এক মাসে গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ৪০০-র বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ

গাজা যেন এখন আর শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নয়—এটা হয়ে উঠেছে জীবনের জন্য হাহাকার, আর মৃত্যুর প্রতিদিনকার মিছিল। সেই মৃত্যুর নতুন মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিতর্কিত নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলো। স্রেফ একটু খাবার নিতে গিয়েই প্রাণ দিতে হয়েছে অন্তত ৪১০ জন ফিলিস্তিনিকে, যারা সবাই বেসামরিক, সবাই ক্ষুধার্ত।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলোকে সরাসরি ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলেই আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)।
জাতিসংঘ জানায়, গত ২৭ মে থেকে সন্ত্রাসী ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গাজায় কিছু নতুন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো জাতিসংঘ ও অন্যান্য নিরপেক্ষ মানবিক সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এই ত্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে ইসরায়েলি সামরিক অঞ্চলে, যেখানে স্বাধীন গণমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ। আর এখানেই ঘটছে ভয়াবহ সব ঘটনা—ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ, বিশৃঙ্খলা, মৃত্যু।
জাতিসংঘ বলছে, গত এক মাসে—মানে মে মাসের শেষ থেকে—গাজায় ত্রাণ নেওয়ার সময় শহীদ মানুষের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪১০।
এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে গুলির শব্দ এখন যেন নিয়মিত। সন্ত্রাসী ইসরায়েলের এই সামরিকীকৃত ত্রাণব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানবিক নীতিমালার সম্পূর্ণ বিরোধী। খাবার আর চিকিৎসার মতো মৌলিক সহায়তা কেড়ে নিয়ে তা অস্ত্র বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
এইভাবে বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকু কেড়ে নেয়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের সামনে সহানুভূতির বদলে অস্ত্র তুলে ধরা—এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সরাসরি যুদ্ধাপরাধ।
জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সংস্থা বলছে, গাজার পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যেখানে প্রতিদিন শিশু, নারী, বৃদ্ধ—সব বয়সের মানুষ মারা যাচ্ছে। যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের জীবন টিকিয়ে রাখার মতো যথেষ্ট সহায়তাও পৌঁছাচ্ছে না।
এসব বিতরণ কেন্দ্রের সামনে কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়ে, কেউ কেউ গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘ বলছে, এসব কেন্দ্র মানবিক সাহায্যের নামে আসলে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুঝুঁকিতে ঠেলে দিচ্ছে।
এই সংকটের মধ্যেও, গাজায় নিরপেক্ষভাবে কাজ করা জাতিসংঘ ও বেসরকারি সাহায্য সংস্থার কর্মীরাও নিরাপদ নন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করা কয়েকজন ফিলিস্তিনি কর্মীকে হত্যা করেছে।
এই বাস্তবতা এতটাই নির্মম যে এখন মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদেই খাবার সংগ্রহ করতে যাচ্ছে। আর যাচ্ছে একথা জেনেই যে হয়তো আর ফিরে আসা হবে না। ত্রাণ নিতে গিয়ে যদি গুলিতে মরতে হয়, তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—গাজা কি শুধু একটি ভূখণ্ড, নাকি পৃথিবীর বিবেকের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি?
তথ্যসূত্র:
1.Gaza: Over 400 Palestinians killed around private aid hubs, UN rights office says
– https://tinyurl.com/3zn246mu
Comment