Announcement

Collapse
No announcement yet.

জাতিসংঘের প্রস্তাব: বাস্তব রাষ্ট্র নয়, ‘ভার্চুয়াল ফিলিস্তিন’ তৈরির আয়োজন

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জাতিসংঘের প্রস্তাব: বাস্তব রাষ্ট্র নয়, ‘ভার্চুয়াল ফিলিস্তিন’ তৈরির আয়োজন

    জাতিসংঘের প্রস্তাব: বাস্তব রাষ্ট্র নয়, ‘ভার্চুয়াল ফিলিস্তিন’ তৈরির আয়োজন



    জাতিসংঘের প্রস্তাবকে ‘ভার্চুয়াল ফিলিস্তিন’ তৈরির আয়োজন অভিহিত করে “আল ফিরদাউস” এর সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ মন্তব্য করে বলেন,

    জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল ভোটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক ভোটে ১৪২টি দেশ পক্ষে রায় দেয়, বিপক্ষে দাঁড়ায় মাত্র ১০টি, আর বিরত থাকে ১২টি দেশ। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের তোলা এই প্রস্তাবকে বলা হচ্ছে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’।

    ঘোষণায় বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অপরিহার্য, আর সে লক্ষ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন জরুরি। তবে সেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না—এই শর্তও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। হামাসকে অস্ত্র নামিয়ে গাজার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবের প্রতি আরব লীগ ইতোমধ্যেই সমর্থন জানিয়েছে।

    কাগজে-কলমে এই ঘোষণা যতই আশার কথা শোনাক, বাস্তবে ছবিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফিলিস্তিনের জমি একে একে গ্রাস করছে ইহুদিবাদী দখলদার ইসরায়েল। গাজায় নিরবচ্ছিন্ন হত্যাযজ্ঞ চলছে, স্থানীয় হিসাবে গত ২৩ মাসে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁবুতে, ধ্বংসস্তূপে কিংবা বিদেশি সাহায্যের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। পশ্চিম তীরেও একই চিত্র—দখলদার ইসরায়েল অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে প্রতিদিন, আর সম্প্রতি সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যে ৩ হাজার ৪০০ নতুন বাড়ি নির্মাণের চুক্তি সই করেছে, তা কার্যত পশ্চিম তীরকে দু’খণ্ডে বিভক্ত করে দেবে। ফলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দিন দিন আরও দূরবর্তী হয়ে যাচ্ছে।

    গাজার জমি, ইসরায়েলের দখল

    আজ গাজার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। “বাফার জোন” সম্প্রসারণের নামে কৃষিজমি, বাড়িঘর, এমনকি হাসপাতাল পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একসময় যেসব মাঠে সোনালি শস্য দুলত, এখন সেসব ভূমি পরিণত হয়েছে জনশূন্য নিষিদ্ধ এলাকায়।

    নেতানিয়াহুর ঘোষণা: রাষ্ট্র নয়, দখলই স্থায়ী

    নেতানিয়াহু কোনো কূটনৈতিক আড়াল রাখেনি। স্পষ্ট ভাষায় সে বলেছে—“কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র কখনো হবে না।” শুধু কথাতেই থেমে থাকেনি, পশ্চিম তীরে নতুন হাজারো বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। বিশেষ করে “E1 প্রকল্প” বাস্তবায়িত হলে পশ্চিম তীর কার্যত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়বে, আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভৌগোলিক ভিত্তি একেবারেই ধসে যাবে।

    গাজা দখলের পরিকল্পনা

    নেতানিয়াহুর ডানপন্থী মন্ত্রিসভা আরও এক ধাপ এগিয়ে বলছে, গাজার কিছু অংশ সরাসরি ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হতে পারে। শর্ত একটাই—হামাসকে অস্ত্র ছাড়তে হবে এবং শাসন ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। অন্যথায় দখল স্থায়ী হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক আইন এটিকে অবৈধ বললেও ইসরায়েল প্রকাশ্যে এমন পরিকল্পনা সামনে আনছে, যেন তারা আগে থেকেই জানে—কেউ এ পথে তাদের থামাবে না।

    ব্যারিকেডে বন্দি পশ্চিম তীর

    পশ্চিম তীরে আজ মানুষের জীবন ব্যারিকেডে থেমে গেছে। শত শত রোডব্লক, কংক্রিট দেয়াল আর ধাতব গেট বসানো হয়েছে, যাতে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সিঞ্জিল শহরের উদাহরণ সবচেয়ে ভয়াবহ—পাঁচ মিটার উঁচু লোহার বেষ্টনী দিয়ে পুরো শহর ঘিরে ফেলা হয়েছে, রাখা হয়েছে মাত্র একটি প্রবেশপথ। ফলে হাজারো মানুষ তাদের জমি, জীবিকা, এমনকি প্রতিবেশীর সঙ্গ থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পশ্চিম তীর আজ এক বিশাল খোলা জেলের রূপ নিয়েছে।

    জাতিসংঘের এই তথাকথিত সমর্থন তাই অনেকের চোখে এক ধরনের ভাঁওতা। প্রস্তাব পাস করে করতালি দেওয়া ছাড়া বাস্তবে তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না—না ইসরায়েলি বোমা বর্ষণ থামাতে, না দখলদারিত্ব ঠেকাতে। মনে হচ্ছে, জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে একটি বাস্তব রাষ্ট্র নয়, বরং এক ‘ভার্চুয়াল রাষ্ট্রে’ পরিণত করছে—যেখানে সীমানা থাকবে না, ভূমি থাকবে না, থাকবে কেবল মানচিত্রে আঁকা একটি রেখা, আর নিপীড়িত মানুষের স্বপ্ন।

    ইসরায়েলি সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়—“কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না”—তখনও জাতিসংঘে কোনো প্রতিরোধের সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং প্রস্তাব পাস করে অনেকটা নৈতিক দায়মুক্তির পথ বেছে নিয়েছে তারা।

    ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ সতর্ক করে বলেছেন, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো শান্তির পথ নেই। নেতানিয়াহুর পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকে নরকের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

    সব মিলিয়ে প্রশ্নটা এখন একটাই—জাতিসংঘের এই প্রস্তাব কি সত্যিই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথে কোনো ধাপ, নাকি এক শূন্য খোলস? দখলদার ইসরায়েল যেখানে প্রতিদিন বাস্তবে জমি কুক্ষিগত করছে, জাতিসংঘ সেখানে আঁকছে এক কল্পিত মানচিত্র। ফিলিস্তিন যেন এমন এক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে, যার কোনো ভূমি নেই, সীমানা নেই—আছে শুধু স্মৃতি, স্বপ্ন আর এক ভার্চুয়াল অস্তিত্ব।
    নিয়মিত খবর পড়তে ভিজিট করুনঃ https://alfirdaws.org
Working...
X