রংপুর ইস্যু : অপরাধের বিচার চাওয়াই যখন অপরাধ
সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা হলো রংপুর সংঘর্ষ। যার আগুন যেন কিছুতেই থামছে না। ঘটনার পর থেকে নিয়ে এই পর্যন্ত অনেক কিছুই হলো। মুসলিমরা মরলো, রক্তে রঞ্জিত হলো, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হলো, মামলা খেলো, গ্রেফতার হলো, সকলের ঘৃণার থুতু মাথায় নিয়ে বাড়ি ছাড়া হলো। অপর দিকে হিন্দুরা নতুন ঘর পেল, মোটা অংকের অর্থ পেল, প্রশাসনের সহযোগিতা পেল, সকল রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের সহানুভূতি ও আকুণ্ঠ সমর্থন পেল।
কি, হিসাবটা মিলাতে পারছেন না! এবার তাহলে শুনুন। গত ৫ নভেম্বর রংপুরের টিটু রায় নামক এক হিন্দু লোক ফেসবুকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ভাষায় প্রকাশ করার অযোগ্য, কু-রুচিপূর্ণ ও মাথায় রক্ত ওঠার মতো মন্তব্য করে এবং ইসলাম ধর্ম, নবীজির দাড়ি, পবিত্র কোরআন শরীফ ও কা’বা শরীফ নিয়ে জঘন্য, অবমাননাকর, ব্যঙ্গাত্মক ও চরম বিদ্বেষে পরিপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দেয়, যা দেখে সুস্থ মস্তিস্কের কোনো লোক নিশ্চুপ থাকতে পারে না। যার মধ্যে সামান্যতম বোধশক্তি আছে সে-ই এর প্রতিবাদ করবে। এমন স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ায় পুরো রংপুর উত্তপ্ত হয়ে উঠে। টিটু গংরা ইসলাম ও মুসলমানদের কলিজায় একেরপর এক আঘাত করেই যাচ্ছে। কিন্তু এর কোনোটির বিচার কি সরকার করেছে? গত কয়েকমাস আগে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জনৈক হিন্দু মাদ্রাসায় ঢুকে ১৬টি কোরআন শরীফের উপর মলমূত্র ত্যাগ করে মুসলিমদের কলিজাকে খণ্ডবিখণ্ড করেছে। (http://nowon24.com/country-wide/2619...03-15-12-34-13)
এর কিছুদিন আগে পুরান ঢাকায় হিন্দুদের হলি পূজা চলাকালে কতেক হিন্দু বখাটে রাস্তা আটকিয়ে পর্দাবৃত দুই মুসলিম বোনকে রিকশা থেকে নামিয়ে মুখে-বুকে হাত দিয়ে রঙ মাখিয়ে পুরো মুসলিম উম্মাহর হৃদপিণ্ডে আঘাত দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। পঁচানব্বই ভাগ মুসলিমের দেশে গুটি কতেক হিন্দুকে এত সাহস দিল কে? ওদের সাহসের উৎসটা কোথায়? ওরা নাকি সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু হয়েও সংখ্যাগুরুর উপর আক্রমণ করছে!
তাওহীদি জনতা দেশিয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টিটুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো আরও কিছু হিন্দু যুবক স্ট্যাটাসটিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। অতঃপর তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। তারা স্মারকলিপিও দেন পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও উক্ত মালাউন গ্রেফতার না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনতা গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কথা ছিল, পুলিশবাহিনী জনগণকে সাহায্য করবে, কারণ তাদেরকে রাখা হয়েছে জনগণের সেবা করার জন্য এবং জনগণের ঘামঝরা টাকাতেই ওদের ভাত-পানির ব্যবস্থা হয়। কিন্তু হায়! পুলিশবাহিনী একি করলো! শান্তশিষ্ট মুসল্লিদের উপর কার্তিক মাসের পাগলা কুকুরের মতো হামলে পড়লো! যাকে যেভাবে পারছে কামড়াতে শুরু করছে! মনে হচ্ছে, চরম ক্ষুধার্ত বাঘকে এইমাত্র খাঁচা থেকে বের করা হয়েছে আর অমনি সে তার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সম্ভবত ২০১৩ সালের কালো রাত্রির জঘন্য ‘পেশা’টাকে নতুন করে প্যাক্টিস করে নিচ্ছে। বিকারগ্রস্ত এই পুলিশগুলোর আক্রমণে রক্তের বন্যা বইতে শুরু করলো। বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়লো কয়েকশ’ মানুষ। মুহূর্তের মধ্যে ঝড়ে পড়লো টগবগে দুটি তাজা প্রাণ। রক্তে রঞ্জিত মানুষগুলোর আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠলো। বিচার চাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হলো। যেন বিচার চাওয়ার নূন্যতম অধিকারটুকুও তাদের নেই। হিন্দুরা যাই করুক তাদেরকে কিছু বলা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কারণ, এতে ‘দাদারা’ মনে কষ্ট পাবে!
