পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদ: মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ সভায় হামলা
পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের শেখ নজরুল নামে একজন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। উগ্র হিন্দুরা চোর আখ্যা দিয়ে ঐ অসহায় ব্যক্তিকে ব্যাপক মারধর করলে ঐ মুসলিম ব্যক্তি মারা যায়। গত ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার চন্দননগরের হরিজন পল্লী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায়, ৪০ বছর বয়সী শেখ নজরুল দিল্লি রোডে ছেলে রাহুলের সাথে রিক্সায় ভাঙারি ব্যবসায়ের মালামাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শানু চট্টোপাধ্যায় নামের এক হিন্দু ফুল ব্যবসায়ী হঠাৎ নজরুলকে চোর আখ্যা দিয়ে সাথে থাকা কিছু লোক নিয়ে নজরুলের উপর আক্রমণ করে।
দ্য অবজারভার পোস্টের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে রাহুল তার বাবার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ এবং বাজে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমার বাবা দিল্লি রোডের পাশে একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং পুরানো লোহার যন্ত্রাংশ কেনা-বেচা করতেন। সেদিন সকালে ওই মালামালগুলো হরিজন পল্লীর দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ফুল ব্যবসায়ী আমার বাবার বিরুদ্ধে চুরির মালামাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে তাকে লাঞ্ছিত করতে থাকে। আমি ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাই। পরে চাচাকে সাথে নিয়ে ফেরার সময় বাবাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। আমরা আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কথা জানায়। ডাক্তাররা আরো জানান যে, প্রচন্ড আঘাতেই তিনি মারা গেছেন।”
অবশ্য চন্দননগর এর ডিসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। তবে অতীতে মুসলিম নিধনের ঘটনায় হিন্দু আসামিদেরকে সহজেই জামিন ও মুক্তি পেয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।
এই ঘটনার পরদিন ৬ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩১ তম বছর উপলক্ষ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গের সোনারপুর অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস এপিডিআর। কিন্তু সেই জনসভা উগ্র হিন্দুদের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়।
এপিডিআরের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সশস্ত্র হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা তাদের সভায় আক্রমণ করে এবং হিন্দুত্ববাদী জয় শ্রী রাম শ্লোগান দিতে থাকে। তিনি বলেন, “হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত ৪০-৫০ ব্যক্তি আমাদের সভাকে ব্যাহত করে। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে তাদের বাধা দেয়, যার ফলে হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।”
এখানে প্রথম বিষয় হচ্ছে, মুসলিমদের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ হিন্দুত্ববাদীরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আদালতের রায় নিয়ে এখন মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে; মুসলিমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করলে সেখানেও হামলা করছে হিন্দুত্ববাদীরা।
আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি নিজেদের অবস্থান ক্রমশ দৃঢ় করছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হারলেও, তাদের আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আরেকবার সেখানে ক্ষমতায় আসলে তারা এআরসি করবে এবং লাখ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্ব হরণ করে বাংলাদেশে পাঠাবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে; ঠিক যে কাজটিই তারা এখন করছে আসামে।
তথ্যসূত্র:
——–
1. Hindutva Rising: Muslim man lynched, day later Hindutva groups disrupt protest for Babri in West Bengal
– https://tinyurl.com/mvh86mnk
2. Hindutva Groups Chanting ‘Jai Shri Ram’ Disrupt Babri Masjid Protest in West Bengal’s Sonarpur
– https://tinyurl.com/4tntr2bx
পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের শেখ নজরুল নামে একজন মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। উগ্র হিন্দুরা চোর আখ্যা দিয়ে ঐ অসহায় ব্যক্তিকে ব্যাপক মারধর করলে ঐ মুসলিম ব্যক্তি মারা যায়। গত ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার চন্দননগরের হরিজন পল্লী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায়, ৪০ বছর বয়সী শেখ নজরুল দিল্লি রোডে ছেলে রাহুলের সাথে রিক্সায় ভাঙারি ব্যবসায়ের মালামাল নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শানু চট্টোপাধ্যায় নামের এক হিন্দু ফুল ব্যবসায়ী হঠাৎ নজরুলকে চোর আখ্যা দিয়ে সাথে থাকা কিছু লোক নিয়ে নজরুলের উপর আক্রমণ করে।
দ্য অবজারভার পোস্টের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে রাহুল তার বাবার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ এবং বাজে পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, “আমার বাবা দিল্লি রোডের পাশে একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং পুরানো লোহার যন্ত্রাংশ কেনা-বেচা করতেন। সেদিন সকালে ওই মালামালগুলো হরিজন পল্লীর দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ফুল ব্যবসায়ী আমার বাবার বিরুদ্ধে চুরির মালামাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে তাকে লাঞ্ছিত করতে থাকে। আমি ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাই। পরে চাচাকে সাথে নিয়ে ফেরার সময় বাবাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। আমরা আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তার মৃত্যুর কথা জানায়। ডাক্তাররা আরো জানান যে, প্রচন্ড আঘাতেই তিনি মারা গেছেন।”
অবশ্য চন্দননগর এর ডিসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। তবে অতীতে মুসলিম নিধনের ঘটনায় হিন্দু আসামিদেরকে সহজেই জামিন ও মুক্তি পেয়ে বেড়িয়ে যেতে দেখা গেছে।
এই ঘটনার পরদিন ৬ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩১ তম বছর উপলক্ষ্যে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গের সোনারপুর অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্রেটিক রাইটস এপিডিআর। কিন্তু সেই জনসভা উগ্র হিন্দুদের হামলায় পণ্ড হয়ে যায়।
এপিডিআরের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সশস্ত্র হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা তাদের সভায় আক্রমণ করে এবং হিন্দুত্ববাদী জয় শ্রী রাম শ্লোগান দিতে থাকে। তিনি বলেন, “হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে যুক্ত ৪০-৫০ ব্যক্তি আমাদের সভাকে ব্যাহত করে। পরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে তাদের বাধা দেয়, যার ফলে হাতাহাতি হয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।”
এখানে প্রথম বিষয় হচ্ছে, মুসলিমদের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ হিন্দুত্ববাদীরা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর আদালতের রায় নিয়ে এখন মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়েছে; মুসলিমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করলে সেখানেও হামলা করছে হিন্দুত্ববাদীরা।
আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি নিজেদের অবস্থান ক্রমশ দৃঢ় করছে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি হারলেও, তাদের আসন সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আরেকবার সেখানে ক্ষমতায় আসলে তারা এআরসি করবে এবং লাখ লাখ মুসলিমের নাগরিকত্ব হরণ করে বাংলাদেশে পাঠাবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে; ঠিক যে কাজটিই তারা এখন করছে আসামে।
তথ্যসূত্র:
——–
1. Hindutva Rising: Muslim man lynched, day later Hindutva groups disrupt protest for Babri in West Bengal
– https://tinyurl.com/mvh86mnk
2. Hindutva Groups Chanting ‘Jai Shri Ram’ Disrupt Babri Masjid Protest in West Bengal’s Sonarpur
– https://tinyurl.com/4tntr2bx
Comment