Announcement

Collapse
No announcement yet.

উম্মাহ নিউজ || ২১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি || ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ঈসায়ী

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • উম্মাহ নিউজ || ২১ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি || ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ঈসায়ী

    পাঠ্যপুস্তকের মুজিবীকরণ: ইতিহাস বইসহ একাধিক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে রাখা হচ্ছে মুজিবের ভাষণ


    জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ এবং মাধ্যমিকের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে আছে বিস্তারিত বর্ণনা। এর পরও অযৌক্তিকভাবে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য-কণিকা’য় বহাল রাখার চেষ্টা হচ্ছে এ ভাষণ।

    বাংলা সাহিত্যে ভাষণটি রাখার প্রাসঙ্গিকতা না থাকলেও পাঠ্যপুস্তকে মুজিবীকরণের আগের সে প্রক্রিয়া এখনো বহাল থাকছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীন পরিচালিত পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন-সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনেও বাংলা বইয়ে এ ভাষণ রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে জানানো হয়।

    তারপরও একটি প্রভাবশালী মহল পাঠ্যপুস্তকে মুজিবীকরণের এ ধারা বহাল রাখার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষাবিদ ও অংশীজনদের দাবি, বাংলা সাহিত্যসহ সব শ্রেণির বইয়ে মুজিবের ভাষণসংশ্লিষ্ট বিষয় রাখার প্রয়োজন নেই।

    ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তৃতীয় থেকে নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে ইতিহাসের আলোচনায় ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে। এছাড়া মাধ্যমিকের ‘বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা’ বইয়েও ইতিহাসের আলোচনায় এ বিষয়ে বর্ণনা আছে। এর বাইরেও অষ্টম শ্রেণির বাংলা বই ‘সাহিত্য-কণিকা’য় ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ শিরোনামে ৩১ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠায় হুবহু ভাষণটি রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাষণটির লেখক পরিচিতি হিসেবেও মুজিবুরের নাম রাখা এবং তথ্যসূত্র ব্যবহার করা হয়েছে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান’।

    এছাড়া একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের (ইংলিশ ফর টুডে) চতুর্থ অধ্যায়ে ‘থ্রি স্পিসেস’ নাম দিয়ে ৭ মার্চের ভাষণ রাখা হয়েছে। অথচ সাহিত্যের আলোচনায় এ ভাষণ থাকার প্রাসঙ্গিকতা নেই। এরই মধ্যে এ বই থেকে মুজিবের ভাষণ বাদ দেওয়ার বিষয়ে মত এসেছে।

    এ বিষয়ে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, “মুজিবের ভাষণ কোনো উপন্যাস নয় যে, এটি বাংলা সাহিত্য বইয়ে রাখতে হবে। বিষয়টি যেকোনো একটি ক্লাসের একটি বইয়ে থাকলেই যথেষ্ট। একই বিষয় একাধিক ক্লাসে বারবার পড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আর বাংলা সাহিত্যে এ বিষয় রাখার তো কোনো প্রয়োজনই নেই।”

    এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ‘পাঠ্যপুস্তকের ভুল চিহ্নিতকরণ ও পরিমার্জন’ প্রতিবেদনে অষ্টম শ্রেণির বাংলা সাহিত্য বই এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজি বই থেকে ৭ মার্চের ভাষণ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশে ইতিহাসসংশ্লিষ্ট বইয়ে ভাষণটি থাকার পরও সাহিত্য বইয়ে রাখলে বিতর্ক হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়।

    আরো জানা গেছে, ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব পাঠ্যবই এবার কয়েক ধাপে পরিমার্জন করেছে এনসিটিবি। সংস্থাটির প্রাতিষ্ঠানিক পরিমার্জন ছাড়াও পাঠ্যপুস্তক নির্ভুল করতে এবং বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো বাদ দিতে ভূমিকা রাখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও পরিবেশ অধিদপ্তর।

    বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তকগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন ও স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ১৮ আগস্ট এনসিটিবি কার্যালয়ে এনসিসিসির সভা হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্য জানায়, বৈঠকে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের বইগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলেও অষ্টম শ্রেণির ‘সাহিত্য-কণিকা’ বইয়ে থাকা ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে তুমুল বিতর্ক ও আপত্তি ওঠে। সভায় যারা মতামত ব্যক্ত করেন এর মধ্যে একজন (একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক) ছাড়া সবাই মুজিবের ভাষণ সাহিত্য বইয়ে রাখার দরকার নেই বলে মতামত দেন। বেশিরভাগ সদস্যের তীব্র আপত্তির মুখেও ওই সদস্য এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে বৈঠকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা বইয়েও ৭ মার্চের ভাষণ সংক্ষেপ করে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

    সভায় অংশ নেওয়া এক সদস্য বলেন, ৭ মার্চের পুরো ভাষণে কিছু বিতর্কও রয়েছে। তারপরও ঐতিহাসিক আলোচনায় ভাষণটি ইতিহাসের বইয়ে থাকতে পারে। কিন্তু সাহিত্য বইয়ে এ ভাষণ থাকার যৌক্তিকতা নেই। পাঠ্যবইকে মুজিবীকরণ এবং আওয়ামী বয়ান প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার নেওয়া পলিসি এখনো অনুসরণ করা খুবই অপ্রত্যাশিত।

    জানা যায়, সাহিত্য বইয়ে ৭ মার্চের ভাষণ থাকলে সমালোচনার শঙ্কায় জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির চার সদস্য নিয়ে ভাষণটির সংক্ষেপিত অংশ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির প্রভাবশালী একটি অংশ। তবে ওই কমিটির একাধিক সদস্য ৭ মার্চের ভাষণের সংক্ষেপিত ভার্সন নিয়ে মতামত দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

    তথ্যসূত্র:
    ১. বাংলা সাহিত্যেও রাখা হচ্ছে মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ
    https://tinyurl.com/4p2kcary
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

  • #2
    গাজায় শহীদ আরও ৪৯, গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘ আশ্রয়কেন্দ্র


    ​ইসরায়েলি বাহিনী ১৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার গাজা সিটিতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালিয়ে অন্তত ৪৯ জনকে শহীদ করেছে এবং ৬ হাজারের বেশি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। গাজার মেডিকেল সূত্র জানায়, সেদিন সারা গাজাজুড়ে শহীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ জনে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী দ্রুতগতিতে একের পর এক হামলা চালিয়ে পুরো নগরীকে দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাজা সিটির পশ্চিমাংশে এখন বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো ঘনবসতিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে অনেকেই দক্ষিণের তথাকথিত নিরাপদ অঞ্চল আল-মাওয়াসিতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে আবার গাজা সিটিতেই ফিরে আসছে।

    আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, “দক্ষিণে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল-মাওয়াসি এলাকা ভিড়ে পূর্ণ, ডেইর আল-বালাহও ঠাসা। অনেকেই আশ্রয় না পেয়ে আবার গাজা সিটিতে ফিরে আসছেন।”

    জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) জানিয়েছে, গাজার ৮৬ শতাংশ এলাকাই হয় সামরিকীকৃত, নয়তো বাস্তুচ্যুতির হুমকির মুখে।

    শনিবার বর্বর ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা সিটির শাতি শরণার্থী ক্যাম্পের তিনটি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুল ধ্বংস হয়েছে, যেগুলোতে বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। এছাড়া পাবলিক প্রসিকিউশন ভবন, উঁচু টাওয়ার, এমনকি ফোন ও লাইট চার্জ দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ডাইনিং হলেও আঘাত হেনেছে ড্রোন।

    গাজার বাইরে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের আল-ওয়াদিতে ত্রাণ নিতে গিয়ে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বুড়েইজ ক্যাম্প, প্যালেস্টাইন স্টেডিয়াম, খান ইউনিসের আল-আমাল পাড়া ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতেও হামলা চালানো হয়েছে।

    গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৩ সেপ্টেম্বর, শনিবার অপুষ্টিজনিত কারণে সাতজন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২০ জন, এর মধ্যে ১৪৫ জন শিশু।


    তথ্যসূত্র:
    1. Israel pounds Gaza City, killing 49 and displacing 6,000 in a single day
    https://tinyurl.com/mrfnpzc4
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

    Comment


    • #3
      খুনি হাসিনার আমলে ১৫ বছরে দেশ থেকে পাচার হয়েছে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার




      গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ফিনান্সিয়াল টাইমস। গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত একটি প্রামাণ্যচিত্রে এ তথ্য উঠে আসে। ডকুমেন্টারির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের হারানো বিলিয়নস: চোখের সামনেই লুট।‘

      প্রামাণ্যচিত্রে বলা হয়, অর্থ পাচারের জন্য বাণিজ্যে অতিরিক্ত বা কম ইনভয়েসিং, হুন্ডি ও হাওয়ালা চক্র এবং যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনাবেচার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। লন্ডনকে মূল গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বিস্তৃত আর্থিক খাত ও লাভজনক সম্পত্তি বাজার এই অর্থ পাচারের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ছিল।

      ডকুমেন্টারিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অভিযোগ উঠে এসেছে। এছাড়া ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামও অর্থপাচারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। জন রিড জানান, এমন ঘটনাও ঘটেছে যেখানে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বন্দুকের মুখে ব্যাংকের পরিচালককে অপহরণ করে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করেছে এবং শেয়ার শাসকগোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠদের কাছে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করতে বাধ্য করেছে।

      লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক খান বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি কোনো গোপন বিষয় ছিল না। তিনি আরও জানান, অনেক কিছু যেন চলচ্চিত্রের গল্পের মতো ছিল। তার কয়েকজন বন্ধু কুখ্যাত কারাগার (হল অব মিররস) আয়না ঘরে বন্দি ছিল, যেখানে বন্দিদের শুধু নিজেকেই দেখা যেত। তিনি উল্লেখ করেন, গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের সহায়তায় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ঘনিষ্ঠরা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিত।

      বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পদ পুনরুদ্ধার টাস্কফোর্সের উপদেষ্টা ইফতি ইসলাম বলেন, এটি ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল প্রক্রিয়াগুলোর একটি। তিনি জানান, ব্যাংক ও ব্যবসা খাত থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে, যা সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে কোনো দেশের সবচেয়ে বড় অর্থপাচার। তিনি আরও বলেন, যতটা সম্ভব সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সংগ্রহ, লেনদেনের ধারা অনুসরণ এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।


      তথ্যসূত্র:
      1. Bangladesh’s missing billions, stolen in plain sight
      https://tinyurl.com/mr3wu4vs
      নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

      Comment


      • #4
        রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কেন্দ্র প্রকল্পে ভয়াবহ দূর্নীতির প্রমাণ মিলেছে



        ​পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি ঘিরে শুরু থেকেই নানা বিতর্ক ও অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। জালজালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ, অস্বচ্ছতা, অনুমোদনবিহীন সিদ্ধান্ত, অতিরিক্ত ব্যয় এবং অর্থ ব্যবস্থাপনায় অসংগতির বিস্তারিত চিত্র সর্বশেষ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ।

        প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী রূপপুরে প্রতিটি এক হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট নির্মাণ করে মোট দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের চূড়ান্ত চুক্তিতে প্রতিটি ইউনিটের সক্ষমতা বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট করা হয়। অর্থাৎ মোট উৎপাদন ধরা হয় দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।

        নিরীক্ষকদের অভিযোগ, এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমোদন কোথা থেকে এসেছে, কোন বৈঠকে বা কোন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে—এমন কোনো নথি পাওয়া যায়নি। তাই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি অস্বচ্ছ রয়ে গেছে।