ওদিকে ঘটে গেল আরেক কাণ্ড। স্থানীয় হিন্দুরাই নিজেদের মাল-সামানা বের করে ঘরে আগুন লাগাতে শুরু করলো! যা প্রত্যক্ষ করল খোদ পুলিশ-ই। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ‘রংপুর অফিস’ লেখা সম্বলিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ হিন্দুপাড়ায় ঢুকেই দেখল, বেশ কয়েকজন হিন্দু নিজেদের ঘরে আগুন লাগাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘর পুড়ে গেছে। ঘরগুলো বেশ নিম্নমানের। কিছু ঘরকে পাকঘর হিসেবে শনাক্ত করা যায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্লাস্টিকের কালো কাগজ দিয়ে বানানো কয়েকটি ছাপড়া ঘরে আগুন ধরেছে মাত্র, অমনি পুলিশ গিয়ে কয়েকজন হিন্দুকে আগুন লাগানো অবস্থায়ই দেখে ফেলে। তৎক্ষণাত তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, “এখানে আগুন লাগাইলেন কেন?” হিন্দুরা উত্তর দিচ্ছে, “আমরা আগুন লাগাবো? আমরা লাগাবো?” এবার পুলিশ বলছে, “তো নিজেই তো লাগাই দিলা এই আগুন।” (ভিডিওটি দেখতে https://my.pcloud.com/publink/show?c...1pFy6RNHX3zbok)
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর কোনোটাতেই কোনো আসবাবপত্র নেই। পুড়েছে শুধু ঘর। তাহলে পুড়ে যাওয়া কোনো ঘরেই কি সামানপত্র ছিল না? ঘরগুলো কেন এমন খালি ছিল? বসত ঘরে আকস্মিক আগুন লাগলে কোনো না কোনো সামানা তো পুড়ে যাওয়ার কথা এবং নিহত না হোক, অন্তত আহত তো হতো। কিন্তু এতগুলো ঘর পুড়লো অথচ একজন মানুষের গায়ে আগুনের সামান্য একটু আঁচও লাগলো না, এমনকি ব্যবহার যোগ্য কোনো জিনিসও পুড়লো না! ব্যাপারটা খুবই রহস্যময়।
মূলত এরপরই শুরু হয় নাটকের আসল কাহিনী। হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় আন্দোলনরত মুসল্লিদেরকে। ব্যস, শুরু হলো তুলকালাম। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রাতকানা হলুদ মিডিয়াগুলো শুরু করে প্রোপাগান্ডা। কার থেকে কে বেশি কুৎসিতভাবে বমি করতে পারবে- শুরু হলো সেই প্রতিযোগিতা।
মুসল্লিদেরকে কটাক্ষ করে একেরপর এক মিথ্যচার করতে থাকে দেশের সবগুলো মিডিয়া। যেন তারা এমন একটি পরিস্থিতির জন্যই ওঁৎপেতে বসে ছিল।
মিডিয়াগুলো প্রচার করতে থাকে, আন্দোলনরত মুসল্লিরা তাণ্ডব চালিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন লাগায়, তাদের বাড়িতে লুটপাট করে, মন্দিরে ভাঙচুর করে।
টিটু রায়ের পক্ষ নিয়ে মিডিয়াগুলো কখনো বলে, ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে এটি আসলে ভুয়া; তন্নতন্ন করে খুঁজেও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আবার বলে, যে টিটু রায়ের স্ট্যাটাস নিয়ে এতকিছু সে আসলে নিরক্ষর; তার দ্বারা এমন স্ট্যাটাস দেওয়া অসম্ভব। সুর পাল্টিয়ে আবার বলে, তার নামে কেউ ফেক আইডি খুলেছে তাকে হেনস্থা করার জন্য। একটু পরে আবার বলে, টিটু রায় ৭ বছর ধরে এলাকায় নাই। কেউ বা আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলে, এই স্ট্যাটাসটি প্রথমে দিয়েছেন খুলনার মাওলানা হামিদী। এগুলো হলো মুরতাদ সরকারের লালিত ওইসব কুখ্যাত মিডিয়া, যারা হলি পূজায় মুসলিম বোনের লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় এবং হিন্দু মালাউনরা মাদ্রাসায় ঢুকে কোরআন অবমাননার ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল, যেন তারা কিছুই জানে না। অথচ ক্লাসে বসে আল্লাহকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস করার অপরাধে শ্যামল কান্তি নামক এক হিন্দু শিক্ষকের কানে ধরার ঘটনায় একেবারে কেন্দে বুক ভাসিয়েছিল।
