Announcement

Collapse
No announcement yet.

বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশদের ৮টি ভয়ঙ্কর গণহত্যা

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশদের ৮টি ভয়ঙ্কর গণহত্যা

    বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশদের ৮টি ভয়ঙ্কর গণহত্যা




    বিশ্ব ইতিহাসের পাতা তিনটি দেশের অপরাধ দিয়ে রক্তাক্ত — যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও সভ্যতার বুলি আওড়ালেও বাস্তবে এই দেশগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিশ্বজুড়ে চালিয়েছে ভয়ঙ্কর গণহত্যা ও নির্যাতন। এর মধ্যে ইংল্যান্ড বা ব্রিটেনের অপরাধ ইতিহাস সবচেয়ে দীর্ঘ, রক্তক্ষয়ী ও লোমহর্ষক। আফগানিস্তান, ভারত, ইরান, ইরাক, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইয়েমেন—পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছড়িয়ে দিয়েছে বিভীষিকার ইতিহাস।

    নিচে এমনই ৮টি গণহত্যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

    ১. আফগানিস্তানে ব্রিটিশ গণহত্যা:

    প্রথম ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ (১৮৩৯-১৮৪২) হেলমান্দ উপত্যকার দক্ষিণ অংশে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধটি ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্য এশীয় অঞ্চলে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নামা প্রধান অভিযানগুলোর অন্যতম। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ‘গ্রেট গেম’ নামে পরিচিত এই যুদ্ধে হেলমান্দের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হয়। এতে আফগানিস্তানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভয় ও আতঙ্ক।

    ২. ভারত দখল ও মারাত্মক দুর্ভিক্ষ:

    বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে, ১৭৭০-এর দশকে ব্রিটিশ বাহিনী ভারত দখলে নেয়। এ সময় দুর্ভিক্ষ, রোগ, ব্রিটিশ সৈন্যদের হাতে দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের কারণে অথবা জোরপূর্বক শ্রমের চাপের কারণে কেবল বাংলা প্রদেশে এক কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৪২ সাল থেকে ব্রিটিশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ঔপনিবেশিক সিদ্ধান্তের কারণে ভারতে আরেকটি দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, যার ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ মারা যান।

    ৩. দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিটিশ গণহত্যা:

    দক্ষিণ আফ্রিকায় সংঘটিত বোয়ার যুদ্ধের সময় (১৯০০-১৯০২) ব্রিটেন অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে কয়েক হাজার নিরপরাধ মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম শিবিরে বন্দি করে। এক বছরের মধ্যে ওই শিবিরগুলোতে থাকা বোয়ার ১০ শতাংশ মানুষ রোগ-শোক ও অনাহারে মারা যায়। যাতে ব্রিটিশ সরকার আফ্রিকায় তার ঔপনিবেশিক ও অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্রিটিশ নীতির ফলে আনুমানিক ৪৮,০০০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল।

    ৪. ইরানে ব্রিটিশ গণহত্যা:

    ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সালের মধ্যে ব্রিটিশদের দখলদারিত্বে থাকা ইরানে প্রায় ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা নিধন হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯১৪ সালে যেখানে জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি, ১৯১৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১ কোটি ১০ লক্ষে। অর্থাৎ ব্রিটেনের কারণে প্রায় ৯০ লক্ষ ইরানির প্রাণহানি ঘটে।

    ৫. ইরাকে রাসায়নিক বোমা হামলা:

    ১৯১৯ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ যুদ্ধ সচিব উইনস্টন চার্চিলের নির্দেশে ইরাকে চালানো রাসায়নিক বোমা হামলা ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক ট্র্যাজেডি হিসেবে পরিচিত। সেই সময় ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর পশ্চিম এশিয়ায় মোতায়েনকৃত কমান্ড আরব জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র পরীক্ষার অনুমতি চায় এবং চার্চিল তাতে অনুমোদন দেন। এরপর ইরাকের উপজাতিদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা ১৯২০ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এমনকি ১৯২৫ সালেও ব্রিটিশ বিমান বাহিনী ইরাকের সুলায়মানিয়া শহরের সাধারণ জনগণের ওপর পুনরায় ওই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এই নির্মম ও অমানবিক আচরণ ইতিহাসে উপনিবেশিক আগ্রাসনের একটি নৃশংস উদাহরণ হয়ে রয়েছে।

    ৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান জনগণের ওপর গণহত্যা:

    ১৯৩৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ও ফ্রান্স আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান রেইখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধ ঘোষণার মাত্র দুই দিন পর, ব্রিটিশ বাহিনী জার্মানির শহরগুলোসহ বেসামরিক জনবসতিতে বোমা বর্ষণ শুরু করে। ৫ সেপ্টেম্বর কক্সহেভেন ও উইলহেল্মশেভেন শহরে চালানো হয় প্রথম বিমান হামলা। এরপর ১৯৪০ সালের ১২ জানুয়ারি ওয়েস্টারল্যান্ড শহরে আবারও বোমা হামলা চালানো হয়। একই বছরের ২০ মার্চ কিয়েল ও হার্নিয়াম শহরে ফেলা হয় ১১০টি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ও দাহ্য বোমা, যার ফলে একটি হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৪০ সালের এপ্রিলে ব্রিটিশ বোমারু বিমানগুলো ধারাবাহিকভাবে হামলা চালাতে থাকে এমন সব শহরে, যেখানে কোনো সামরিক স্থাপনাই ছিল না। এসব হামলার মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।

    ৭. উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশ হত্যাকাণ্ড:

    ১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে ব্রিটিশ সেনারা উত্তর আয়ারল্যান্ডে ৩০০ জনেরও বেশি নিরস্ত্র আইরিশ পুরুষ, নারী ও শিশুকে হত্যা করে। এই নিহতদের কেউই ব্রিটিশ সেনাদের জন্য কোনো মারাত্মক হুমকি ছিল না। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ক্যাথলিক পুরোহিত, বয়স্ক নারী, শিশু এবং এমনকি কিশোরী মেয়েও। তবে আশ্চর্যজনকভাবে, ব্রিটিশ সরকারের নথিপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে সাধারণ ক্ষমা প্রদান করা হয়। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি ও অমানবিক আচরণের একটি প্রমাণ হয়ে রয়েছে।

    ৮. ইয়েমেনে ব্রিটিশ গণহত্যা:

    ১৯৬৩-১৯৬৬ সালে ইয়েমেনের এডেনের নির্যাতন শিবিরগুলো ব্রিটিশদের অপরাধের অপর একটি উদাহরণ। ১৯৬০-এর দশকে ইয়েমেনিরা ইয়েমেন বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কঠোর চেষ্টা করেছিল। এ সময় ব্রিটিশরা ভিন্নমত দমনের সর্বোত্তম উপায় হিসেবে ভয়াবহ সব নির্যাতন কক্ষ তৈরি করেছিল। প্রতিপক্ষ ইয়েমেনিদের সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় রেফ্রিজারেটেড কক্ষে রাখার ফলে তাদের অনেকেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই কক্ষগুলোতে সিগারেটের আগুন দিয়েই মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা, নগ্ন বন্দিদের বর্শার উপর স্থাপন ও ধর্ষণসহ অন্যান্য যৌন নির্যাতনের ঘটনা ব্রিটিশ অপরাধযজ্ঞের জঘন্য ইতিহাস।

    এই ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তথাকথিত ‘সভ্যতা’—যার পেছনে লুকিয়ে আছে রক্ত, নিষ্ঠুরতা আর গণহত্যার কালো ইতিহাস। আজকের ব্রিটেন যতই মানবাধিকার শেখাক না কেন, ইতিহাস তাদের এই অপরাধ ক্ষমা করবে না।


    তথ্যসূত্র:
    1. বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশদের ৮টি গণহত্যা
    https://tinyurl.com/cuzbt5sa
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org
Working...
X