নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ড

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা। ঢাকার মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে খুন এবং চট্টগ্রামে নির্বাচনি প্রচারের মধ্যে গুলির ঘটনায় সংগঠিত অপরাধচক্রের উত্থান দেখা যাচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আধুনিক অস্ত্র, কিশোর-তরুণের সমন্বিত গ্যাং নেটওয়ার্ক এবং বিদেশ থেকে পরিচালিত ভার্চুয়াল কমান্ড রুম।
নিরাপত্তা সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কিছু গ্যাং রাজনৈতিক নেতা, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে গোপন যোগাযোগ রাখছে। তাদের উদ্দেশ্য—নির্বাচনের আগে সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করা, এলাকায় ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি এবং অপরাধচক্রকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে টাকা কামানোর নিরবচ্ছিন্ন পরিবেশ তৈরি করা।
নিরাপত্তা সূত্রগুলো বলছে, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া গ্যাং নেতা এবং বিদেশে গা-ঢাকা দেওয়া অপরাধীরা আবার তাদের চক্র গঠন করছে। তারা এনক্রিপটেড অ্যাপ, আন্তর্জাতিক ফোন নম্বর, হুন্ডি নেটওয়ার্ক ও ভার্চুয়াল রুম ব্যবহার করে তাদের অনুসারীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছে। অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা তৈরির মাধ্যমে নির্বাচনি ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা রয়েছে তাদের।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় থাকলেও মাঠপর্যায়ে শান্তি বজায় রাখতে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অদৃশ্য রাজনৈতিক অপরাধী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা। কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার আশীর্বাদ রয়েছে আন্ডারওয়ার্ল্ড মাফিয়াদের ওপর। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিয়মিত রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত দুই সপ্তাহে ঢাকায় যেসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেগুলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুনরুত্থানের ভয়াবহতাকে নতুন করে সামনে এনেছে। গত ১০ নভেম্বর ঢাকার ব্যস্ততম আদালত এলাকার মাত্র কয়েক গজ দূরে দিন-দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। আদালতপাড়ার মতো উচ্চ নিরাপত্তার স্থানে এমন প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের দুঃসাহসকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এর মূল পরিকল্পনাকারী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি, যিনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ডিবি পুলিশ তাকে ঢাকার অপরাধ জগতের নতুন ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রনি প্রথমে মুদি দোকানি এবং পরে ডিশ ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ করলেও কারাগারে থাকা ইমনের মাধ্যমে অপরাধচক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দ্রুত পরিচিতি পায়। ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে জানা গেছে।
এরপর গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় পল্লবীর সেকশন-১২ এলাকায় একটি হার্ডওয়্যার দোকানে গুলি করে হত্যা করা হয় স্থানীয় যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে। তদন্তে উঠে এসেছে, মালয়েশিয়ায় থাকা সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান মামুন এ খুনের প্রধান পরিকল্পনাকারী।
এর আগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় নির্বাচনি প্রচারের সময় টার্গেটেড শুটিংয়ে নিহত হন সরোয়ার হোসেন বাবলা। পুলিশের ভাষ্য, সে স্থানীয় চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে যুক্ত ছিলে। এ হত্যার সঙ্গে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর গোষ্ঠীর সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা উল্লেখ করেছে স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা-চট্টগ্রাম উভয় শহরেই সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে, যা নতুন করে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি করেছে।
তথ্যসূত্র:
১। নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ড
– https://tinyurl.com/3k7n8etw




Comment