একটু লক্ষ করলেই বুঝা যায়, সবগুলো মিডিয়ার উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হলো হিন্দুদেরকে ‘নির্দোশ’ প্রমাণিত করা। কিন্তু কথা হলো, কেন হিন্দুদের জন্যই এত এত চামচামি, আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত বিষাদগার? মুসলিমদের দেশে থেকে, মুসলিমদের সাথে চলাফেরা করে, মুসলিমদেরটা খেয়ে পরে, সর্বোপরি নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে কেন মুসলিমদের বিরুদ্ধেই এত ষড়যন্ত্র? নিমকহারাম-বেহায়া-নির্লজ্জ বলেও তো কিছু একটা আছে!
হিন্দুদের উপর ‘অত্যাচার’ দেখে কি আর চুপ থাকা যায়! শুরু হলো প্রতিবাদ। প্রতিবাদের রোল পড়ে গেল। কেন ‘সংখ্যালঘু’দের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হলো, তারা কি এদেশের জনগণ নয়? কেউ আবার দেশ থেকে তাড়া খেয়ে অন্য দেশে বসে হুমকি দিচ্ছে, বাংলাদেশে কি হিন্দুদের থাকতে দেওয়া হবে না? ইত্যাদি ইত্যাদি। ভারতের সুষমা স্বরাজ উদ্বেগ জানিয়ে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ও হিন্দুদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
শুরু হয় রাজনৈতিক নেতানেতৃদের দৌড়ঝাঁপ। আওয়ামি লীগ-বিএনপি-জাতিয় পার্টি নেতা থেকে পাতিনেতা কেউ হিন্দুদের উপর এত ‘অত্যাচার’ বরদাশত করতে পারছে না। সবাই হিন্দুদের বাড়িঘরে হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগল। তাদেরকে শান্তনা দিয়ে আন্দোলনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিল। এবং ঘর বানানোর জন্য নতুন টিন, মোটা অংকের নগদ টাকা এবং রাজনৈতিক অনুদান, দলীয় অনুদান ও ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে তাদের ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার চেষ্টা করল। হুম..! এতক্ষণে বুঝা গেল দুর্বৃত্তরা ‘ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া’র আসল রহস্য। নতুন নতুন ঘর আর মোতায় মোতায় টাকা পাওয়ার জন্যই যত্তসব নাটক।
অপরদিকে মুসলিমদের উপর নেমে এলো অবর্ণনীয় অত্যাচার। মামলা দেওয়া হলো ৩০০০ (তিন হাজার) লোকের নামে। শুরু হলো ব্যাপক ধরপাকড়। যাকে যেখানে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না অসুস্থ ও বৃদ্ধরাও। গ্রেফতারের ভয়ে আশপাশের ২৫ গ্রামের মুসলিম পুরুষরা বাড়ি ছাড়া। ঘটনার পর থেকে নিয়ে আজ ১৭ দিনেও তারা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। বাড়িতে অসহায় নারী-শিশুরা ভয়ে-শঙ্কায়, অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। গভীর রাতে পুলিশ হানা দিয়ে পুরুষদের খোঁজার নাম করে ঘুমন্ত নারী-শিশুকে হেনস্থা করছে। গ্রেফতারের সংখ্যা ইতিমধ্যেই পাঁচশ’ পূর্ণ হয়েছে। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে দীর্ঘদিন ধরে রিমান্ডের নামে তাদের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছে।
একদিকে মিডিয়াগুলোর প্রোপাগান্ডা অন্যদিকে পুলিশের অত্যাচার, যেন পৃথিবীতে মুসলিমদের কেউ নেই। তারা আজ বড়ই অসহায়। সংখ্যাগুরু হয়েও তারা সংখ্যালঘু। এদেশের প্রশাসন, পুলিশবাহিনী, গোয়েন্দাবাহিনী, মিডিয়া ইত্যাদি সবই হিন্দুদের অনুকূলে সাজানো। যে যেভাবে পারছে মুসলিমদের ছিড়ে খাবলে খাচ্ছে। এ যেন দ্বিতীয় গুজরাট!
