গত ১৮ জুলাই মঙ্গলবার ভোরবেলা জম্মু ও কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ ২ শতাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর একটি দলের উপর গুলি ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে বলে জানা গেছে। সরকারি বাহিনীর এই বর্বরোচিত আক্রমণে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মুসলিম আহত হয়েছে৷
ঈদুল আযহার পর থেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের অবৈধ আটকের প্রতিবাদে অনশনে বসেছিল। তারা হয় ভারতে মুক্তভাবে বসবাস করার অথবা ভারত ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কিংবা শেষ অবলম্বন হিসাবে নির্বাসনের দাবি করছিল। আর তাদের এই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় কাশ্মীরের দখলদার ভারতীয় প্রশাসন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরা একটি ভিডিওতে উঠে এসেছে যে, আক্রমণের শিকার শরণার্থীদের মধ্যে গর্ভবতী মহিলা, প্রতিবন্ধী এবং অসুস্থ ও বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যারা কিনা জরুরী বিশেষ যত্ন ও মনোযোগ পাওয়ার দাবিদার, তাদের উপরেই চড়াও হয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় প্রশাসন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ভিডিওগুলি প্রকাশিত হয়েছে তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, কিছু লোক সেখানে গুরুতর আহত হয়েছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একদল নারী বদ্ধ একটি জায়গায় জড়ো হচ্ছেন, আর সেখানে বাইরে থেকে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, ভেসে আসছিলো গুলির শব্দ ও ঝলকানি। সেখানে আহত হয়ে মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন একজন ব্যক্তি।
এই শরণার্থীদের কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) কর্তৃক যথাযথভাবে যাচাইকৃত পরিচয়পত্র রয়েছে। এই পরিচয়পত্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদেরকে সুরক্ষা এবং সহায়তার যোগ্য দুর্বল ব্যক্তি হিসাবে তাদের অবস্থান জোরদার করে। তা সত্ত্বেও হিন্দুত্ববাদী ভারতের মুসলিমবিদ্বেষী আচরণ থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তারা।
রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের (আরএইচআরআই) বিবরণ অনুসারে, গত ৬ মার্চ ২০২১ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জম্মুর মৌলানা আজাদ স্টেডিয়ামে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের কথা বলে ১৬৮ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ‘বেআইনিভাবে আটক’ করেছিল। ২০২১-২০২২ সালে কোনো কারণ ছাড়াই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বেআইনিভাবে জেলে পাঠিয়েছিল; ফলে আটক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৯। এছাড়াও ৩ জন শরণার্থী আটক অবস্থায় মারা গেছেন। আর হাসিনা বেগম এবং জাফর আলম নামক দুই রোহিঙ্গা মুসলিমকে ইতিমধ্যে নির্বাসিত করা হয়েছে।
আরএইচআরআই একটি প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, “২ বছর বেআইনিভাবে আটক থাকার পর জোর করে ঐ দুইজনকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। সেখানে তাদের কৃত দাবির কোন উত্তর না পেয়ে উদ্বাস্তুরা নিজেদের মুক্ত করার জন্য জেল-পালানোর চেষ্টা করেছিল। সকাল ৬-৭টা নাগাদ পুলিশ উন্মুক্ত জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে এবং শরণার্থীদের দিকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। ফলে কিছু উদ্বাস্তু আহত হয়েছে।”
শরণার্থীরা ইউএনএইচসিআর-এর সাথে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু কোন সাহায্য বা সমর্থন পায়নি বলে জানায় তারা।
রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ বলেছে যে, এটি দ্ব্যর্থহীনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা অসহায় এই জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত বল-প্রয়োগের নিন্দা করছে যারা তাদের বাড়িতে একই ধরনের সহিংসতা থেকে ভারতে আশ্রয় চেয়েছে।
আরএইচআরআই তাদের বিবৃতিতে আরও বলেছে, “এই কর্মগুলি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মানবিক এবং মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন নয় বরং UDHR অনুচ্ছেদ ১৪-কেও ক্ষুণ্ণ করে, যেখানে বলা হয়েছে যে – প্রত্যেকেরই অন্য দেশে নিপীড়ন থেকে আশ্রয় খোঁজার এবং উপভোগ করার অধিকার রয়েছে। আর এই ইউডিএইচআরে স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম।”
সংস্থাটি ভারত সরকারকে সহিংসতা বন্ধ করতে, নির্বিচারে আটক সব রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে আহব্বান জানিয়েছে। তারা এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করার জন্য অবিলম্বে এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত এবিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনাগ্রহীই মনে হচ্ছে, কেননা তারা লাগাতারভাবেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে আসছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে সরকারি দল সহ হিন্দুত্ববাদী অন্যান্য দলগুলো মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আগমনকে ভারতের ডেমোগ্রাফি বদলের ষড়যন্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করছে জনগণের সামনে, এভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে মুসলিম ও রোহিঙ্গাবিরোধী বিষবাষ্প।
তথ্যসূত্র:
1. Jammu: Police fire tear gas, shoot at Rohingya refugees protesting illegal detention, attacked include pregnant, disabled
– https://tinyurl.com/4yyu6v4r
2. Breaking: Indian authorities shot and tear-gassed Rohingya refugees at around 6-7 AM this morning in Jammu.
– https://tinyurl.com/3nst5mrv
Comment