Announcement

Collapse
No announcement yet.

সুদান থেকে শিক্ষা - কালেক্টেড পোস্ট

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সুদান থেকে শিক্ষা - কালেক্টেড পোস্ট

    সুদান থেকে শিক্ষা!!
    ~~ফেসবুক থেকে সংগৃহীত~~
    সুদানের ৭৫% তেলক্ষেত্র দক্ষিণ সুদানে। যেটা আমেরিকা ২০১৪ সালে খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে উত্তর সুদানে এখনো অনেক স্বর্ণের খনি আছে। এই স্বর্ণের খনির দখল নিয়ে চলছে সেখানকার জালিমদের মধ্যে যুদ্ধ।

    একটা সম্ভাবনাময় মুসলিম শক্তিকে আমাদের চোখের সামনে ধ্বংস করলো পশ্চিমারা এবং আমাদের মধ্যে থাকা গাদ্দারেরা। অথচ এখন থেকে ৩০বছর আগে সুদানে মুসলিমদের জয়জয়কার ছিলো। এই সুদানে আল-কায়দা, হামাস এর মতো সংগঠনের একসাথে ট্রেনিং ক্যাম্প ছিলো। তেলের খনি আর স্বর্ণের খনিতে ভরপুর একটা দেশ ছিলো। (মুজাহিদিন কর্তৃক) সুদানের উন্নয়নে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছিলো। এখান থেকেই সোমালিয়া বিজয়ের সোপান তৈরি হয়েছিলো। আমেরিকান বাহিনী ১৯৯৩ সালে আল-ক|য়দ|র কাছে সোমালিয়াতে পরাজিত হয়েছিলো।

    তারপর হঠাৎ কি হলো?
    সুদানের আপোষকামী সরকার পশ্চিমাদের হুমকিতে ভয় পেয়ে গেল। মুজাহিদদের সুদানে আর আশ্রয় দিলো না। আল-কায়দা চলে গেল আফগানিস্তানে তালিবানদের কাছে। হামাস আবার ফিলিস্তিনে নিজেদের অবস্থানে।

    এরপর কি পশ্চিমারা খুশি হয়ে সুদানকে ছেড়ে দিয়েছে?
    মোটেও না। সুদানকে ২০১৪ সালে ২ টুকরা করেছে। সুদানের সম্পদ খুবলে খেয়েছে। পশ্চিমাদের খাওয়া শেষে আভ্যন্তরীণ গাদ্দারেরা শেষটুকু লুটেপুটে খাওয়ার চেষ্টা করছে।

    সুদান ফেরত এক বাংলাদেশী ভাড়াটে সৈনিকের কাছ থেকে শুনেছিলাম, সুদানের কোথাও কোথাও পানির চাইতে মদ নরমাল। পশ্চিমারা এরকম অবস্থা করেছে যেন সেখানে কোনো ইসলামী চিন্তার উন্মেষ না ঘটে। সন্ত্রাসবাদ, গনহত্যা চলুক কিন্তু ইসলামের পতাকা তলে যেন অন্তত না হয়।
    এদিকে, আজকে আফগানিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুুন, মুজাহিদরা আম্রিকাকে পরাস্ত করে আফগান জয় করে ফেলেছে। ফিলিস্তিনে মুজাহিদরা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

    সুদানের সরকার পশ্চিমাদের থেকে বাঁচতে মুজাহিদদের বের করে দিলেও, শেষ পর্যন্ত কি বাঁচতে পেরেছে? পারেনি। বরং মুজাহিদরা থাকলে জীবন বাজি রেখে সুদানের জন্য যুদ্ধ করতো। রক্তপাত এখন যত হচ্ছে তার চেয়ে কম হতো। ইতিহাস এটাই বলে।
    আমি আপনাদের কাছে প্রমাণ হাজির করছি। মুসলিমরা যেখানে যেখানে আপোষ করেছে, সেখানে সেখানে পশ্চিমারা মুসলিমদের ছেড়ে দিয়েছে, মোটেও না। এভাবে ছেড়ে দেওয়ার রেকর্ড নেই তাদের।​
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

  • #2
    ২০২২ সালের নভেম্বরে Haaretz সুদানকে জড়িয়ে একটি রিপোর্ট পাবলিশ করে। রিপোর্টটির বিবরণের শুরু হয় সুদানের রাজধানী খার্তুম হতে।

    ওদের রিপোর্ট অনুসারে ১৮/০৫/২০২২ সাল তারিখ দুপুর ১০:২৬ ঘটিকায় مطار الخرطوم الدولي তথা খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাইপ্রাসের লারনাকা থেকে উড়ে আসা একটি ফ্লাইট অবতরণ করে। বিমানটির প্যাসেঞ্জার ও কার্গো খার্তুমে অবতরণ করার তথ্যটি সম্পূর্ণ গোপন থাকার কথা ছিল। যা নিশ্চিত করার দায়িত্বে ছিল জেনারেল হামদান দাগালোর বাহিনীর নিজস্ব Intelligence Department হতে আগত অপারেটিভরা।

    বিমানটি অবতরণের পর টারমাক স্পর্শ করার সাথে সাথে দু'টি টিন্টেড উইণ্ডো সজ্জিত জিপ বিমানের প্যাসেঞ্জারদের রিসিভ করে। জেনারেল হামদান দাগালোর Rapid Support Forces (RSF) এর Intelligence Department হতে আগত অপারেটিভরা তারপর তড়িৎ গতিতে বিমানে বহন করে আনা কার্গো আনলোড করে বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যায়। ওদিকে ওদের সাথে তাল মিলিয়ে অবতরণের মাত্র ৪৫ মিনিটের মাথায় খার্তুমের আকাশ ত্যাগ করে আলোচ্য প্রাইভেট বিমানটিও।

    বিমানটি ছিল Intellexa Consortium এর। যার ফাউণ্ডারের নাম কর্নেল তাঁল দিঁলিয়ান। Israel Defense Forces এর Military Intelligence Directorate এর মাঝে Special Operations Division নামে একটি বিশেষায়িত শাখা রয়েছে। কর্নেল তাঁল দিঁলিয়ান ওখানকার চরম গোপনীয় Unit 81 এ কমাণ্ডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করতো। তারপর ইসরায়েলি ইন্টেলিজেন্স কমিঊনিটির পক্ষ হতে আলোচ্য অফিসারকে পৃথিবীর নানান প্রান্তে ইসরায়েলি ইন্টেলিজেন্সের ডেভেলপ করা নজরদারি বিষয়ক টেকনোলজি ডেপ্লয় করার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। লোকটির পরিচালিত কোম্পানি হতে তারপর বাংলাদেশের National
    Telecommunication Monitoring Center (NTMC) ও Directorate General of Forces Intelligence (DGFI) বহু মূল্যবান নজরদারি বিষয়ক সরঞ্জাম কিনেছে।

