খান ইউনিস থেকে তানতুরা : বদলায়নি ইসরায়েলি বর্বরতা ও গণহত্যার চিত্র
তথ্যসূত্র:
1. From Khan Yunis to Tantura: What is the world waiting for to condemn Israel of genocide?
– https://tinyurl.com/3d9rebjc
বিশেষজ্ঞরা বলছেন গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান এখন ইতিহাসের সব চেয়ে মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক ঘটনার অন্যতম হয়ে উঠেছে।
মাত্র ছয় মাসের সামান্য বেশি সময়ে এই আক্রমণ যতখানি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার আলেপ্পো, ইউক্রেনের মারিউপল কিংবা সেই অনুপাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির উপর মিত্রবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও নির্মমতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
২৪ এপ্রিল, বুধবার ২০২৪ গাজার খান ইউনিস এলাকা থেকে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার সাথে সাথেই তার নৃশংসতা প্রকাশ্যে আসে। গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে অসংখ্য গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
খান ইউনিসের গণকবর উন্মোচন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চিকিৎসা সূত্র সম্প্রতি ৩০০টি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে, যাদেরকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে গাজা শহরের আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে সমাহিত করা হয়েছিলো।
বিশেষ সরকারী দলগুলির ব্যাপক অনুসন্ধান চালানোর কয়েক দিন পরে এই মৃতদেহগুলি আবিষ্কৃত হয়। মৃতদেহগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে লুকিয়েছিল এবং আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের মধ্যে বালি ও ধ্বংসাবশেষের নীচে গভীরভাবে কবর দিয়ে রেখেছে। এটি ইসরায়েলের মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধসমূহের মধ্যে অন্যতম।
অধিকন্তু, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে অনুপ্রবেশের সময় একটি কবর খুঁড়ে মৃতদেহগুলিকে বের করে এবং বুলডোজার দিয়ে পিষে ফেলে। জানুয়ারী মাসে বেইত লাহিয়ার একটি স্কুলে হাত এবং চোখ বাধা ৩০ জনের মৃতদেহ সম্বলিত একটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল। তাদেরকে অপহরণের পর বিচার বহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
সর্বশেষ দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে তিনটি গণকবর পাওয়া গিয়েছে। এখান থেকে প্রায় ২০০০ নাগরিকের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। এই কবরগুলি থেকে এখন পর্যন্ত ৩১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব গণকবরের অধিকাংশই হাসপাতাল কমপ্লেক্সের মধ্যে পাওয়া গেছে, আর সেখানে বেশিরভাগই নারী ও শিশুদের মৃতদেহ। কাউকে হাত এবং চোখ বাধা অবস্থায় পাওয়া গেছে, আবার অনেকের শরীরে অজানা অস্ত্র ব্যবহারের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অনেক লাশের অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা ছিল। এ সকল নির্মম ঘটনা কেবল একটি প্রশ্নই তৈরি করে যে, গণহত্যার অপরাধে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা করার জন্য বিশ্ব আর কিসের অপেক্ষা করছে?
গাজায় দখলদারিত্বের নৃশংসতা কয়েক দশক ধরেই ঘটে চলেছে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল যুদ্ধ থেকে শুরু করে তানতুরা এবং দেইর ইয়াসিনের মতো গণহত্যার মাধ্যমে এই নিরমমতার শুরু। গাজায় সংঘটিত চলমান গণহত্যা এই নৃশংসতার সর্বশেষ নমুনা।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ইহুদিবাদী হাগানাহ মিলিশিয়াদের দ্বারা চালানো তানতুরা গণহত্যার ফলে প্রায় ২৮০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান, যাদের বেশিরভাগকেই গণকবরে সমাহিত করা হয়েছিল। তানতুরাতে চারটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, যার মধ্যে একটি সমুদ্র সৈকত পার্কিংয়ের নীচে, আরেকটি পর্যটন গ্রামে পথচারীদের হাঁটার পথের নীচে, তৃতীয়টি হজ ইয়াহিয়ার বাড়ির কাছে, এবং শেষটি গ্রামের ঐতিহাসিক ইসলামী কবরস্থানের মধ্যে।
সময় বদলালেও ইসরায়েলি নৃশংসতা, গণহত্যা আর গনকবরের ধরণ বদলায়নি।
ওয়াফার সাথে কথা বলার সময়, ফিলিস্তিনের বিচারমন্ত্রী শুরাহবিল আল-জাইম বলেছেন যে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সহ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সমস্ত অপরাধ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে এইসব নৃশংসতা ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী গণহত্যার অপরাধের প্রমাণ বহন করে।
তিনি গাজায় গণকবরের অস্তিত্বের তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটরের কাছে দাবি করেছেন।
আল-জাইম আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধমূলক অস্ত্র ব্যবহার বা বেসামরিক লোকদের হত্যা, অঙ্গ চুরি এবং বেসামরিক সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর প্রতিটি ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্য ফরেনসিক মেডিকেল রিপোর্টের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি মানবাধিকার, আইনবীদ এবং সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন গাজায় দখলদারিত্বের সমস্ত অপরাধকে নথিভুক্ত করেন। এসব তথ্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপে প্রমাণ হিসাবে কাজ করবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার মেয়াদ শেষ হয় না এবং এই ধরনের অপরাধের অপরাধীদের যে কোনো সময় বিচারের আওতায় আনা যেতে পারে।
