Announcement

Collapse
No announcement yet.

“টাকার কুমির” পাসপোর্টের তিন পরিচালক

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • “টাকার কুমির” পাসপোর্টের তিন পরিচালক

    “টাকার কুমির” পাসপোর্টের তিন পরিচালক



    পাসপোর্ট অফিসে টাকার কুমির হিসেবে পরিচিত তারা। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তারা এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে, অধিদফতরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে অন্যান্য সব কর্মকর্তাই তটস্থ থাকতেন। ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগ এমনকি পদোন্নতি বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে।

    আর এসব কারণে বিগত সরকারের সময়েই দুদক তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এমনকি অধিদফতর থেকে চাকরিচ্যুতির আবেদনও করা হয় মন্ত্রণালয়ে। এত কিছুর পরও তারা বহাল তবিয়তে আছে। পাসপোর্টের আলোচিত এই তিন কর্মকর্তা এখন পরিচালক পদে আছে। তারা হলো- পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক (ডাটা অ্যান্ড পারসোনালাইজেশন সেন্টার) তৌফিকুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক সাইদুল ইসলাম ও সিলেট বিভাগীয় পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

    পাসপোর্ট অধিদফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বিগত সময়ে সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, ডিবির হারুন অর রশিদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভাইসহ যত বিতর্কিত পাসপোর্ট দেওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে এই তিন কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই করা।

    জানা যায়, পাসপোর্টের ঢাকা বিভাগীয় অফিসের পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন যেন অপ্রতিরোধ্য ছিল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আস্থাভাজন ও সাবেক আইজি বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে নিয়ম নীতি, সিনিয়র জুনিয়র এমনকি কার সঙ্গে কী ব্যবহার করতে হবে, সব কিছুই তুচ্ছ ছিল তার কাছে। সরকারি এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এতটাই প্রভাবশালী যে মহাপরিচালকের সামনে তার কোনও আদেশ না মানার ঘোষণা দেয়, অতিরিক্ত মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেয়। তার ভয়ে শুধু তার অফিস নয়, প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা পর্যন্ত অতিষ্ঠ থাকতেন। অথচ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকে মামলা চলমান, ইতোমধ্যে চার্জশিটও হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৫ ধরনের গুরুতর অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। অধিদফতর থেকে তাকে চাকরিচ্যুতির আবেদন করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।

    পাসপোর্ট অধিদফতরের মামুনের ‘ক্লোজ’ হিসেবে পরিচিত তৌফিকুল ইসলাম খান। সে ২০০৪ সালে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে। এরপর সে সহকারী পরিচালক ছিল ৭ বছর, উপ-পরিচালক ছিল ৮ বছর এবং উভয়পদে মোট ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার ৩ মাসের মধ্যে পরিচালক পদে পদোন্নতি পায়। এ সময় সে সর্বসাকুল্যে যথাক্রমে- ৫৫ হাজার, ৬৫ হাজার এবং বর্তমানে ৭৫ হাজার টাকা করে মাসে বেতন তুলছে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সে ঢাকায় ৮টি ফ্ল্যাট, ৭টি প্লট ও বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়ে যায়।

    রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থা পাসপোর্ট পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম খান সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়। সে অনুযায়ী, পাসপোর্টের এই পরিচালকের নামে রয়েছে ঢাকার উত্তরায় ১৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। যেটি কেনা হয় ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। ধানমন্ডিতে রয়েছে ২ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। কেনা হয় ২ কোটি টাকায়। ধানমন্ডির গ্রিন রোডে ১২৫০ বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট। একেকটির মূল্য ৮০ লাখ টাকা। লালমাটিয়ায় ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মূল্য ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইন্দিরা রোডে একটি ফ্ল্যাট কেনেন ৬৫ লাখ টাকায়। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর নামে বুকিং এবং অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে। শান্তিনগরে ফ্ল্যাট, যেটি কেনা হয় ১ কোটি ২৬ লাখ টাকায়। এটির মূল্য তৌফিক তার ভাইয়ের নামে পরিশোধ দেখায়। রাজধানীর নীলক্ষেতে আছে ২টি দোকান। একত্রে কেনা হয় ২ কোটি ২০ লাখ টাকায়। বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর রয়েছে ৬৪ লাখ টাকার।