    কর্নেল তাঁলের কোম্পানি বাংলাদেশি ইন্টেলিজেন্স কমিঊনিটির হাতে যেসব টেকনোলজি দিয়েছিল, তার মাঝে অন্যতম ছিল Predator Spyware। আর আমাদের সুদান নিয়ে আজকের আলোচনার বিষয়বস্তুও এটি।

    ইসরায়েলিরা আলোচ্য সার্ভেইল্যান্স টেকনোলজি সুদানের ক্ষমতার ভারসাম্য পরিবর্তন করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে RSF এর Intelligence Department এর হাতে সরবরাহ করে। সিস্টেমটিকে কারো ওপর ডেপ্লয় করা গেলে এটি তার হাতে থাকা স্মার্টফোনের ক্যামেরা ও রেকর্ডিং অপশন ইঊজারের অজান্তে চালু করে দেয়। আসলে বলা উচিত, এটি পুরো ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে। ফলে কারো হাতে থাকা মুঠোফোন পরিণত হয় তার শত্রুপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত লিসেনিং ডিভাইসে।

    তবে সিস্টেমটি পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় Command & Control (C2) স্টেশন দরকার হয়। যার নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে না থাকলে কোনো কিছু করা সম্ভব নয়।সুতরাং, জেনারেল হামদান দাগালো তার গোয়েন্দা বাহিনীকে সেদিন সিস্টেমটির সমস্ত খণ্ড নিয়ে সোজা খার্তুম শহর থেকে বেরিয়ে পড়ার আদেশ জারি করে।কারণ, সুদানের সত্যিকার গোয়েন্দা সংস্থা Directorate of General Intelligence Service এর কানে ততক্ষণে তার অশুভ তৎপরতা ও কুকর্মের খবর চলে গিয়েছে। তারা RSF এর হাত থেকে সিস্টেমটি জব্দ করার লক্ষ্যে জোরদার তল্লাশি অভিযান চালাতে শুরু করে। ফলে জেনারেল দাগালোর গোয়েন্দারা ওটাকে নিয়ে রওয়ানা হয় ওদের মূল ঘাঁটি সুদূর দারফুর অঞ্চলের দিকে।

    RSF Intelligence Department এর হাতে অমন মারাত্মক টেকনোলজি অবশ্য ইসরায়েল রাতারাতি তুলে দেয়নি। চরম নিচ, উচ্চাভিলাষী ও লোভী বলে পরিচিতি পাওয়া জেনারেল হামদান দাগালোকে তার আগে ইসরায়েলের কাছে নিজেকে নির্ভরযোগ্য হিসাবে প্রমাণ দিতে হয়েছে। যার অংশ হিসাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ হয়ে ইয়েমেনের মাটিতে সে তার বাহিনী হতে ৪০,০০০ সুদানি সৈনিক মোতায়েন করে। নর্দার্ন ইয়েমেনে তার Rapid Support Forces (RSF) এর সেনারা Al-Qaeda in the Arabian Peninsula (AQAP) ও সাউদার্ন রিজিয়নে হুথি বলে পরিচিতি পাওয়া Ansarallah যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অফেন্সিভ অপারেশনে অংশ নেয়। নিজেকে ও নিজের বাহিনীকে সেখানকার রণাঙ্গনে বিশ্বস্ত হিসাবে প্রমাণ করার পর ইসরায়েল তখন তাকে সুদানের মাটিতে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের পথে গুরুত্বপূর্ণ দাবার ঘু্ঁটি হিসাবে নির্বাচন করে।

    সুতরাং, ২০২০ সালের শেষার্ধে তেল আবিব হতে The Institute for Intelligence & Special Operations তথা মোসাদের তৎকালীন ডিরেক্টর Rapid Support Forces (RSF) এর জেনারেল হামদান দাগালোর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আগমন করেন। গোপন একটি স্থানে সংঘটিত তাদের আলোচ্য সাক্ষাতের আয়োজক হিসাবে সেখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন আরব আমিরাতের National Security Adviser (NSA) তাহনুন বিন জায়েদ আল নাহিয়ান স্বয়ং। এখানে বলে রাখা ভালো যে, ২০২০ সালের শুরুতে কিন্তু সুদানের বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও চলমান গৃহযুদ্ধের সরকারি পক্ষ জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ বুরহান Benjamin Netanyahu এর সাথে উগাণ্ডায় মিটিং করেছিলেন। তবে, হয়তোবা সেখান হতে আশানুরূপ ফল ইসরায়েল পায়নি। যদিও ওদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে মিটিংটাকে সেবার ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

    যাইহোক, Predator সেদিন রওয়ানা হয়ে গেলো দারফুরের দিকে। তার গন্তব্য তখন দারফুরের বুক চিরে সোজা আকাশের পানে উঠে যাওয়া সুদানের মাররাহ মাউন্টেন রেঞ্জ। ১০ হাজার ফিট উঁচু চূড়ার চতুর্দিকে মাঝারি টিলা, পর্বত, শৈলশিরা আর গভীর উপত্যকায় ঘেরা মাররাহ রেঞ্জ Rapid Support Forces এর শক্তিশালী আস্তানা বলে স্বীকৃত। যেখানে পৌঁছাতে পারলে ওদের ধরার মতো সুদানে কোনো শক্তি অবশিষ্ট থাকছে না।

    সুতরাং, সুদানিজ ইন্টেলিজেন্সের নজরদারি এড়িয়ে সিস্টেম মাররাহ মাউন্টেন রেঞ্জের মাঝে প্রস্তুত করা দূর্গম স্টেশনে চলে এলো। আর তখন হতে সুদানের ধূসর মরুর আকাশে শুরু হয়ে গেলো দূর্যোগের চরম ঘনঘটার। তবে, সুদানে আসলে যে স্রেফ ইসরায়েল একলা কাজ করছে তাও নয়। রাশিয়ার PMC Wagner তথা রাশিয়াও দীর্ঘদিন যাবত সেখানে Rapid Support Forces কে স্বর্ণের বিনিময়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে।​

    ~~ফেসবুক থেকে কালেক্টেড~~
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment


    • #3
      আটলান্টিক ম্যাগাজিন গত সেপ্টেম্বর সংখ্যাতে সুদানের চলমান যুদ্ধকে কভার করে প্রতিবেদন পাবলিশ করে। এই সংখ্যার মূল প্রতিবেদক Anne Applebaum আগস্টে তাঁর এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে মূল প্রতিবেদনের একটি গিফট আর্টিকেল লিঙ্ক শেয়ার করলে আগস্টেই আমার এটা পড়ার সুযোগ হয়। তখন এই প্রতিবেদনটিকে কেন্দ্র করে একটি লেখা পাবলিশ করার ইচ্ছে থাকলেও, গাজা-তে তখন আরো ভয়ঙ্কর জেনোসাইডাল অ্যাক্ট চলমান ছিল। একইসাথে ক্ষুধা এবং অস্ত্রের দ্বারা পৃথিবীর অন্যতম জেনোসাইডাল অ্যাক্ট চলমান ছিল যা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয় নি, তাই সেদিকটা নিয়েই মূলত আলোচনা নির্দিষ্ট রাখা হয়েছিল। যাই হোক সুদান নিয়ে আটলান্টিকের মূল প্রতিবেদনের তিনটি শিরোনাম দেওয়া হয়। একটি শিরোনাম ছিল যা সেপ্টেম্বরে কভার পেইজে উল্লেখ করা হয়েছে তা হল,
      .
      The War About Nothing ; Sudan and the World America left behind

      প্রতিবেদনে উল্লেখ করা প্রথম শিরোনাম ছিল
      The Most Nihilistic Conflict On Earth