এত জুলুম, অত্যাচার, লাঞ্চনা, অপমান সত্ত্বেও আমরা এখনো নিশ্চুপ! রয়েছি গভির ঘুমে আচ্ছন্ন। কখন ভাঙবে আমাদের এই মরণ ঘুম? নাকি ঘুমের মধ্যে রেখেই ওরা আমাদের শেষ করে ফেলবে! জানি না কোন অশুভ থাবা আমাদের গ্রাস করে রেখেছে আর কোন অজানা স্রোতে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি...
সম্প্রতি সময়ে ঘটে যাওয়া দেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা হলো রংপুর সংঘর্ষ। যার আগুন যেন কিছুতেই থামছে না। ঘটনার পর থেকে নিয়ে এই পর্যন্ত অনেক কিছুই হলো। মুসলিমরা মরলো, রক্তে রঞ্জিত হলো, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হলো, মামলা খেলো, গ্রেফতার হলো, সকলের ঘৃণার থুতু মাথায় নিয়ে বাড়ি ছাড়া হলো। অপর দিকে হিন্দুরা নতুন ঘর পেল, মোটা অংকের অর্থ পেল, প্রশাসনের সহযোগিতা পেল, সকল রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের সহানুভূতি ও আকুণ্ঠ সমর্থন পেল।
কি, হিসাবটা মিলাতে পারছেন না! এবার তাহলে শুনুন। গত ৫ নভেম্বর রংপুরের টিটু রায় নামক এক হিন্দু লোক ফেসবুকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে ভাষায় প্রকাশ করার অযোগ্য, কু-রুচিপূর্ণ ও মাথায় রক্ত ওঠার মতো মন্তব্য করে এবং ইসলাম ধর্ম, নবীজির দাড়ি, পবিত্র কোরআন শরীফ ও কা’বা শরীফ নিয়ে জঘন্য, অবমাননাকর, ব্যঙ্গাত্মক ও চরম বিদ্বেষে পরিপূর্ণ একটি স্ট্যাটাস দেয়, যা দেখে সুস্থ মস্তিস্কের কোনো লোক নিশ্চুপ থাকতে পারে না। যার মধ্যে সামান্যতম বোধশক্তি আছে সে-ই এর প্রতিবাদ করবে। এমন স্ট্যাটাস ছড়িয়ে পড়ায় পুরো রংপুর উত্তপ্ত হয়ে উঠে। টিটু গংরা ইসলাম ও মুসলমানদের কলিজায় একেরপর এক আঘাত করেই যাচ্ছে। কিন্তু এর কোনোটির বিচার কি সরকার করেছে? গত কয়েকমাস আগে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে জনৈক হিন্দু মাদ্রাসায় ঢুকে ১৬টি কোরআন শরীফের উপর মলমূত্র ত্যাগ করে মুসলিমদের কলিজাকে খণ্ডবিখণ্ড করেছে। (http://nowon24.com/country-wide/2619...03-15-12-34-13)
এর কিছুদিন আগে পুরান ঢাকায় হিন্দুদের হলি পূজা চলাকালে কতেক হিন্দু বখাটে রাস্তা আটকিয়ে পর্দাবৃত দুই মুসলিম বোনকে রিকশা থেকে নামিয়ে মুখে-বুকে হাত দিয়ে রঙ মাখিয়ে পুরো মুসলিম উম্মাহর হৃদপিণ্ডে আঘাত দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। পঁচানব্বই ভাগ মুসলিমের দেশে গুটি কতেক হিন্দুকে এত সাহস দিল কে? ওদের সাহসের উৎসটা কোথায়? ওরা নাকি সংখ্যালঘু। সংখ্যালঘু হয়েও সংখ্যাগুরুর উপর আক্রমণ করছে!
