ভারতে বাংলাভাষী মুসলিম শ্রমিকদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়ন, গুরুগ্রাম ছাড়ছেন হাজারো পরিবার

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের গুরুগ্রামে বাংলাভাষী মুসলিম অভিবাসী শ্রমিকদের বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে দমন-পীড়নের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ওই অঞ্চলে এমন একটি আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যার ফলে হাজার হাজার বাঙালি বংশোদ্ভূত মুসলিম শ্রমিক বাধ্য হয়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, তারা ভাষা ও ধর্মের ভিত্তিতে পুলিশের বেআইনি আটক, হয়রানি এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
২৯ জুলাই মুসলিম মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক সপ্তাহে ২০০-রও বেশি মুসলিম শ্রমিককে কোনও অভিযোগ ছাড়াই আটক করেছে পুলিশ। গুরুগ্রামের মানেসর, বাদশাহপুর, সেক্টর ১০এ, ৪০ ও ১ নম্বর সেক্টরে অস্থায়ী আটক কেন্দ্র স্থাপন করে এইসব লোকজনকে আটকে রাখা হয়েছে। আটককৃতদের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের আত্মীয়দের আটক করার কারণ জানানো হয়নি, এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, এই শ্রমিকদের অধিকাংশই ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গুরুগ্রামে বসবাস করছেন এবং নির্মাণ, কারখানা, গৃহকর্ম, ড্রাইভিং ও পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন খাতে শ্রম দিয়ে শহরের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাদের অনেকের কাছেই বৈধ পরিচয়পত্র, যেমন আধার কার্ড ও ভোটার আইডি রয়েছে। তবু, এসব বৈধতা থাকা সত্ত্বেও তাদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করা হচ্ছে।
একজন আটককৃত শ্রমিক জানান, ‘আমাদের কোনো ধরনের ব্যাখা ছাড়াই তুলে নেওয়া হয়। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও দেওয়া হয় না। মনে হয়েছে, শুধু মুসলিম হওয়ার কারণেই যেন আমাদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, রোজার মাসে খাবার চাওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্য তাদের ধর্মীয় রীতি নিয়ে উপহাস করে। এবং তাদেরকে দেওয়া খাবার ছিল বাসি, আর খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ করায় তাদের মারধরের শিকার হতে হয়েছে।
স্থানীয় মুসলিম নেতারা বলছেন, কোনও গ্রেফতারের নোটিশ বা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না, বরং শুধুই ভয় ও দমননীতি চালানো হচ্ছে। এতে করে গুরুগ্রামের অনেক পাড়া এখন প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়েছে।
মানবাধিকার কর্মী নাদিম খান বলেন, ‘যারা দশকের পর দশক এখানে বাস করছেন, যাদের সব বৈধ কাগজপত্র আছে, তাদের আজ বহিরাগত বানানো হচ্ছে। এটা আইন প্রয়োগ নয়, বরং সাম্প্রদায়িক প্রোফাইলিং।’
আইনজীবী এম. হুজাইফা বলেন, ‘এই শ্রমিকরা গুরুগ্রাম গড়ে তুলেছে। আজ তাদের নিজেদের দেশেই পরবাসী করে তোলা হচ্ছে।’
তথ্যসূত্র:
1. Ethnic profiling in Gurugram: Bengali Muslims detained, localities empty as fear spreads
– https://tinyurl.com/3p7mcr4u
Comment