আসামে মুসলিম বিতাড়নের আভাস ও পূর্ববর্তীদের ভুল এবং পরবর্তীদের শিক্ষা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সরকার বিতর্কিত 'ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি)' এর প্রথম খসড়া তালিকাটি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, মোট ৩.২৯ কোটির মধ্যে ১.৯ কোটি মানুষকে বৈধতা দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ তাদেরকে ভারতের বৈধ নাগরিক হিসেবে গন্য করা হবে। বাকিদের অথ্যাৎ ১ কোটি ৩৯ লক্ষ জনসংখ্যা নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়েছে। এদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ হচ্ছে বাংলাভাষী মুসলমান। ধারণা করা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের যেভাবে বাংলাদেশী ট্যাগ দিয়ে আরাকান থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে, ঠিক একইভাবে আসাম থেকেও বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশী ট্যাগ দিয়ে বিতাড়ন করা হতে পারে।
ভারতের বিজেপি সরকার আসামের যে বাংলাভাষী মুসলমানদের বাংলাদেশী বলে ট্যাগ দিচ্ছে, এরা হলো বাংলাদেশের সিলেট বর্ডার সংলগ্ন করিমগঞ্জ বদরপুর, পাথারকান্দি, রাতাবাড়ি এলাকাগুলোর অধিবাসী। মূলতঃ এ এলাকাগুলোতেই বাংলাভাষী মুসলমানরা অবস্থান করে। এ এলাকাগুলো এক সময় সিলেটেরই অংশ ছিলো। এ এলাকাগুলো মুসলিম অধ্যুষিত হওয়ায় ৪৭ এর দেশভাগের সময় এ অঞ্চলটি পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বাধ সাধেন কংগ্রেসের সহযোগী বিখ্যাত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুসলিম নেতাগণ। অখন্ড ভারত/ভারত বিভাজন কোন পদ্ধতি সঠিক ছিলো সেটা এখানে আলোচনার সুযোগ নেই। যদিও তাদের উদ্দেশ্য মহৎ ছিলো, উনাদের বিরোধীতা করার কারণে সিলেট অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানে আসবে নাকি ভারতে আসবে সেটা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। এতে বড়লাট মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ৩ জুন ঘোষণা দেয়- এই দ্বন্দ্ব অবসানে গণভোট হবে। গণভোট অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাই। সোম ও মঙ্গলবার। মুসলিম লীগের (পাকিস্তানের ভোটের প্রতীক ছিল কুড়াল এবং কংগ্রেসের (হিন্দুস্থানের) প্রতীক ছিল কুঁড়েঘর। গণভোটে সিলেট পাকিস্তানে আসার পক্ষে ভোট পড়ে, ২,৩৯,৬১৯টি এবং হিন্দুস্থানে যাওয়ার পক্ষে ভোট পড়ে ১,৮৪,৪১টি। ঐ গণভোটের পর সিলেটের একাংশ বাংলাদেশে চলে আসলেও সীমানা কমিশনার রেড ক্লিফের কারসাজিতে মুসলিম অধ্যুষিত করিমগঞ্জের অর্ধেক, বদরপুর, পাথারকান্দি, রাতাবাড়ি থানাগুলো চলে যায় ভারতের মধ্যে।
বিস্তারিত পড়তে-
http://www.dailysangram.com/post/573...A7%9F%E0%A6%BE,
