আধুনিক রাষ্ট্র চরিত্র ও গণতন্ত্রের ধোঁকা
এপার বাংলা ওপার বাংলা
মাঝখানে কাঁটাতার
গুলি খেয়ে ঝুলে থাকলে ফেলানি
বলতো দোষটা কার?"
সাতই জানুয়ারিতে সাতবছর পেরিয়ে গেল। লিখতে গিয়ে মনে হোল রোহিঙ্গাদের চেয়ে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে আসামে।দক্ষিণ এশিয়ায় অত্যাসন্ন অস্থিরতার চিহ্নগুলো ক্রমে ক্রমে হাজির হতে শুরু করেছে।
সীমান্ত,কাঁটাতার,আধুনিক রাষ্ট্র, ইত্যাদি আমরা কতোটাই বা বুঝি? কিম্বা বুঝতে চাই? নাগরিক পঞ্জি (National Register of Citizenship) বানিয়ে নিজ দেশের অধিবাসীদের ভিনদেশী বানিয়ে দেওয়া? এটা কি কি স্রেফ হিন্দুত্ববাদ? নাকি এর উৎস আমাদের খুঁজতে হবে খোদ আধুনিক রাষ্ট্র বা আধুনিক ক্ষমতার চরিত্রের মধ্যে? মোদির ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই তো ছিল, আসাম থেকে 'বাংলাদেশী' হঠানো। এই কর্মসূচির জয় নরেন্দ্র মোদীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে কি অধিষ্ঠিত করানো হয়নি?
তো দাদারা ভায়েরা দিদিরা বোনেরা এখন কান্নাকাটি কেন? নরেন্দ্র মোদী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতোই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করছে মাত্র! এটাই তো আপনাদের গণতন্ত্র! নির্বাচন! নির্বাচনী ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ভারতকে মুসলমান শূন্য করবার ম্যাণ্ডেট অর্জন। অং সং সু চি যেমন গণতন্ত্রের মানস কন্যা হিসাবে বৌদ্ধ সাধুদের মনস্কামনা পূর্ণ করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে শ্বেত বর্ণের মার্কিন ও কর্পোরেশানের ইচ্ছা পূরণ করছে। বিরোধীরা যতোই কেচ্ছা গাইতে থাকুক, ট্রাম্পরা ডোন্ট কেয়ার! কারণ সাদাদের বড় অংশই তার পক্ষে। তারা তাকেই ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে।
হা এটাই আধুনিক গণতন্ত্র!!! হিটলারও গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত হয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলো, ইহুদিদের পুড়িয়ে মারতে দ্বিধা করেনি। সে কি জর্মান জাতির গণতান্ত্রিক ইচ্ছা বাস্তবায়িত করেনি? এক এগারোর সেনা সমর্থিত সরকারের ব্যবস্থার পরে ভোট দিয়ে আমরাও কি প্রকার গণতন্ত্র কায়েম করেছি, ভাবুন।
ঠিক তেমনি হিন্দু ভারত গণতান্ত্রিক ভাবেই নরেন্দ্র মোদীর জন্ম দিয়েছ, ক্ষমতারোহন নিশ্চিত করেছে। আসাম থেকে মুসলমান তাড়ানোর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা হিন্দু ভারতেরই ইচ্ছা ও পরিকল্পনা। ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুর ইচ্ছার প্রতিফলন মাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ বা তাদের সরকার সীমান্ত দিয়ে যখন আসামের মুসলমান শরণার্থী হয়ে প্রবেশ করতে শুরু করবে তার জন্য কি প্রস্তুত? আমাদের ইচ্ছা কি আসলে? বাস্তবতা মোকাবেলা করতে কি আমরা সক্ষম? কিম্বা দক্ষিন এশিয়া? কিম্বা তথাকথিত বিশ্বের বিবেক?
অতএব এহ বাহ্য আগে কহ আর! আধুনিক রাজনীতি, রাষ্ট্র ও ক্ষমতার নির্ধারক বিভিন্ন ধারণা ও বর্গ নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা ছাড়া আমরা এক কদমও অগ্রসর হতে পারবো না। ফেলানির লাশ কাঁটাতারেই ঝুলতে থাকবে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসএফ ৪০৩ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। তো তাতে কি হয়েছে! বাংলাদেশিরা বিএস এফের গুলিতে মরবার জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে, তাই না? ঝুলুক ফেলানি কাঁটাতারে। এই সময়ে বিএসএফ ৪৬৮ জন বাংলাদেশী নাগরিককেও অপহরণও করেছে। তো করুক।আমরা তো আছিই শান্তিতে(!)
.
Comment