেছেন যে, জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট জায়গাটি “অবৈধভাবে” দখল করেছিল।
এর প্রেক্ষিতে অভিযোগের শুনানিতে কালেক্টর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে একটি আদেশ জারি করে অবিলম্বে মসজিদ প্রাঙ্গনে ‘প্রার্থনা’ নিষিদ্ধ করেন। আদেশে কালেক্টর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করারও নির্দেশ দিয়েছেন। মসজিদটিকে “বিতর্কিত” সম্বোধন করে কালেক্টর তহসিলদারকে মসজিদের দায়িত্ব নিতে বলেছেন।
যদিও কালেক্টরের নিষেধাজ্ঞার আদেশটি অন্তর্বর্তী একটি আদেশ এবং বোম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চে এইরকম আদেশ পাস করার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, কিন্তু জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্য জনাব আসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, কালেক্টরের এই নজিরবিহীন এবং পক্ষপাতমূলক আদেশ রাজ্যের পুরনো মসজিদটিকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক অস্বস্তির সূচনা করেছে।
জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্যরা দ্য ওয়্যারকে বলেছেন যে জুনের শেষের দিকে নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত তারা দাবি করা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ট্রাস্ট কমিটির অ্যাড-হক সদস্যদের একজন জনাব আসলাম বলেছেন, “তখন কালেক্টর ইতিমধ্যে শুনানি পরিচালনা করছেন। একটি সীমিত সময়ের মধ্যে আমাদেরকে আমাদের মামলা রক্ষা করতে বলা হয়েছিল এবং ১১ জুলাই কালেক্টর কেবল একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছিলেন।”
মসজিদের ট্রাস্ট কমিটির পাশাপাশি ওয়াকফ বোর্ড এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকেও (এএসআই) নোটিশ জারি করেছিল কালেক্টর। তবে এএসআই ট্রাস্টের দাবিকে সমর্থন করে বলেছে যে এটি একটি প্রাচীন কাঠামো, ১৯৮৬ সালে এএসআইএর হস্তক্ষেপের পর থেকে মসজিদ চত্বরে আবারো নামাজ আদায় করা হতে থাকে।
এদিকে ওয়াকফ বোর্ডের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) জুনায়েদ সায়াদের স্বাক্ষরিত অভিযোগে বোর্ড আইনের প্রাসঙ্গিক ধারাগুলির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বিভাগ ছাড়া অন্য কোনও বিভাগকে বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিতদের সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা এই সম্পর্কিত বিরোধগুলি দেখার অনুমতি দেয় না।
বোর্ডের সিইও মইন তহসিলদার দ্য ওয়্যারকে বলেছেন যে, কালেক্টরের এই নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই তার ক্ষমতার আওতার বাইরে। এটি ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের আইনি এখতিয়ার লঙ্ঘন করেছে। কালেক্টর এখানে আইন-শৃঙ্খলার দিকগুলি পরিচালনার ব্যপারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন, বাকি সবকিছুর দায়িত্ব ওয়াকফ বোর্ডের। সম্পত্তিটি ২০০৯ সাল থেকে বোর্ডের সাথে নিবন্ধিত হয়েছে এবং সেই দিকটিতে কোনও অস্পষ্টতা নেই।”
জনাব তহসিলদার আরও বলেছেন, “আমরা অন্তর্বর্তী আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছি। এই বিষয়ে শুনানি ১৩ জুলাই নির্ধারিত ছিল কিন্তু পরে কালেক্টর শুনানি ১৮ জুলাই পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পরবর্তী শুনানির তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ইতিমধ্যে মসজিদ ট্রাস্ট প্রাক-স্বাধীনতার সময়ের নথি নিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে, যা বিভিন্ন সময়ে আদালতের আদেশ এবং ব্রিটিশ ভারত সরকার কর্তৃক পাস করা হয়েছিল। ১৯৬০ এর দশকের পরেও নথিগুলির পর্যায়ক্রমে আপডেট করা হয়েছে এবং মসজিদটিকে একটি প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে- এবিষয়টিও পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনকারীরা তাদের ন্যায্য শুনানি দিতে কালেক্টরের অনিচ্ছার বিষয়েও পিটিশনের অভিযোগে বলেছেন, “বিদগ্ধ কালেক্টর আবেদনকারীর কাছ থেকে কিছু শোনার মেজাজে ছিলেন না। ১১-৭-২০২৩ তারিখে আবেদনকারীকে কোনো সুযোগ না দিয়েই জলগাঁওের কালেক্টর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারার অধীনে একটি আদেশ দিয়েছেন।”
ভারতের আইন-প্রশাসন এভাবেই হিন্দুত্ববাদী ধ্যান-ধারণা ও সংগঠনগুলোর সাথে একরকম একাকার হয়ে গেছে। তারা সকলে মিলে ইসলাম ও মুসলিম নির্মূলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যার সতর্কতা ইতিপূর্বে জারি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র:
1. Jalgaon: Based on Right-Wing Activist’s Complaint, Collector Bans Namaz at 800-Year-Old Mosque
– https://tinyurl.com/297cwstx
– https://tinyurl.com/3477ew6u
মহারাষ্ট্রে জলগাঁওয়ের এরন্দোলের তালুকদার জামে মসজিদে নামাজ পরার উপর অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৮০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি উত্তর মহারাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় এবং ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিত একটি সম্পত্তি। পান্ডবওয়াদা সংগ্রাম সমিতি নামে একটি অনিবন্ধিত ডানপন্থী সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয় কালেক্টর তার আইনি এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে শতাব্দী প্রাচীন এই মসজিদটিতে নামাজ পড়ার উপর এই নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন।
অথচ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াও মসজিদ ট্রাস্টের পক্ষ সমর্থন করেছে।
অভিযোগকারী প্রসাদ মধুসূদন ডান্ডাওয়াতে মে মাসের মাঝামাঝি জলগাঁও জেলা কালেক্টর আমান মিত্তালের কাছে একটি আবেদন করেছিলেন। ডান্ডাওয়াতের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যায়, সে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বজরং দলের সদস্য।
অভিযোগে ডান্ডাওয়াতে দাবি করেছেন যে, মসজিদটি একটি হিন্দু উপাসনালয়ের উপরে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি বেআইনি; রাজ্য কর্তৃপক্ষের উচিৎ মসজিদটির দখল নেওয়া। অভিযোগকারী আরও দাবি করেছেন যে, জুম্মা মসজিদ ট্রাস্ট জায়গাটি “অবৈধভাবে” দখল করেছিল।
এর প্রেক্ষিতে অভিযোগের শুনানিতে কালেক্টর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার অধীনে একটি আদেশ জারি করে অবিলম্বে মসজিদ প্রাঙ্গনে ‘প্রার্থনা’ নিষিদ্ধ করেন। আদেশে কালেক্টর এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করারও নির্দেশ দিয়েছেন। মসজিদটিকে “বিতর্কিত” সম্বোধন করে কালেক্টর তহসিলদারকে মসজিদের দায়িত্ব নিতে বলেছেন।
যদিও কালেক্টরের নিষেধাজ্ঞার আদেশটি অন্তর্বর্তী একটি আদেশ এবং বোম্বে হাইকোর্টের ঔরঙ্গাবাদ বেঞ্চে এইরকম আদেশ পাস করার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, কিন্তু জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্য জনাব আসলাম আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, কালেক্টরের এই নজিরবিহীন এবং পক্ষপাতমূলক আদেশ রাজ্যের পুরনো মসজিদটিকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক অস্বস্তির সূচনা করেছে।
