৯/১১ হামলার কথা কিভাবে আগেই জেনেছে ইসরাইলি গোয়েন্দারা

প্রথম আলোতে প্রকাশিত একটা প্রতিবেদন দেখলাম, যাতে বলা হয়েছে- মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দাবি করেছে যে, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার আগেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতো।
জি হ্যাঁ, জানতো। শুধু ইসরায়েলই না, বরং স্বয়ং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা পর্যন্ত জানতো। এমনকি তারা হামলাকারী মুজাহিদদের কয়েকজনকে ধরে ফেলার একেবারেই নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল।
তবে এমন নিউজ এখন প্রচার করার দ্বারা এমন একটা মিথ্যা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে বলে মনে হচ্ছে যে- ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের সাথে যোগসাজশে আল-কায়েদা বুঝি এই হামলা করেছে।
এখানে আরেকটা বিষয় হল- আমেরিকা তার সুপারপাওয়ার ইমেজ ঠিক রাখার জন্য কিছু প্রোপাগান্ডা মিডিয়ার দ্বারা প্রচার করে যে- আমেরিকা এই হামলা ঘটতে দিয়েছে। অথচ বাস্তবতা হল- আসলে আমেরিকার হাতে কোন উপায় ছিল না এই হামলা ঠেকানোর।
কিভাবে ঠেকাবে? অভিবাসীর ছদ্মবেশে কিছু ছাত্র আমেরিকায় গিয়েছে, যাদের আগের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। এমন সাধারণ কিছু ছেলে কি বিশেষ উদ্দেশ্যে আমেরিকা এসেছে, তা কিভাবে আমেরিকার জানার কথা? এমন তো না যে, তারা স্মার্টফোন ইউজ করতো, যাতে তারা কি বলে বা চিন্তাধারা লালন করে, তা সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে জেনে ফেলতে পারবে। বরং সেসময় ছিল চিঠিপত্রের যুগের শেষদিক। সবেমাত্র মোবাইল ফোন এভেইলেবল হতে শুরু করেছে।
তারপরেও আমেরিকা জানতে পেরেছিল। শুধু আমেরিকাই না বা শুধু ইসরায়েলি গোয়েন্দারাও না, বরং কমবেশ সারাবিশ্বের এজেন্সিগুলো জানতো যে, উসামা বিন লাদেন নামে এক আরব ধনাঢ্য ব্যক্তি আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়ে, আমেরিকান এম্বাসি ও যুদ্ধ জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
সেসময় শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ আমেরিকার উপর হামলা করার ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন, যা কেবলমাত্র কিছু অর্থহীন শপথ বা ধমক ছিল না, বরং তা ছিল অত্যন্ত সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সমন্বিত কার্যক্রম।
১৯৯৮ সালে কেনিয়ার নাইরোবি এবং তানজানিয়ার দার-এস-সালামে অবস্থিত আমেরিকান এম্বাসিতে হামলা, ২০০০ সালে ইয়েমেনের এডেন বন্দরে নোঙ্গর করা আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ ‘ইউএসএস কোল’-এ আক্রমণের মাধ্যমে শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ আমেরিকাকে সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েই দিয়েছিলেন যে- “হে আমেরিকা, ফিলিস্তিনে আমাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করোনা, আর আমাদের মুসলিম ভূমিগুলো থেকে তোমার কালো হাত সরিয়ে নাও, আমাদেরকে আমাদের মতো বাঁচতে দাও, নিজেও শান্তিতে থাকো।”
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে, কোল্ড ওয়ারে সোভিয়েত কে ছিন্নভিন্ন করা আমেরিকা, তার গর্ব, দর্প, অহঙ্কার তাকে ক্ষুদ্র কিছু মুজাহিদ দলের ‘মশার কামড়ের’ ন্যায় কয়েকটা আঘাতকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রয়োজন অনুভব করতে দেয় নাই।
বাস্তবেই আল-কায়েদার কর্মকাণ্ডকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশ ‘মাছির উৎপাত’ বলে অভিহিত করেছিলো।
আর আসলেও তা ‘মাছির উৎপাতের’ মতই ছিল, কারণ কোল্ড ওয়ার চলাকালীন আমেরিকা একে একে বিশ্বের অনেকগুলো দেশে প্রায় ৮০০ এর মতো ঘাঁটি তৈরি করে বলা চলে প্রায় পুরো দুনিয়ারই এক প্রকারের ভাগ্যবিধাতা হিসেবে নিজেকে ভাবতে বসেছিল। এখন অত্তোবড় এক শক্তিশালী দেশের হাজারো জাহাজ থেকে মাত্র একটা জাহাজের এক পাশে একটা মাত্র ফুটো করাকে ‘মাছির উৎপাত’ বলবে নাতো কি বলবে?
