আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে, নবী দৌহিত্র হযরত হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু আনহু কারবালার ময়দানে জীবন উৎসর্গ করে বিজয়ের জন্য কুরবানী পেশ করার অনুপম শিক্ষা দিয়ে গেছেন। সেই কারবালা আমাদের আজও ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গের প্রেরণা জোগায়।
কারবালার সেই কুরবানী বৃথা যায়নি; উম্মাহর বীর যোদ্ধারা কারবালার কুরবানীর প্রেরণা হৃদয়ে ধারণ করে যুগে যুগে সকল জালিম শাসকের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখনো যারা ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গ করছেন, তাদের এই কুরবানীও বৃথা যাবে না। অচিরেই তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবে এবং সমগ্র উম্মাহকে বিজয়ের সুসংবাদ শুনাবে। বিজয় অবশ্যই তাদের পদচুম্বন করবে, বি-ইযনিল্লাহ।
বর্তমান সময়ের আফগানিস্তান এই ত্যাগ ও বিজয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আফগানবাসী বিজয়ের যে স্বাদ ভাগাভাগি করছেন, এর পূর্বে দীর্ঘ সময় তাদেরকে রক্তের নজরানা পেশ করতে হয়েছে। দীর্ঘ চল্লিশটি বছর তারা দুই-দুইটি পরাশক্তির বিরুদ্ধে রক্ত দেওয়া-নেওয়া করেছেন। শত্রুর রক্ত ঝরানোর পাশাপাশি আল্লাহর দ্বীন যিন্দা করার মহান লক্ষ্যে অকাতরে ঢেলে দিয়েছেন নিজেদের পবিত্র লহু।
৯/১১ এর পর বোম্বিং করে দুই লক্ষাধিক মুসলিমকে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসী আমেরিকা। তাদের মধ্যে দুর্বল নারী, নিষ্পাপ শিশু আর বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিন্তু তালিবানকে তারা দমাতে পারেনি। আল্লাহর ভরসায় তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যুদ্ধের হুংকার দিয়ে আফগানিস্তানের পাহাড়-পর্বত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশ্বের আত্মগর্বিত সেনাবাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং মহান রবের ইচ্ছায় তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন।
আফগানীদের নির্বিচার গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়; যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে নিরীহ আফগানীদের তাজা রক্তে। তখন কে ভাবতো যে, গণহত্যার শিকার এই জাতিই একদিন ঘুরে দাঁড়াবে! গোটা বিশ্বে মোড়লগিরি করে বেড়ানো দাম্ভিক সন্ত্রাসী আমেরিকার মেরুদণ্ড তাঁরা ভেঙে দেবে! আমেরিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামাবে!
একটা সময় কেউ কল্পনাও করেনি, আমেরিকার বিরুদ্ধে আফগানিস্তান একসময় বিজয় লাভ করবে। কিন্তু আজকের বিশ্ব এই অবিশ্বাস্য বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আমেরিকা নাকে খত দিয়ে আফগান ছেড়ে পালিয়েছে।
তাই আজকের বিশ্বের বর্বরতম শক্তি ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় যে বর্বরতার সাক্ষী সৃষ্টি হচ্ছে, মহান রবের কুদরতের উপর ভরসা করে এই আশাবাদ ব্যক্ত করি, অচিরেই এই বিশ্ব সেই পরিস্থিতির সাক্ষী হবে- যেখানে মুসলিমদের রক্তনেশায় উন্মাদ বর্বর ইসরায়েল স্বজাতীর লাশের সারি সামালাতে হিমশিম খাবে। আজকের এই দম্ভ-অহমিকা অচিরেই মাটির সঙ্গে মিশে যাবে ইনশাআল্লাহ, যার লক্ষণ ইতিমধ্যে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
অচিরেই এমন দিন আসতে যাচ্ছে, যখন পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরায়েল নামক কোনো অবৈধ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে না। সেই মহান রবের শক্তির উপর আস্থা রেখেই মুসলিমরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারে, যিনি ইসরায়েলের প্রভূ আমেরিকাকেও খোরাসানের মাটিতে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন।
