নতুন করে শেখ মুজিবের মূর্তি নির্মাণের জন্য ৭ কোটি টাকার প্রকল্প উঠছে একনেকে

বেশ কয়েক বছরে দেশে অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে। টাকার অভাবে চলতি অর্থবছরের বাজেটও গতবারের তুলনায় কমানো হয়েছে। এমন কঠিন সময়েও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) টেবিলে উঠছে ৫০৬ কোটি টাকার বিলাসবহুল ‘বাংলাদেশ ফিল্ম সিটি (পর্যায়-২)’ প্রকল্প। এর মধ্যে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। আছে বিলাসবহুল হোটেল তৈরির পরিকল্পনা।
গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতনের পর শেখ পরিবারের সব ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। ইতোমধ্যে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এই পরিবারের সদস্যদের নাম। এরপরও নতুন করে শেখ মুজিবের মূর্তি নির্মাণের জন্য টাকা চাওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথমে প্রস্তাবটি ছোট আকারে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। তার পর্যবেক্ষণ আমলে উদ্যোগ নেয়নি মন্ত্রণালয়। এই বিলাসী প্রকল্প শেখ হাসিনা সরকারও অনুমোদন দেয়নি, অথচ আগামী রোববারের একনেকে এটি অত্যধিক ব্যয়ে অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নে তিন বছর ছয় মাস মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। গাজীপুরের কবিরপুরে ১০৫ একর জমিতে দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে অত্যাধুনিক শুটিং স্পট, ফ্লোর, পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও, ক্যাবল কার, ঝর্ণা, ইকোপার্ক, কটেজ এমনকি পর্যটকদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থা।
প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের জন্য সার-সংক্ষেপ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য গত ২ জানুয়ারি পাঠানো হয়। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্টে পাঁচ তারকা হোটেল ও কনভেনশন হল নির্মাণের প্রস্তাব থাকলেও, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ২১ এপ্রিল মন্তব্য করেন, প্রথম পর্যায়ে আরো ছোট আকারের প্রকল্প (যেমন পাঁচ তারকা হোটেল, কনভেনশন হল ইত্যাদি বাদ দিয়ে) তৈরি করা যায় কি না, সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে চূড়ান্ত ডিপিপিতে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেখ মুজিবের মূর্তি নির্মাণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তিনটি কটেজের জন্য ২ কোটি ২২ লাখ টাকা, ক্যাবল কারের জন্য ২৫ কোটি টাকা, বাংলাদেশ বেতারের এন্ট্রি রোডের ব্যয় ৪০ কোটি টাকা।
পটপরিবর্তনের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টার পর্যবেক্ষণের পরও এসব ব্যয় কীভাবে নির্ধারণ করা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আর্থসামাজিক বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম গণমাধ্যমকে বলেছে, আমরা এ খাতগুলো বাদ দিতে বলেছিলাম। তারপরও সেগুলো কীভাবে রয়ে গেছে আমরা সেগুলো দেখব।
প্রকল্পের প্রথম ধাপ ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল মেয়াদে ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হয়। দ্বিতীয় ধাপের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রথম ধাপের তুলনায় ২৫ গুণেরও বেশি।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দ্বিতীয় ধাপটি শেখ হাসিনা সরকারের শেষ মেয়াদেও অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে তোলা হলেও ঝুলে ছিল। তখন প্রকল্পের ব্যয়ও কম ছিল, ৩৭৯ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন তখন ব্যয় কমানোর জন্য বলেছিল। অথচ সেটাকেই আরো ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
তথ্যসূত্র:
১. ৭ কোটি টাকায় মুজিবমূর্তির প্রকল্প উঠছে একনেকে
– https://tinyurl.com/28zke729
Comment