ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দুই বছর
আফগানিস্তানের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আফগান জনগণের জন্য এ দিনটি বড় উচ্ছ্বাসময় একটি দিন। পাশাপাশি পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা এদিনেই পুরো বিশ্ব চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছিল যে, কীভাবে দৃঢ় বিশ্বাস ও সংকল্পের অধিকারীরা নগণ্য সামর্থ্য নিয়ে যুগের পরাশক্তির বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে। ২০২১ সালের এদিনে তালিবান মুজাহিদগণ আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীকে হটতে বাধ্য করে দীর্ঘ ২০ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটান এবং ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
দীর্ঘ এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর। ঐ বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন তালিবান প্রশাসনের কাছ থেকে রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় দখলদার মার্কিন জোট ও তাদের সমর্থিত স্থানীয় মিলিশিয়ারা। দীর্ঘ ২০ বছর পর, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুলে তালিবান যোদ্ধারা প্রবেশের সাথে সাথে, পশ্চিমা সমর্থিত কাবুল প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে।
কাবুলের পথে তালিবানদের যাত্রা:
২০১৮ সালের অক্টোবরে তালিবানদের সাথে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বিশ্বের পরাশক্তি দাবিদার এই দেশটি ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তালিবানদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়, যা দোহা চুক্তি নামে পরিচিত।
চুক্তিতে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর, নভেম্বরে আমেরিকার ক্ষমতায় আসে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। সে ক্ষমতায় আসার পর চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ঘোষণা করে যে, চুক্তিটি সে নতুন করে পর্যালোচনা করবে।
বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তের পর ১ মে অতিবাহিত হয়ে গেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। ফলে তালিবান মুজাহিদরা দেশজুড়ে আগের চেয়েও আরও ক্ষিপ্র গতিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে শুরু করেন। আফগানের সীমান্ত এবং গ্রামাঞ্চলে শুরু হওয়া বিজয় অভিযানগুলো ধীরে ধীরে জেলা ও প্রাদেশিক কেন্দ্রে বিস্তৃত হতে শুরু করে। আগস্টের শুরুতে তালিবান অভিযানগুলো ব্যাপক জোয়ার লাভ করে এবং মার্কিন ও তাদের সমর্থিত বাহিনীর দখলে থাকা প্রাদেশিক কেন্দ্রগুলি একে একে বিজিত হতে থাকে। প্রথমে নিমরুজ ও পরে কুন্দুজ প্রদেশের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তালিবানের এই বিজয়ের ধারা।
সর্বশেষ ১৫ আগস্টের মধ্যে, দেশের প্রায় সমস্ত প্রাদেশিক রাজধানী ও শহরের কেন্দ্র তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এরপর ১৫ আগস্ট বিকাল থেকে তালিবান মুজাহিদগণ চার দিক থেকে কাবুলকে ঘিরে ফেলেন। এসময় তারা কাবুল প্রশাসনের সাথে রাজধানীর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। তালিবানরা ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা যুদ্ধ করে শহরে প্রবেশ করবে না
কিন্তু মার্কিন সমর্থিত কাবুল প্রশাসনের প্রধান আশরাফ গনি সহ প্রায় সকল নেতা ও প্রতিনিধিরা কাবুল ঘেরাও এর খবর পেয়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই গোপনে রাজধানী কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বাস্তবিক অর্থে কোনো প্রশাসনিক নেতৃত্ব ব্যতীত রাজধানীতে নিরাপত্তাহীনতার আশংকা তৈরি হয়। ফলে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রশাসনিক নেতৃত্ব গ্রহণ করতে আফগানের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তালিবানদের কাবুলে আমন্ত্রণ জানান।
আর এভাবেই ১৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে তালিবান মুজাহিদগণ দলে দলে রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করতে শুরু করেন এবং বিনা সংঘর্ষে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেন। কাবুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুজাহিদগণ দেশটিতে পুনরায় ‘ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মার্কিন ও ন্যাটো জোট কাবুল বিমানবন্দর থেকে আগস্টের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণরূপে সেনা প্রত্যাহার করে।
তালিবান মুজাহিদিন কর্তৃক কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চূড়ান্ত ফলাফল এটাই যে, মার্কিন এবং ন্যাটো জোট দীর্ঘ ২০ বছরের এই যুদ্ধে হেরেছে এবং তালিবান জউ লাভ করেছে। যুদ্ধ শুরু করা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য প্রমাণিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, তালিবান মুজাহিদিন কর্তৃক রাজধানী কাবুল বিজয়ের মাত্র একমাস আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিল যে, তালিবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। তখন এর জবাবে তালিবান প্রতিনিধি দল বলেছিল, “আমরা চাইলে ২ সপ্তাহের মধ্যে এটি করতে পারি”। আর এই ঘোষণার প্রায় ৪ সপ্তাহ পর সত্যিই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেন মুজাহিদগণ, তাও মাত্র ২ সপ্তাহেরও কম সময়ে।
আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহর এ বিজয়কে স্থিতিশীল করুন ও এতে বারাকাহ দান করুন। আমিন।