ইতিমধ্যে, আল-হক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শাওয়ান জাবারিন বলেন যে, গাজায় উন্মোচিত গণকবরগুলো বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে দখলদারদের গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ। তিনি জোর দিয়ে বলেলেন যে, গাজায় যা ঘটছে তার মতো কিছু বিশ্ব কখনও প্রত্যক্ষ করেনি।
তিনি আরও বলেন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে দখলদারিত্বের অপরাধ গত ৭ই অক্টোবর শুরু হয়নি। বরং তা ১০০ বছর ধরে চলা গনহত্যার একটি অংশ মাত্র।
গাজার হাসপাতালগুলিতে গণকবরের আবিষ্কার শুধুমাত্র এই অঞ্চল জুড়েই নয়, বিশ্বব্যাপীও শোক বার্তা পাঠিয়েছে। পাশাপাশি তা আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং দায়ীদের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে৷
গাজার আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স এবং নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে গণকবরের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি আরব বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জর্ডানের হাশেমাইদ কিংডম খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে গণকবরের আবিষ্কার সহ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান জঘন্য যুদ্ধাপরাধের নিন্দা করেছে। জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক নীতি লঙ্ঘন করেছে যেগুলির শাস্তি হওয়া উচিত এবং দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
একইভাবে, সৌদি আরব ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর তৈরিকৃত গণকবর সহ গাজায় অব্যাহত গুরুতর যুদ্ধাপরাধের নিন্দা করেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে এবং সংঘটিত গণহত্যার জন্য তাদের জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে, এখন পর্যন্ত আরব বিশ্ব বা কথিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের এসকল প্রতিবাদ-বিবৃতি ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত নয়; এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি দানকারীদের অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তবুও এসকল উদ্যোগ অন্তত বিশ্ববিবেককে কিছুটা হলেও নাড়া দিবে বলা আশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪,২৬২ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯,৭৫২ জন মহিলা, ১৪,৭৭৮ শিশু, ৪৮৫ জন চিকিৎসা কর্মী, ১৭০ জন সাংবাদিক এবং ৬৭ জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী রয়েছে৷ এছাড়া অনাহারে মারা গেছে অন্তত ৩০ শিশু।
মাত্র ছয় মাসের সামান্য বেশি সময়ে এই আক্রমণ যতখানি ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তা ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার আলেপ্পো, ইউক্রেনের মারিউপল কিংবা সেই অনুপাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির উপর মিত্রবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ ও নির্মমতাকে ছাড়িয়ে গেছে।
২৪ এপ্রিল, বুধবার ২০২৪ গাজার খান ইউনিস এলাকা থেকে ইসরায়েলি দখলদার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করার সাথে সাথেই তার নৃশংসতা প্রকাশ্যে আসে। গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে অসংখ্য গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।
খান ইউনিসের গণকবর উন্মোচন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। চিকিৎসা সূত্র সম্প্রতি ৩০০টি মৃতদেহ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে, যাদেরকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে গাজা শহরের আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে সমাহিত করা হয়েছিলো।
বিশেষ সরকারী দলগুলির ব্যাপক অনুসন্ধান চালানোর কয়েক দিন পরে এই মৃতদেহগুলি আবিষ্কৃত হয়। মৃতদেহগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে লুকিয়েছিল এবং আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের মধ্যে বালি ও ধ্বংসাবশেষের নীচে গভীরভাবে কবর দিয়ে রেখেছে। এটি ইসরায়েলের মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধসমূহের মধ্যে অন্যতম।
অধিকন্তু, উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন যে, ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে অনুপ্রবেশের সময় একটি কবর খুঁড়ে মৃতদেহগুলিকে বের করে এবং বুলডোজার দিয়ে পিষে ফেলে। জানুয়ারী মাসে বেইত লাহিয়ার একটি স্কুলে হাত এবং চোখ বাধা ৩০ জনের মৃতদেহ সম্বলিত একটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়েছিল। তাদেরকে অপহরণের পর বিচার বহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
সর্বশেষ দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে তিনটি গণকবর পাওয়া গিয়েছে। এখান থেকে প্রায় ২০০০ নাগরিকের নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। এই কবরগুলি থেকে এখন পর্যন্ত ৩১০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব গণকবরের অধিকাংশই হাসপাতাল কমপ্লেক্সের মধ্যে পাওয়া গেছে, আর সেখানে বেশিরভাগই নারী ও শিশুদের মৃতদেহ। কাউকে হাত এবং চোখ বাধা অবস্থায় পাওয়া গেছে, আবার অনেকের শরীরে অজানা অস্ত্র ব্যবহারের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অনেক লাশের অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা ছিল। এ সকল নির্মম ঘটনা কেবল একটি প্রশ্নই তৈরি করে যে, গণহত্যার অপরাধে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা করার জন্য বিশ্ব আর কিসের অপেক্ষা করছে?
