গাজা: ইসরাইলি সেনাদের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার লক্ষ্য করে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে একটি পেট্রোল বোমার
বোতল নিক্ষেপ করেই অন্যদিকে দৌড় দিলেন সামির।
একটু পরেই আবার পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করলেন তিনি।
এভাবেই ২০ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি তরুণ সামির ‘ইন্তিফাদায়’ তার অবদান রেখে চলেছেন।
সামিরের মত শত শত গাজাবাসী তরুণ এভাবেই তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের ভাষ্য হলো, ‘আমরা ইহুদিদেরকে তাড়াবো অথবা মরবো। আমাদের হারানোর কিছু নেই। আমরা
অবরুদ্ধ, বেকার ও বিপর্যস্ত এবং আমাদেরকে নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই।’
গাজা- ভূমধ্যসাগরের তীরে একটি ক্ষুদ্র ছিটমহল, যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক জনপদ। প্রায় ১৮ লাখ লোক সেখানে বাস করে।
২০০৮ সাল থেকে তিনবার ইসরাইলি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জড়ায় গাজাবাসী।
সম্প্রতি আবারো শুরু হওয়া সংঘর্ষ পূর্ব জেরুজালেম ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের পাশাপাশি গাজায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
এ সংঘর্ষে গাজার ৯ জন নিহত ও কয়েক ডজন লোক আহত হন।
গাজা এলাকা থেকে দুটি রকেট হামলার জবাবে রবিবার ইসরাইলি বাহিনী সেখানে বিমান হামলা চালিয়ে
কয়েকটি বাড়িঘর ধ্বংস করে এবং এক গর্ভবতী মহিলাকে তার ২ বছরের কন্যাসহ হত্যা করে।
ইসরাইল বলেছে তারা হামাসের ২টি অস্ত্র তৈরি কারখানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বর্তমানে গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। হামাস ইসরাইলের অস্তিত্ব অস্বীকার করে এবং ইসরাইলের ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখলের ঘোরবিরোধী।
কিন্তু অনেক বিশ্লেষক মনে করেন হামাস এখন আরেকটি যুদ্ধে জড়ানোর জন্য প্রস্তুত নয়।
কারণ গত বছরের ৫০ দিন ব্যাপী যুদ্ধে ২,২০০ লোক নিহত হয় এবং ১,০০,০০০ লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। বাড়িগুলোর পুর্নগঠন এখনো করা সম্ভব হয়নি।
তবে সালাফি জিহাদিরা এবং অন্যান্য গ্রুপগুলোকে সক্রিয় দেখে হামাস হাত গুটিয়ে বসে থাকবে বলে মনে হয় না।
গাজায় কয়েক হাজার আশাহত তরুণ ও যুবক আছে যাদেরকে যুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজে লাগানো যায়।
গাজা ভূখণ্ড ইসরাইলিরা বছরের পর বছর অবরোধ করে রেখেছে।
গাজার ১৮ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ৪৫% বেকার। সারাবিশ্বে এতো বেকারত্বের হার আর কোথাও নেই।
অর্ধেকেরও বেশি মানুষ দেশটি ত্যাগ করে অন্য কোথাও যেতে চায়।
মঙ্গলবার সামির তার বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের ইরেজ ক্রসিংয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য
যায়। অন্যান্য আন্দোলনকারীর মতোই সামির ও তার বন্ধুরা ঐতিহ্যবাহী ‘কেফায়া স্কার্ফ’ দ্বারা নিজেদের মুখ ঢেকে নেয়।
তারা ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকেন ও স্লোগান দিতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইন্তিফাদার জন্য জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের তরুণদের সমর্থন দিতে এসেছি। আমরা পাথর ও পেট্রোল বোমা দিয়ে হলেও যুদ্ধ করতে চাই।’
এসময় একটি ইসরাইলি টাওয়ার থেকে মেশিনগানের ব্যারেল দেখা গেলেও কোনো সেনা দেখা যায়নি।
কিন্তু হঠাৎ করেই গুলি ও টিয়ারগ্যাসের শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে এবং বেশকিছু তরুণ আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
জানা যায়, সংঘর্ষে প্রায় ৩৫ জন রাবার বুলেট ও টিয়ার শেলে আহত হয়।
বন্দুকযুদ্ধ, টিয়ারগ্যাস এবং তরুণদের রাস্তা অবরোধের জন্য অ্যাম্বুলেন্সগুলোর উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। অনেকে পায়ে হেঁটে স্ট্রেচার নিয়ে আহতদের উদ্ধার করেন।
সুহাইল নামে ৩১ বছর বয়সী এক শিক্ষক বলেন, ‘আমি আমার বন্ধুদের সাথে মিলে আহতদের উদ্ধার
কাজে সাহায্য করছি। আমি চাই না আমাদের তরুণরা বিনা চিকিৎসায় মারা যাক। তারা উন্নত জীবনের জন্য যুদ্ধ করছে।’
আহত গাজার তরুণরা জীবনের ঝুঁকি নিতেও পিছপা হন না।
একজন আহত তরুণ বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের নিক্ষেপিত পাথরে তাদের কোন সৈন্য নিহত হবে না।
কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলতে চাই তারা আমাদের দেখে ভীত হয়ে পড়ে কারণ আমরা মুক্ত প্রজন্ম।’
মুক্তির নেশায় উজ্জীবিত এই তরুণদেরকে রুখবে কার সাধ্য- প্রশ্ন এক তরুণের।
Comment