ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের সাফল্য আল্লাহর অনুগ্রহে একে একে পৃথিবীবাসীর সামনে স্পষ্ট হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার মাত্র দুই বছরের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর অর্থব্যবস্থার আফগানিস্তানকে পুনর্গঠনে এখন পর্যন্ত অভাবনীয় সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছেন তারা। সর্বশেষ ত্রৈমাসিক হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় আফগান মুদ্রা তৃতীয় স্থানে আছে।
গত পহেলা জুলাই থেকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে আফগানির মান বেড়েছে শতকরা ৯ ভাগ। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরে ১৪% বৃদ্ধি পেয়েছে আফগান মুদ্রার মান।
ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ক্ষমতায় আসার আগের দিন পর্যন্ত এক ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৬ আফগানি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার আটকে দিলে আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে এর ব্যাপক চাপ পড়ে। চাপ পরে দেশটির মুদ্রা আফগানিে উপরেও। যার ফলে ১ ডলারের বিনিময় মূল্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১১৩ আফগানি।
কিন্তু এরপর এ অবস্থা থেকে দ্রুত বেগে ঘুরে দাঁড়ায় আফগান মুদ্রা। বর্তমানে ৭৭ আফগানিতেই মিলছে ১ ডলার।
মুদ্রার মূল্যমান বৃদ্ধিতে ইমারতে ইসলামিয়ার পদক্ষেপসমূহ:
ইমারতে ইসলামিয়া সরকার আফগান মুদ্রার মান নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে আছে, দেশের অভ্যন্তরে স্থানীয় লেনদেনে ডলার ও পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং অনলাইন বাণিজ্য নিষিদ্ধকরণ। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অযথা বা অবৈধ পথে অর্থ খরচের সম্ভাবনা কমে যায়। আর এসকল বিধিনিষেধ কার্যকর করতে শাস্তি এমনকি জেলের বিধান পর্যন্ত রেখেছেন ইসলামি ইমারত কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করছেন, রপ্তানি করছেন বিভিন্ন পণ্য। যার ফলে দেশে বিদেশী মুদ্রার মজুদ বাড়ছে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক সাহায্যও আফগান মুদ্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
তাছাড়া, আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন: লিথিয়াম, স্বর্ণ, কয়লা ইত্যাদি, মূল্যবান খনিজ ধাতুর উত্তোলনে বিনিয়োগ করছে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কোম্পানি। এসব খনিজ ধাতুর মূল্যমান আনুমানিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। এই খাতে বিনিয়োগের ফলে আফগানিস্তানে বিদেশি মুদ্রার মজুদ সমৃদ্ধ হচ্ছে।
আরেকটি বিষয় হলো, ইমারতে ইসলামিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী দেশ থেকে কোনো অর্থ পাচার করতে দিচ্ছেন না। এর ফলে বাংলাদেশের মতো অর্থ পাচারের সুযোগ তো সেখানে নেই-ই, এমনকি পাখি পাচার করার সুযোগও রাখেননি ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ। পহেলা অক্টোবর ইমারতে ইসলামিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ২টি দামী পাখি পাচার করা রোধ করেছেন।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বরের সংবাদ অনুযায়ী, ইমারতে ইসলামিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ২০ হাজার ডলার পাচার করার সময় এক ব্যক্তিকে আটক করেছেন। এভাবে সীমান্তে ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ কড়া নজরদারি করায় বিদেশী মুদ্রা পাচার করার কোনো সুযোগ থাকছে না। এতে দেশে বিদেশি মুদ্রার যথেষ্ট মজুদ থাকায় আফগান মুদ্রার মান বাড়ছে।
আফগান মুদ্রা দক্ষিণ এশিয়ায় তো বটেই, পুরো পৃথিবীতেই বর্তমানে সবচেয়ে স্থিতিশীল মুদ্রা হবার গৌরব অর্জন করছে। আর শক্তিশালী মুদ্রার তালিকায় এটি উঠে এসেছে তৃতীয় স্থানে। বর্তমানে নানা বিধি-নিষেধের মধ্যেও এমন সফলতা অর্জন করেছেন ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃপক্ষ। বিশ্বব্যাপী স্বাধীনভাবে বাণিজ্য করার সুযোগ সৃষ্টি হলে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যে আরও কতটা উন্নত হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
তথ্যসূত্র:
1. ‘World’s Best Performing Currency’: Afghanistan’s currency surges amid unique circumstances
– https://tinyurl.com/2cm4vy6k
2. USD to AFN Historical Chart 2021
– https://tinyurl.com/3hsy2y86
3. Smuggling of two expensive birds prevented
– https://tinyurl.com/mr3mmwha
4. Man arrested as smuggling of $20000 prevented at Torkham
– https://tinyurl.com/2988ck53
Comment