“হালাল” সার্টিফাইড পণ্যের উপর ইউপি সরকারের নিষেধাজ্ঞা
উত্তরপ্রদেশ সরকার হালাল প্রশংসাপত্র সহ পণ্য বিক্রির উপর রাজ্যব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত ১৮ নভেম্বর ইউপি ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিশনার অনিতা সিং কর্তৃক জারি করা একটি আদেশে বলা হয়, ‘হালাল-প্রত্যয়িত খাদ্য পণ্যের উৎপাদন, সঞ্চয়, বিতরণ এবং বিক্রয় অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হয়েছে’।
অমুসলিম প্রধান অনেক দেশেই হালাল সত্যায়িত করার মাধ্যমে খাদ্য বিক্রির প্রচলন রয়েছে। এর দ্বারা নির্দিষ্ট একটি খাবার ইসলামী বিধিনিষেধ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে বুঝানো হয়; অর্থাৎ, খাদ্যটি প্রস্তুত করতে ইসলামে নিষিদ্ধ কোন উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। এটি মুসলিমদের ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
গত ১৭ নভেম্বর শুক্রবার লখনৌ এর হজরতগঞ্জ থানায় প্রথমে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। সেখানে অভিযোগকারী শলেন্দ্র শর্মা বলেছে যে ‘কিছু কোম্পানি একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের বিক্রয় বাড়ানোর জন্য পণ্যগুলিকে হালাল হিসাবে প্রত্যয়িত করা শুরু করেছে’ এবং এইভাবে ‘জনগণের বিশ্বাসের সাথে তারা খেলছে’।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পরের দিন হালাল সার্টিফাইড পণ্যের উপর আসে এই নিষেধাজ্ঞা।
হালাল সার্টিফিকেশন যেভাবে কাজ করে:
ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী কতিপয় বেসরকারি সংস্থা ইসলামী শরীয়া আইন অনুসরণ করে বিভিন্ন পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশন করে থাকেন। প্রধান প্রধান হালাল সার্টিফিকেশন সংস্থাগুলো হল: জমিয়ত-উলামা-ই-মহারাষ্ট্র, জমিয়ত-উলামা-ই-হিন্দ হালাল ট্রাস্ট, হালাল ইন্ডিয়া এবং হালাল সার্টিফিকেশন সার্ভিসেস ইন্ডিয়া।
এই সংস্থাগুলি অডিট, পরিদর্শন এবং ল্যাব পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত যে, প্রত্যয়নকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে কোন হারাম উপাদান যেমন শুকরের মাংস, অ্যালকোহল, রক্ত, বা নির্ধারিত ইসলামিক উপায়ে জবাই করা হয় নি এমন পশুর মাংস এসব নেই। তারা পণ্যগুলির প্যাকেজিং, লেবেলিং, স্টোরেজ এবং পরিবহনও পরীক্ষা করেন, যাতে পণ্যটি হালাল হওয়ার ব্যপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
উক্ত প্রক্রিয়া শেষে সেটিতে একটি হালাল লোগো বা সীল লাগিয়ে দেওয়া হয়। লোগো বা সীল প্রত্যয়নকারী সংস্থার নাম এবং উৎপত্তি দেশের নামও উল্লেখ থাকে সেখানে। হালাল সার্টিফিকেশন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ থাকে; সাধারণত এক বছরের জন্য। পরবর্তীতে এই সার্টিফিকেশন নবায়ন করতে হয়, এই সময়ের মধ্যে সেটিতে কোন পরিবর্তন এসেছে কি না- তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের বাজার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে; কেননা হালাল সার্টিফাইড পণ্য মুসলিম ভোক্তারা নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারেন। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী হালাল বাজারের মূল্য ছিল $২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার; এর মধ্যে খাদ্য ও পানীয়ের অংশ আবার ৫৮ ভাগ। আর ২০২২-২০২৭ সালের মধ্যে এই হালাল পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি ১১.২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনেক কোম্পানি তাই এখন নিজেদের বাজার ধরে রাখতে ও বৃদ্ধি করতে হালাল সার্টিফিকেশনের পদ্ধতি অনুসরণ করে। তাছাড়া, হালাল প্রশংসাপত্র মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে সমানভাবে একটি পণ্যকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
কেন ইউপি সরকার হালাল সার্টিফিকেশন নিষিদ্ধ করতে চায়?