      এই শিরোনামটি সর্বশেষে পরিবর্তন করে রাখা হয়
      This is What The End Of The Liberal World Order Looks Like
      .
      তিনটি শিরোনাম তিন ধরণের বার্তা বহন করে। আমরা Anne Applebaum এর সুদান সম্পর্কিত প্রতিবেদনটিকে The Most Nihilistic Conflict On Earth শিরোনাম দিয়েই পড়তে চাই। কেননা তার প্রতিবেদন থেকে যে কটা বার্তা উৎসরিত করা সম্ভব হয়েছে তার মধ্যে এটাই আমার নিকট প্রাণিধান মনে হয়েছে যে- সুদানের এই চলমান সংঘর্ষটি একটি নৈতিকতা, ধর্ম, আইন কানুন বিবর্জিত এক যুদ্ধ। যেখানে ভক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে খুশি করাটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়।
      .
      সুদানের চলমান কনফ্লিক্ট নিয়ে এ পর্যন্ত যত প্রতিবেদন আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে তারমধ্যে মনে হয়েছে এই প্রতিবেদনটিই সর্বদিক কভার করার চেষ্টা করেছে। প্রতিবেদনটি তিনি স্টোরি টেইলার এর মত করে লিখেছেন। আমরা তার প্রতিবেদনকে আশ্রয় করেই মূলত এই লেখাটি সাজিয়েছি। কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য Anne Applebaum এর কভার স্টোরিতে মিসিং থাকলে তা আমরা এখানে জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। Anne Applebaum পোস্ট আমেরিকা যুগের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেন।
      .
      মূল আর্টিকেল লিঙ্ক-
      - https://www.theatlantic.com/magazine...crisis/683563/
      .
      The Long Read Warning !
      .
      সুদানের চলমান সংঘর্ষটি হচ্ছে মূলত Sudan Armed Forces (SAF) এবং RSF (Rapid Support Forces) এর মধ্যে। চলমান সংঘর্ষটি ২০২৩ সালে শুরু হলেও এরকম যুদ্ধ শুরু হবার পটভূমি আরো আগে থেকেই কার্যকর ছিল। তবে আমরা RSF এর বিষয়টি আলোচনাতে আনতে পারি। যেহেতু RSF তার একের পর এক গণহত্যার কারণে আলোচনায় আছে।
      .
      RSF কারা ?
      .
      RSF বাহিনীটি মূলত গঠন করে সুদানের পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বাশির। তবে RSF যখন প্রথম গঠন করা হয় তখন এর নাম ছিল জানজাওয়িদ। এটি একটি প্যারামিলিটারি বাহিনী ছিল। জানজাওয়িদ শব্দের অর্থ হল 'ঘোড়সওয়ার দস্যু' । পুরো বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়া হয় মোহাম্মদ হামদান দাগালো (হেমেদেতি) নামক এক আরব বেদুইন নেতার নিকটে। জ্বি, ওমর আল বাশির এর হাত দিয়েই চলমান গণহত্যার অন্যতম মানুষটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওমর আল বাশিরের বিরুদ্ধে অ-আরব গোষ্ঠীদের দ্বারা সংগঠিত বিদ্রোহ দমনের উদ্দেশ্যে নিয়ে মূলত জানজাওয়িদ গঠন করা হয়। এবং জানজাওয়িদ এ কাজে সফলতাও দেখায়। জানজাওয়িদ বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে গণহত্যা, ধর্ষণ, গ্রাম পোড়ানো সহ ব্যাপক নৃশংসতা চালায়। জানজাওয়িদ দারফুরে গণহত্যা, ধর্ষণ গ্রাম পোড়ানোসহ ব্যাপক নৃশংসতার জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠে।
      .
      এরপর ২০০৪ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সাথে অর্থাৎ এখন যাদের বিরুদ্ধে RSF যুদ্ধ করছে তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অ্যান্টি গভমেন্ট রেবেলস দমন করতে যৌথভাবে কাজ করে। ওমর আল বাশির এবং জানজাওয়িদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে আলোচনা সমালোচনা হলে ওমর আল বাশির এ ব্যাপারে থোড়াই কেয়ার করে। কিন্ত ২০১৩ সালে এসে ওমর আল বাশিরের চিন্তা আসে জানজাওয়িদ বাহিনীকে পুনঃগঠন করার। এই বছর জানজাওয়িদ বাহিনীর কাঠামো বদলে " Rapid Support Forces বা RSF নামে নতুনভাবে গঠন করা হয়। একে অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নতুন কোন কমান্ডার না দিয়ে সেই কুখ্যাত হেমদতিকেই দায়িত্বে রাখা হয়। একই বাহিনী, শুধু নতুন নাম ও নতুন বৈধতা।
      .
      হেমেদতি এখানেই থেমে থাকেনি। হেমেদতি তার বাহিনীকে দিয়ে আরো কিছু বিদ্রোহ দমন করে।
      RSF এর সাথে আরব আমিরাত এবং সৌদি-র সম্পর্কের শুরু কোথা থেকে ?
      ওমর আল বাশির সরকারে থাকাকালীন সময়েই আরব বিশ্বে আরব স্প্রিং শুরু হলে লিবিয়াতে আরব আমিরাত সমর্থিত খলিফা আল হাফতারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আরব আমিরাতের ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে RSF- কে পাঠানো হয়। এরপর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে যুদ্ধ শুরু করলে সেখানেও RSF কে ভাড়া খাটা সৈন্য হিসেবে পাঠানো হয়। এখান থেকেই মূলত RSF এর সাথে আরব আমিরাত এবং সৌদির সম্পর্ক নিবিড় হয়।
      .
      ২০১৮ সালে আরব স্প্রিং এর ধাক্কা সুদানে গিয়ে আঘাত হানে। পেশাজীবী, আইনজীবী, ছাত্র এবং সাধারণ জনগণ আইনের শাসন, মৌলিক অধিকার, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার দাবি করে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের স্লোগান ছিল “স্বাধীনতা, শান্তি, এবং ন্যায়,” যা রাস্তায় উচ্চারণ করা হতো এবং দেওয়ালে লেখা হতো। বছরব্যাপী সংগঠন, কয়েক মাসের রাস্তায় প্রতিবাদ এবং নাগরিক কর্মকতার সঙ্গে সামরিক ও পুলিশের সহিংস সংঘর্ষের পর, এপ্রিল ২০১৯ সালে সেনাবাহিনী সুদানের দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক ওমর আল-বাশির এবং তার দমনমূলক ইসলামপন্থী শাসন ব্যবস্থা অপসারণ করে, এই বৃহৎ নাগরিক আন্দোলনকে শান্ত করার চেষ্টা হিসেবে। এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সামরিক সমর্থিত একটি নাগরিক সরকার দেশ শাসন করে। এ সময় হেমেদেতি সার্বভৌম পরিষদের উপ-প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। RSF-কে এই সময় প্রায় একটি প্যারালাল সেনাবাহিনী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনের বাইরে শক্তি অর্জন করে।
      .
      এরপর ২০২১ সালে সেনাবাহিনী প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান (অর্থাৎ যিনি এখন SAF এর প্রধান) এবং RSF প্রধান হেমেদেতি যৌথভাবে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নিজেদেরই সমর্থনে গড়া দূর্বল সরকারের পতন ঘটায়। এ সময়েই মূলত দুই নেতার মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়- কে হবে দেশের মূল সামরিক শক্তি, কে থাকবে রাজনীতির নিয়ন্ত্রনে-এই প্রশ্নে দুই জেনারেলের মধ্যকার সম্পর্ক ভেস্তে যায়। যার ফলাফল হিসেবে আর দুটো বছর পরেই আমরা ভয়াবহ যুদ্ধের শুরু দেখতে পাব।
      .
      একটি জিনিস মনে করিয়ে দেওয়া দরকার ওমর আল বাশিরের কথিত খাতা কলমের ইসলামিস্ট আইন আদালতের পুরোপুরি পতন ঘটানো হয় এই সময়ে। ওমর আল বাশির তার সরকারকে ইসলামিস্ট সরকার হিসেবে পরিচয় করালেও এর ইসলামিস্ট পরিচয় মূলত আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত এটি একটি কতৃত্বপরায়ন স্বৈরাচারী সরকার ছিল। তারপরেও পশ্চিমারা এই সরকারটিকে ইসলামিস্ট সরকার হিসেবে লেবেল দিতে পছন্দ করে, যাতে করে এর অমানবিক নির্মম দমন পীড়নের দায় ইসলামের উপর চাপানো সম্ভব হয়।
      .
      যাই হোক, ওমর আল বাশির কোন পর্যায়ের ইসলামিস্ট ছিলেন, যার হাতে দুজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিকৃষ্ট খুনি জেনারেল তৈরি হয় ! জেনারেলের হাতে ক্ষমতা আসার পর রাষ্ট্রে খাতায় কলমে লিপিবদ্ধ ইসলামিক আইন কানুনকে বাতিল করে সেক্যুলার রাষ্ট্র গঠন করা হয়। যাতে করে পশ্চিমাদের নজর পাওয়া সম্ভব হয়।
      .
      এখন পরিস্থিতি কোথায় দাড়িয়ে আছে ? দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই সুদানকে কোথায় নিয়ে আসল ?
      .
      সুদানের ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা বোঝাতে প্রায়ই পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হয়। বছরের পর বছর লড়াইয়ে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে—ইউক্রেন ও গাজার মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়েছে—চাদ, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদানের মতো শুষ্ক ও দরিদ্র অঞ্চলে—যেখানে তাদের সহায়তা করার মতো সম্পদই নেই। অন্তত দেড় লাখ মানুষ এই সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে, যদিও বাস্তব সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি। জনসংখ্যার অর্ধেক—প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ—এ বছর খাদ্য সংকটে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েক লক্ষ মানুষ সরাসরি অনাহারের হুমকিতে আছে। ১ কোটি ৯০ লাখ শিশুর মধ্যে ১ কোটি ৭০ লাখ স্কুলের বাইরে। কলেরার মহামারি চলছে, আর ম্যালেরিয়া সেখানে স্থায়ী রোগে পরিণত হয়েছে। But no statistics can express the sense of pointlessness, of meaninglessness, that the war has left behind alongside the physical destruction.
      .
      চলুন, আমরা আবার দুই জেনারেলের সংঘাত নিয়ে আলোচনাতে ফিরে যাই। যেমনটি অনেকেই আগে অনুমান করেছিলেন, বুরহান ও হেমেদতি শেষ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। যদিও প্রথম গুলিটি কে ছুড়েছিল তা পরিষ্কার নয়, ২০২৩ সালের ১৫ই এপ্রিল আরএসএফ (RSF) সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর, খার্তুম বিমানবন্দর এবং রাষ্ট্রপতির প্রাসাদে আক্রমণ চালায়। আক্রমণের সময় বা অন্তত তার সময়সূচি বুরহানের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল, ফলে তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে আটকে ছিলেন। একটি বর্ণনা অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় কমান্ডোদের সহায়তায় তিনি মুক্তি পান; অন্য একটি মতে, তিনি নিজেই লড়াই করে বেরিয়ে আসেন। এরপর সুদান ভেঙে পড়ে এক বহুমাত্রিক সংঘাতে—যেখানে শুধু আরএসএফ ও এসএএফ নয়, তাদের সঙ্গে ও বিপক্ষে লড়ছে অসংখ্য ছোট ছোট সেনাদল ও মিলিশিয়া গোষ্ঠী। গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনও বিভক্ত হয়ে পড়ে; বেসামরিক সরকারের কিছু সাবেক সদস্য RSF এর পক্ষে দাড়ান, আবার কেউ কেউ যোগ দেন SAF এ।
      .
      পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে হয়ে যায় যে এই দুই জেনারেলের যুদ্ধকে কোন লেবেল দেওয়া সম্ভব, তা বুঝে উঠা মুশকিল হয়ে দাড়ায়। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার কিংবা রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য এ যুদ্ধ বলা সম্ভব ছিল না বরং তা না বলে নৈরাজ্যতার ( anarchic ), উদ্দেশ্যহীন ( nihilistic) এবং শুধুমাত্র লাভ ক্ষতিময় এক লেনদেনভিত্তিক যুদ্ধের শুরু বলা ঠিক হবে হয়তো। পরিস্থিতি এতটাই নৃশংস ছিল যে, সেই সময় যে দুই বছর পরেও যাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে তারা তা স্মরণ করে কেঁদে ফেলেছেন। দূতাবাস, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং জাতিসংঘের খাদ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলো লুটপাটের শিকার হয়। বেসরকারি ফ্ল্যাটগুলো ভেঙে ফেলা হয়, আসবাব ও মালামাল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বিশৃঙ্খলার মধ্যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) তিনজন কর্মী নিহত হন। সুদানি সেনাবাহিনী পালিয়ে যায় রেড সি উপকূলে অবস্থিত ছোট শহর পোর্ট সুদানে—যার না অবকাঠামো ছিল, না মানসিক প্রস্তুতি, একটি বড় দেশের রাজধানী হওয়ার জন্য।
      সহিংসতা চলতে থাকায় সাধারণ মানুষ শুধু যুদ্ধের আকস্মিক শিকারই (Accidental Casualities) নয়, বরং হয়ে ওঠে এর প্রধান লক্ষ্য (target)। আরএসএফের জোটে রয়েছে সুদানের নানা প্রান্তের যোদ্ধারা, যাদের ওপর তারা সবসময় নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না, এছাড়াও রয়েছে মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার ভাড়াটে সৈন্য।
      .
      RSF এত ভয়ানক কেন ?
      .
      ১৭ বছরের এক চাদীয় কিশোর ভাড়াটে আরএসএফ সেনার বক্তব্য থেকে আশা করি আরএসএফ এর ভয়ানক হওয়ার কারণ খুঁজে পাবেন । সে জানায়, এক রিক্রুটার তার ফুটবল ক্লাবে এসে প্রতিজনকে প্রায় ২,০০০ ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় কেবল নাম লেখানোর বিনিময়ে। সে সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়, বাবা-মাকে কিছু না জানিয়ে। এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেয়, কয়েকদিন যুদ্ধ করে, তারপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ধরা পড়ে। প্রতিশ্রুত টাকাটা সে কখনোই পায়নি—যা বহু আরএসএফ যোদ্ধারই অভিজ্ঞতা। অনেকে কোনো বেতনই পায় না, ফলে তাদের উৎসাহ দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে লুট করতে, সম্পদ দখল করতে, এবং সেইসব কমান্ডারের নির্দেশ মানতে যারা গ্রাম উচ্ছেদ বা কাঙ্ক্ষিত জমি খালি করার বিনিময়ে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়।
      .
      অন্যদিকে, এসএএফ—যাদের একমাত্র বিমানবাহিনী রয়েছে—নাগরিক বসতিতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ চালিয়েছে, পুনর্দখলকৃত এলাকায় সন্দেহভাজন সহযোগীদের ওপর অবৈধ প্রতিশোধ নিয়েছে, এবং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যদিও তারা তা অস্বীকার করে। আরএসএফ ও এসএএফ উভয়েই খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে—শত্রুদের বাইরের সাহায্য থেকে বঞ্চিত করতে এবং দেশে কার্যরত ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাজ বাধাগ্রস্ত করতে।
      .
      সবকিছুর মূল কি সোনার খনি ?
      .
      অনেকটা সেরকমই। সুদানে ছোট বড় অসংখ্য সোনার খনি রয়েছে। সুদান আফ্রিকার তৃতীয় সোনার উৎপাদক দেশ। ২০২৩ সাল থেকে চলমান সুদানী সামরিক বাহিনী (SAF) এবং দ্রুত সমর্থন বাহিনী (RSF) এর মধ্যে গৃহযুদ্ধ সোনা খনিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। সোনা উভয় পক্ষের যুদ্ধের অর্থায়নের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে, যার ফলে অবৈধ বাণিজ্য, স্মাগলিং এবং পরিবেশগত ক্ষতি বেড়েছে। এই খনিগুলো সুদানের রাজনীতিকে গোপন এবং প্রকাশ্য উভয়ভাবেই নিয়ন্ত্রন করছে।
      .
      হেমদাতি জাবেল আমির অঞ্চলের বড় বড় সোনার খনিগুলো নিয়ন্ত্রন করছে। এই খনিগুলোই তাকে এবং তার বাহিনীকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে সহায়তা করছে। বুরহান এবং হেমেদতি কাঁধে কাঁধ রেখে ২০২১ সালে যে অভ্যুত্থানের শুরু করেছিলো তার একটা কারণ ছিল যে বেসামরিক কতৃত্ব সামরিক বাহিনীর উপর প্রতিষ্ঠিত হলে তাদের সোনা এবং অন্যান্য সম্পদে প্রবেশ সীমিত হয়ে যাবে।
      .
      উভয়ই, SAF এবং RSF তাদের সৈন্যদের জন্য তহবিল যোগানোর জন্য সোনা রপ্তানি করে। এটি প্রধানত অবৈধভাবে করা হয়, নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে এবং প্রায়ই সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে। গত বছর, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল যে, দক্ষিণ সুদানের জুবা বিমানবন্দরে একটি বিমান দারফুরি সোনা নিয়ে বোঝাই করা হচ্ছিল, যার মূল্য প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে। রাশিয়ার ওয়াগনার গ্রুপ, যার এখন নতুন নাম আফ্রিকা কর্পস —তাদেরও সোনার স্বার্থ রয়েছে। একইসাথে মিশর, সৌদি আরব, কাতারও এই লুটপাটে জড়িত।
      .
      পোস্ট আমেরিকান ওয়ার্ল্ডে শুধুমাত্র এই সংঘাতের জন্য স্বর্ণকেই দায়ী করলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে না। উপনিবেশবাদ অনেক আগে শেষ, শীতল যুদ্ধও শেষ, আর এখন এমন এক পরিস্থিতি যেখানে কোনো আন্তর্জাতিক আইনের বালাই নেই। ফলে সুদান হয়ে উঠেছে মধ্যম ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলোর তীব্র প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু। তারা টাকা, অস্ত্র পাঠিয়ে নিজেদের প্রভাব বাড়াচ্ছে শুধুমাত্র সংঘাতের ফলাফল নিজস্ব স্বার্থে গড়ে তোলার জন্য। কেউ মতবাদের যুদ্ধে অংশ নেয়, কেউ সোনার জন্য, কেউ সেখানে থাকে কারণ তাদের প্রতিপক্ষ সেখানে আছে। সহজ কথায়, সুদান এখন যুদ্ধের একটি মাঠ, যেখানে বহিরাগত স্বার্থ, লোভ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা একে এই সংঘাতকে জটিল করছে।
      .
      মধ্য-শক্তির মধ্যে আছে তুরস্ক, যার সুদানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে এবং একটি আগ্রহও। একজন তুর্কি কূটনীতিক বলেন—যা সুদান যেন কারও দ্বারা শাসিত হয় তা নিশ্চিত করা আমাদের উদ্দেশ্য। সৌদি আরব এবং মিশরও এ ধরনের হায়ারার্কি ও নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করে। সৌদি আরব লাল সাগরের ঠিক ওপারে, জেদ্দা পোর্ট সুদান থেকে এক ঘণ্টার ফ্লাইট দূরে, এবং মিশর সুদানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ১৯শ শতাব্দী থেকে সম্পর্ক রাখে। সৌদি আরব সুদানের জমি ও কৃষিতে বড় বিনিয়োগ করেছে। এই তিনটি দেশই SAF- কে অস্ত্র বিক্রি করে অথবা অস্ত্র কেনার জন্য তহবিল যোগায়।
      .
      সংঘাতের অন্য পাশে, আরব আমিরাত কেবল RSF-কে সমর্থন দেয় না, বরং তারা এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ এই যুদ্ধের পিছনে ব্যয় করছে যে তাদের এই অর্থদানের পরিমাণের সাথে সাথে তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের তত্ত্বও তৈরি হচ্ছে। একজন সুদানি সামরিক কর্মকর্তা একটি মানচিত্র বের করে, সাহেল ও আফ্রিকার হর্ন বরাবর হাত বুলিয়ে বলেন যে, এমিরাতীরা আরব ভাষাভাষী জনপদবাসীকে এমন একটি বাহিনীতে রূপান্তরিত করছে যা পুরো অঞ্চল শাসন করতে সক্ষম, নতুন একটি সাম্রাজ্য গড়ার উদ্দেশ্যে। এথেকেও ভয়ানক যে তত্ত্ব শুনতে পাওয়া যায় , যেমন RSF- এর আমিরাতি সমর্থনের আড়ালে ইসরায়েলি বা আমেরিকান স্বার্থ রয়েছে, যার কোনো (স্পষ্ট) প্রমাণ নেই ।
      .
      এছাড়াও প্রচুর প্রমাণ আছে যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) আরএসএফের সোনার বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, পাশাপাশি সুদানের সেনাবাহিনীর সোনার স্বার্থের সাথেও তাদের সম্পর্ক আছে। কিন্তু আবুধাবির আরএসএফের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও সহমর্মিতার আরও নানা সম্পর্কও রয়েছে। অতীতে, আমিরাতের নেতারা লিবিয়া ও ইয়েমেনে তাদের পক্ষে লড়ার জন্য আরএসএফকে ভাড়া করেছিলেন (সৌদি আরবও ইয়েমেনে লড়ার জন্য আরএসএফকে ভাড়া নিয়েছে) যা আমরা ইতোমধ্যে একবার উল্লেখ করেছি। সৌদি- সুদান এবং সুদানের শরণার্থীদের জন্য বিলিয়ন ডলারের সাহায্য প্রদান করেছে, যার একটি অংশ দিয়ে চাদ ও দক্ষিণ সুদানে হাসপাতাল নির্মাণ করেছে, যেগুলোতে (বা যেগুলোতে ধারণা করা হয়) আরএসএফ যোদ্ধারা চিকিৎসা পায়।
      .
      সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সুদানের সেনাবাহিনী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং জাতিসংঘ বারবার অভিযোগ করেছে যে RSF-কে যুদ্ধ চালানোর জন্য অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে আমিরাত মানবিক সহায়তা ব্যবহার করছে আড়াল হিসেবে, যদিও তারা এই অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসা করলে, আমিরাতের পক্ষ থেকে বলা হয় যে সুদানে তাদের প্রধান লক্ষ্য হল স্বাধীন বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং এমন কোনো ইসলামি শাসন পুনরায় ক্ষমতায় আসা রোধ করা যা সামুদ্রিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। “আমরা চাই না সুদান আবার বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের কেন্দ্র হয়ে উঠুক,”—এভাবেই লানা নুসাইবাহ, একজন সিনিয়র UAE কূটনীতিক তিনি জানান।
      .
      সুদানে ইরানের উপস্থিতিও রয়েছে। ইরান এক সময় ওমর আল বশিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছিল; ২০২৩ সালে SAF ইরানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করে, এবং ইসলামি মিলিশিয়াগুলো এখন এসএএফের পাশে লড়ছে। কিন্তু ইরান সুদানকে অস্ত্রবাজার হিসেবেই দেখার সম্ভাবনাটা বেশি : ইরানি সামরিক ট্রানজিট প্লেন পোর্ট সুদানে শনাক্ত করা হয়েছে, এবং ইরানি ড্রোন যুদ্ধক্ষত্রে দেখা গেছে। তাদের উদ্দেশ্য শুধু আদর্শগত বা অর্থনৈতিক নাও হতে পারে; তারা হয়তো শূন্যস্থানের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে: যদি তুর্কি, সৌদি, এবং আমিরাত সেখানে থাকে, তাহলে ইরানরাও মনে করছে তাদেরও সেখানে থাকা দরকার।
      .
      একই শূন্যস্থান রাশিয়ানদেরও টেনে আনছে, কিন্তু রাশিয়ানদের সম্পর্কে শুধু এক দলের সাথেই নয়, বরং উভয় দলের সাথেই রাশিয়ার সম্পর্ক আছে। রাশিয়ার সুদানের প্রতি মনোভাব সম্পূর্ণ নৈতিকতার বাহিরে এবং পুরোপুরি লেনদেনভিত্তিক। তারা উভয়পক্ষের কাছ থেকে সোনা কিনে এবং উভয়পক্ষকে অস্ত্র বিক্রি করে। তাদের ভাড়াটে সৈন্যরা অতীতে RSF-এর সঙ্গে কাজ করেছে; তারা বহু বছর ধরে রেড সি উপকূলে একটি নৌঘাঁটি নির্মাণ করতে চেয়েছে, তাই এখন SAF- এর সঙ্গেও কাজ করছে।

