কাশ্মীরে দখলদার ভারতীয় বাহিনীর আগ্রাসনের ৭৮ বছর

সময়টা তখন ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর, কাশ্মীর-বাসীদের জন্য এক কালো অধ্যায়ের সূচনা। কাশ্মীর-বাসী হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি কী হতে চলেছে পরবর্তীতে। এই দিনটিই পরবর্তীতে কাশ্মীরের শান্তিপ্রিয় ও সুখী মানুষদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে অনেকে হয়তো বুঝতেই পারেনি। বুঝলেও এর মাত্রা ঠাওর করতে পারেনি।
এখন থেকে ৭৮ বছর পূর্বে ইতিহাসের এইদিনে স্বাধীন কাশ্মীরে জোরপূর্বক দখলদার ভারতীয় সৈন্যরা প্রথম প্রবেশ করে। কোনও আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করেই কাশ্মীরিদের আকাঙ্ক্ষার উপেক্ষা করে প্রথম দখলদার বাহিনী পা রাখে কাশ্মীরের মাটিতে।
এর পরের গল্পগুলো শুধুই অবর্ণনীয় নির্যাতন আর সীমাহীন দুর্ভোগের গল্প। সাধারণ মানুষের এই দুর্ভোগ তৈরি করেছে ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের।
দখলকৃত এই ভূ-স্বর্গে এর পর একের এক দখলদার ভারতীয় বাহিনীর সকল শাখার আগমন ঘটে। পরিসংখ্যান অনুসারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় রাইফেল, কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স, বিএসএফসহ অন্যান্য সকল বাহিনীর আগমন ঘটে। সবমিলিয়ে বর্তমানে দখলকৃত কাশ্মীরে ১১ লাখেরও বেশি ভারতীয় বাহিনী মজুদ রয়েছে।
শান্তিপ্রিয় কাশ্মীরিরা যখনই নিজেদের অধিকারের দাবীতে সরব হয়ে ওঠে, ঠিক তখনই তাদের উপর চালানো অবর্ণনীয় নির্যাতন ও পাইকারী হারে ধরপাকড়।
পর্যটন এলাকা, রিসোর্টসহ প্রায় বেশিরভাগ স্থানেই চেকপোস্ট বসিয়েছে দখলদার ভারতীয় বাহিনী। এই সকল চেকপোস্টের মাধ্যমে বন্দি জিম্মির মতো করে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে সাধারণ কাশ্মীরিদের। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হলে একাধিক চেকপোস্টে হেনস্তার শিকার হতে হয় সাধারণ জনগণদের।
তাই যেকোনো ধরণের আন্দোলন বা বিক্ষোভ করতে হলে চরম মূল্য দিতে হয় কাশ্মীরি মুসলিমদের। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ, সভা-সমাবেশে ভারতীয় বাহিনীর ছোড়া বুলেট ও ছড়রা গুলিতে আহত হয়েছে হাজার হাজার কাশ্মীরি। তাদের অনেকেই হয়তো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চরম যন্ত্রণা ও ভোগান্তিতে দিন পার করছেন। অনেকে হয়তো হয়েছেন চিরস্থায়ী পঙ্গু। এছাড়াও শহীদ হয়েছেন অনেক যুবক-যুবতীসহ সাধারণ মানুষ।
এছাড়াও স্থানীয় মিডিয়া গবেষণা সংস্থাগুলোর মতে ৭৮ বছরে দখলদার ভারতীয় বাহিনীর দমনপীড়নে শহীদ হয়েছে কমপক্ষে ৯৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত করতে জঘন্য ও নিকৃষ্ট নানা কৌশল ব্যবহার করেছে তারা। এর মাঝে কেবলমাত্র ভুয়া এনকাউন্টারের নামে হত্যা করা হয়েছে ৭ হাজার চারশো ছয়জনকে।
এই সকল হত্যাকাণ্ডের ফলে বিধবা হয়েছেন ২২ হাজার নয়শত ৯৯ জন নারী। বাবা-মা উভয়ই অথবা শুধু মা, অথবা শুধু বাবা হারিয়ে এতিম হয়েছে কমপক্ষে একলক্ষ ৮ হাজার পাঁচজন কাশ্মীরী শিশু।
এছাড়াও দীর্ঘ এই সময়টাতে দখলদার নরপশু ভারতীয় বাহিনীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১১ হাজার দুইশত আটষট্টি জন কাশ্মীরি নারী।
এছাড়াও জোরপূর্বক অন্তর্ধানের পর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি কমপক্ষে ৮ হাজার কাশ্মীরি নারী ও পুরুষের।
প্রতিদিনই কাশ্মীরীদের জীবনে নেমে আসে নতুন দুঃখ ও দুর্দশা। নির্বিচারে আটক, অবর্ণনীয় নির্যাতন, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত-করণ, বাড়ী-ঘরে হামলা, তল্লাশি অভিযানের নামে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সাক্ষী হচ্ছে কাশ্মীর-বাসী। এই সকল নির্যাতনে লঙ্ঘন করা হচ্ছে মানবাধিকার।
তথ্যসূত্র:
1. Oppressed Kashmiris facing unending suffering under Indian occupation
– https://tinyurl.com/54wccf3v