        সক্ষমতা বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তের কারণে প্রকল্পের ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। প্রাথমিক অনুমান ছিল প্রায় ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। পরে খরচ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা। অথচ খরচ বাড়ানোর যৌক্তিকতা, আলোচনার প্রক্রিয়া কিংবা অনুমোদনের লিখিত প্রমাণ কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি।

        ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠক করে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণে একটি সমঝোতা দল গঠন করা হয়। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পরমাণু শক্তি কমিশনের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা যুক্ত ছিল। তাদের দায়িত্ব ছিল রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে খরচ চূড়ান্ত করা। কিন্তু ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কোনো আলোচনার কার্যক্রমের নথি পাওয়া যায়নি। বরং ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর সরাসরি রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্টের সঙ্গে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই হয়। এর আগে প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য আরো চারটি চুক্তি করা হয়েছিল, যার মূল্য ছিল প্রায় শূন্য দশমিক ৫৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। ফলে মোট খরচ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলারে।

        রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে রোসাটমের সঙ্গে সব চুক্তির প্রধান মধ্যস্থতাকারী ছিল ড. জাহেদুল হাছান। প্রকল্প ব্যয়ের নেপথ্য হোতা হিসেবেও তার নাম এসেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, অতিরিক্ত পাঁচ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধির সিংহভাগ অর্থ তার মাধ্যমে লোপাট হয়েছে। ইতোমধ্যে তার দুর্নীতির বিষয়ে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সমিতিও (ক্যাব) দুদকের কাছে ড. জাহেদুল হাছানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

        প্রতিবেদনে জানা যায়, রাশিয়ার তিনটি শহরে যন্ত্রপাতি পরীক্ষার জন্য কোয়ালিটি ইন্সপেকশন ইউনিট ভাড়া করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি নথিতে দেখা যায়, একই সময়ে ইন্সপেকশন টিমকে হোটেলে অবস্থান দেখিয়ে আলাদা ভাড়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শুধু হোটেল খরচ দেখানো হয়েছে দুই কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সিএজির প্রতিবেদনে এটিকে ‘অযৌক্তিক ব্যয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

        ওই সময় প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ছিল ড. জাহেদুল হাছান (বর্তমানে এনপিসিবিএলের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। তার নেতৃত্বেই এসব ব্যয় করা হয় বা দেখানো হয়।

        অভিযোগ আছে, ড. জাহেদুল ও এবং তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ড. শওকত আকবরের নেতৃত্বে ও বিশেষ স্বার্থে ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পের সক্ষমতা ও ব্যয় বাড়ানো হয়।

        এছাড়া প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. জাহেদুল হাছান (বর্তমানে এনপিসিবিএলের অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক) রাশিয়ায় আবাসন ভাড়ার নামে ৭৭ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থ তুলেছে। অথচ প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির নির্দেশনা ছিল, এসব খরচ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। নিয়ম ভেঙে সরাসরি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে ব্যয় করা হয়। এ অর্থ যথাযথভাবে সমন্বয় হয়েছে কি না—সেটিরও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

        আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ায় ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রতি কিলোওয়াটে খরচ হয় চার হাজার ৭৫ ডলার। অথচ রূপপুরে খরচ হচ্ছে পাঁচ হাজার ৮৯০ ডলার। একই প্রযুক্তিতে ফিনল্যান্ডে ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ডলার আর তুরস্কের আক্কুইউ প্রকল্পে মাত্র তিন হাজার ২০০ ডলার। ফলে তুলনায় রূপপুর প্রকল্প উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যয়বহুল।

        প্রকল্প ঘিরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)ও অনুসন্ধান শুরু করেছে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

        তবে অতীতে রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম ও ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাস এ অভিযোগ অস্বীকার করে।


        তথ্যসূত্র:
        ১. জাহেদুলের বিরুদ্ধে মিলল কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ
        https://tinyurl.com/59xu3ref
        নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org

        Comment

        Working...
        X