হালাল-প্রত্যয়িত হওয়ার সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, ভারত সরকার ২০২১ সালে ‘কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ লাল মাংসের ম্যানুয়াল থেকে ‘হালাল’ শব্দটি বাদ দিয়েছিল। এতে বলা হয়েছে যে, হালাল সার্টিফিকেশন অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক। কারণ পণ্যের গুণমান বা নিরাপত্তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রতীক বা লেবেল।
২০১৯ সালে ভারতে হালাল প্রশংসাপত্র এবং লেবেলিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয় যে, এটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতি লঙ্ঘন করেছে। সেই আবেদনটি এখনও আদালতে বিচারাধীন।
একইভাবে, ২০২০ সালে একদল অ্যাক্টিভিস্ট “হালাল পণ্য বয়কট করুন” নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করে। তারা সাধারণ মানুষকে হালাল পণ্য কেনা বা ব্যবহার বন্ধ করতে আহ্বান করে এবং তার পরিবর্তে স্থানীয় ও দেশীয় পণ্য কিন্তে ও ববহার করতে বলে। উক্ত প্রচারাভিযানে হালাল সার্টিফিকেশনকে ইসলামি সম্প্রসারণবাদ ও মৌলবাদের হাতিয়ার এবং সন্ত্রাসবাদ ও দেশবিরোধী কার্যকলাপে অর্থায়নের অভিযোগও করা হয়েছে।
স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে যে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলো ইসলাম বিদ্বেষ চরিতার্থ করতেই হালাল সার্টিফাইড পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। এগুলো মুসলিমদের অস্বস্তিতে ফেলে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে বৃহৎ মুসলিম গণহত্যার পরিবেশ কায়েমের হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
তথ্যসূত্র:
——-
1. Crackdown On Halal-Certified Products: Authorities Raid Mall In Uttar Pradesh’s Noida
– https://tinyurl.com/a7atrswa
2. UP govt bans sale of halal-certified products with immediate effect
– https://tinyurl.com/4wa5extf
উত্তরপ্রদেশ সরকার হালাল প্রশংসাপত্র সহ পণ্য বিক্রির উপর রাজ্যব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত ১৮ নভেম্বর ইউপি ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিশনার অনিতা সিং কর্তৃক জারি করা একটি আদেশে বলা হয়, ‘হালাল-প্রত্যয়িত খাদ্য পণ্যের উৎপাদন, সঞ্চয়, বিতরণ এবং বিক্রয় অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা হয়েছে’।
অমুসলিম প্রধান অনেক দেশেই হালাল সত্যায়িত করার মাধ্যমে খাদ্য বিক্রির প্রচলন রয়েছে। এর দ্বারা নির্দিষ্ট একটি খাবার ইসলামী বিধিনিষেধ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়েছে বুঝানো হয়; অর্থাৎ, খাদ্যটি প্রস্তুত করতে ইসলামে নিষিদ্ধ কোন উপাদান ব্যবহার করা হয়নি। এটি মুসলিমদের ব্যবহৃত অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
গত ১৭ নভেম্বর শুক্রবার লখনৌ এর হজরতগঞ্জ থানায় প্রথমে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। সেখানে অভিযোগকারী শলেন্দ্র শর্মা বলেছে যে ‘কিছু কোম্পানি একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের বিক্রয় বাড়ানোর জন্য পণ্যগুলিকে হালাল হিসাবে প্রত্যয়িত করা শুরু করেছে’ এবং এইভাবে ‘জনগণের বিশ্বাসের সাথে তারা খেলছে’।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পরের দিন হালাল সার্টিফাইড পণ্যের উপর আসে এই নিষেধাজ্ঞা।
হালাল সার্টিফিকেশন যেভাবে কাজ করে:
ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী কতিপয় বেসরকারি সংস্থা ইসলামী শরীয়া আইন অনুসরণ করে বিভিন্ন পণ্যের হালাল সার্টিফিকেশন করে থাকেন। প্রধান প্রধান হালাল সার্টিফিকেশন সংস্থাগুলো হল: জমিয়ত-উলামা-ই-মহারাষ্ট্র, জমিয়ত-উলামা-ই-হিন্দ হালাল ট্রাস্ট, হালাল ইন্ডিয়া এবং হালাল সার্টিফিকেশন সার্ভিসেস ইন্ডিয়া।