      আর যেহেতু রাশিয়ানরা আছে তাই ইউক্রেনিয়ানরাও সুদানে তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। তাদের সংখ্যা যদিও নগণ্য এবং স্বার্থ সীমিত, কিন্তু তাদের উপস্থিতি যুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু প্রকাশ করে। সুদানে রাশিয়ানদের শিকার করা ইউক্রেনীয়রা কোনো দ্বন্দ্বে আগ্রহের কারণে নয়, বরং অরাজকতা নিজেই তাদের আকৃষ্ট করেছে।

      সুদানে- তুরস্ক, মিশর, সৌদি আরব, আমিরাত, কাতার, রাশিয়া, ইরান ও ইউক্রেনের স্বার্থ একে অপরের সঙ্গে মিশে গেছে—এবং এই মিলনই সুদানকে ইয়েমেন ও লিবিয়ার মতো এক অরাজক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করেছে, যেখানে বিশ্বের নানা শক্তি নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালায় স্থানীয় মানুষের জীবনের বিনিময়ে। সুদানের প্রতিবেশী দেশগুলো—ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান, চাদ, লিবিয়া এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র—এমনকি তারাও এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে, কখনও মধ্যম-শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর প্রভাবে, কখনও নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্কের সূত্রে।