তারপরেও আমেরিকা শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহকে একেবারেই অগুরুত্ব দিয়ে দেখতো, বা আল-কায়েদার হুমকিকে পাত্তা দিত না, বিষয়টা এমন নয়। বরং, আল-কায়েদা ও শাইখ উসামা নিয়ে সিআইএ এর আলাদা একটা বিভাগ ছিল, যাদের কাজই ছিল শাইখ উসামা এবং আল-কায়েদার সদস্যদেরকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা। তারাই ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিল যে, ৯/১১ এর হামলায় অংশ নিবে এমন কয়েকজনের মোটামুটি যাবতীয় তথ্য হস্তগত করতে সক্ষম হয়েছিল। তাদেরকে বন্দী করার জন্য অভিযানের অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল শুধু, তার আগেই হামলা সংঘটিত হয়ে যায় আল্লাহ্ তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে আলহামদুলিল্লাহ্।
তারা হামলায় অংশ নেয়া সেই মুজাহিদদের বিমান চালনার প্রশিক্ষণের তথ্য পেয়ে, তা থেকে অনুমান করতে পারে যে- হামলা বিমান হাইজ্যাকিং এর মাধ্যমে হতে পারে।
পরবর্তীতে সিআইএ কর্মকর্তাদের জবানবন্দী অনুযায়ী, মূলত ওই মুজাহিদদেরকে বন্দী একারণেই করা যায় নাই, কারণ সিআইএ এর সাথে এফবিআই এর কর্মকর্তাদের একটা দ্বন্দ্ব ছিল, যার ফলে ওই মুজাহিদদেরকে বন্দী বানাতে তাদের মাঝে মতভিন্নতা চলার মাঝেই আল-কায়েদার সেই মুজাহিদরা প্ল্যান এক্সিকিউট করে ফেলে।
আর যেহেতু গোয়েন্দা নজরদারিতে ইসরায়েল আমেরিকার প্রায় প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে প্রবেশ করে আছে, সেহেতু ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের কাছেও এমন হামলার তথ্য বা আগাম সতর্কবার্তা থাকা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। এমন একটি তথ্য ‘মোসাদ’ ৯/১১ হামলার ২০ দিন আগে সিআইএ কে সরবরাহ করেও ছিল।
সারকথা হচ্ছে, ৯/১১ হামলার পিছনে আল-কায়েদাই ছিল। গোয়েন্দা নজরদারির কারণে মোসাদ ও সিআইএ হামলার ব্যাপারে আগাম অনুমান করতে পেরেছিল, কিন্তু ঠেকাতে পারে নাই। আর এই হামলা কোন ‘ইনসাইড জব’ ছিল না। আর না আল-কায়েদা মোসাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে, বা মোসাদের কোন এজেন্ডার বাস্তবায়ন করেছে।
তথ্যসূত্র:
– https://en.wikipedia.org/wiki/Timeli...-Qaeda_attacks
– https://en.wikipedia.org/wiki/1993_W...Center_bombing
– https://en.wikipedia.org/wiki/September_11_attacks
– https://en.wikipedia.org/wiki/Septem...re_the_attacks
– https://www.newsweek.com/tired-swatt...advice-1623492
Comment