তাওহীদি জনতা দেশিয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টিটুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো আরও কিছু হিন্দু যুবক স্ট্যাটাসটিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়। অতঃপর তাকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। তারা স্মারকলিপিও দেন পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও উক্ত মালাউন গ্রেফতার না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শান্তিপ্রিয় মুসলিম জনতা গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কথা ছিল, পুলিশবাহিনী জনগণকে সাহায্য করবে, কারণ তাদেরকে রাখা হয়েছে জনগণের সেবা করার জন্য এবং জনগণের ঘামঝরা টাকাতেই ওদের ভাত-পানির ব্যবস্থা হয়। কিন্তু হায়! পুলিশবাহিনী একি করলো! শান্তশিষ্ট মুসল্লিদের উপর কার্তিক মাসের পাগলা কুকুরের মতো হামলে পড়লো! যাকে যেভাবে পারছে কামড়াতে শুরু করছে! মনে হচ্ছে, চরম ক্ষুধার্ত বাঘকে এইমাত্র খাঁচা থেকে বের করা হয়েছে আর অমনি সে তার শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সম্ভবত ২০১৩ সালের কালো রাত্রির জঘন্য ‘পেশা’টাকে নতুন করে প্যাক্টিস করে নিচ্ছে। বিকারগ্রস্ত এই পুলিশগুলোর আক্রমণে রক্তের বন্যা বইতে শুরু করলো। বুলেটের আঘাতে লুটিয়ে পড়লো কয়েকশ’ মানুষ। মুহূর্তের মধ্যে ঝড়ে পড়লো টগবগে দুটি তাজা প্রাণ। রক্তে রঞ্জিত মানুষগুলোর আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে উঠলো। বিচার চাওয়াটাই তাদের জন্য কাল হলো। যেন বিচার চাওয়ার নূন্যতম অধিকারটুকুও তাদের নেই। হিন্দুরা যাই করুক তাদেরকে কিছু বলা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। কারণ, এতে ‘দাদারা’ মনে কষ্ট পাবে!
ওদিকে ঘটে গেল আরেক কাণ্ড। স্থানীয় হিন্দুরাই নিজেদের মাল-সামানা বের করে ঘরে আগুন লাগাতে শুরু করলো! যা প্রত্যক্ষ করল খোদ পুলিশ-ই। গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত ‘রংপুর অফিস’ লেখা সম্বলিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ হিন্দুপাড়ায় ঢুকেই দেখল, বেশ কয়েকজন হিন্দু নিজেদের ঘরে আগুন লাগাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘর পুড়ে গেছে। ঘরগুলো বেশ নিম্নমানের। কিছু ঘরকে পাকঘর হিসেবে শনাক্ত করা যায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্লাস্টিকের কালো কাগজ দিয়ে বানানো কয়েকটি ছাপড়া ঘরে আগুন ধরেছে মাত্র, অমনি পুলিশ গিয়ে কয়েকজন হিন্দুকে আগুন লাগানো অবস্থায়ই দেখে ফেলে। তৎক্ষণাত তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, “এখানে আগুন লাগাইলেন কেন?” হিন্দুরা উত্তর দিচ্ছে, “আমরা আগুন লাগাবো? আমরা লাগাবো?” এবার পুলিশ বলছে, “তো নিজেই তো লাগাই দিলা এই আগুন।” (ভিডিওটি দেখতে https://my.pcloud.com/publink/show?c...1pFy6RNHX3zbok)
