গতানুগতিক মানবীয় যুক্তিবাদের দুর্বলতার ঊর্ধ্বে অবস্থান করে ইসলামিক শরিয়াহ, মহান স্রষ্টা প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট বিধি ও আইনকে অন্তর্ভুক্ত ও কার্যকর করার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের সার্বিক কল্যাণের ধারাকে বিস্তৃত ও নিশ্চিত করে। স্রষ্টা প্রদত্ত শরীয়ত নির্ধারিত আইনগুলোর বাস্তবায়ন কেবল পার্থিব জীবনেই সাফল্য, নিরাপত্তা ও উন্নতির দিকে পরিচালিত করে না বরং পরকালীন সুখ স্বাচ্ছন্দ্যেরও নিশ্চয়তা দেয়।
ইসলামিক আইনের একটি ক্ষেত্র হলো ফৌজদারি আইন, যা প্রতিশোধ গ্রহণের আইন বা তা’জির নামে পরিচিত। উক্ত আইন প্রয়োগ করে কার্যকরভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
প্রতিশোধ গ্রহণ আইন বা তা’জির বাস্তবায়নের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্দেশ্য এবং হিকমত হলো মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করা। মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির মধ্যে দ্বীন, জীবন, চেতনা, বংশ, সম্মান ও সম্পত্তি অন্তর্ভূক্ত। উদাহরণস্বরূপ ইরতিদাদ ফিতনা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দ্বীনের হেফাজত হয়; কিসাস কার্যকর করে প্রাণের নিরাপত্তা বিধান হয়; অ্যালকোহল সেবন নিষিদ্ধকরণ চিন্তা-চেতনার পরিশুদ্ধি বজায় রাখে; যিনা-ব্যাভিচার বিরোধী আইন মানব বংশধারা ও সম্মানের নিরাপত্তা দেয় এবং চুরি সংক্রান্ত আইন সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করে।
এই আইনের আরও একটি লক্ষ্য এবং হিকমত হলো ব্যাপক ভিত্তিক অপরাধ প্রবণতা ও অপরাধ সংগঠনের সর্বনাশা প্রভাব থেকে সমাজকে রক্ষা করা। যারা সামাজিক অপরাধ সংঘটিত করে তারা অণুজীব তুল্য; যদি তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তখন তারা যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং সমাজের অপর অংশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। একজন পেশাজীবী ডাক্তার যেমন সমস্ত শরীর বাঁচাতে ক্যান্সার আক্রান্ত অঙ্গ ফেলে দেয়, তেমনি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অপরাধের প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
অধিকন্তু, কিসাস নীতি প্রয়োগ মনুষ্য প্রজাতির মধ্যে মানব হত্যার মতো গুরুতর সমস্যার সমাধান করে, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও শত্রুতা প্রতিহত করে এবং এভাবে পৃথিবীকে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে। যখন কিসাসের বিধান কার্যকর হয়, তখন খুনি অনুধাবন করে যে, কাউকে হত্যা করা মূলত নিজেকে হত্যা করার শামিল। এভাবে সকল প্রাণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, আলহামদুলিল্লাহ্। এ প্রসংগে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে:
وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الْأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
‘আর হে বিবেকসম্পন্নগণ, কিসাসে রয়েছে তোমাদের জন্য জীবন, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে।’
[সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৭৯]
শরিয়াহভিত্তিক ফৌজদারি আইন বাস্তবায়নের অন্যতম হিকমত ও উপকারিতা হলো অপরাধীর সংশোধন। কষ্ট ও শাস্তি সরাসরি প্রত্যক্ষ করার দ্বারা ব্যক্তি ভবিষ্যতে অপরাধমূলক কাজে জড়িত হওয়া থেকে দূরে থাকে।
শরিয়াহর বিধান প্রয়োগের আরো একটি সুফল হলো- এর মাধ্যমে সুবিচার ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কেউ যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তবে সুবিচার নিশ্চিত করতে হত্যাকারীকে এখানে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
পশ্চিমারা যে মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা বা নারী স্বাধীনতার নামে প্রচারণা চালিয়ে মানবজাতিকে ইসলামি আইনের বিরুদ্ধভাবাপন্ন করে তুলতে চায়, এসকল ঠুনকো মতবাদের ব্যর্থতা তাদের নিজেদের অপরাধপ্রবণ ও নৈতিক বন্ধনহীন সমাজের ভঙ্গুর অবস্থার মাধ্যমেই প্রমাণিত। আর তাদের এসকল মতবাদের দ্বিমুখীতাও আজ ফিলিস্তিন-সিরিয়ায় স্পষ্ট।
বিপরীতে, ইসলামি শরীয়ত ও দণ্ডবিধির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে আজ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অনন্য নজির স্থাপিত হচ্ছে।
মুসলিমদের তাই উচিত পশ্চিমা মিডিয়া এবং সংস্থাসমূহের নেতিবাচক প্রচারণায় প্রভাবিত না হয়ে ইসলামিক শিক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে শরিয়াহ্ নির্ধারিত সীমারেখার প্রায়োগিক ন্যায্যতাকে উপলব্ধি করা। একমাত্র শরয়ী দণ্ডবিধি প্রয়োগের মাধ্যমেই দিনে দিনে প্রতিটি সমাজে স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ইংশাআল্লাহ।
ইমারতে ইসলামিয়ার অফিসিয়াল সাইট থেকে সংগৃহীত, অনুদিত ও ঈষৎ পরিমার্জিত
মূল লেখক: জহির খান
তথ্যসূত্র:
1. Application of Sharia Rules the only Path for Ensuring Social Stability
– http://tinyurl.com/yb6aypnp
https://archive.org/download/islamic...aw-696x479.jpg