আসমে এখন যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে, সেটার জন্য হিন্দুরা যতটুকু দায়ী, তার থেকে বেশি দায়ী মুসলমানদের ভুল। মুসলমানদের মধ্যে একদল মুসলিম সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে। তারা ভেবেছিলো হিন্দু-মুসিলম একসাথে থাকলে বোধহয় ভালো হবে, দেশটা বড় হবে। তাদের সিদ্ধান্তগত ভুলের কারণেই মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলো ভারতের মধ্যে ঢুকে যায়। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সাথে দেশভাগের সময় কিন্তু হিন্দু ও মুসলিম রাষ্ট্র নামে কোন রাষ্ট্র ভাগ হয়নি। দুটি দেশ সৃষ্টি হয়েছিলো- একটি মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান, অন্যটি সেক্যুলারদের জন্য ভারত। মুসলমানদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ চিন্তা করেছিলো, হিন্দু-মুসিলম একসাথে থাকলেই তো ভালো, ভারত অনেক বড় রাষ্ট্র, এটা কেন খণ্ড খণ্ড করবো ? তাদের সেই ভুলের কারণে অনেক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ভারতের পেটের মধ্যে ঢুকে যায়, ভারত হয়ে যায় বিশাল।
মানুষ মানুষকে ক্ষমা করে, কিন্তু ইতিহাস কখনও ক্ষমা করে না। সে তার নিয়মে চলে। উল্লেখ্য, এক সময় মায়ানমারের অং সাং সুকির পিতার অন্যতম সহযোগী ছিলো রোহিঙ্গা মুসলিমরা। রোহিঙ্গা মুসলমানরাই অং সাং সুকির পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলো। কিন্তু সেই সুকি ক্ষমতায় এসে যথারীতি রোহিঙ্গা গণহত্যা চালালো।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা :
১) সেক্যুলারিজম বলে কিছু নেই। হিন্দু-মুসলিম একত্রিত রাষ্ট্র তখনই সম্ভব যখন এর ক্ষমতায় থাকবে ইসলাম, এছাড়া নয়। হিন্দুরা সেক্যুলার সেজে ক্ষমতা নিবে, এরপর সুযোগ বুঝে বের করবে তাদের উগ্রবাদী রূপ ও মুসলিমবিদ্বেষ।
২) ইতিহাস কখন ক্ষমা করে না। ভারত বা মায়ানামরের মুসলমানরা ৭০ বছর আগে যে ভুল করেছিলো, তার খেসারত দিচ্ছে এখনকার মুসলমানরা (তাদের নাতিপুতিরা)। অনুরূপ বর্তমান বাংলাদেশে যেসব মুসলমান ধর্মনিরপেক্ষতা, হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই করে শ্লোগান দেয়, তাদেরও এই ভুলের খেসারত কতদিন পর তাদের বংশধররা দিবে, সেটারও হিসেব রাখা দরকার।
৩) মুসলিম নেতাদের বিচার করতে হবে কাজের ভিত্তিতে। অনেক সময় অনেক মুসলিম নেতা রাজনৈতিকভাবে কোয়ালিশন করে অথবা অন্য কোনভাবে ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, এটা অন্যদের বুঝতে হবে।
৪) অমুসলিমরা মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ খোঁজে। এবং ঐ মতভেদের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করে একদলের পক্ষ নিয়ে অন্য দলের ক্ষতি করে। তাই মুসলমানদের মতভেদ বা দলাদলী বন্ধ করতে হবে। মুসলমান-মুসলমান দলাদলী (রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত) করে হিন্দু/অমুসলিমদের সাথে যোগ দেয়া যাবে না। আগে মুসলমানদের প্রাধান্য দিতে হবে। হোক সে আপনার দৃষ্টিতে খারাপ মুসলিম বা অল্প মুসলিম। কিন্তু তারপরও হিন্দুর থেকে ঐ মুসলমানকেই আগে প্রাধান্য দিতে হবে। দুই মুসলমান এক হয়ে অমুসলিমের বিরোধীতা করবেন, কিন্তু মুসলিম-হিন্দু এক হয়ে কখনই অন্য মুসলিম গোষ্ঠীর বিরোধীতা করবেন না। আপনি হয়ত ভাবছেন, এতে আপনার ধর্মীয় প্রতিপক্ষ দমন হলো। কিন্তু এটা ভুল। বরং আপনি মুসলমান হয়ে নিজের পায়ে কুড়াল মারলেন এবং মুসলমানদের শক্তি হ্রাস করলেন।
.
Comment