হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী ইসকন কর্তৃক টঙ্গীর খতিবের গুম ও নির্যাতন: উম্মাহর বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীদের দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের আংশিক নমুনা

আল ফিরদাউস এর সম্পাদক মুহতারাম ইবরাহীম হাসান হাফিযাহুল্লাহ’র কলাম:
গাজীপুর টিএন্ডটি কলোনী মসজিদের ইমাম মুহিব্বুল্লাহ মিয়াজী সাহেব মিডিয়ার সাথে গুমের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন-
যখন তিনি সকাল বেলা মর্নিং ওয়াকের জন্য বের হন, হঠাৎ একটি এম্বুল্যান্স এসে তার সামনে দাঁড়ায়। গাড়ী থেকে নেমেই তারা প্রথমে ইমাম সাহেবের মুখে ড্রাগস মেশানো রুমাল ধরে, এরপর তাঁর ব্রেন টিউমার অপারেশনের জায়গায় কয়েকটি আঘাত করে গাড়িতে তুলে নেয়।
গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে, যখনই তিনি বাঁধন সরানোর চেষ্টা করেছেন সন্ত্রাসীরা তাঁকে মারধর করে। এরপর সারাদিন এম্বুল্যান্সটি চলমান ছিল। চলন্ত অবস্থায় তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে।
এভাবে নির্যাতনের এক পর্যায়ে গন্তব্যে পৌঁছে তারা তাঁকে গাড়ী থেকে নামায়। নামিয়ে পানিভর্তি কাঁচের বোতল দিয়ে তার কোমরে ও শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে এবং লাথি মারে। সর্বশেষ তাঁর উপর চালানো হয় ভয়াবহ নির্যাতন, পরনের কাপড় খুলে ফেলা হয়। এরপর কি ঘটেছিল তা ইমাম সাহেব লজ্জায় ও কান্নায় প্রকাশ করতে পারেন নি।
অতঃপর ২৩ তারিখ সকালে পঞ্চগড়ের স্থানীয় মুসলিমরা ইমাম সাহেবকে রাস্তার পাশে শেকল বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করেন। সে সময় ইমাম সাহেব অচেতন ছিলেন এবং তাঁর পরনে কাপড় ছিলনা।
এই বিবরণ থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়-
১। দেশের বিভিন্নস্থানে হিন্দুত্ববাদীদের প্রচুর গোয়েন্দা সক্রিয় আছে যারা সর্বক্ষণ মুসলিমদের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করছে, মসজিদগুলোতেও মুসলিমের বেশে তাদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। কোন ইমাম কি বক্তব্য দেন সব তারা নোট করে উপরে পাঠায়।
২। গুমকারীরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত এবং চতুর। এই কারণেই তারা গুমের জন্য এম্বুল্যান্স নির্বাচন করেছিল যেন কারো সন্দেহ না হয়। চেকিংয়ের সম্মুখীন হলেও বলতে পারে ইনি আমাদের আত্মীয়, হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া গাড়িতে ওঠানোর সময় ড্রাগস মেশানো রুমাল ধরা এবং মারধর করে নিরাপদে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩। দেশজুড়ে তাদের অনেকগুলো গ্রুপ সক্রিয় আছে; এক গ্রুপ তথ্য সংগ্রহ করেছে। আরেক গ্রুপ রেকি করেছে, তিনি কখন বের হন কখন কি করেন সব নোট করে উপরে পাঠিয়েছে। একটা গ্রুপ গাড়ী সহ যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যবস্থা করেছে। সর্বশেষ অপারেশন টিম অপারেশন পরিচালনা করেছে। এছাড়াও তাদের আরো অনেকগুলো গ্রুপ আছে যারা গুম সেন্টারের নিরাপত্তা ও টর্চার সেলের দায়িত্বে ছিল।
৪। হাসিনা বিদায়ের পর র্যাব, সিটিটিসি, ডিবির গুম ও টর্চার সেল বন্ধ হলেও হিন্দুত্ববাদীদের গুম ও টর্চার সেল এখনো সচল আছে।
৫। এত বড় একটা ঘটনা ঘটার পরও সরকার, প্রশাসন ও চিহ্নিত কিছু মিডীয়ার নির্লিপ্ততা থেকে বোঝা যায় যে, এরাও এসবের প্রতি মৌন সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
৬। এটি কোন আকস্মিক বা বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হিন্দুত্ববাদী স্লিপার সেলগুলো যে কোন সময় যে কোন বড় ঘটনা ঘটাতে পারে। এটি ছিল মাত্র একটি ট্রেইলার, সামনে এমন ঘটনা আরো ঘটবে বলে আশঙ্কা।
৭। তাদের হাতে প্রচুর ফান্ড রয়েছে, এই কারণেই সাধারণ একজন ইমামকে নিজেদের পক্ষে বলানোর জন্য কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেয়। না জানি কত জনকে ইতিমধ্যে টাকা দিয়ে কিনে ফেলেছে।
প্রিয় পাঠক! সরকার, প্রশাসন, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল কোনটাই কিন্তু আমাদের তথা তাওহীদি জনতার পাশে নেই। কেউ হিন্দুত্ববাদীদের পদলেহনে ব্যস্ত, কেউ নিরব ও নির্লিপ্ত। তাই তাওহিদী জনতাকে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পক্ষে কেউ দাঁড়াবেনা এটি মাথায় রেখেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে।
যদি আমরা বিষয়গুলোকে হালকা ভাবে দেখি তাহলে অচিরেই আমাদেরকে অনেক বেশি মূল্য চুকাতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন, হিন্দুত্ববাদীদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিন।

Comment