আরাকান থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার। দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের গ্রেফতার করে রাখা হচ্ছে কারাগার ও ডিটেনশন সেন্টারে। এসকল বন্দীদের বন্দীত্বের মেয়াদ শেষ হবার পরও মুক্তি মিলছে না অনেকের। কারাগারে অনেকের ওপর চালানো হয় শারিরিক নির্যাতন।
সম্প্রতি ফোর্টিফাই রাইটস নামক একটি মানবাধিকার সংগঠন এক প্রতিবেদনে ভারতে রোহিঙ্গা নিপীড়নের কিছু তথ্য তুলে ধরেছে।
দেশটিতে ৫ বছর ধরে কারাগারে বন্দী হয়েছেন বা বর্তমানে ডিটেনশন সেন্টারে বন্দী রয়েছেন এমন ভুক্তভোগী রোহিঙ্গাসহ ১৪ জন ব্যাক্তির সাক্ষাৎকার নেয় সংস্থাটি। তাদের কাছ থেকে ডিটেনশন সেন্টারের ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও সাক্ষাৎকার থেকে এসব তথ্য উল্লেখ্য করে সংস্থাটি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে আরাকান থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের মধ্যে ভারতে আনুমানিক ৪০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)-এর কাছে নিবন্ধিত। অন্যদের এখনো নিবন্ধন করেনি ইউএনএইচসিআর।
প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়, দেশটিতে আশ্রয় নেয়া নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত নির্বিশেষে রোহিঙ্গাদেরকে বিভিন্নভাবে আটক করছে ভারত সরকার। এর মধ্যে আসাম, মনিপুর, নয়াদিল্লি ও অধিকৃত কাশ্মীর থেকে বন্দী করা হয়েছে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিমকে। বন্দীদের অনেককেই বন্দী মেয়াদ শেষ হবার পরও আটকে রাখা হচ্ছে তাদের।
৫ বছর ভারতীয় কারাগারে আটক থাকা একজন রোহিঙ্গা সংস্থাটিকে জানায়, তাকে ২০১৮ সালে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় মনিপুর থেকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতারের সময় তার সাথে থাকা সবাইকেই লোহার রড দিয়ে মারধর করে পুলিশ। এরপর কারাগারে নিয়ে সেখানেও মারধর করা হয় তাদের। পরে তাদের পক্ষে কোন উকিল ছাড়াই আদালতে তোলা হয়। আদালত তাদেরকে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে এবং ৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে।
আরেকজন আটক ব্যক্তি সংস্থাটিকে জানায়, শরণার্থী কার্ড থাকা সত্ত্বেও ২০২০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ভারতীয় পুলিশ। আদালত তাকে ভারতীয় অভিবাসন আইনে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখে।
মানবাধিকার সংস্থাটি তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালতের নথিপত্র অনুসন্ধান করে নিশ্চিত করেছে যে আদালত তাকে এক বছরের কারাদণ্ডই দিয়েছিল। এই শাস্তি ভোগ করা সত্ত্বেও এবং স্বীকৃত শরণার্থী হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাকে আটকে রেখেছে অতিরিক্ত দেড় বছর।
ডিটেনশন সেন্টারে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দী থাকা অন্য আরেকজন বন্দী জানান, “আমাদেরকে আসাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমাদের কাছে শরনার্থী কার্ড ছিল, এগুলো পুলিশকে দেখাই আমরা। পুলিশ আমদের বলেছিল যে ভারতীয় সরকার শরনার্থী কার্ড নিয়ে ভ্রমনের অনুমতি দেয় না। পরে এ অযুহাতে আমাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর নেয়া হয় একটি ডিটেনশন সেন্টারে।”
একটি ডিটেনশন সেন্টার এটি ভারতের আসামে অবস্থিত। আসামে এমন ছয়টি ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে, ছবি: বিবিসি বাংলা।
“সেখানে আমাদের ৯ মাস আটক রাখে কর্তৃপক্ষ। তিন বছর পর আমদেরকে বলা হয় তোমাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ফলে আমাদেরকে একটি শরনার্থী ক্যাম্পে স্থানান্তারিত করা হয়। কিন্তু এটি কোন শরনার্থী ক্যাম্প নয়, এটিও একটি ডিটেনশন সেন্টার। ডিটেনশন কেন্দ্রের অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান যে, এখানে ইউএনএইচসিআর আমাদের কোন প্রকার সাহায্য করছে না। খাবার হিসেবে ভাত ও মসুর ডাল খেতে দেয়া হয়। এখানে আমাদের সন্তানদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয় না। এখানে মূলত মরতে মরতে বেঁচে আছি আমরা।”
কাশ্মীরে হীরানগর ডিটেনশন সেন্টারে শত শত রোহিঙ্গা জোরপূর্বক আটকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ভারতীয় পুলিশ তাদের উপর টিয়ার গ্যাস ছুঁড়লে গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে এক রোহিঙ্গা শিশুর মৃত্যু হয়। কিন্তু পুলিশ মৃত্যুর ঘটনাকে ‘টিয়ার গ্যাসের সাথে জড়িত নয়’ বলে অস্বীকার করছে।
তথ্যসূত্র:
——
1. India: End Crackdown and Indefinite Detention of Rohingya Refugees
– https://tinyurl.com/4akf2rn9
Comment