কাশ্মীরে আজান দেয়ার অপরাধে একে একে ২২ মুসলিমকে হত্যার আজ ৯৪ বছর

আজ ১৩ জুলাই। ভারতের দখলকৃত কাশ্মীরে মুসলিমরা আজ শহীদ দিবস হিসেবে দিনটি পালন করছে। কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। ১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই শ্রীনগরের কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ২২ জন নিরস্ত্র কাশ্মীরিকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ওই দিন নিহত শহীদরা পরবর্তীতে কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেন।
কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিসের রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে সাধারণ ধর্মঘট (হরতাল) পালিত হচ্ছে। সব দোকানপাট, সরকারি অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। কাশ্মীরের সর্বদলীয় হুরিয়ত কনফারেন্স এই দিবসটি পালনের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। তারা চায়, এই দিনটির গুরুত্ব সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাক এবং কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামকে নতুন করে সামনে আনা হোক, যেন স্বাধীনতা আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য এবং তাৎপর্য সকলের মধ্যে স্পষ্ট হয়।
প্রসঙ্গত, ১৯৩১ সালের ১৩ জুলাই কাশ্মীরের শ্রীনগরের কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। ভারতীয় ডোগরা শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিরা যখন প্রতিবাদ জানায়, তখনই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
১৯৩১ সালে তৎকালীন মহারাজা হরি সিংয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঈদের নামাজের খুৎবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পাশাপাশি, মহারাজার সৈন্যরা কুরআনের প্রতি অবমাননাকর আচরণ করতে শুরু করে। এসব ঘটনার ফলে পুরো কাশ্মীরজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরই মধ্যে, এক সমাবেশে আব্দুল কাদির নামক এক যুবক মহারাজের শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদ জানানোয় তাকে আটক করা হয় এবং দ্রুত তার বিচার কার্য শুরু হয়।
পরবর্তীতে ১৯৩১ সালের ১২ জুলাই আব্দুল কাদিরের সমর্থনে কাশ্মীর জুড়ে বিক্ষোভ ও মিছিল চলতে থাকে। এরূপ অবস্থায় উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে আব্দুল কাদিরের বিচার স্থানান্তর করা হয় কারা অভ্যন্তরে। পরদিন ১৩ জুলাই শ্রীনগর কারাগারে আব্দুল কাদিরের বিচারকার্য অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও কাতারে কাতারে স্থানীয় মুসলিমরা সমবেত হয় সেই বিচার প্রত্যক্ষ করতে।
বিচার চলাবস্থায় নামাযের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় এক যুবক আজান দেন। সাথে সাথে মহারাজার গভর্নরের নির্দেশে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তাকে গুলি করার সাথে সাথে আরেকজন দাঁড়িয়ে যান আজান দিতে। তাকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর দাঁড়িয়ে যান আরও একজন। এভাবে সেদিন আজান দেয়ার কারণে একে একে ২২ জন মুসলিম শহীদ হন। এ ঘটনায় শোকে প্রথমে স্তব্ধ হয়ে পড়লেও পরে উত্তাল হয়ে ওঠে সমগ্র কাশ্মীর। আর এই ঘটনার পর থেকেই কাশ্মীরে স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
তথ্যসূত্র:
1. Kashmir Martyrs’ Day being observed today
– https://tinyurl.com/58yh4ymx
Comment