এই সংস্থাগুলি অডিট, পরিদর্শন এবং ল্যাব পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত যে, প্রত্যয়নকৃত পণ্যগুলোর মধ্যে কোন হারাম উপাদান যেমন শুকরের মাংস, অ্যালকোহল, রক্ত, বা নির্ধারিত ইসলামিক উপায়ে জবাই করা হয় নি এমন পশুর মাংস এসব নেই। তারা পণ্যগুলির প্যাকেজিং, লেবেলিং, স্টোরেজ এবং পরিবহনও পরীক্ষা করেন, যাতে পণ্যটি হালাল হওয়ার ব্যপারে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়।
উক্ত প্রক্রিয়া শেষে সেটিতে একটি হালাল লোগো বা সীল লাগিয়ে দেওয়া হয়। লোগো বা সীল প্রত্যয়নকারী সংস্থার নাম এবং উৎপত্তি দেশের নামও উল্লেখ থাকে সেখানে। হালাল সার্টিফিকেশন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বৈধ থাকে; সাধারণত এক বছরের জন্য। পরবর্তীতে এই সার্টিফিকেশন নবায়ন করতে হয়, এই সময়ের মধ্যে সেটিতে কোন পরিবর্তন এসেছে কি না- তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য।
বাজার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, বিশ্বব্যাপী হালাল খাদ্যের বাজার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে; কেননা হালাল সার্টিফাইড পণ্য মুসলিম ভোক্তারা নিশ্চিন্তে গ্রহণ করতে পারেন। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী হালাল বাজারের মূল্য ছিল $২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার; এর মধ্যে খাদ্য ও পানীয়ের অংশ আবার ৫৮ ভাগ। আর ২০২২-২০২৭ সালের মধ্যে এই হালাল পণ্যের ইন্ডাস্ট্রি ১১.২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনেক কোম্পানি তাই এখন নিজেদের বাজার ধরে রাখতে ও বৃদ্ধি করতে হালাল সার্টিফিকেশনের পদ্ধতি অনুসরণ করে। তাছাড়া, হালাল প্রশংসাপত্র মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে সমানভাবে একটি পণ্যকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
কেন ইউপি সরকার হালাল সার্টিফিকেশন নিষিদ্ধ করতে চায়?
হালাল-প্রত্যয়িত হওয়ার সুস্পষ্ট অর্থনৈতিক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও, ভারত সরকার ২০২১ সালে ‘কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ লাল মাংসের ম্যানুয়াল থেকে ‘হালাল’ শব্দটি বাদ দিয়েছিল। এতে বলা হয়েছে যে, হালাল সার্টিফিকেশন অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক। কারণ পণ্যের গুণমান বা নিরাপত্তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক প্রতীক বা লেবেল।
২০১৯ সালে ভারতে হালাল প্রশংসাপত্র এবং লেবেলিংয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করা হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয় যে, এটি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ প্রকৃতি লঙ্ঘন করেছে। সেই আবেদনটি এখনও আদালতে বিচারাধীন।
একইভাবে, ২০২০ সালে একদল অ্যাক্টিভিস্ট “হালাল পণ্য বয়কট করুন” নামে একটি প্রচারাভিযান শুরু করে। তারা সাধারণ মানুষকে হালাল পণ্য কেনা বা ব্যবহার বন্ধ করতে আহ্বান করে এবং তার পরিবর্তে স্থানীয় ও দেশীয় পণ্য কিন্তে ও ববহার করতে বলে। উক্ত প্রচারাভিযানে হালাল সার্টিফিকেশনকে ইসলামি সম্প্রসারণবাদ ও মৌলবাদের হাতিয়ার এবং সন্ত্রাসবাদ ও দেশবিরোধী কার্যকলাপে অর্থায়নের অভিযোগও করা হয়েছে।
স্পষ্ট বুঝাই যাচ্ছে যে, ভারতের হিন্দুত্ববাদী দলগুলো ইসলাম বিদ্বেষ চরিতার্থ করতেই হালাল সার্টিফাইড পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে। এগুলো মুসলিমদের অস্বস্তিতে ফেলে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে বৃহৎ মুসলিম গণহত্যার পরিবেশ কায়েমের হিন্দুত্ববাদী ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
তথ্যসূত্র:
——-
1. Crackdown On Halal-Certified Products: Authorities Raid Mall In Uttar Pradesh’s Noida
– https://tinyurl.com/a7atrswa
2. UP govt bans sale of halal-certified products with immediate effect
– https://tinyurl.com/4wa5extf
Comment