কাশ্মীর সীমান্তে গ্রামবাসীকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিএসএফ

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ভারত-নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, “গ্রাম প্রতিরক্ষা রক্ষী” (ভিডিজি) কর্মসূচির আওতায় এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এই উদ্যোগকে দেখা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের ইসলামবিদ্বেষী রাজনীতির অংশ হিসেবে, যা কাশ্মীরি মুসলিমদের দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিএসএফ দাবি করছে, এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য গ্রামবাসীদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো। প্রশিক্ষণে মৌলিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার, রাইফেল ও হ্যান্ড গ্রেনেড চালানোর পদ্ধতি, রাতের টহল দেওয়া এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শেখানো হচ্ছে। এমনকি কিছু এলাকায় নারী ও কিশোরীদেরও আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রশিক্ষণ প্রকৃতপক্ষে কাশ্মীরের মুসলিম প্রধান এলাকায় ভারতীয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা। মোদি সরকারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতির অধীনে কাশ্মীরি মুসলমানদের দীর্ঘদিন ধরে সামরিকীকরণ, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। বিএসএফের এই প্রশিক্ষণ স্থানীয়দের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং ভারতপন্থী মিলিশিয়া গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বিলোপ (৫ আগস্ট, ২০১৯), নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), এবং মুসলিমবিরোধী লিঞ্চিংয়ের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে মুসলিমদের ভারতের মূলস্রোতে ঠাঁই দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই।
এখন, সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়ে স্থানীয় মুসলিম যুবকদের ভারতীয় রাষ্ট্রের পক্ষে লেলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর মাধ্যমে ভারত সরকার কাশ্মীরে একটি বিভক্ত সমাজ গড়ে তুলতে চাইছে যেখানে মুসলিমরা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ভারত সরকারকে আরও উৎসাহিত করছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বারবার কাশ্মীরে ভারতের নৃশংসতার কথা উল্লেখ করলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিএসএফের এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কাশ্মীরের জটিল পরিস্থিতিতে নতুন অশান্তির বীজ বপন করতে পারে। এটি কেবল স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তাহীনতাই বাড়াবে না, বরং হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের মুসলিমবিদ্বেষী এজেন্ডাকে আরও এগিয়ে নেবে। কাশ্মীরি মুসলমানরা আজও স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য সংগ্রাম করছে, কিন্তু ভারতের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস তাদের জীবনে প্রতিদিন নতুন করে আতঙ্কের প্রাচীর গড়ে তুলছে।
তথ্যসূত্র:
1. BSF Trains Villagers In J&K Border Areas On How Firearms Work, Self-Defence
-https://tinyurl.com/mr3w4yfh
2. Army, BSF train border VDGs in arms handling in J&K
– https://tinyurl.com/yprmawbv
Comment