      সুদানে- চীনারা পেছনে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে—তারা ব্যবসার সুযোগ খুঁজছে। লোহিত সাগরের তীরে সুদানের কৌশলগত অবস্থান, যা বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের অংশ, সেটি সবাইকেই টেনে আনছে। এদিকে যেসব দেশ একসময় একত্র হয়ে যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করত, তারা এখন আগ্রহ বা সামর্থ্য—দুটোই হারিয়েছে। যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান একসময় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করতে পারত, তারা এখন এতটাই দুর্বল যে তারা হয় পারছে না, নয়তো চাচ্ছে না কিছু করতে।

      “আমরা এখন এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যেটাকে অনেকে নতুন বিশ্বব্যবস্থা বলে,” বলছিলেন সুদানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হামদোক। “আমরা যে পৃথিবীটাকে চিনতাম—যেখানে ঐকমত্য ছিল, ছিল Pax Americana, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সেই ঐক্যমূলক বিশ্ব—সেটা আর নেই।”

      সুদানিজদের শিক্ষিত মহল বিশেষ করে রাষ্ট্রদূত, বিশেষজ্ঞ, কূটনীতিক এবং রাজনীতিবিদদের আগ্রহ সেই আমেরিকানদের সম্পর্কে যারা হোয়াইট হাউস থেকে এসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করবে, মাথা ঘুরিয়ে দেয়া ডিসিশন গ্রহন করবে, এবং যুদ্ধ শেষ করার উপায় বের করবে। তারা চাচ্ছে এমন আমেরিকান যারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় করবে, জাতিসংঘকে অন্তর্ভুক্ত করবে, কিছু শান্তিরক্ষী আনবে, কিছু ঘটাবে: জিমি কার্টার–ক্যাম্প ডেভিড বা রিচার্ড হলব্রুক–ডেটন মডেলের মত বড় মাপের, আমেরিকান নেতৃত্বাধীন, সমস্যা সমাধানকারী কূটনীতি, যা এক সময় সুদানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল, উভয় ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান প্রশাসনের সময়।
      .
      কর্নেল হাসান ইব্রাহিম, যিনি খার্তুমের সুদানি সেনাবাহিনীর মিডিয়া মধ্যস্থতাকারী, তিনি তার দেশের সংঘাতকে “ভুলে যাওয়া যুদ্ধ” হিসেবে বর্ণনা করেন। প্রাক্তন জাতিসংঘ কর্মকর্তা ভল্কার পার্থেস বলেন যে, আমেরিকানদের “যদি তারা ব্যবহার করতে চায় তবে ক্ষমতা আছে।” কিন্ত অনেকেই বিশ্বাস করতে সক্ষম না যে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আফ্রিকার প্রতি আগ্রহ হারিয়েছে। এটা তাদের কল্পনারও বাইরে ছিল, এবং অনেক অন্যান্য মানুষের কল্পনারও বাইরে যারা এখনও বিশ্বাস করে যে এক দিন, কোনোভাবে, আমেরিকান কূটনীতিকরা ফিরে এসে পরিবর্তন আনবে। অর্থাৎ সুদানিজদের শিক্ষিত মহল তারা এই সংঘাত থামানোর জন্য আমেরিকার হস্তক্ষেপ চাচ্ছে।

      এক সময় সুদানের প্রতি আমেরিকা প্রচুর আগ্রহ দেখালেও সেই আগ্রহ এখন আর নেই। আমেরিকা তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন এনেছে । ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পরই “responsibility to protect” ধারণাটি বাতিল করে। যার আর কোন পরিবর্তন আসে নি। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র দপ্তরও ২০১৯ সালের সুদানি গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। শান্তি ও পুনর্মিলনের বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি করা সরকারকে সমর্থন করার বদলে, ট্রাম্প প্রশাসনের মূল আগ্রহ ছিল সুদানকে Abraham Accords-এ সই করানো এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে রাজি করানো, যা বেসামরিক সরকার ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মেনে নেয়, বিনিময়ে সুদানকে সন্ত্রাসবাদ-সমর্থনকারী দেশের তালিকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে প্রশাসন কিছু অর্থ বরাদ্দ করলেও, অভ্যুত্থানের দশ মাস পর সেই অর্থ স্থগিত করা হয়—অধিকাংশই খরচ হয়নি।

      বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পরও, আমেরিকান জনমত ও রাজনৈতিক মনোযোগ প্রথমে আফগানিস্তান, পরে ইউক্রেন ও গাজায় কেন্দ্রীভূত ছিল; সুদানে আর ফিরে আসেনি। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর, মার্কিন কূটনীতিকরা—ব্রিটিশ, সৌদি, এমিরাতি এবং জাতিসংঘের সঙ্গে মিলে—২০১৯ সালের ক্ষমতা ভাগাভাগির কাঠামো ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিল, যা কখনও উচ্চপর্যায়ের (ক্যাম্প ডেভিড ধরনের) মনোযোগ পায়নি, এবং প্রধানত বেসামরিক আন্দোলনের নেতাদের বাদ দিয়েছিল। তারা নিরাপত্তা খাতের সংস্কার নিয়ে আলোচনাটি সবচেয়ে শেষে রেখেছিল, এবং খার্তুমে সামরিক চলাচলের রিপোর্টগুলো উপেক্ষা করেছিল।

