ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছে চীন। পূর্বের চীনা রাষ্ট্রদূতের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আফগানিস্তানে নিযুক্ত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত জাও শেং-কে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ইসলামি ইমারতের নেতৃবৃন্দ। আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মাদ হাসান আখুন্দ হাফিযাহিল্লাহও জাও শেং-কে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্তাকি নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতকে সব ধরনের সহযোগিতা করার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে চীনের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেওয়া উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। চীনা রাষ্ট্রদূত নিয়োগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও বহন করছে বলে মনে করেন আমির খান মুত্তাকি।
তিনি আশা করেন, রাষ্ট্রদূত নিয়োগের মাধ্যমে চীন-আফগানিস্তান সম্পর্ক আরও ভালো হবে। এই সম্পর্ক দুই দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
নবনিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছে, চীন আফগানিস্তানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করে। আর চীন কখনও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
চীনা রাষ্ট্রদূত জাও শেং আরও বলেছে, গত দুই বছরে আফগানিস্তান অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। সকল প্রকারের অপরাধের বিরুদ্ধে ইসলামি ইমারত সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপের প্রশংসাও করেছে চীনা রাষ্ট্রদূত।
চীনের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ আফগানিস্তান ইসলামি ইমারত সরকারের কূটনীতিক সাফল্য অর্জনের পথকে আরও সুগম করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন ও অর্থনৈতিক নানা কার্যক্রমে লাভবান হওয়ার জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন একটি দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আফগানিস্তান লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া, চীনবিরোধী ব্লক আফগানিস্তানের সাথে চীনকে একচেটিয়া বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাতে দেওয়ার কথা নয়। নিজেদের স্বার্থেই এখন তারাও আফগানিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হবে বলে মনে করা হয়। ইতোমধ্যে ২০২১ সালের আগস্টের পর প্রথমবারের মতো গত জুলাইয়ে কাতারের দোহায় আমেরিকার সাথে ইসলামি ইমারতের প্রতিনিধিগণের সংলাপ হয়।
ইসলামি ইমারতের প্রধান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ঘটনা অন্য দেশগুলোকেও ইসলামি ইমারতের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সংকেত দেয়।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের উচিত ভালো মেলামেশার ফলস্বরূপ ভালো সম্পর্ক স্থাপন করা। আর ভালো সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের সামনে আসা বা ভবিষ্যতে আসবে এমন সব সমস্যা সমাধান করতে পারব।”
ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তান পুনর্গঠনে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি বহির্বিশ্বের সাথে ইসলামি শরীয়াতের আলোকে সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারেও জোর দিচ্ছেন। কারণ, বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার অর্থ কেমন যেন নিজেকে নিজে অবরুদ্ধ করে রাখা। বহির্বিশ্বের সাথে সম্পর্ক থাকলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এমনকি সামরিক কার্যক্রমও গতিশীলতা পায়।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট বিশ বছরের যুদ্ধশেষে পরাজয়বরণ করে। এসময় আফগানিস্তানে নিজেদের রাষ্ট্রদূতের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় সব দেশ। তবে কয়েকটি দেশ কূটনীতিক কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য রাষ্ট্রদূতের পরিবর্তে কূটনীতিক নিযুক্ত করে। তাদের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স ভূমিকা পালনের জন্য তাদের সিনিয়র কূটনীতিক নিযুক্ত করে আফগানিস্তানে। ইমারতে ইসলামিয়া ক্ষমতায় আসার পর গত বুধবার আগের রাষ্ট্রদূতের পর নতুন করে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেছে চীন।
এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে আরেকটি বিষয়ের আলোচনা আনা জরুরী।
চীনের সাথে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিকিকরণের প্রসঙ্গ আসলেই মুসলিমদের একটি অংশ খারেজী গোষ্ঠী আইএসের প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে তালিবানের সমালচনায় মেতে উঠে। সিয়াসাতের জ্ঞানের কমতি এবং গভীরভাবে পরস্থিতি অনুধাবনে ব্যর্থতার কারণে আইএস-এর তালিবানবিরোধি প্রচারণা প্রায়ই সরব হয়ে উঠে। কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা আর মুসলিমদের অধিকার প্রসঙ্গে ছাড় দেওয়ার পার্থক্য বুঝার ক্ষেত্রে খারেজির এসব অযৌক্তিক ও আবেগপ্রসূত প্রচারণা উম্মাহর একটি অংশের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন। তাছাড়া তালিবানের কৌশলী ও সিয়াসি কিছু কথাবার্তাকে সামনে এনে তারাহুরাপ্রবণ খারেজীরা এই উম্মাহকে সাময়িকভাবে ভুলিয়ে দিতে চায় যে, তালিবান উমারাগণ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব পর্যন্ত প্রায়সই মুসলিম উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুতি গ্রহণের কথা বলে থাকেন।
তবে অন্ধ আর চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কখনো এক হতে পারে না। উম্মাহর যুবকদের তাই উচিৎ, উম্মাহর জন্য ধ্বংসাত্মক তারাহুরায় দ্বীনের উপর নফসের আবেগকে প্রাধান্য দেওয়া ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা, তাদের প্রচারণায় প্রভাবিত না হওয়া এবং সিয়াসি কৌশলগত বিষয়ের জ্ঞানার্জন ও কোরআন-হাদিসের আলোকে বাস্তবতা উপলব্ধি করার স্বার্থে হক্কানি আলেমগণের নিকট সমস্যাবলীর সমাধান তালাশ করা।
তথ্যসূত্র:
1. Newly Appointed Chinese Ambassador Calls on Foreign Minister
– https://tinyurl.com/a7hz7rbs
2. Taliban gives a warm welcome to China’s new ambassador to Afghanistan
– https://tinyurl.com/4mvp3shn
Comment