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোর কোনোটাতেই কোনো আসবাবপত্র নেই। পুড়েছে শুধু ঘর। তাহলে পুড়ে যাওয়া কোনো ঘরেই কি সামানপত্র ছিল না? ঘরগুলো কেন এমন খালি ছিল? বসত ঘরে আকস্মিক আগুন লাগলে কোনো না কোনো সামানা তো পুড়ে যাওয়ার কথা এবং নিহত না হোক, অন্তত আহত তো হতো। কিন্তু এতগুলো ঘর পুড়লো অথচ একজন মানুষের গায়ে আগুনের সামান্য একটু আঁচও লাগলো না, এমনকি ব্যবহার যোগ্য কোনো জিনিসও পুড়লো না! ব্যাপারটা খুবই রহস্যময়।
মূলত এরপরই শুরু হয় নাটকের আসল কাহিনী। হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হয় আন্দোলনরত মুসল্লিদেরকে। ব্যস, শুরু হলো তুলকালাম। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা রাতকানা হলুদ মিডিয়াগুলো শুরু করে প্রোপাগান্ডা। কার থেকে কে বেশি কুৎসিতভাবে বমি করতে পারবে- শুরু হলো সেই প্রতিযোগিতা।
মুসল্লিদেরকে কটাক্ষ করে একেরপর এক মিথ্যচার করতে থাকে দেশের সবগুলো মিডিয়া। যেন তারা এমন একটি পরিস্থিতির জন্যই ওঁৎপেতে বসে ছিল।
মিডিয়াগুলো প্রচার করতে থাকে, আন্দোলনরত মুসল্লিরা তাণ্ডব চালিয়ে হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন লাগায়, তাদের বাড়িতে লুটপাট করে, মন্দিরে ভাঙচুর করে।
টিটু রায়ের পক্ষ নিয়ে মিডিয়াগুলো কখনো বলে, ধর্ম অবমাননার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে এটি আসলে ভুয়া; তন্নতন্ন করে খুঁজেও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আবার বলে, যে টিটু রায়ের স্ট্যাটাস নিয়ে এতকিছু সে আসলে নিরক্ষর; তার দ্বারা এমন স্ট্যাটাস দেওয়া অসম্ভব। সুর পাল্টিয়ে আবার বলে, তার নামে কেউ ফেক আইডি খুলেছে তাকে হেনস্থা করার জন্য। একটু পরে আবার বলে, টিটু রায় ৭ বছর ধরে এলাকায় নাই। কেউ বা আরেকটু আগ বাড়িয়ে বলে, এই স্ট্যাটাসটি প্রথমে দিয়েছেন খুলনার মাওলানা হামিদী। এগুলো হলো মুরতাদ সরকারের লালিত ওইসব কুখ্যাত মিডিয়া, যারা হলি পূজায় মুসলিম বোনের লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় এবং হিন্দু মালাউনরা মাদ্রাসায় ঢুকে কোরআন অবমাননার ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটে বসে ছিল, যেন তারা কিছুই জানে না। অথচ ক্লাসে বসে আল্লাহকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক হাস্যরস করার অপরাধে শ্যামল কান্তি নামক এক হিন্দু শিক্ষকের কানে ধরার ঘটনায় একেবারে কেন্দে বুক ভাসিয়েছিল।
একটু লক্ষ করলেই বুঝা যায়, সবগুলো মিডিয়ার উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হলো হিন্দুদেরকে ‘নির্দোশ’ প্রমাণিত করা। কিন্তু কথা হলো, কেন হিন্দুদের জন্যই এত এত চামচামি, আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে এত বিষাদগার? মুসলিমদের দেশে থেকে, মুসলিমদের সাথে চলাফেরা করে, মুসলিমদেরটা খেয়ে পরে, সর্বোপরি নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে কেন মুসলিমদের বিরুদ্ধেই এত ষড়যন্ত্র? নিমকহারাম-বেহায়া-নির্লজ্জ বলেও তো কিছু একটা আছে!