গাজায় দখলদারিত্বের নৃশংসতা কয়েক দশক ধরেই ঘটে চলেছে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ফিলিস্তিনি বেসামরিকদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মূল যুদ্ধ থেকে শুরু করে তানতুরা এবং দেইর ইয়াসিনের মতো গণহত্যার মাধ্যমে এই নিরমমতার শুরু। গাজায় সংঘটিত চলমান গণহত্যা এই নৃশংসতার সর্বশেষ নমুনা।
১৯৪৮ সালের মে মাসে ইহুদিবাদী হাগানাহ মিলিশিয়াদের দ্বারা চালানো তানতুরা গণহত্যার ফলে প্রায় ২৮০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান, যাদের বেশিরভাগকেই গণকবরে সমাহিত করা হয়েছিল। তানতুরাতে চারটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, যার মধ্যে একটি সমুদ্র সৈকত পার্কিংয়ের নীচে, আরেকটি পর্যটন গ্রামে পথচারীদের হাঁটার পথের নীচে, তৃতীয়টি হজ ইয়াহিয়ার বাড়ির কাছে, এবং শেষটি গ্রামের ঐতিহাসিক ইসলামী কবরস্থানের মধ্যে।
সময় বদলালেও ইসরায়েলি নৃশংসতা, গণহত্যা আর গনকবরের ধরণ বদলায়নি।
ওয়াফার সাথে কথা বলার সময়, ফিলিস্তিনের বিচারমন্ত্রী শুরাহবিল আল-জাইম বলেছেন যে, ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সহ আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সমস্ত অপরাধ করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে এইসব নৃশংসতা ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী গণহত্যার অপরাধের প্রমাণ বহন করে।
তিনি গাজায় গণকবরের অস্তিত্বের তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটরের কাছে দাবি করেছেন।
আল-জাইম আন্তর্জাতিকভাবে অপরাধমূলক অস্ত্র ব্যবহার বা বেসামরিক লোকদের হত্যা, অঙ্গ চুরি এবং বেসামরিক সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তু বানানোর প্রতিটি ঘটনা নথিভুক্ত করার জন্য ফরেনসিক মেডিকেল রিপোর্টের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি মানবাধিকার, আইনবীদ এবং সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন গাজায় দখলদারিত্বের সমস্ত অপরাধকে নথিভুক্ত করেন। এসব তথ্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপে প্রমাণ হিসাবে কাজ করবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার মেয়াদ শেষ হয় না এবং এই ধরনের অপরাধের অপরাধীদের যে কোনো সময় বিচারের আওতায় আনা যেতে পারে।
ইতিমধ্যে, আল-হক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শাওয়ান জাবারিন বলেন যে, গাজায় উন্মোচিত গণকবরগুলো বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে দখলদারদের গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ। তিনি জোর দিয়ে বলেলেন যে, গাজায় যা ঘটছে তার মতো কিছু বিশ্ব কখনও প্রত্যক্ষ করেনি।
তিনি আরও বলেন ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে দখলদারিত্বের অপরাধ গত ৭ই অক্টোবর শুরু হয়নি। বরং তা ১০০ বছর ধরে চলা গনহত্যার একটি অংশ মাত্র।
গাজার হাসপাতালগুলিতে গণকবরের আবিষ্কার শুধুমাত্র এই অঞ্চল জুড়েই নয়, বিশ্বব্যাপীও শোক বার্তা পাঠিয়েছে। পাশাপাশি তা আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং দায়ীদের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে৷
গাজার আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স এবং নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে গণকবরের প্রতিবেদনগুলো নিয়ে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি আরব বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জর্ডানের হাশেমাইদ কিংডম খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে গণকবরের আবিষ্কার সহ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান জঘন্য যুদ্ধাপরাধের নিন্দা করেছে। জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক আইন এবং মানবিক নীতি লঙ্ঘন করেছে যেগুলির শাস্তি হওয়া উচিত এবং দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।
একইভাবে, সৌদি আরব ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর তৈরিকৃত গণকবর সহ গাজায় অব্যাহত গুরুতর যুদ্ধাপরাধের নিন্দা করেছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে এবং সংঘটিত গণহত্যার জন্য তাদের জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তার দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
তবে, এখন পর্যন্ত আরব বিশ্ব বা কথিত বিশ্ব সম্প্রদায়ের এসকল প্রতিবাদ-বিবৃতি ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন ও গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত নয়; এমনকি বক্তব্য-বিবৃতি দানকারীদের অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের সহযোগীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তবুও এসকল উদ্যোগ অন্তত বিশ্ববিবেককে কিছুটা হলেও নাড়া দিবে বলা আশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪,২৬২ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯,৭৫২ জন মহিলা, ১৪,৭৭৮ শিশু, ৪৮৫ জন চিকিৎসা কর্মী, ১৭০ জন সাংবাদিক এবং ৬৭ জন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী রয়েছে৷ এছাড়া অনাহারে মারা গেছে অন্তত ৩০ শিশু।
তথ্যসূত্র:
1. From Khan Yunis to Tantura: What is the world waiting for to condemn Israel of genocide?
– https://tinyurl.com/3d9rebjc
Comment