      তবুও, চলতি বছর পর্যন্তও যুক্তরাষ্ট্র ছিল সুদানের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ। তারা শুধু শত শত মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তাই দেয়নি, বরং জাতিসংঘ ও অন্যান্য ত্রাণ সংস্থার জন্য ভেতরে-বাইরে লজিস্টিক সহায়তা দিয়েছে—এমনকি বিশ্বজুড়ে সুদানি শরণার্থীদের সহায়তাও করেছে। সুদানে যুক্তরাষ্ট্রের তখনও এতটা প্রভাব ছিল যে, তারা উভয় পক্ষের কাছেই কিছু পরিমাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে পারত—এমনকি যদি তাতে SAF-এর আপত্তি সত্ত্বেও RSF-এর সঙ্গে কাজ করতে হতো। কিন্ত এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইলন মাস্ক USAID এর বাজেট কাটছাটের কারণে সুদানের মানবিক সহায়তাও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাত্ত্বিকভাবে, জরুরি খাদ্য সহায়তার মতো মৌলিক তহবিল অব্যাহত থাকার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে খাবার ও অর্থের ডেলিভারি–সংক্রান্ত সব সহযোগিতা—ট্রাকিং ও নিরাপত্তা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ, দুর্ভিক্ষ পূর্বাভাস, কৃষক সহায়তা—সব কেটে দেওয়া হয়েছে, সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদেরও। এর প্রভাব পড়েছে সবার ওপর—জাতিসংঘ, অন্যান্য দাতব্য সংস্থা, এমনকি Sudanese Emergency Response Rooms-এর মতো স্থানীয় সংগঠনেও। এটা সুদানিজদের জন্য এক রকম মহাবিপর্যয়ের মত।

      জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলোও এখন এতটাই আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে যে, তারা মৃত্যু ঠেকানোর মতো মৌলিক ঝুঁকিও নিতে চায় না। নিরাপত্তা পরিষদ বিভক্ত ও অকার্যকর হয়ে পড়েছে; স্বাধীন জাতিসংঘ আলোচকরা প্রভাব হারিয়েছেন। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে জাতিসংঘের ভূমিকা আরও সীমিত হয়ে গেছে—২০১৪ সালের পর আর কোনো নতুন শান্তিরক্ষী মিশন শুরু হয়নি।
      .
      ২০১৯ সালের নাগরিক বিপ্লবের প্রতিক্রিয়াতেও জাতিসংঘ ছিল ধীর ও নিষ্ক্রিয়। ২০২১ সালে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি ভল্কার পার্থেস অভ্যুত্থানের পর মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেও, সেনাবাহিনীর অভিযোগে তাকে দেশছাড়া করা হয়। এরপর থেকে জাতিসংঘের সঙ্গে সুদানের সম্পর্ক আর পুনরুদ্ধার হয়নি। গুতেরেস কেবল আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছেন, কিন্তু সরাসরি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
      সুদানে জাতিসংঘ বাস্তবে SAF-কে বৈধ সরকার হিসেবে বিবেচনা করছে—যা নিয়ে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণ বিতরণও রাজনৈতিক স্বার্থের জালে আটকা পড়েছে। ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের প্রধান সতর্ক করেছেন, উভয় পক্ষই মানবিক সহায়তাকে যুদ্ধের বৈধতা অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
      .
      এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যত প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। সুদানি সেনাবাহিনীর এক মন্ত্রী বলেছেন, এখন মূল সহায়তা আসে উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রভাব সুদান থেকে কার্যত মুছে গেছে।
      .
      RSF এর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার খায়েশ !
      .
      সুদানের বাহিরে, RSF চায় তাদেরকে গণতান্ত্রিক বাহিনী হিসেবে দেখা হোক, লুটপাটকারী মিলিশিয়া হিসেবে নয় যা জাতিগত শুদ্ধিকরণে জড়িত। এই বসন্তে, সহায়ক মিলিশিয়াসহ, RSF নেতাদের একটি গ্রুপ শান্তি ও ঐক্যের সরকার গঠনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, এবং পাসপোর্ট ও মুদ্রা জারি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা প্রচুর তিরস্কারের জন্ম দেয়। RSF-এর শত্রু হিসেবে মনে করা মানুষ এখনও আতঙ্কিত থাকে, কখনো কখনো পিটুনি খায়, এমনকি RSF-এর যুদ্ধে পরাজয়ের সংবাদ শুনে যথেষ্ট দুঃখপ্রকাশ না করলেই।
      .
      সুদানের বর্তমান অর্থমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যিনি নিজেও দারফুরি, RSF-এর কথিত শান্তি ও ঐক্যের সরকারের সম্পর্কে কী মনে করেন, এবং তিনি তা সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন। “তাদের গণতন্ত্রের সম্পর্কে কিছুই জানা নেই। প্রকৃতপক্ষে, তাদের ব্যবহার করা হয়েছে অন্যদের দ্বারা গণতন্ত্রের কথা বলার জন্য।"

      মোদ্দাকথা, সুদান লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার পরবর্তী সময়ে নিজের অবস্থান দেখতে পাচ্ছে। লিবারেল ওয়ার্ল্ড অর্ডার নিজেকে গুটিয়ে নিলেও নতুন কোন ওয়ার্ল্ড অর্ডার এখনো তৈরি হতে পারে নি যা সুদানিজদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হবে। বরং সবাই মধ্যশক্তি হিসেবে নিজেদের হিসাব বুঝে নেওয়াটাকেই মূল উদ্দেশ্য বানিয়ে নিয়েছে। যা জন্ম দিয়েছে পৃথিবীর এক নৃশংসতম কনফ্লিক্টের যেখানে কোন আদর্শের অবস্থান নেই। কে কতটুকু ভোগ করতে পারল তাই যেন দিনশেষে মূল বিবেচ্য বিষয়। এখানে কারো জীবনের কোন মূল্য নেই, কোন নারীর সম্মান ইজ্জতের কোন দাম নেই। দিন শেষে ভোগবাদী দুনিয়াটাই সবাইকে গ্রাস করছে।​

      ~~ফেসবুক থেকে কালেক্টেড~~
      বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

      Comment

      Working...
      X