আমেরিকা ও পশ্চিমা জোটের অস্তিত্বও অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে, যাদের সহযোগিতায় আরব বিশ্বের চোখের সামনে ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে। আর ফিলিস্তিনের মাটিতে শীঘ্রই মুসলিমরা বিজয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ্।
মূলত কোনো বিজয়ই কুরবানী ছাড়া আসে না। সমগ্র উম্মাহর পক্ষ থেকে বর্তমানে সেই কুরবানী দিয়ে যাচ্ছেন গাজাবাসী। তাদের এই ত্যাগ আর কুরবানী উম্মাহ্ কাছে কখনোই বিস্মৃত হবে না, বি-ইযনিল্লাহ।
উম্মাহর পক্ষ থেকে গাজাবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-
প্রিয় গাজাবাসী! নিজেদের রক্তে বিজয়ের যে ভিত্তি আপনারা স্থাপন করে যাচ্ছেন, সে বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে উম্মাহ কিছুতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে না। উম্মাহর বীর সন্তানেরা ততদিন পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না, যতদিন পর্যন্ত উম্মাহর মাসুম বাচ্চাদের প্রতিশোধ গ্রহণ না করা হচ্ছে; আপনাদের শরীর থেকে ঝরে পড়া প্রতি ফোঁটা রক্তের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব না চুকিয়ে ওমর, খালিদ আর সালাউদ্দিনের উত্তরসূরিরা কখনোই ক্ষান্ত হবে না। সর্বোপরি আপনাদের এক ফোঁটা রক্তও বৃথা যেতে দেয়া হবে না। যেমনটি জামানার মুজাদ্দিদ শায়েখ উসামা বিন লাদিন রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন-
“আপনাদের রক্ত, সে তো আমাদেরই রক্ত; আপনাদের সন্তানদের রক্ত, সে তো আমাদের সন্তানদেরই রক্ত! সুতরাং রক্তের বদলা রক্ত আর ধ্বংসের বদলা ধ্বংসের দ্বারাই নেওয়া হবে। আমরা মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমরা কখনোই আপনাদের পরিত্যাগ করব না, যতক্ষণ না বিজয় অর্জিত হয় কিংবা শাহাদাতের সেই সুধা পান করে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করি; যে সুধা পান করেছেন হযরত হামজাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব।”
শায়েখ উসামার এই কথাগুলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
ক্ষমতালোভী আরব রাষ্ট্রগুলোর জঘন্য শঠতা উম্মাহকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে। ফিলিস্তিনের প্রবেশপথগুলিও কাফেরদের মিত্র এই শাসকেরা বন্ধ করে রেখেছে, আর নিজদের সীমান্ত খুলে দিয়েছে ইসরায়েলের বিকল্প বাণিজ্য পথ হিসেবে। এদের নির্লজ্জ সহযোগিতা না থাকলে ইসরায়েল কোনোদিনও গাজার মুসলমানদের অবরুদ্ধ করে রাখতে পারত না। ফিলিস্তিনের প্রবেশপথগুলো এরা বন্ধ করে না রাখলে উম্মাহর বীর মুজাহিদরা পঙ্গলপালের ন্যায় ছুটে যেতেন ফিলিস্তিন অভিমুখে, ধুলোয় মিশিয়ে দিতেন ওদের অস্ত্রের বড়াই, যেমনটা করা হয়েছে আফগানে। ইসরায়েল আর পৃষ্ঠপোষক পশ্চিমা শক্তি তখন গাজায় হামলা করার কথা ভাবতেও ভয় পেত এবং ইসরায়েলের মাটিতেও তারা একমুহূর্তের জন্য নিজেদের নিরাপদ ভাববার সুযোগ পেত না।
অ্যাটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকা এসে ইসরায়েলকে সাহায্য করতে পারছে একমাত্র এই কাপুরুষ আরব শাসকদের কারণেই, যারা আমেরিকার রোষে পরে গদি হারানোর ভয়ে মুখ খুলে একটা সাহসী বাক্য উচ্চারণও করতে পারছে না।
মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে এদের জাতীয় গাদ্দারী অবশ্যই লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। পরবর্তী প্রজন্ম জানবে, আরব শাসকেরা ক্ষমতার লোভে নিজ ভাইদেরকে ইহুদী আর পশ্চিমা জোটের করুণার উপর ছেড়ে দিয়ে নিজেরা হারাম বিনোদনে মজে ছিল। গাজাবাসীর হাহাকার আর অভিশাপে আমেরিকা আর পশ্চিম যখন পুড়ে ছারখার হবে, সেই উত্তাপে তখন নিঃশেষ হবে এই কপটাচারীদের মসনদও।
আমরা বিশ্বের মুসলামনদের কাছে গাজাবাসীর পক্ষ থেকে মুজাহিদদের জন্য অবিচলতার দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা গাজার মুজাহিদদের আরো হিম্মত দান করেন। শত্রুকে তার উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য দান করুন। আমিন।
Comment