আফগানিস্তানের ইতিহাসে ১৫ আগস্ট একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। আফগান জনগণের জন্য এ দিনটি বড় উচ্ছ্বাসময় একটি দিন। পাশাপাশি পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্যও এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। কেননা এদিনেই পুরো বিশ্ব চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছিল যে, কীভাবে দৃঢ় বিশ্বাস ও সংকল্পের অধিকারীরা নগণ্য সামর্থ্য নিয়ে যুগের পরাশক্তির বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে। ২০২১ সালের এদিনে তালিবান মুজাহিদগণ আফগানিস্তানে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীকে হটতে বাধ্য করে দীর্ঘ ২০ বছরের দখলদারিত্বের অবসান ঘটান এবং ইমারাতে ইসলামিয়া প্রশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন।
দীর্ঘ এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর। ঐ বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন তালিবান প্রশাসনের কাছ থেকে রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় দখলদার মার্কিন জোট ও তাদের সমর্থিত স্থানীয় মিলিশিয়ারা। দীর্ঘ ২০ বছর পর, ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট কাবুলে তালিবান যোদ্ধারা প্রবেশের সাথে সাথে, পশ্চিমা সমর্থিত কাবুল প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে।
কাবুলের পথে তালিবানদের যাত্রা:
২০১৮ সালের অক্টোবরে তালিবানদের সাথে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর বিশ্বের পরাশক্তি দাবিদার এই দেশটি ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তালিবানদের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়, যা দোহা চুক্তি নামে পরিচিত।
চুক্তিতে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এই চুক্তি স্বাক্ষরের পর, নভেম্বরে আমেরিকার ক্ষমতায় আসে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা জো বাইডেন। সে ক্ষমতায় আসার পর চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ঘোষণা করে যে, চুক্তিটি সে নতুন করে পর্যালোচনা করবে।
বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তের পর ১ মে অতিবাহিত হয়ে গেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। ফলে তালিবান মুজাহিদরা দেশজুড়ে আগের চেয়েও আরও ক্ষিপ্র গতিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে শুরু করেন। আফগানের সীমান্ত এবং গ্রামাঞ্চলে শুরু হওয়া বিজয় অভিযানগুলো ধীরে ধীরে জেলা ও প্রাদেশিক কেন্দ্রে বিস্তৃত হতে শুরু করে। আগস্টের শুরুতে তালিবান অভিযানগুলো ব্যাপক জোয়ার লাভ করে এবং মার্কিন ও তাদের সমর্থিত বাহিনীর দখলে থাকা প্রাদেশিক কেন্দ্রগুলি একে একে বিজিত হতে থাকে। প্রথমে নিমরুজ ও পরে কুন্দুজ প্রদেশের কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তালিবানের এই বিজয়ের ধারা।
সর্বশেষ ১৫ আগস্টের মধ্যে, দেশের প্রায় সমস্ত প্রাদেশিক রাজধানী ও শহরের কেন্দ্র তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এরপর ১৫ আগস্ট বিকাল থেকে তালিবান মুজাহিদগণ চার দিক থেকে কাবুলকে ঘিরে ফেলেন। এসময় তারা কাবুল প্রশাসনের সাথে রাজধানীর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলেন। তালিবানরা ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা যুদ্ধ করে শহরে প্রবেশ করবে না
কিন্তু মার্কিন সমর্থিত কাবুল প্রশাসনের প্রধান আশরাফ গনি সহ প্রায় সকল নেতা ও প্রতিনিধিরা কাবুল ঘেরাও এর খবর পেয়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই গোপনে রাজধানী কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে বাস্তবিক অর্থে কোনো প্রশাসনিক নেতৃত্ব ব্যতীত রাজধানীতে নিরাপত্তাহীনতার আশংকা তৈরি হয়। ফলে রাজধানীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রশাসনিক নেতৃত্ব গ্রহণ করতে আফগানের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তালিবানদের কাবুলে আমন্ত্রণ জানান।
আর এভাবেই ১৫ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে তালিবান মুজাহিদগণ দলে দলে রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করতে শুরু করেন এবং বিনা সংঘর্ষে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেন। কাবুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে মুজাহিদগণ দেশটিতে পুনরায় ‘ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে মার্কিন ও ন্যাটো জোট কাবুল বিমানবন্দর থেকে আগস্টের শেষ নাগাদ সম্পূর্ণরূপে সেনা প্রত্যাহার করে।
তালিবান মুজাহিদিন কর্তৃক কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চূড়ান্ত ফলাফল এটাই যে, মার্কিন এবং ন্যাটো জোট দীর্ঘ ২০ বছরের এই যুদ্ধে হেরেছে এবং তালিবান জউ লাভ করেছে। যুদ্ধ শুরু করা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রতিশ্রুতি মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য প্রমাণিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লেখ্য যে, তালিবান মুজাহিদিন কর্তৃক রাজধানী কাবুল বিজয়ের মাত্র একমাস আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিল যে, তালিবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। তখন এর জবাবে তালিবান প্রতিনিধি দল বলেছিল, “আমরা চাইলে ২ সপ্তাহের মধ্যে এটি করতে পারি”। আর এই ঘোষণার প্রায় ৪ সপ্তাহ পর সত্যিই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেন মুজাহিদগণ, তাও মাত্র ২ সপ্তাহেরও কম সময়ে।
আল্লাহ তা’আলা মুসলিম উম্মাহর এ বিজয়কে স্থিতিশীল করুন ও এতে বারাকাহ দান করুন। আমিন।
Comment