মায়ানমার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডুয়েল রোল প্লে
ইতিপূর্বে এক লিখায় এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি যে, “বাংলাদেশ কেন বিশ্বের বুকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে”। সেই আর্টিকেলে আমেরিকার পিভট টু এশিয়া (Pivot to Asia) নামক এক পলিসির কথা উল্লেখ করেছিলাম । সেখানে বলেছিলাম, ২০১২ সালে আমেরিকা এই পলিসি গ্রহণ করে, যে পলিসির অধীনেই বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগরসহ দক্ষিন এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোতে আমেরিকা তার প্রভাব বৃদ্ধি করছে।
এছাড়া ঐ আর্টিকেলে আরেকটি বিষয় আমরা দেখেছিলাম যে, শুধু আমেরিকাকে সাহায্য করার জন্য আমেরিকার চামচা ভারতের মোদি সরকার “Act East Policy” গ্রহণ করেছে।
বর্তমানে মায়ানমারে যে খেলা চলছে তা আমেরিকার পিভট টু এশিয়া (Pivot to Asia) এবং ভারতের মোদি সরকারের Act East Policy ‘র সমন্বিত রূপ।
মূলতঃ ইহুদীবাদীরা রুশপন্থী কংগ্রেসকে হটিয়ে মার্কিনপন্থী মোদি সরকারকে ভারতে বসিয়েছেই এ অঞ্চলে আমেরিকার প্রভাব বৃদ্ধি করার জন্য। এবং প্রত্যেক ক্ষেত্রে ভারত হবে আমেরিকার হাত।
মায়ানমার ইস্যুতে ‘ট্র্যাম্প- আমি কিছু জানি না’ ধরনের কথা বললেও পুরো হিসেব কষলে একটি বিষয় স্পষ্ট বোঝা যায় যে, মায়ানমার ইস্যুতে আমেরিকা একটি ডুয়েল রোল প্লে করছে। তার এক হাত গিয়েছে ভারতের কাছে। যেখানে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে সায় দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু-বৌদ্ধ জোট করা হচ্ছে। অপরদিকে আমেরিকা ইউএন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং মার্কিনপন্থী মিডিয়া দিয়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে বলে যাচ্ছে এবং রোহিঙ্গাদের পক্ষের অবস্থানটি জিইয়ে রাখছে।
পুরো ঘটনার ক্যালকুলেশন করলে খুব নিকট ভবিষ্যতে যে ঘটনাগুলো ঘটতে পারে-
১) মায়ানমার-বাংলাদেশ সমাঝোতার কথা বলে আমেরিকা ঢুকতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আমেরিকা না আসলে তার প্যানেলসঙ্গী ব্রিটেন অথবা জাপানকে পাঠানো হতে পারে। দুইপক্ষকে সমাঝোতার কথা বলে মাঝখানে আমেরিকা ঢুকতে চেষ্টা করবে।
২) স্বাধীন আরাকান/রোহিঙ্গাল্যান্ড অনেকেই চায়, কিন্তু সেটা আরেকটি সংকটের কারণ হবে যদি তার নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার হাতে চলে যায়। জাতিসংঘ, হিউম্যানরাইটস ওয়াচসহ কথিত সাহায্য সংস্থাগুলোর নাম দিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মার্কিনীকরণ হতে পারে। যার পূর্বাভাস অলরেডি পাওয়াও যাচ্ছে। এতে তারা মার্কিনপন্থী হলে স্বাধীন রোহিঙ্গাল্যান্ডের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করতে পারে। সেক্ষেত্রে রাখাইন স্বাধীন হলেও তা হবে আমেরিকার নতুন ঘাটি এবং আরেকটি প্রলম্বিত যুদ্ধ।
৩) মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দু-বৌদ্ধরা সমন্বিত দাঙ্গা তৈরী করতে পারে। ফলাফল- বাংলাদেশের ৩ পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম ফেনী নদী পর্যন্ত পৃথক হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। রাষ্ট্রটি শুধু হিন্দু ও বৌদ্ধদের জন্য হবে।
৪) দুই আর তিন নম্বর পয়েন্ট না হয়ে, পুরো প্রাচীন আরাকান (রাখাইন থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের ফেনী নদী পর্যন্ত) বৌদ্ধ ও হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে।
(১), (২), (৩) বা (৪) যেটাই ঘটুক, প্রত্যেকটাই করবে আমেরিকা, হয় ডান হাত দিয়ে, নয়ত বাম হাত দিয়ে।
সমাধান কি ?
ক) রোহিঙ্গাদেরকে এবং বাংলাদেশের মুজাহিদীনদেরকে সুসংগঠিত করে সর্বাত্মক জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা।
খ) এ অঞ্চলে মুজাহিদীনদের যত জামাত আছে তাদেরকে একত্রিত করা। তাদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝিগুলো দূর করে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
গ) বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ ও উপজাতিদের যাবতীয় কার্যক্রম নজরদারি রাখা।
মনে রাখতে হবে- আমেরিকা-চীন যে নতুন দ্বন্দ্ব তৈরী করেছে , তার কেন্দ্রস্থল হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। এ অঞ্চলে দ্বন্দ্ব মানেই বাংলাদেশ-ভারত-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার বিরাট মুসলিম জনগোষ্ঠীর ক্ষতি হওয়া।আগে থেকে এর বিরুদ্ধে প্ল্যান নিয়ে এক না হলে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না- এর আগের টার্মে তৎকালীন সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আপকামিং সুপার পাওয়ার আমেরিকার দ্বন্দ্বে যুদ্ধ হয়েছিলো আফগানিস্তানে। যার চেইন রিএকশন এখনও চলছে। অনুরুপ বর্তমান সুপার পাওয়ার আমেরিকা ও আপকামিং সুপার পাওয়ার চীনের দ্বন্দ্বের কেন্দ্রস্থল কিন্তু বঙ্গপোসাগর। সেই দ্বন্দ্বেও বাংলাদেশও যে আফগানিস্তানের মত হবে না, সেটা বলা যায় না। পার্থক্য হলো আফগান জনগন জাতিগতভাবেই যোদ্ধা এবং বাতিলের কাছে হার না মানার এক জলন্ত আগ্নেয়গিরী। এক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে বিভেদই বেশী। আর ইতিহাসে এ অঞ্চলে গাদ্দারীর রেকর্ডও কম নয়। কাজেই মুজাহিদীনদেরকে এখনই কোমর শক্ত করে আরেকটি বড় ঝড়ের মোকাবিলা করার জন্য পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে নামতে হবে।
Comment