জনগণের উপর ক্ষমতা লাভ করা একটি দেশের সরকারের জন্য যেমন সম্মানের, তেমনিভাবে জনগণের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সে সরকারের জন্য এক বিশাল দায়িত্বও বটে। দক্ষতা ও সততা ব্যতীত এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব নয়।
একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সে দেশের যেকোনো সরকারি পদে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে “দক্ষতা ও সততা” এই দুটি গুণ থাকা বাধ্যতামূলক। দক্ষতা মানে অর্পিত দায়িত্ব সুচারুভাবে আঞ্জাম দেওয়ার সক্ষমতা। আর সততা মানে দেশের সম্পদের নিরাপত্তা এবং অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে আঞ্জাম দেওয়ার নিশ্চয়তা। যে দেশের কার্যক্রম এই দুটি গুণ সম্বলিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিচালনা করবে, তারা শীঘ্রই উন্নতি ও সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ্।
গত দুই বছর যাবত ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের দায়িত্ব পালন করছে আফগান তালিবান প্রশাসন। কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও, সার্বিকভাবে অভাবনীয় উন্নতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধবিগ্রহ শেষে, তারা এখন স্বপ্ন দেখছেন খুব দ্রুতই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার। ইতোমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আঞ্চলিক রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং অর্থনীতি ও বাণিজ্যে সফলতার বিভিন্ন মাইলফলক অর্জন করেছেন তারা।
তবে, যে বিষয়টি ইমারতে ইসলামিয়াকে অন্য যেকোনো দেশ থেকে এগিয়ে রাখছে, তা হচ্ছে জবাবদিহিতা।
গত বছরের মতো এ বছরও ইসলামি ইমারতের মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত দেশবাসীর সামনে তাদের নিজ নিজ দপ্তরের জবাবদিহিতামূলক রিপোর্ট তুলে ধরার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সম্প্রতি সকল সরকারি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজেদের কার্যক্রমের জবাবদিহিতামূলক রিপোর্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এই জবাবদিহিতামূলক রিপোর্টের মাধ্যমে জনগণ জানতে পারছে যে, ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন কী কী প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে, কোন খাতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ হচ্ছে, কোন কোন খাত থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে, কী কী প্রজেক্ট চলমান আছে, প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথায় কোথায় প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, কোন কোন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, ইত্যাদি।
পুরো জাতির সামনে সরকারের এমন জবাবদিহিতামূলক প্রক্রিয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজে সমস্যা ও ত্রুটি নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে এবং সকল কাজে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জনগণের কাছে সরকারি কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা বাস্তবিক অর্থেই সুশাসনের বহিঃপ্রকাশ। এ ক্ষেত্রে ইসলামি ইমারত আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বাৎসরিক হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের স্থিতিশীলতা ও তা পর্যবেক্ষণের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছে। এসকল ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশাসনিক পর্যায়ে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন। একই সাথে সরকারের উপর জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলেও তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
ইসলামি ইমারতের এসকল পদক্ষেপ এটাই প্রমাণ করে যে, আফগান তালিবান সরকার পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে নিজেদের দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে আগ্রহী। সরকারি কোষাগারকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, বরং জনগণ ও রাষ্ট্রের সম্পদ বিবেচনা করে তার সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে তারা বদ্ধ পরিকর। এই লক্ষ্যে কোষাগারে জমা হওয়া অর্থের আয় ও ব্যয়ের হিসাবও জনগণের সামনে প্রকাশ করা হচ্ছে। এছাড়াও, বিভিন্ন আলোচনা সভার মাধ্যমে জনগণের অনুরোধ, পরামর্শ এবং সমালোচনাগুলোও সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছানো হচ্ছে।
জাতির সামনে আফগান তালিবান সরকারের এমন জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম খুবই ইতিবাচক সাড়া ফেলছে। সার্বিকভাবে, এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে ইমারতে ইসলামিয়া সরকার আফগান জাতি তথা গোটা মুসলিম উম্মাহর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
তথ্যসূত্র:
1. Accountability increases the nation’s trust in the government
– https://tinyurl.com/e5xy7cen
Comment