জুম্মা মসজিদ ট্রাস্টের সদস্যরা দ্য ওয়্যারকে বলেছেন যে জুনের শেষের দিকে নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত তারা দাবি করা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ট্রাস্ট কমিটির অ্যাড-হক সদস্যদের একজন জনাব আসলাম বলেছেন, “তখন কালেক্টর ইতিমধ্যে শুনানি পরিচালনা করছেন। একটি সীমিত সময়ের মধ্যে আমাদেরকে আমাদের মামলা রক্ষা করতে বলা হয়েছিল এবং ১১ জুলাই কালেক্টর কেবল একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছিলেন।”
মসজিদের ট্রাস্ট কমিটির পাশাপাশি ওয়াকফ বোর্ড এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকেও (এএসআই) নোটিশ জারি করেছিল কালেক্টর। তবে এএসআই ট্রাস্টের দাবিকে সমর্থন করে বলেছে যে এটি একটি প্রাচীন কাঠামো, ১৯৮৬ সালে এএসআইএর হস্তক্ষেপের পর থেকে মসজিদ চত্বরে আবারো নামাজ আদায় করা হতে থাকে।
এদিকে ওয়াকফ বোর্ডের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) জুনায়েদ সায়াদের স্বাক্ষরিত অভিযোগে বোর্ড আইনের প্রাসঙ্গিক ধারাগুলির উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বিভাগ ছাড়া অন্য কোনও বিভাগকে বোর্ডের অধীনে নিবন্ধিতদের সম্পত্তি সংক্রান্ত সমস্যা এই সম্পর্কিত বিরোধগুলি দেখার অনুমতি দেয় না।
বোর্ডের সিইও মইন তহসিলদার দ্য ওয়্যারকে বলেছেন যে, কালেক্টরের এই নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করার সিদ্ধান্ত স্পষ্টতই তার ক্ষমতার আওতার বাইরে। এটি ওয়াকফ ট্রাইব্যুনালের আইনি এখতিয়ার লঙ্ঘন করেছে। কালেক্টর এখানে আইন-শৃঙ্খলার দিকগুলি পরিচালনার ব্যপারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন, বাকি সবকিছুর দায়িত্ব ওয়াকফ বোর্ডের। সম্পত্তিটি ২০০৯ সাল থেকে বোর্ডের সাথে নিবন্ধিত হয়েছে এবং সেই দিকটিতে কোনও অস্পষ্টতা নেই।”
জনাব তহসিলদার আরও বলেছেন, “আমরা অন্তর্বর্তী আদেশকে চ্যালেঞ্জ করেছি। এই বিষয়ে শুনানি ১৩ জুলাই নির্ধারিত ছিল কিন্তু পরে কালেক্টর শুনানি ১৮ জুলাই পর্যন্ত পিছিয়ে দেন। অন্তর্বর্তী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পরবর্তী শুনানির তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
ইতিমধ্যে মসজিদ ট্রাস্ট প্রাক-স্বাধীনতার সময়ের নথি নিয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছে, যা বিভিন্ন সময়ে আদালতের আদেশ এবং ব্রিটিশ ভারত সরকার কর্তৃক পাস করা হয়েছিল। ১৯৬০ এর দশকের পরেও নথিগুলির পর্যায়ক্রমে আপডেট করা হয়েছে এবং মসজিদটিকে একটি প্রাচীন স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে- এবিষয়টিও পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনকারীরা তাদের ন্যায্য শুনানি দিতে কালেক্টরের অনিচ্ছার বিষয়েও পিটিশনের অভিযোগে বলেছেন, “বিদগ্ধ কালেক্টর আবেদনকারীর কাছ থেকে কিছু শোনার মেজাজে ছিলেন না। ১১-৭-২০২৩ তারিখে আবেদনকারীকে কোনো সুযোগ না দিয়েই জলগাঁওের কালেক্টর ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ এবং ১৪৫ ধারার অধীনে একটি আদেশ দিয়েছেন।”
ভারতের আইন-প্রশাসন এভাবেই হিন্দুত্ববাদী ধ্যান-ধারণা ও সংগঠনগুলোর সাথে একরকম একাকার হয়ে গেছে। তারা সকলে মিলে ইসলাম ও মুসলিম নির্মূলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে, যার সতর্কতা ইতিপূর্বে জারি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্যসূত্র:
1. Jalgaon: Based on Right-Wing Activist’s Complaint, Collector Bans Namaz at 800-Year-Old Mosque
– https://tinyurl.com/297cwstx
– https://tinyurl.com/3477ew6u
Comment