উগ্র হিন্দুত্ববাদের মাতৃসংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভগবত বরাবরই হিন্দুত্ববাদ বাস্তবায়নের পক্ষে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করে থাকে। গত ৬ সেপ্টেম্বর বুধবারেও ভারতের নাগপুরে কথিত অখণ্ড ভারত বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সে।
নাগপুরের আগ্রাসেন হোস্টেলে একদল ছাত্রের সমাবেশে ভাষণ প্রদানকালে মোহন ভগবত বলেছে যে, এই ছাত্ররা বয়স্ক হওয়ার আগেই অখণ্ড ভারত বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে, আর সার্বিক ঘটনাপ্রবাহ নাকি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। ভগবত আরও বলেছে, “ যারা (যেসকল দেশ) ভারত থেকে আলাদা হয়েছে, তারা অচিরেই তাদের ভুল বুঝতে পারবে। আমাদেরকে অখণ্ড ভারতের স্বাভাবিক প্রকৃতি বুঝতে হবে। এটা শুধুমাত্র সীমান্তের রেখাগুলোকে মুছে ফেলাই নয়, বরং ভারতের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলোকে (inherent character) ধারণ করা। সুতরাং, এই অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যগুলোকে যদি সকলেই গ্রহণ করে নেয়, তাহলে আর কোন কিছু পরিবর্তন করার দরকার হবে না। তখন স্বাভাবিকভাবেই সকলে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবে।“
মোহন ভগবতের এই ভাষণ নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এখানে ভগবত ভারতের ‘অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য’ বা Inherent Character বলতে যে হিন্দুত্ববাদকেই বুঝিয়েছেন, তা সকলের নিকটই স্পষ্ট। আর তিনি হয়তো আশেপাশের দেশগুলোতে চালানো ভারতের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের আপাত সফল প্রয়োগ দেখে বলছেন যে, সকলে এটা একসময় মেনে নিবে! এভাবে ভারত থেকে যারা আলাদা হয়েছে, অর্থাৎ বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান, মিয়ানমার এরা সবাই নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পেরে আবারো ভারতের সাথে একত্রিত হয়ে যাবে!
এখানে প্রশ্ন দেখা দেয়, উক্ত দেশগুলো যদি ভারতের সাথে আবারো এক হয়ে যায়, বা সবাই যদি হিন্দুত্ববাদকে মেনে নেয়, তাহলে তো অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এই ঘোষণাটাই মোহন ভগবত সহনীয় ভাষায় দিচ্ছে। আর তার দলের অন্যান্য নেতারা তো মুসলিমমুক্ত অখণ্ড ভারত নির্মাণের ঘোষণা প্রকাশ্যেই দিয়ে যাচ্ছে, যা ভগবতের সমর্থন ব্যতীত হওয়ার কথা নয়। অনেক নেতা আবার বাহিনী পাঠিয়ে বাংলাদেশ সহ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ দখল করে নেওয়ার ঘোষণাও দিচ্ছে। মুসলিমদের উপর গণহত্যা শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করতেও দেখা গেছে অনেক হিন্দুত্ববাদী নেতাকে।
আর কথিত অখণ্ড ভারতের সংবিধানও ইতিমধ্যে তৈরি করে ফেলেছে হিন্দু ধর্মগুরুরা, যেখানে হিন্দু ব্যতীত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখার ব্যপারে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে।
আর মোহন ভগবত এখন বলছে যে, তাদের স্বপ্নের এমন এক অখণ্ড ভারত বর্তমান যুবারা বয়স্ক হয়ে যাওয়ার আগেই বাস্তবায়ন করা হবে। এর আগেও গত বছর কোলকাতার এক সমাবেশে মোহন ভগবত ১০-১৫ বছরের মধ্যে অখণ্ড ভারত বাস্তবায়নের কথা বলেছিল; আরো বলেছিল যে সবাই মিলে জোরালোভাবে চেষ্টা করলে সেটা নাকি আরও দ্রুতই করা সম্ভব। এজন্য সবাইকে সে প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
অখণ্ড ভারত বাস্তবায়নের পথে যারাই বাধা দিতে আসবে, তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে বলেছে হিন্দুত্ববাদীদের প্রধান মোহন ভগবত।
ভগবতের এই ঘোষণা এবং আহ্বানগুলো আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও, এই আহ্বানের পেছনে রয়েছে রক্তপাত আর গণহত্যার হাতছানি। আর ডক্টর গ্রেগরি স্ট্যান্টনের মতো নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা কয়েক বছর আগেই সতর্কতা জারি করেছেন যে, ভারত মুসলিম গণহত্যা বাস্তবায়নের ১০ ধাপের ৮ম ধাপ অতিক্রম করেছে।
ভগবতের এই ঘোষণা স্ট্যান্টন সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তাকে আরও জোরালো করে তুলেছে।
তথ্যসূত্র:
1. ‘Akhand Bharat’ to be reality before today’s youngsters grow old, says RSS chief
– https://tinyurl.com/677y33c3
2. India will become ‘Akhand Bharat’ in 10-15 years: RSS chief
– https://tinyurl.com/4uyhabem
3. India will be a Hindu state! A new constitution is being prepared.
– https://tinyurl.com/3jbs95jt
Comment