রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিশ্চিহ্নের হুমকি আরাকান আর্মির

সন্ত্রাসী আরাকান আর্মির এক কমান্ডার রোহিঙ্গা মুসলিমদের উদ্দেশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁস ও সংবাদ প্রচার বন্ধ না হলে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর আরাকান নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ সেপ্টেম্বর বুথিডং শহরের ৬ নম্বর এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন ও আরাকান আর্মির নেতৃত্বের মধ্যে এক বৈঠকে এ হুমকি দেয় আঞ্চলিক কমান্ডার মেজর সাইং শোয়ে। বৈঠকে সে তান শওক খান গ্রামে সংঘটিত গণহত্যার ছবি ও ভিডিও ফাঁস হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্রগুলো বলছে, ওই গ্রামে অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে হত্যার প্রমাণ মিলেছে।
বৈঠক অংশগ্রহণকারী একজন গণমাধ্যমকে জানায়, মেজর সাইং শোয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছে, ‘তোমাদের ভুয়া খবর ছড়ানোর কারণে আমাদের জেনারেলদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার চেষ্টা চলছে। আমাদের জেনারেলদের কথা বাদ দাও, যদি সাধারণ কোনো সদস্যও তোমাদের খবরের কারণে সমস্যায় পড়ে, আমরা তা নিয়ে ভাবব না। প্রয়োজনে সব মুসলিম (রোহিঙ্গা) নিশ্চিহ্ন করে দেব।’
সে আরও অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গারা ফোনকে “অস্ত্র” বানিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে খবর ছড়াচ্ছে। তাই অনুমোদিত ফোন সেটও বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় সে। সে বলেছে, ‘আমরা তোমাদের প্রয়োজন মেটাতে ফোন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলাম। এখন দেখি তোমরা ফোনকে অস্ত্র বানিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে খবর ছড়াচ্ছ। তাই এবার চাপ প্রয়োগ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সাংবাদিক, রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তান শওক খান এলাকার হত্যাযজ্ঞের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করায় এই হুমকি দেয়া হয়। এসব ভিডিওতে উঠে আসে, ২০২৪ সালের ২ মে নারী-শিশুসহ অন্তত ৬০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে গণকবর দেওয়ার দৃশ্য।
আরাকানের উত্তরাঞ্চলে চলতি বছরের শুরু থেকেই ইন্টারনেট প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। ফলে স্থানীয়রা বাংলাদেশি সেলফোন সিগনালের ওপর নির্ভরশীল। তবে এ জন্য প্রতি মাসে রোহিঙ্গাদের দিতে হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ মিয়ানমারি কিয়াত (৭৫ মার্কিন ডলার)। সিম নিবন্ধন, তথ্য জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং নির্দিষ্ট এলাকায় ব্যবহার সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম ভাঙলে পড়তে হয় জরিমানা বা কারাদণ্ডের মুখে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলে রোহিঙ্গারা ঘরবাড়ি বন্ধ করে দেয়া, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, জোরপূর্বক স্থানান্তর এবং চলাচলে কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে আরাকান আর্মির সামরিক পদক্ষেপের পর থেকে তারা প্রায় ১৪টি জেলা দখলে নিয়েছে।
তথ্যসূত্র:
1. Threats to “wipe out Rohingya” after massacre by Arakan Militias uncovered
– https://tinyurl.com/4b4rptzk
Comment