হিন্দুদের উপর ‘অত্যাচার’ দেখে কি আর চুপ থাকা যায়! শুরু হলো প্রতিবাদ। প্রতিবাদের রোল পড়ে গেল। কেন ‘সংখ্যালঘু’দের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হলো, তারা কি এদেশের জনগণ নয়? কেউ আবার দেশ থেকে তাড়া খেয়ে অন্য দেশে বসে হুমকি দিচ্ছে, বাংলাদেশে কি হিন্দুদের থাকতে দেওয়া হবে না? ইত্যাদি ইত্যাদি। ভারতের সুষমা স্বরাজ উদ্বেগ জানিয়ে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ও হিন্দুদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
শুরু হয় রাজনৈতিক নেতানেতৃদের দৌড়ঝাঁপ। আওয়ামি লীগ-বিএনপি-জাতিয় পার্টি নেতা থেকে পাতিনেতা কেউ হিন্দুদের উপর এত ‘অত্যাচার’ বরদাশত করতে পারছে না। সবাই হিন্দুদের বাড়িঘরে হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগল। তাদেরকে শান্তনা দিয়ে আন্দোলনকারীদের বিচারের মুখোমুখি করার আশ্বাস দিল। এবং ঘর বানানোর জন্য নতুন টিন, মোটা অংকের নগদ টাকা এবং রাজনৈতিক অনুদান, দলীয় অনুদান ও ব্যক্তিগত অনুদান দিয়ে তাদের ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার চেষ্টা করল। হুম..! এতক্ষণে বুঝা গেল দুর্বৃত্তরা ‘ঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া’র আসল রহস্য। নতুন নতুন ঘর আর মোতায় মোতায় টাকা পাওয়ার জন্যই যত্তসব নাটক।
অপরদিকে মুসলিমদের উপর নেমে এলো অবর্ণনীয় অত্যাচার। মামলা দেওয়া হলো ৩০০০ (তিন হাজার) লোকের নামে। শুরু হলো ব্যাপক ধরপাকড়। যাকে যেখানে পাচ্ছে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। রেহাই পাচ্ছে না অসুস্থ ও বৃদ্ধরাও। গ্রেফতারের ভয়ে আশপাশের ২৫ গ্রামের মুসলিম পুরুষরা বাড়ি ছাড়া। ঘটনার পর থেকে নিয়ে আজ ১৭ দিনেও তারা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। বাড়িতে অসহায় নারী-শিশুরা ভয়ে-শঙ্কায়, অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারিয়ে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। গভীর রাতে পুলিশ হানা দিয়ে পুরুষদের খোঁজার নাম করে ঘুমন্ত নারী-শিশুকে হেনস্থা করছে। গ্রেফতারের সংখ্যা ইতিমধ্যেই পাঁচশ’ পূর্ণ হয়েছে। জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করতে দীর্ঘদিন ধরে রিমান্ডের নামে তাদের উপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছে।
একদিকে মিডিয়াগুলোর প্রোপাগান্ডা অন্যদিকে পুলিশের অত্যাচার, যেন পৃথিবীতে মুসলিমদের কেউ নেই। তারা আজ বড়ই অসহায়। সংখ্যাগুরু হয়েও তারা সংখ্যালঘু। এদেশের প্রশাসন, পুলিশবাহিনী, গোয়েন্দাবাহিনী, মিডিয়া ইত্যাদি সবই হিন্দুদের অনুকূলে সাজানো। যে যেভাবে পারছে মুসলিমদের ছিড়ে খাবলে খাচ্ছে। এ যেন দ্বিতীয় গুজরাট!
এত জুলুম, অত্যাচার, লাঞ্চনা, অপমান সত্ত্বেও আমরা এখনো নিশ্চুপ! রয়েছি গভির ঘুমে আচ্ছন্ন। কখন ভাঙবে আমাদের এই মরণ ঘুম? নাকি ঘুমের মধ্যে রেখেই ওরা আমাদের শেষ করে ফেলবে! জানি না কোন অশুভ থাবা আমাদের গ্রাস করে রেখেছে আর কোন অজানা স্রোতে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি...
Comment