    যখন যেখানে ইচ্ছা প্লট কিনেছে সে। এর মধ্যে মিরপুর রূপনগর (সম্প্রসারিত) প্রকল্পে ২ কাঠার প্লট কেনে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। উত্তরায় ৩ কাঠার প্লটটি কেনে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে। বর্তমানে বাজার দর ২ কোটি টাকা। রাজধানীর বনশ্রীতে রয়েছে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট। শাশুড়ির নামে সেটি ৩ কোটি টাকা দিয়ে কেনে। যার বর্তমান বাজার মূল্য সাড়ে ৩ কোটি টাকা। নিজ জেলা নেত্রকোনায় রয়েছে ১৪.৫৭ শতাংশের ওপর দোতলা বাড়ি, যার নিচে দোকান। এটি ২ কোটি ১০ লাখে কেনা। নেত্রকোনায় রয়েছে আরেকটি ছয় তলা বাড়ি, যা পৌনে ৪ শতাংশ জায়গার ওপর। কিনেছে ২ কোটি টাকায়। নেত্রকোনায় নিজ গ্রামে এক দাগে কিনেছে ৪ একর কৃষি জমি। যার আনুমানিক দাম ১ কোটি ৮০ লাখ। মোহনগঞ্জে কেনে একসঙ্গে ১৩ একর ৮০ লাখ টাকায়।

    মোট নগদ অর্থ রয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে রয়েছে ৬৫ লাখ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার আছে ৪৫ ভরি। তখনকার সময়ে যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। পারিবারিক ব্যবহারের জন্য কিনেছে ২টি গাড়ি। যার মধ্যে একটি ফিল্ডার, অন্যটি নোয়া। মূল্য ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। নগদ রয়েছে ৩ হাজার মার্কিন ডলার, ৭০০ সিঙ্গাপুরী ডলার, ইউরো রয়েছে ৯ হাজার। কোথায় কোন উপলক্ষে কত খরচ করেছে তারও উল্লেখ রয়েছে। তার বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা চলমান রয়েছে।

    এভাবে সাইফুল ইসলামও খোলাখুলি ঘুষ নিতো অধিদফতরে। জানা যায়, সাইদুল ইসলাম ময়মনসিংহ অফিসে কর্মরত থাকাকালে নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা না করে যাছাই-বাছাই ছাড়াই ও ভুয়া এনওসির মাধ‌্যমে অর্ডিনারি ফি’তে জরুরি পাসপোর্ট ইস্যু করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যা দিয়ে অল্প দিনের মধ‌্যে নিজ এলাকা সাঁথিয়ায় ১০ বিঘার ওপর পুকুর ক্রয়, কাশিয়ানি বাজারে ভবনসহ ১০ শতাংশ জায়গা ক্রয়, ২০ বিঘার ওপর ফার্ম, নরসিংদীতে ২৯ ও ৬৫ শতাংশ জায়গার ওপর কারখানা, উত্তরায় প্লট ও ফ্ল্যাট, বসিলা বেড়িবাঁধের পাশে চন্দ্রিমা হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লট, শ্যাওড়াপাড়ায় ১৭ কাঠা জায়গা, মোহাম্মাদপুরের ইকবাল রোডে ২ হাজার ২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডিতে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হয়। যা সে নামে-বেনামে করেছে।

    অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কারখানা স্থাপনের জন‌্য সাইদুল ইসলাম মেঘনা নদীর তীরে সাত বিঘা জমি কিনেছে। তার নিজের ও সন্তানের চিকিৎসা চলে সিঙ্গাপুরের ব‌্যয়বহুল হাসপাতালে। যা তার ও পরিবারের পাসপোর্ট দেখলে বেরিয়ে আসবে। বিভিন্ন অফিসে চাকরির সুবাদে সে প্রায় ৩০ কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছে। এর মধ‌্যে স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬০ লাখ টাকা ও প্লট। তার বিরুদ্ধেও দুদকে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনও মুহূর্তে মামলা হবে।


    তথ্যসূত্র:
    ১. ‘টাকার কুমির’ পাসপোর্টের তিন পরিচালক
    https://tinyurl.com/mpmbsbah
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org
Working...
X